হার্টস রিলেশন

হার্টস রিলেশন
– হ্যালো ভাইয়া!
– আপনি ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন?
– রিপ্লাই করেন না আপনি?
– এত ভাব দেখান কেন আপনি?
– মেয়েদের রিপ্লাই করতে ভয় পান?
– ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট ডিলিট দিলাম। অতি ভাবওয়ালা মানুষ আমার পছন্দ না।
– হ্যালো, একটা কথা বলার ছিলো। আপনার গানটা শুনলাম। অনেক মিষ্টি। কণ্ঠ শুনে আপনাকে রুড লাগে না।
সবাইকে কমেন্টে রিপ্লাইও দেন। আমাকে রিপ্লাই করেন না কেন? হঠাৎ ফিল্টার্ড মেসেজবক্সে একজনের পাঠানো গত কয়েকদিনের এ মেসেজগুলো চোখে এলো। রিপ্লাই দেবো দেবো বলে মন করছিলো, এমন সময় কী যেন ভেবে মেয়েটার টাইমলাইন দেখে আসতে গেলাম। গতকালকেই মেয়েটা একটা ট্রল শেয়ার করেছে। তাতে একপাশে ছেলে, আর অন্য পাশে মেয়ের হার্ট আঁকা। মেয়েটার হার্টে ১ জনই ছেলে। ছেলেটার হার্টে ৩ টা মেয়ে। সেই পোস্টের কমেন্টে ১৩ জনের মতো ছেলে দাবি করেছে, সব ছেলে খারাপ হয় না। তারা প্রত্যেকে এক এক জন স্বর্ণ! একজন অতি ট্রল লাভিং ছেলে কমেন্ট করেছে, একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে খুব ভালোবাসলেই বুঝি সে মেয়েরা জন্মায়, যাদের চোখে সব পুরুষেরাই খারাপ। সে কমেন্টে মেয়েটার সব বান্ধবীরা এংরি রিয়েক্ট করেছে।
এংরি রিয়েক্ট করা মেয়েদের মধ্যে একজনের প্রোফাইল পিকচারে চোখ পড়লো। নামে ক্লিক করে প্রোফাইলে ঢুকলাম। খুব সুন্দর মেয়েটা। বিশেষ করে ঠোঁট দারুণ। আমি ওর প্রোফাইল পিকচারে লাভ রিয়েকশন দেয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারলাম না। মেয়েটার প্রোফাইলে আরেকটু ক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে এসে আবার ফিল্টার্ড বক্সে এলাম। এক্ষুণি একটা মেসেজ এসেছে। এ মাত্র যে মেয়েটার টাইমলাইন স্ক্রল করলাম, সে মেয়েটাই মেসেজ করেছে! ধপ করে আমার চোখ বড় হয়ে গেল! মেসেজে লেখা, ও মাই গড ভাইয়া! আপনি আমার প্রোফাইল পিকচারে লাইক দিলেন কী করে? আপনি জানেন আমি আপনার কত বড় ফ্যান? আমার কোনো উত্তর মাথায় আসছে না। কী লেখা যায় ভেবে না পেয়ে লিখলাম, ধন্যবাদ! এ ধন্যবাদ দিয়ে আমি কী বুঝালাম, আর সে কী বুঝলো, তা ই বুঝতে পারলাম না। মেয়েটা গদগদ হয়ে আবার মেসেজ করলো, টিং! ভাইয়া, আমি আপনার ক্রাশ!
আমি আতংক চেপে প্রশ্ন করলাম, মানে? মেয়েটা বেশ করেকটা ইমোজি পাঠিয়ে লিখলো, স্যরি, ভাইয়া, এক্সাইটমেন্টে উল্টো লিখেছি। একটা কল করি প্লিজ? আমি সিন করে রিপ্লাই দিলাম না। ফোনে অপরিচিত কারও সাথে কথা বলা এক অন্য রকমের আতংক! এ আতংক কাটাতে পারিনি শত চেয়েও। তার উপর মেয়েটা আগুন সুন্দর! অপরিচিত অতি সুন্দর মেয়েদের সাথে কথা বলা এবং এড়িয়ে যাওয়া, দুটোই ভয়ানক মানসিক চাপের! প্রায় ১০ টা ইমোজি এসে গেল ঝড়ের মতো। সাথে তিন চারটা প্লিজ। ভাইয়া, একদম ১ মিনিট কথা বলেই রেখে দেবো। আমি মনের সাথে যুদ্ধে না পেরে বললাম, দেন। মেয়েটা অডিও কলের বদলে ভিডিও কল দিয়ে বসলো!
কতক্ষণ হা করে বসে রইলাম। কী করবো বুঝতে পারছি না। পৃথিবীর সব ধরনের মানসিক ক্রাশনেস ভিডিওকলে কেটে যেতে বাধ্যই! কল বাজতে বাজতে কেটে গেল। সাথে সাথে ওপাশ থেকে মেসেজ এলো, ভাইয়া, বুঝছি আপনি খালি গায়ে। দুই মিনিটে টিশার্ট পরে আসেন। ফাস্ট! আমি আগ-পিছ না ভেবে ছুটে ওয়াশরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে মুখ ডলে ধুয়ে মায়ের রুম থেকে ফেয়ার এন্ড লাভলি চুরি করে, মুখে মেখে কাটায় কাটায় দু মিনিটে রেডি হয়ে চলে এলাম। সাথে সাথে মেয়েটা কল দিলো। আমি রিসিভ করলাম। ভিডিও কলের ও প্রান্তে মেয়েটাকে প্রোফাইল পিকচারের মতোই পরী পরী লাগছে। মেয়েটা হাসি দিয়ে বলল, ভাইয়া এক মিনিট!
কয়েক সেকেন্ড নেটওয়ার্ক বাফার করলো, বাফার শেষে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা ঘটলো। টপ করে ভিডিও কলের কনফারেন্সে এড হলো আমার প্রেমিকা। ও কষকষে গলায় বলল, ভিডিও কল, তাই না? এসব করো? আমি আতংকে কল কেটে তিন চার দফা ব্যাক চেপে হোমপেজে এসে পড়লাম। হোমপেজে আরেকটা মেয়ে ট্রলটা শেয়ার করেছে, একটা মেয়ের হার্টে একটা ছেলে, একটা ছেলের হার্টে তিনটা মেয়ে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত