সাহেদ উঠো! আরে উঠো না! কি হয়েছে? বাচ্চাদের একটু স্কুলের জন্য রেডি করে দাও না! দেরি হয়ে গেছে আজ। আমি তাদের টিফিন রেডি করছি! সাহেদ উঠলো। বেশ যত্ন করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করলো। দুজনে অফিসে চলে গেল। দুপুরের দিকে সাহেদের ফোন বেজে উঠলো।
নীলা বললো, সাহেদ আমার অফিসে মিটিং আছে। তুমি কষ্ট করে বাচ্চাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসবা? সাহেদ বেরিয়ে পড়লো। বাচ্চাদের ঠিকঠাকমতো বাসায় পৌছে দিয়ে আবার অফিসে চলে গেল। সন্ধ্যায় আবার নীলার ফোন আসলো। সাহেদ, আমার কাজ আরো কিছু বাকি আছে। তুমি কষ্ট করে বাজারে হয়ে যাও। কিছু কাঁচা সবজি নিয়ে যেয়ো। আম্মা আব্বা আবার সবজি ছাড়া রাতে খায় না। সাহেদ বাজারে গিয়ে সবজি কিনে বাসায় ফিরলো। বেশ কিছুক্ষণ পর নীলা ফিরলো। তড়িঘড়ি করে রান্নাবান্নার কাজে লেগে গেল।
সাহেদের সাথে আজকে সারাদিন ভালো করে কথাও হলো না। সাহেদ মনমরা হয়ে টিভি দেখছে। নীলা আবার বললো, সাহেদ একটু শষা আর টমেটো কেটে দিবা? সালাদ বানাতে হবে। আমি এদিকটা দেখছি। চুপচাপ থেকে সাহেদ সালাদটাও কেটে দিল। রাতে ডিনারের পর নীলা আবার বললো, সাহেদ আব্বা আম্মা ঔষধ খেয়েছে কিনা একটু দেখে আসো না? আমি বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসছি।
সাহেদ সেটাও করে দিয়ে আসলো। বেলকনিতে একা একা বসে সাহেদ আকাশের তারা দেখছে। নীলা আসলো। সাহেদ বেশ আপসেট দেখে নীলা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো, কি হয়েছে সাহেদ? মন খারাপ নাকি? না ভাবছি! আকাশের তারা গুলো দূর থেকে দেখলে একে অপরের কতো কাছে দেখায়, তাই না! কিন্তু বাস্তবে তাদের মাঝে কতো দূরত্ব। তোমার মনে আছে নীলা! বিয়ের আগে তুমি বারবার বলতে আমি তোমাকে সময় দিতে পারিনা। খালি কাজের ব্যস্ততা। কতো অভিযোগ ছিল তোমার। সে সময় আমরা কতো কাছে ছিলাম। প্রতিদিন নিয়ম করে দেখা করতাম। কথা বলতাম খুব। সময় ছিল তখন দুজনের কাছে খুব। আর এখন দেখো!
নীলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, এদিকে আসো! কোথায়? আরে আসো তো, নীলা সাহেদকে নিয়ে গিয়ে তার বাবা মার ঘরের সামনে দরজাটা একটু ফাঁক করে বললো, ওই দেখো তারা দুজন কতো শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। এবার এদিকে এসো! ছেলেমেয়েদের রুমের সামনে গিয়ে, আমাদের ভবিষ্যত দেখো তারাও কতো শান্তিতে ঘুমোচ্ছে! তুমি জানো সাহেদ! তখন তুমি আর আমি ছিলাম। এখন তুমি আমি মিলে আমরা হয়েছি। এখন আর তুমি আমি এর মধ্যে আর নেই। আমরা আমাদের মধ্যেই চলে এসেছি।
ওখানে যারা ঘুমোচ্ছে তারা আমাদের ভবিষ্যত। আমরা যা করছি তাদের জন্যই করছি। তারা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। এখন আমরা যদি আগের মতো তুমি আমি তে চলে যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যত দেখবে কে?
আমাদের সময় আর ভালোবাসা কোথাও হারিয়ে যায় নি শুধু পরিবারের কিছু মানুষের সাথে বিভক্ত হয়েছে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা