গাড়ীতে উঠতে যাবো তখনই আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। প্রথমে ভাবলাম গাড়ীতে উঠেই ম্যাসেজ টা দেখবো কিন্তু আবার কি ভেবে যেন ম্যাসেজটা অন করে দেখি লেখা আছে “এই যে শোনেন, আপনি কিন্তু অবশ্যই ধূসর কালো রংয়ের পাঞ্জাবী পড়ে আসবেন”। আর ম্যাসেজ টা এসেছে নিত্তিয়ার নাম্বার থেকে। আর নিত্তিয়া হলো আমার বিয়াইন। আজ আমার বড় ভাই নিহানের বিয়ে। জামাইয়ের গাড়ী ছেড়ে দিয়েছে। এখন আমি গাড়ীতে উঠতে যাবো আর নিত্তিয়া এই ম্যাসেজটা পাঠিয়েছে। এখন কি করি? আর তাছাড়া আমার তো এই রংয়ের কোন পাঞ্জাবীও নেই। যাই হোক, আগে বিয়েতে তো যাই, পরে বলবো নে আমার এই রংয়ের পাঞ্জাবী নেই। আমি আর লেট না করে গাড়ীতে উঠে বসলাম। আর আমার পাশের সিটে দীপ্ত বসেছে। ও হলো আমার কাজিন। ওর পাঞ্জাবীর রংটা কেমন যেন ধূসর কালো লাগছে তাই মোবাইলের লাইট টা জ্বালিয়ে ভাল করে দেখে নিলাম।
— কীরে রাজ আমার পাঞ্জাবী ধরে কি দেখিস?
— না মানে? তোর বৌদির এই রংয়ের পাঞ্জাবী খুব পছন্দ আর ও আমায় এই রংয়ের পাঞ্জাবী পড়তে বলছে। কিন্তু আমার না এই রংয়ের পাঞ্জাবী নেই। তাই যদি তোর…
— ওয়েট ওয়েট আগে বল আমার বৌদিটা আবার কে?
— ও মা আমার বউ মানে তোর বৌদি।
— সেটা তো বুঝলাম কিন্তু আমরা তো যাচ্ছি নিহান ভাইয়ের বিয়েতে কিন্তু এখানে তোর বউ আবার আসলো কই থেকে?
— কেন নিত্তিয়া?
— তার মানে নিহান ভাইয়ের বউয়ের বোন ।
— হুমম।
— বাহ্ তুই পারিসও রাজ। দুই মাসে এক্কেরে পটিয়ে ফেললি আর এখন নিত্তিয়ার কথা মত পাঞ্জাবীও পড়ে যাবি।
— হি হি হি তুই না আমার ভাই। আমার জন্য এই টুকু করতে পারবি না।
— ওকে নে।
এরপর দীপ্তর থেকে পাঞ্জাবীটা নিয়ে আমার পাঞ্জাবীটা ওরে দিয়ে দিলাম। যাক শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাবীটা তো পেলাম। গাড়ী থেকে নেমে আমি সোজা নিত্তিয়াদের ছাদে চলে গেলাম কারন জানি নিত্তিয়া ছাদের দোলনায় বসে আছে। কিন্তু আমায় যদি একা কেউ দেখে নেয় তাহলে তো সমস্যা । তবুও সাহস করে উপরে চলে গেলাম কিন্তু একি এখানে তো মেয়েদের মেলা বসেছে। আমি তো পুরো ফেসেঁ গেলাম। এখন যদি কেউ আমায় দেখে নেয় তাহলে তো সমস্যা। আমি কোন রকমে নিচে নামতে যাবো কিন্তু তখনই পিছন থেকে এক মেয়ে ডাক দিলো।
— আরে এটা রাজ না, দুলা ভাইয়ের ছোট ভাই না। আমি চুপচাপ নিচে নেমে আসলাম। ওই নিত্তিয়া যে কই গেলো। আর অন্য দিকে তো বিয়ে হয়ে যাবে। কখন আসলাম কিন্তু নিত্তিয়াকে দেখতে পারছি না। আমি চার দিকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও নেই। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বলল….
— আচ্ছা কাউকে খুঁজচ্ছেন বুঝি?
— হুম
পিছনে ফিরতেই দেখি নিত্তিয়া দাঁড়িয়ে আছে। একটু চমকেও গেলাম। তবে ওরে আজ বেশ লাগছে। তখন আমি বললাম…
— ওই বাহ্ বেশ লাগছে তো আপনাকে।
— এই ভাবে দেইখেন না প্রেম হয়ে যাবে কিন্তু।
— সে তো কবেই হয়ে গেছে।
— তাই নাকি, কেউ তো বলে নি যে প্রেমে পড়েছে।
— সব কি বলতে হয়? তাছাড়া কে যেন বলছিল মেয়েদের বুঝার ক্ষমতা নাকি অনেক।
— হুমম তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আপনাকে না আজকে দেখতে পচা পচা লাগছে।
— ও তা কেমন পচা লাগছে শুনি?
— চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে যেন কাকের বাসা।
— হুহহ এটা ইউনিক স্টাইল আর আমায় এমন স্টাইল কারো না ভাল লাগলেও সমস্যা নেই।
— হুমম আপনার কপালটা একটু বড়ই লাগছে।
— হুমম তাই তো বড় কপালে একটাও জি এফ নেই।
–হুমম আর আপনার হাসিটা??
— কি হয়েছে আমার হাসিটা হুম?
— খুব মিষ্টি। এতক্ষন অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখন ওর দিকে ফিরলাম।
— সত্যি বলছো?
— না মিথ্যা বলছি।
— হুহহ আপনি থাকেন আর আমি গেলাম। শুধু আমায় রাগায়।
— ওই শোনেন
— আবার কি?
— রাগ করেছেন মিস্টার?
— না।
— আপনি রাগলেও কিন্তু ভালই লাগে।
— ওকে ভাল লাগলে ভালো।
আর না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। এখন ভাইয়ের পাশে বসে বিয়ের নিয়মকানুন দেখি। শত হলেও একদিন আমিও তো করবো এইসব তাই আগে থেকে শিখে রাখছি আর কি?? একটু পর পর চার পাশে তাকিয়ে দেখছি যে নিত্তিয়াকে দেখা যায় কি না কিন্তু এই মেডাম তো কোন দিকেই নাই। আমাকে রাগাতে হয়ত ওনার বেশ লাগে।
বিয়ের সকল নিয়ম কানুন শেষ করে সকালে বাসায় চলে আসলাম আর সারাটা রাত নিত্তিয়ার সাথে আমার রাগ অভিমানের পালা চলেছিল। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম কিন্তু আজ আবার আমাদের বাসায় তো বৌভাত। তাই কতক্ষন আর ঘুমাবো। দুপুর হতে না হতে বাসায় ছোটদের চেঁচামিচির আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবার হাতে হাতে কাজ লাগিয়ে দিলাম। একটু পর সবার খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমিও সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। তাকিয়ে দেখি নিত্তিয়ার ম্যাসেজ তাই অন করে দেখি ” এই যে শোনেন, মাংসে লবন কম হয়েছে তাই আমাদের টেবিলে লবন দিয়ে যান “।
হায়রে ব্যস্ততার মাঝে খেয়ালই ছিল না যে আজ মেয়ের বাসা থেকে সবাই আসবে। আমি পিছনে ফিরে দেখি নিত্তিয়াদের বাসার সবাই খাইতে বসেছে। আর তাকাতেই নিত্তিয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলো। হায়রে মেয়ে, কি পাগল করলি? তারপর আমার টেবিলে অন্য একজনকে খাওয়াতে দিয়ে আমি নিত্তিয়াদের টেবিলে খাওয়াতে লাগলাম। আর নিত্তিয়াকে দুইটা কাচাঁ লঙ্কা দিয়ে ওর পিছনে গিয়ে বললাম ” এ গুলো খান, আপনার জন্য উপকারী”। ও কিছু বলল না তবে মরিচ গুলো খেয়েই ছিল। বাসায় মনে হয়, এমন মরিচ খায় তাই আমায় বেশি রাগায়। খাওয়া দাওয়া শেষ বিদায় নিয়ে ও চলে গেল আর যাওয়ার আগে বলে গেল “হিসাবটা তোলা রইলো “। শুনেই এক গ্লাস জল খেয়ে নিলাম। প্রায় এক মাস পর আমি রুমে শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছি তখন বৌদি এসে বলল…
— রাজ আমায় একটু আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে? আসলে নিত্তিয়ার শরীরটা তেমন ভাল না।
— ওর আবার কি হলো?
— আসলে…
— কী?
— ওর তো ক্যান্সার।
— মানে?( একটা শক খেলাম)
— আর হয়ত ওর হাতে ৪ মাসের মত আছে তবে এখনই শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। নিত্তিয়া আমায় বলছিল যেন এইসবের কিছুই তোমায় আমি না বলি।
–( আমি যেন একদম নির্বাক হয়ে গেলাম)
— রাজ আমি রেডি হয়ে আসছি আর তুমিও রেডি হয়ে নাও।
— হুমম
কি করবো আর ওর সামনে কি ভাবে দাঁড়াবো এটাই বুঝতে পারছি না? ও আমায় এইটা বললে কি সমস্যা ছিলো? আজ বুঝতে পারছি কেন ও আমায় এড়িয়ে চলতো? কিছু জানতে চাইলেও বলতো না বরং এড়িয়ে যেতো।
আমি আর বৌদি বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম। প্রায় ১ ঘন্টা পর নিত্তিয়াদের বাসায় পৌঁছালাম।বাসায় যাওয়ার পর শুনি নিত্তিয়া বাসায় নেই। ওরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। আমি প্রথমে ভাবলাম বাসায় চলে আসবো কিন্তু তারপর ভাবলাম ওর সাথে দেখা করে যাই। নিত্তিয়া তো এখনো জানে যে আমি ওর ব্যাপারটা জানি না।
আমি ভাল করে নিত্তিয়াদের বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এক পর্যায়ে নিত্তিয়ার রুমে এসে থেমে গেলাম। ও কত্তো কিছু এঁকে ওর রুমটা সাজিয়ে রেখেছে। ওর পড়ার টেবিলের সামনে যেতে দেখি একটা ডায়রী। আর ডায়রীর নাম লেখা “আমার স্বপ্ন গুলো”। একটা ছবিও আটকানো আছে ডায়রীতে। যখন ডায়রীটা খুললাম তখন দেখি সেটা আমার ছবি। আর আমার ছবিতে তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা ” নাকটা আরেকটু ছোট হলে ভাল লাগতো, চুল গুলো ঘুছানো হলে আমার হিরো লাগতো আর হালকা দাড়িতে খুব কিউট লাগতো এই বাঁদর টাকে”। এটা পড়ে আমার মুখে কেমন যেন কান্নাময় হাসি আসলো। আমি ডায়রীটা প্রথম থেকে পড়তে লাগলাম। যেখানে লেখা ছিল….
প্রিয় মানুষটার সাথে হাত ধরে খুব ভোরে রেল লাইনে হাঁটতে চাই, কারন সব পথের শেষ থাকলেও এই পথের শেষই হলো সূচনা। প্রিয় মানুষটার সাথে নৌকায় চড়বো তবে ও নৌকা চালাবে আর আমি ওরে দেখবো। রাত বারটার পর খোলা রাস্তায় প্রিয় মানুষটার সাথে হাঁটবো।যদি ও আমার সাথে না হাঁটে তাহলে বলবো যেন আমায় কোলে নিয়ে হাঁটে। বৃষ্টির দিনে প্রতিটা ফোটায় ওর সাথে ভিজতে চাই আর ওর চোখের ভালবাসায় হারাতে চাই নিজেকে। আর যাই হোক, আমার প্রিয় মানুষটা আমাকে সব সময় ভাল বাসতেই হবে। ডায়রীটা পড়তে পড়তে চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। এ গুলো শুধু ওর স্বপ্ন ছিল কিন্তু এরপরের পৃষ্টায় শুধু আমায় নিয়ে লেখা। আমার সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে গত রাতের ফোনে কথা বলার কথা গুলো । একটা মেয়ে কি করে এতোটা ভালবাসতে পারে? তা আজ বুঝতে পারলাম এই ডায়রী পড়ে। আমার আর ভাল লাগছে না তাই বৌদির থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে শুয়ে আছি তখন নিত্তিয়ার ফোন আসলো। আমিও খুব শান্ত ভাবে ফোনটা ধরলাম। যেন আমি কিছু জানিই না।
— ওই রাজ, আপনি নাকি আজ আমাদের বাসায় আসছিলেন।
— হুমম।
— তাহলে চলে গেলেন কেন?
— আরে একটা চাকরীর জন্য ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে এক বন্ধুর বাসায় কাজ ছিল।
— ও, আচ্ছা আপনি চাকরী পেয়ে প্রথম টাকা দিয়ে আমায় একটা শাড়ী কিনে দিবেন তো।
— আচ্ছা দিবো।
— হি হি হি আপনি কত্তো ভাল।
— হুমম
— আপনার কি মন খারাপ?
— একদম না তো। আচ্ছা নিত্তিয়া আপনি কখন ঘুম থেকে উঠেন?
— এই তো ৯টা বাজে। কেন?
— কাল একটু ৬টা বাজে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।
— কেন বলেন তো?
— এমনি, আপনি ঘুম থেকে উঠবেন আর আমি আসবো আপনার বাসায়।
— আচ্ছা আইসেন।
তারপর ফোনটা রেখে দিলাম। তারপর এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে ওর সাইকেলটা নিয়ে আসলাম। সকালে ৫টা বাজে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পরলাম। তারপর নিত্তিয়ার বাসার কাছে এসে ফোন দিতে দিতেই ও ফোনটা রিসিভ করে ফেললো।
— বাব্বা এত্তো সকালে নিত্তিয়া ঘুম থেকে উঠে গেছেন।
— ওই এখন ঘুম থেকে উঠি নি বরং রেডি হয়ে বসে আছি।
— ওয়েট আপনি বাসার বাইরে আসেন আমি চলেই আসছি।
আমি ওর বাসার সামনে যেতেই দেখি মেডাম রেডিয়ে হয়েই আছে। আমি সাইকেল টা ওদের বাসায় রেখে ওর সাথে হাঁটতে লাগলাম।
— আচ্ছা আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়?( নিত্তিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল)
— আপনাদের এলাকার রেল লাইনে যাবো। কত্তো দিনের শখ ছিল আপনার সাথে আমি রেল লাইনে হাটঁবো।
–বাব্বা রাজ সাহেব দেখি আজ রোমান্টিক মুডে আছে।
— রাজ সব সময়ই রোমান্টিক, শুধু পাবলিকে বুঝে না।
— হুমম বুঝলাম।
ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আমি ওর আঙ্গুলটা ধরেই হাঁটতে লাগলাম। ও যদিও আমার দিকে তাকিয়েছে তবুও কিছু বলছে না। জানি না ওর মনে এখন কি চলছে? তবে হ্যা আমার ভেতরটা অন্য রকম হয়ে গেছে। ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে চলে আসছি। যার পাশে দিয়ে নদী চলে যাচ্ছে।
— নিত্তিয়া চলেন একটু নৌকায় চড়ি।
— কিন্তু?
— কোন কিন্তু নয়? আমি খুব ভাল নৌকা চালাতে পারি তো। গ্রামের বাসায় শিখে ছিলাম।
— হুমম
তারপর ওরে নিয়ে নৌকা চালাতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর যে নৌকাটায় উঠেছি এটা আমার বন্ধুই ঠিক করেছে। গতকাল রাতে আমি আমার সব বন্ধুর কাছে হেল্প চাই যারা এই সব ব্যবস্থা করে। প্রায় ১ ঘন্টার মত নৌকা চালাচ্ছি। তখন ও বলল…
— আপনি সত্যি ঠিক আছেন তো।
— কেন?
— না মানে আমার ইচ্ছে গুলোর সাথে সব যেন মিলে যাচ্ছে।
— না গত রাতে স্বপ্নে দেখলাম আপনার সাথে আমি প্রেম করতে চাই আর তাই আজ করছি।
— ও প্রেম বুঝি এভাবে করে?
— জানি না তো তবে এভাবেই করে। তারপর নৌকা থেকে নেমে আবার হাঁটতে লাগলাম তবে এবার বাসার পথে। তখন আমি বললাম…
— নিত্তিয়া আমার না একটা ইচ্ছা ছিল?
— হুমম বলেন?
— আপনাকে কোলে তুলে হাঁটতে চাই।
— ইশশ শখ কত।
— হুমম খুব শখ।
— আচ্ছা অন্য একদিন নিয়েন হুমম।
আমি আর ওর কোন কথা না শুনে ওরে কোলো তুলে নিলাম। ও কিছুই বলছে না তবে খুব লজ্জা পাচ্ছে তাই একটু পর নামিয়ে দিলাম। ও চুপ হয়ে গেছে আর আমিও চুপ হয়ে রইলাম। তারপর ও নিজেই আমার আঙ্গুল ধরে হাঁটতে লাগলো। এরপর ওরে বাসায় দিয়ে আমি সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। একটু পরেই আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। আমি তাকিয়ে দেখি নিত্তিয়ার ম্যাসেজ তাই অন করে দেখি ” ধন্যবাদ সকালটা এতো সুন্দর করার জন্য “। এভাবে দিন গুলো কাটতে লাগলো। প্রতিটা রাতে ওর সাথে আমার কথা বলে শেষ হয় আর দিনটা শুরু হয় ওর ফোন পেয়ে। ও আমায় শাষন করে আর খাওয়ার জন্যও জোর করে। ভাল ভাবেই দিন গুলো কাটছিল। ওরে কত্তো ভালবাসতে যে ইচ্ছা করে। হঠাৎ একদিন ও আমাকে বলে আমি যেন ৫ দিন ওর সাথে যোগাযোগ না করি। আমি ওর কথাটা বুঝতে পেরেছি কেন ও আমায় যোগাযোগ করতে মানা করেছে। আমিও ওর কথা মত যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম কিন্তু বৌদির থেকে খুঁজ নিতে থাকি। দুপুরে ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ বৌদির নাম্বার থেকে একটা ফোন আসলো।
— হুমম বৌদি বলো।
— রাজ তুমি একটু সদর হাসপাতালে আসতে পারবে। নিত্তিয়া তোমায় শুধু একবার দেখতে চায়।( বৌদি কান্না করতে করতে বলল) আমি ফোনটা রেখে দৌড় দিলাম হাসপাতালের দিকে। আমার মাথায় কিছুই যেন কাজ করছে না কিন্তু যতক্ষনে আমি এসেছি ততক্ষণে নিত্তিয়া হারিয়ে গেলো। আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলো না। আমাকে একা করে না ফিরার দেশে চলে গেল।
এতক্ষন রিথি আমার কাছে নিত্তিয়ার কথা শুনছিল। রিথি হলো আমার স্ত্রী। গত দুই মাস আগে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে ছিল। একটু আগে রিথি আলমারি গুছানোর সময় একটা শাড়ী দেখলো যা আমি রিথিকে ধরতে দেই নি। আর নিত্তিয়া আমায় বলছিল যেন আমার চাকরীর প্রথম টাকা দিয়ে ওরে শাড়ী কিনে দেই আর আমিও তাই করে ছিলাম। আজ সেই শাড়ীর কথা জানতে চাওয়ায় আমি রিথিকে সব বললাম আর নিত্তিয়ার ডায়রীটাও দেখালাম। ডায়রীর শেষ পৃষ্টায় লেখা ছিল ” রাজ, আপনি সত্যি স্বপ্নচোর “। রিথি এখন কান্না করছে। আমি চাই না রিথি কাঁদুক।আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও এখন আমার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে।
একদিন সকালে ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ কারো জলের ছিটায় ঘুমটা ভাঙ্গলো। তাকিয়ে দেখি রিথি আমার সামনে ভিজা চুল আচড়াচ্ছে।আর আমার সামনের টেবিলে একটা নতুন ডায়রীর উপরে এক কাপ চা রাখা আছে। আমি চা টা রেখে ডায়রীটা হাতে নিলাম। আর ডায়রীটা খুলতে আমার একটা ছবি বার হলো আর আমার মুখের সামনে লেখা “এই মিস্টার হাঁসতে পারেন না “। আমি এটা দেখে একটা হাসি দিলাম। তারপর ডায়রীটা খুলে দেখলাম লেখা ” ইচ্ছা আছে আমার ভিজা চুলের ছিটায় আমার বরের ঘুম ভাঙ্গবে। এখন যদি ওনি আমায় বুঝতে পারেন তাহলে আমার বাকি স্বপ্ন গুলো এখানে লেখতে পারি। ” আমি একটা কলম নিয়ে লেখলাম ” পারমিশন দেওয়া হলো “। ও একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। ভালবাসাটাকে যেন হারিয়েও আবার ফিরে পেলাম।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা