সব পর্ব একসাথে দেওয়া হলো।
–ভাইয়া ভাড়াটা দিন।
বাস কন্টাক্টারের ডাকে বাস্তবের ফিরে আসে শুভ্র! এতোক্ষণ অতীতের পাতাগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছিলো হয়তো! বাস কন্টাক্টটারকে ভাড়া দিয়ে শুভ্র বাসের
জানালা দিয়ে উঁকি মেরে তাকিয়ে অবাক ভঙ্গিমায় নিজেকে প্রশ্ন করলো এটা আমার দেশ?? মাত্র দশটি বছরের ব্যবধানে নিজের দেশটাকে যেন নতুন দেশ ভাবছে
শুভ্র! রাস্তায় মাঝে সাঁড়ি সাঁড়ি গাড়িগুলোর কারণে মানুষকে কতোটা না বিদঘুটে পরিস্থিতির মধ্যে চলাফেরা করতে হয়! অথচ মাত্র কয়েকটি বছর আগে গাড়ির অভাবে
কত ক্রোশের পর ক্রোশ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছে মানুষ! রাস্তার দু-ধারে কৃত্তিম আলোর ল্যামপোষ্টগুলো দুরত্ব অনুযায়ী দাঁড়িয়ে অন্ধকারকে ঢেঁকে ফেলার কি অপ্রাণ
চেষ্টার সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত! অথচ আজ থেকে কয়েক বছর আগে সন্ধা রজনীতেই ঝিঁঝিঁ ডাকার মহাউৎসব লেগে যেত! রাস্তার দু-ধারে যে শুধু ল্যামপোষ্ট
দাঁড়িয়ে আছে তা নয় বিশাল বিশাল সুউচ্চ দালান কৌঠা দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া!
শুধু জন্ম ভূমির পরিবর্তন হয়েছে তা নয় তার পরিবারের জীবন ধারার পরিবর্তন ঘটেছে বিরাট আকারে!
মাত্র দশটি বছরে শুভ্রের বড় ভাইয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে অব্শ্য কোন আনুষ্ঠানিকতা হয়নি একমাত্র শুভ্রের অনুপস্থিতির কারণে।পরিবারের একটাই কথা শুভ্র
দেশে আসলেই ছোট একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূত্র বধূকে ঘরে তুলে আনবে এর আগে নয়!
ছোট বোনটার বিয়ে হয়েছে দু বছর হলো! আনন্দের ব্যপার হলো ছোট বোনের কোল জুড়ে একটা মেয়ে সন্তানের আগমন হয়েছে একবছর হলো তার মানে শুভ্র মামা হয়েছে।
যখন স্বল্প সময়ের জন্য বাসায় ফোন দিতো শুভ্র পুচকে মেয়েটা শুভ্রকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে বলতো মামা মামা! শুভ্রের তখন কি যে আনন্দ হতো কিন্ত কখনো প্রকাশ করতো না কতগুলো অব্যক্ত অভিমানের জন্য!
শুভ্রের মাথায় একটাই কথা কাজ করতো কোনদিন আর দেশের মাটিতে পা ফেলবে না! শুভ্র তার মায়ের সাথে কথা খুব স্বল্প বলতো কারণ সে চাইতো না মায়ের
মায়াভরা কথা বেশি শুনতে তাহলে যে তার কথার মূল্য শূন্যে নেমে যাবে! শুভ্রের পরিবার ভালো করেই জানে ছেলেটা যা বলে তাই করে সেজন্য কেউ জোর করে বলতো না দেশে ফিরে আয় কিন্ত প্রায়- সময় মায়ের কথার মধ্যে এতো আকুতি এতো মিনোতি কিভাবে ফেলে দিবে শুভ্র!
সব রাগ অভিমান ভেঙ্গে আজ শুভ্র দেশের মাটিতে পা দিয়েছে উদ্দেশ্য অনেকগুলো তার প্রধান উদ্দেশ্য মায়ের মায়াভরা মুখটা দেখে দশটি বছরের তৃষ্ণা মেটানো, পুচকে ভাগনীর কাছ থেকে মামা ডাক শ্রবণ করা, ভাইয়ার স্ত্রীকে মানে ভাবীকে বাসায় নিয়ে আসা।
শুভ্র জানে ফিরলে তাকে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগবে সবাই কিন্ত সে তো বিয়ে করবে না। বিয়ে ব্যপারটা শুনলেই গা শিরশির করে উঠে শুভ্রের এর অব্শ্য কতিপয় কারণ লুঁকিয়ে আছে।
বউ একটা বিরক্তিকর বস্ত সবসময় ঘাড়ের উপর বসে হুকুম করবে এটা মোটে পছন্দ না শুভ্রের! এখানে যাও ওখানে যাও, এটা করো না ওটা করো, ঐ মেয়ের দিকে তাকাবে না সব সময়ে আমার দিকে তাকাবে ধুর এগুলো সহ্য করা যায়! শুভ্র হলো মুক্ত পাখি তাকে কি আর খাঁচায় বন্দি করা সম্ভব!
.
বিমানবন্দর থেকে শুভ্রকে এগিয়ে আনতে তার ভাইয়া সুবরান সাহেব আসলেও ফিরে যেতে হয়েছে একাই হুম সাথে শুধু নিয়ে যেতে হয়েছে শুভ্রের আনা মালপত্রের
বোঁঝা। শুভ্র শহরের আলো বাতাস দেখার তীব্র ইচ্ছা পূরণ করবে কোলাহল পূর্ণ্য বাসের সিটে বসে! শুভ্র টিকেট কাউন্টারে টিকেট সংগ্রহ করার আগেই বাস ছেড়ে
দেওয়া অবস্থায় উঠে পড়ে এবং পরোক্ষণে আবার বেক চাঁপার ফলে পড়ে যায়ে মাঝ সাঁড়ির একটা সিটে বসে থাকা ষোলশী একটি মেয়ের উপর ব্যাস এতেই ঘটে যায় লক্কা কান্ড!!
–এই আপনার সমস্যা কি? মেয়ে দেখলেই তার গায়ের উপর পড়তে ইচ্ছা করে তাই না?
–ভাষা ঠিক করুন! দেখ তুমি বয়সে খুব ছোট তোমার মুখে এসব কথা মানায় না। তাছাড়া আমি ইচ্ছে করে কি তোমার উপর পড়ছি নাকি?
— এখন তো বলবেন-ই এসব কথা।
কোথা থেকে যে এসব ফালতু লোক আসে বুঝতে পারি না।
— শুভ্র রাগে গর্জে উঠতে পারে না কারণ শুভ্র জানে দেশে মেয়েদের ক্ষমতা সম্পর্কে, কি না কি বলে আবার গারদে ঢুকিয়ে দিবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। শুভ্র শান্ত গলায় বলে, সিট থেকে উঠুন আমি বসবো
— মানে?
— এটা আমার সিট তাই উঠুন।
— কই সিটে তো কারো নাম দেখছি না!
–সিটে কি নাম থাকে! নাম নাম থাকে টিকেটে।
— তাহলে টিকেটে বসে পড়ুন।
–শুভ্র বোকা বোকা ভাব নিয়ে পাশে সিটে ধপাস করে বসে পড়লো।
.
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, একি মোর অপরাধ…সামান্য শব্দে হেডফোনে গান ভেসে বেড়াচ্ছে হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে এক ধমকা হাওয়ায় মেয়েটার চুল শুভ্রের মুখে
পড়লো। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বলতে যাবে তখনি দেখতে পেল একটি মায়াবতীর মায়ামাখা মুখ। শুভ্র ভাবছে মেয়েটা বদ মেজাজি হলেও দেখতে বেশ মায়াবী, শ্যামলা ফর্সা
গায়ের রং, বাদামি রংয়ের চোখ দুটি, ঘন কালো কেশ।শুভ্রের বুক পকেটে রাখা ফোনটা অনাবিলভাবে ঝাকিয়েই যাচ্ছে সম্ভাবত বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।
— এক্সকিউস মি শুনছেন?
— আমায় বলছেন?
— যদি আপনার চুলগুলো একটু সরাতেই ভালো হত, আসলে আপনার চুলের জন্য কিছুই দেখতে পাচ্ছি না!
— কি ক্ষেত মানুষ! আপনার কি হাত নাই যে আমাকে ডেকে বলতে হবে, ধুর ভাবনাটার মুটটাই উপর জল ঢেলে নষ্ট করে দিলো!
— ধুর কেমন মেয়েরে বাবা, এ জন্মে এমন ধরনের মেয়ে কোনদিন দেখিনি।
জন্মের সময় মনে হয় একে কেউ মধু দেয়নি….. শুভ্র বিড়বিড় করে কথাগুলো বলতে বলতে সিট ছেড়ে পাশের অন্য এক সিটে গিয়ে বসলো।
— এই আপনি কি বললেন?
— বলছি আপনার গুনের কোন তুলনাই হয় না আর আপনার এ গুনের জন্য আপনার স্বামীকে অবশ্যই পস্তাতে হবে,
বেচারা কি কপাল নিয়েই না জন্মেছে!
— মেয়েটা আর কিছু বললো না শুধু বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল।
.
আসসালামু আলাইকুম মা।
ফোন দিয়েছো কেন? আমার আর বেশি সময় লাগবে না ২ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাবো।
— বলছি বাসায় আসার প্রয়োজন নাই।
— কি বলছো মা!
— হুম ঠিক বলছি। আমরা সবাই তোর ভাইয়ার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি তুই ঐখান থেকেই চলে যা ওখানে।
— আমি চিনবো কি করে! আমি পারবো না। তোমরা না হয় চলে যাও, ফিরে আসলে দেখা হবে।
— বলছি চলে আয়।
শুভ্র নিরুপায় হয়ে মায়ের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী যাওয়ায় সিন্ধান্ত নিল। বাস তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে থামলো, শুভ্র নিচে নেমে পড়লো। কিছুক্ষণ পর শুভ্রের ভ্রু কুচকে গেল, মেয়েটিও বাস
থেকে নামকে দেখে। আবার পরক্ষণেই ভাবলো মনে হয় মেয়েটার বাসা এ খানেই হবে হয়তো। মায়ের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে সি এন জি
স্ট্যান্ডে গিয়ে সি এন জিতে যেতে হবে তারপর কিছুপথ মোটর চালিত ভ্যানে করে একবারে বাসার সামনে। শুভ্র সি এন জি স্ট্যান্ডে গিয়ে কুশের চড়ে যাবার সি এন জিতে উঠবে তখনি আবার ভ্রু কুচকে গেল!
মেয়েটা এখানেও! শুভ্র মোটামুটি অপ্রস্তুত মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে।
মেয়েটি পেছনের সিটে বসে আছে বিধায় পিছনের সিট খালি থাকা সত্তেও শুভ্র পেছনে গিয়ে বসলো না!
সামনে ড্রাইভারের পাশে থাকা সিটে কোন রকমে বসে পড়লো। গাছপালা ঢেঁকে থাকা গ্রাম্য রাস্তার বুক চিঁড়ে সি এন জি তার আপন গতিতে পথ অতিক্রম করছে আর
শুভ্র তার বিস্ময় চোখে গ্রাম্য প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। শুভ্র ভাবছে পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এ সৌন্দর্যের মায়াতেই হয়তো তার প্রতিটি কাব্য গ্রন্থে পল্লী বাংলার পশু পাখিকে টেনেছে, জীবনান্দ এ সৌন্দর্যতত্ত্বের টানের হয়তো লিখেছিলো, আবার আসিবো ফিরে ধাঁন সিঁড়ির নদীর তীরে!
সামনে থাকা ছোট ডিভাইডারের ঝাঁকুনির জন্য শুভ্রের ভাবনার ছেদ পড়লো এবং কিছু মূহুত্বপর সি এন জি তার গন্তব্যস্থানে পৌছে গেল।
.
দ্বিতীয় অংশ
সি এন জি টা ঠিক সামনে একটি কাঁচা রাস্তার মোড়ে এসে থামলো,সম্ভাবত এটির সি এন জির শেষ গন্তব্যস্থল। শুভ্র দেখতে পেল একটি লোক মোটর চালিত ভ্যানের উপর পা তুলে মনের সুখে গান করছে!
অনেকক্ষণ যাবৎ গানটি শ্রবণ করতে শুভ্রের ভালোই লাগছে বটে কিন্ত দুপুরের সূর্যের খাঁড়া অবস্থানের কারণে আবার অস্থতির মাত্রা একটু একটু করে বেড়ে চলেছে শুভ্রের মাঝে।
–চাচা যাবেন কুশের চড় স্কুলের সামনে ছাত্তার মাতাবরের বাড়ি ?
— হ বাবা যামু কিন্ত একটু দেরি কর আর একজন মানুষ আইলেই যামু।
— আচ্ছা চাচা আমি বরং একটু ঐদিকে ঘুরে আছি।
শুভ্র ভ্যান চালককে বলে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ বিশাল আকৃতির তাল গাছের নিচে বসে পড়লো।শুভ্র নিজে নিজেকে ভীষণভাবে আঘাত করছে কেন এতোদিন নিজের জন্মভুমি এই সুজলা সুফলা দেশকে ছেড়ে অন্য দেশে দশটি বছর কাঁটিয়েছে!!
চারদিকে পাখপাখালির কিটিমিটি ডাক,দক্ষিণা মৃদু হাওয়া, তাল গাছটির প্রতিটি ডালে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা দেখে শুভ্রের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে
উঠলো। শুভ্র মনে মনে বলতে লাগলো, সত্যিই তুমি সবার সেরা কারণ তোমার মধ্যে আছে হাজারো আঁকা বাঁকা নদী, বিস্তৃত ফসলের মাঠ,তোমার বুকে ঘুমিয়ে আছে
সাত আউলিয়া, মন ভুলানো সাঁড়ি সাঁড়ি চা বাগান, আছে দাঁড় টানা মাঝির কষ্ঠে ভাটিয়ালি সুর,আছে প্রতিটি মানুষের মনে সোনার সুতোয় বুনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বপ্ন সত্যিই ভালোবাসি তোমায় জন্মভুমি প্রিয় মাতৃভুমি।
— বাবাজি আইসা পড়ো, যাত্রী আইতাছে । (ভ্যান চালক)
শুভ্র ভ্যানের সীটে বসে লক্ষ করলো সেই মেয়েটাই ভ্যানের দিকে আসছে!
— চাচা আপনার আর যাত্রী উঠানো লাগবে না, আমি আপনাকে ঐ যাত্রীর ডাবল ভাড়া দিয়ে দিবো আপনি চলুন!
–কোন ব্যজাল আছে নাকি বাবাজি?
–না, আপনি চলুন।
ভ্যান চালক চলতে শুরু করলো আর পিছন থেকে মেয়েটা থামুন থামুন করে চিৎকার দিয়েই যাচ্ছে কারণ মাত্র একটা ভ্যান দাঁড় করানো ছিল রাস্তায়।
শুভ্র মনে মনে ভীষন খুশি মেয়েটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া গেছে, থাকুক দুপুরের রোদে দাঁড়িয়ে কেমন লাগে বুঝুক।
.
ভ্যান চলছে আঁকা বাঁকা মেঠো পথের বুক চিঁড়ে,একপাশে সুপারি বাগান,একপাশে আম বাগান আর রাস্তার দুধারে নিয়মিত বিরতিতে নারিকেল আর কাঁঠাল গাছ শুভ্রের মনে হচ্ছে সে যেন কোন রুপপরীতে এসে পড়েছে যেখানে রুপের কোন শেষ নেই! ক্ষণে ক্ষণে রুপের ঝলক প্রতিটি পলকে, প্রতিটি দিকে!!
শুভ্র সামনে একটি নদী আর নদীর ওপারে চড় দেতে পেল..
–চাচা ওটাই কি কুশের চড়?
— হ বাবাজি।
শুভ্র খেয়াল করলো ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নদীতে সাঁতার কাটছে, কোন কোন সম বয়সী ছেলে মেয়েদের দল যেন সাঁতারু প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে! শুভ্রের
চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই ১৫ টি বছের আগের কথা, শুভ্র তখন মাত্র ক্লাশ নাইনে! সে বার এক সাঁতার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসাবে একটি রেডিও পেয়েছিলো!
দিনগুলো সত্যিই পাল্টে গেছে খুব করে পাল্টে গেছে! সেদিনকার দুষ্ট শুভ্র এখন ভাবাকান্ত শান্ত শুভ্রে পরিনত!
–বাবাজি আইসা পড়ছি।
–শুভ্র ভাবনার জগৎ থেকে ছিটকে বাস্তবে ফিরে দেখলো ভ্যানটি একটি দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে কতগুলো লোক জড় হয়ে আছে! ভীড়ের
মাঝে একটি মাত্র পরিচিত মুখ হুম শুভ্রের ভাবী আসমা বেগম। সুবরান সাহেব মানে শুভ্রের ভাইয়া আগেই আসমা বেগমের ছবি পাঠিয়ে সুবিধা করছে বটে মনে মনে ভাবছে আর মাথা চুলকাচ্ছে।
— আসসালামু আলাইকুম ভাবী।
— ওয়ালাকুম আসসালাম দেবর সাহেব।
একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আসমা বেগম। শুভ্রের মন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে তার পরিবারের কেউ নেই এখানে তারা এখনো পথিপথে
রয়েছে অপরিচিত একটি বাসায় কিভাবে এতোটা সময় পাড় করবে তাছাড়া সেই পুরোনো অভ্যাসটা এখন জেঁকে বসেছে মানে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে এক কথায় অসহ্য।
–এই নাও দেবর মহাদয়। (প্যারাসিটামল আর এক গ্যাস পানি হাতে নিয়ে)
–আমি কি করবো এগুলোর দিয়ে?
–না বুঝার ভান করবা না! তোমার ভাইয়া সব বলছে।
— কি বলছে?
–জার্নি শেষে তোমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা
করে! তখন তোমার প্যারাসিটামল খেঁতে হয় সাথে কড়া করে একটা ঘুম দিতে হয়! ঐ যে দেখছো রুমটা ঐখানে গিয়ে কড়া একটা ঘুম দাও, যাও।
–শুভ্র মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এই ভেবে, এতোদিন পাড় হবার পরও পুরোনো অভ্যাসটার কথা ঠিক সবাই মনে রেখেছে! পরিবারের মানুষগুলি বোধ হয় এমনি হয়।
শোবার আগে শুভ্র মায়ের কাছে ফোন দেয় তার মা জানায় কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
.
বিকাল ৫টা
বাসায় যেন উৎসবের রেস পড়ে গেছে।
দুজন মানুষ দৌঁড়ে শুভ্রের রুমে আসলো,অতঃপর…
—এতোদিন পর আসলে? আমার বুঝি কষ্ট লাগে না তোমায় ছাড়া? (ভাবী)
— কি করবো বলো আমারও তো আসতে মন চায় কিন্ত গাঁধা ভাইটাকে দেখো নিজে দেশে আসবে না বিয়ে করবে না! আর তার জন্য মা বলে তোমাকে বাসায় নিবে না কারণ এই গাঁধাটাই আমাদের পরিবারের সবচেয়ে আদরের। (সুবরান সাহেব)
–হইছে আর অযুহাত দেখাতে হবে না!
–তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি বলো? কয়দিন পরেই তোমাকে সবসময়ের জন্য নিজের করে পাবো, ভেবেই তো আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাচ্ছি বুঝতেছো না কেন তাছাড়া ভালোবাসি তোমায় অনেক ভালোবাসি।
–ছাড়ো তো ওখানে শুভ্র ঘুমিয়ে আছে যদি দেখে ফেলে।
–কম্বল মুড়ি আছে তো দেখবে কিভাবে? আর জেগে থাকলে শুনুক কতটা কষ্টে ছিলাম এতোদিন?
–যাও ভাগো এখন।
–ঠিক আছে রাণী সাহেবা।
–এই শুনো নিধি তো এখনো এসে পৌঁছালো না!
–দেখো কারো সাথে আবার পালিয়ে গেল কিনা! বলা তো যায় না নিধি বলে কথা।
–সব সময় মজা একদম-ই ভালো লাগে না!
–আর মজা করছি না। এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে ওকে ফোন দিয়েছিলাম।
— এই যে আমার লক্ষী বর সাহেব এ কথাটা আগে বললে কি হতো?
–যাই বলো তোমার থেকে নিধি কিন্ত একটু বেশিই ভালোবাসে আমার!
— কি-ই?
–মজা করলাম গো সোনা, আমি যাই হা।
সুবরান সাহেব ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার পর আসমা বেগম এক গাল মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
.
পরিচিত জায়গা ছেড়ে অপরিচিত জায়গায় ঘুম শুভ্রের ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়িত্ব লাভ করে না এটা সুবরান সাহেব নিজেও বেশ ভালো করে জানে!
হয়তো শুভ্রকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বলছে নয়তো অনেকদিন পর নিজ স্ত্রীর সাথে দেখা হওয়ায় কারণে আবেগটা ধরে রাখতে পারেনি,
কথাগুলো ভেবেই শুভ্র হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে নিজের অজান্তেই!
তবে আজকে নিজের মধ্যে অন্যরকমের এক অনুভুতি বিরাজ করছে আগে কখনো এমন হয়নি! মনের সীমানাটা আজ বিষন্ন লাগছে, ফাঁকা লাগছে! ভাবছে সত্যিই
আমি গাঁধা, জীবন পরিক্রমার পথটা অতোটা সহজ না, এক সময় সহজ থাকলেও সময়ের পরিবর্তনের পরিক্রমায় এক সময় তা দুর্গম হয়ে যায়! তখন সে জীবনকে জীবন বলা নিচ্ছুক বোকামি…..
.
তৃতীয় অংশ
কিছু সময় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাঁটিয়ে দেওয়া পর একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো শুভ্র।বাসায় যেন মাছের বাজার বসে গেছে!
যে যার মতো চিৎকার চেঁচামেচি করে মাছের দর কষছে! আর শুভ্র অসহায় এক দর্শকের ভূমিকায় নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে নিরবে, কি অদ্ভুদ!!
শোবার রুম থেকে বেড়িয়ে দেখলো সত্যিই মাছের বাজারের মতোই অবস্থা,বাসার সামনে লোকজনের অভাব নেই, এ যেন কোন বিয়ে বাড়ি!
শুভ্রের দিকে চোখ পড়তেই আসমা বেগম সবার উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,, ঐ যে আমার দেবর মশাই।
সবাই শুভ্রের ভাবীর এ কথাটুকু শোনার পর একে অন্যের দিকে চেয়ে চোখে চোখে কথা বলছে, সবাই শুভ্রের দিকে কেমন ভঙ্গিমায় যেন তাকাচ্ছে যে তাদের সামনে
চিড়িয়াখানারর কোন জন্তুজানোয়ার দাঁড়িয়ে তাদের বিনোদন দিচ্ছে! আবার কেউ কেউ কানাকানি করে বলছে,, দেখ আসমার দেবর দেখতে কত সুন্দর, কত ভদ্র
মার্জিত!শুভ্র লোকজনের এসব কর্মকান্ড দেখে ভাবছে, যাক বাবা আমাকে নিয়ে সবাই এতো মাতামাতি করছে কেন? আমি এ বাড়ির জামাই নাকি যে আমাকে নিয়ে এৃভাবে আলোচনা করতে হবে! বাড়ির আসল জামাই বাদে ফেক জামাই নিয়ে নাচানাচি করছে!
.
–কি দেবর সাহেব ঘুম কেমন হলো?
–মোটামাটি।
–মোটামাটি কেন?
–রুমের ভেতর এতো রোমান্টিকতা চললে ঘুম হয় নাকি?
–রোমান্টিকতা বুঝো তাহলে?
–না।
–বুঝা লাগবে না। এবার চলো
–কোথায়?
–হাতে মেহেদী পড়বে।
–না মেহেদী পড়তে ভালো লাগে না ভাবী। তাছাড়া আমি মেহেদী পড়বো কেন?
–নিধি খুব ভালো করে পড়াতে পারে সেজন্য বললাম, একবার পড়েই দেখ।
–আচ্ছা ভাবী নিধিটা কে?
–পাজি একটা মেয়ে সম্পর্কে আমার ছোট বোন কিন্ত শাসন করে বড় বোনের মত বুঝলে?
–হুম। ঠিক আছে চলো আগে মেহেদীর চেপ্টার বন্ধ করি।
শুভ্ররের বুক পকেটে রাখা ফোনটা অবিরত ঝাঁকিয়ে জানান দিচ্ছে কেউ তাকে ডাকছে! হুম শুভ্রের মায়ের ফোন,,
–হ্যালো মা তোমরা এখনো পৌছালে না!
–এইতো আর কিছু দুর। একটু রেল স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে আয়।
–ঠিক আছে আসতেছি।
মায়ের ফোন রেখে আসমা বেগমকে বলে রওনা দিল উদ্দেশ্য রেল স্টেশন।
রাস্তার দু- ধারে সাঁড়ি সাঁড়ি নারিকেল গাছ দেখতে ভালোই লাগছে! বার বার হৃদ স্পন্দন জানান দিচ্ছে তুমিই সব দেশের সেরা দেশ কিন্ত অনুভুতির প্রতিটি ভাবনা পরক্ষণেই বিষন্ন হয়ে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায়!
এই একই রাস্তার রিপরীত দিয়ে একটি মেয়ে হেঁটে আসছে, ঘেঁমে ছিপ ছিপে অবস্থা, চোখ-মুখে হাই ভোল্টের রাগের ছাপগুলো পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে!
হুম এই সেই বদ মেজাজি মেয়ে যার সাথে প্রথমে বাসে তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জায়গায় শেষমেষ কুশের চড়ের এই রাস্তার ধারে! কি অদ্ভুদ!
শুভ্র একবার ভাবলো সরি বলি কিন্ত পরমূহুত্বে সিদ্বান্ত বদলে ফেলে হনহন করে পাশ কাঁটিয়ে চলে গেল। মেয়েটি শুধুমাত্র রাগী চোখ নিয়ে ক্রসিং এর সময় একবার তাকিয়ে চলে গেল।
.
চারদিকে আঁধো আঁধো অন্ধকার নেমে আসছে, শুভ্র ও তার পরিবার এখন ছাত্তার মাতাবরের বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষমাণ, ছাত্তার সাহেব এবং তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম হাসি মুখে শুভ্রের পরিবারকে স্বাগত জানিয়ে ভেতর বাড়ি নিয়ে গেল।
রাত ৮টা বসারঘর এখন এক বৃহৎ আকারের জলসার ঘরে পরিনত!
একে একে সবাই মজার মজার গল্প বলছে আর বাকীরা অট্রহাসি দিয়ে গল্প দাতাকে উৎসাহ দিচ্ছে।
–শুভ।
–(আসমা বেগমের ডাকে শুভ পিছন ফিরে) হুম ভাবি বলো?
— এ রুমে আসো।
–কেন?
–মেহেদী পড়বে না! তাছাড়া নিধির সাথে তো তোমার এখনো পরিচয় হলো না!
–মেহেদী পড়ার ইচ্ছা নাই তবে নিধির সাথে পরিচয় হবার দরকার কিছুটা হলেও আছে বলতে হয়, কারণ সে তো সম্পর্কে বেয়ান হয় তাই না!
–হুম, বকবক বাদে আসো।
আসমা বেগমের পিছন পিছন শুভ্র একটি কক্ষে প্রবেশ করে আশ্চার্য হয়ে যায়! কি পরিপাটি ঘর, পড়ার টেবিলের এক কোণে ছোট একটি ফুল দানি, দেওয়ালে টাঙ্গানো বাচ্চাদের ছবি সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় শুভ্রের পছন্দের জিনিজটাই এখানে যত্নে আগলে রয়েছে সেটা হলো ফুর দানিতে সদ্য ফোটা সাদা রংয়ের ফুলগুলো!
–নিধি।
–বলো?
–তোর কি ওদের মেহেদী পড়ানো হইছে?
–এইতো আর একজন আছে। কেন?
–আমার একজন স্পেশাল মানুষকে মেহেদী পড়িয়ে দিতে হবে।
–বসতে বলো। (নিধি শুভ্রের বিপরীত দিকে বসে বসেই আসমা বেগমের সাথে কথাগুলো বলছে)
–ঠিক আছে।
–তোমার বর বাদে তোমার স্পেশাল মানুষ আছে আগে তো বলনি! মানুষটা কে বলো তো শুনি?
–আমার দেবর মশাই।
–ও তাই বলো!
–নিধি আমার কাজ আছে আমি যাই তুই বরং শুভ্রকে মেহেদী দিতে থাক।
কথাগুলো বলেই আসমা বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
শুভ্র, নিধিও কয়েজন মেহেদী পড়ুয়া কিশোরী ছাড়া রুমে আর কেউ নেই।
শুভ্র দেখলো একজন এলো কেশি মেয়ে বসে আছে তার সামনে, গায়ে মেরুন রংয়ের থ্রী পিস, হাতে সামান্য কাঁচের চুড়ি পিছন থেকেই মেয়েটিকে অপরুপ দেখাচ্ছে!
শুভ্র নিধির সাথে কথা বলতে চাচ্ছে কিন্ত সাহস পাচ্ছে না কারণ আসমা বেগম আগেই বলে দিয়েছে নিধি খুব রাগী, রাগলে হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়ে তার শত্রুর পিছেনে ছুটে তারা নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে!
–তোদের মেহেদী পড়া শেষ এবার তোরা যা। আসুন শুভ্র সাহেব আপনাকে মেহেদী দেই বলে নিধি যখন শুভ্রের দিকে তাকায় তখন তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গ পড়ে!
–দেখ আমি তোমার সমন্ধে অনেককিছু জেনেছি আশা করি তোমার সেইসব চরিত্রের প্রতিফলন মোটেও ঘটাবে না তার কারণ আমি তোমার গেস্ট, তোমার বোনের দেবর, তোমার বেয়াই বুঝতে পেরেছো?
–হুম তাই তো দেখছি আপনি আমার গেস্ট মানে বেয়াই আপনাকে তো খাতির যত্ন করতেই হবে! ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন কেমন আমি খাতির যত্নের ব্যবস্থা করছি!
–না আমি বরং যাই! কথাটুকু বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো কিন্ত পিছন ফিরে দেখলো নিধি ছোট একটা লাঠি নিয়ে দৌড়ে আসছে বিধায় সেও দৌড় দিলো। শুভ্র
ভাবলো না নিচে যাওয়া যাবে না, যদি নিধি নিচে গিয়ে সবার সামনেই মারতে শুরু করে তাহলে মান সম্মান ধূলোয় লুটোপুটি খাবে তার চেয়ে বরং ছাদের দিকে যাই।
শুভ্র ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আর নিধি পিছু পিছু ছাদে উপস্থিত লাঠি হাতে! শুভ্র ভাবছে শেষমেষ মেয়েদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে, কি কপাল!
কিন্ত ভাগ্যে যে শাস্তির বদলে অন্যকিছু লেখা আছে কে জানতো?
সিনেমার কোন ডিরেক্টর যদি এ দৃশ্য দেখতো তাহলে বানিয়ে ফেলতো রোমাঞ্চকর কোন দৃশ্যপট, কবি যদি দেখতো বানিয়ে ফেলতো কোন প্রেমের কাব্য, উপনাসিক যদি দেখতো বানিয়ে ফেলতো কোন কালজয়ী উপনাস!
দেখেছে শুধু নিস্তব্ধ পরিবেশ,আকাশ সাথে আকাশে উড়ে বেড়ানো অজস্র নিভু নিভু করে জ্বলা তারার দল!
নিধি শুভ্রকে মারতে এগিয়ে আসার সময় ছাদে পড়ে থাকা ইটে হোঁচট খেঁয়ে শুভ্রের বুকে আশ্রয় নেয়!
শুভ্রের শ্বাস প্রশ্বাস ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সাথে তার প্রতিটি হৃদ স্পদন জানিয়ে দেয়, পেয়েছো তাকে ছেড়ো না কভু শত আঘাতের মাঝে!
শুভ্রও জানিয়ে দেয়, এতোদিন হাজারো পাহাড়ীঅণ্যের মাঝে খুঁজেছি যাকে, খুঁজেছি দিক থেকে দিগন্তে, খুঁজেছি প্রতিটি শান্ত প্রভাতে প্রতিটি ব্যস্ত দুপুরে প্রতি রক্তিম সূর্যের ঘুমন্তময় সময়ে, দীর্ঘ রজনীর মাঝে কখনো জেগে কখনো বা স্বপ্নের ঘোরে! তবু পাইনি তাকে!
আজ পেয়ে কেন তাকে ছেড়ে দিবো?
রেখে দিবো হৃদয়ের অন্তভাগে, রেখে দিবো ভালোবাসার খাঁচায় বন্দি করে!
.
পঁচিশ বছর পর,,
–দাদু!
–হুম দাদুভাই। (শুভ্র)
–তারপর কি হলো?
–তারপর আর কি তাদের বিয়ে হয়ে গেল এবং একসাথে সুখে দুঃখের সাথী হয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা করলো।
–দাদু আমার না এখনি প্রেম করতে ইচ্ছে করছে? কিন্ত কার সাথে করবো?
–আমাকে বুঝি পছন্দ হয় না? (নিধি)
–না! তুমি সারাক্ষণ এ বুড়ো দাদুর সাথে প্রেম করো আমার সাথে কখন করবে!
— কখন এ বুড়োর সাথে প্রেম করলাম?
–হুম জানি। এ বুড়ো দাদুটাই এতোক্ষণ সব বললো আর তুমি বলছো প্রেম করো না! সেই পঁচিশ বছর আগে থেকে প্রেম করে আসছো এখনো করছো আমি বুঝি জানি না!
–নাহিদ তুমি অনেক দুষ্ট হয়ে গেছো! তোমার দাদুর সাথে এরকমভাবে কথা বলছো কেন? চলো নিচে খেলতে যাবে। বাবা দেখছেন নাহিদ আস্তে অনেক দুষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
–না বউ মা ওর সাথে আমি নিজেই দুষ্টমি করছিলাম, তুমি যাও কাজ করো।
–আচ্ছা বাবা।
.
সময়ের পরিবর্তনের ধারায় একসময় শুভ্রের মনের পরিবর্তন ঘটে বিরাট আকারে! যে ছেলেটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিয়ে করবে না কিন্ত কারো স্পর্শে এসে হুট করে সিন্দান্ত পাল্টে জীবনকে সাজাতে চেষ্টা করে, এটা হয়তো প্রকৃতির নিয়ম!
কে জানতো এই অপরিচিত রাগী বদমেজাজি নিধি মেয়েটাই শুভ্রের পথ চলার সংঙ্গী হবে!
–কি ভাবছো? (নিধি)
–ভাবছি দিনগুলো কিভাবে এতো সহজে কেটে গেল।
–বিয়ের ঠিক দু- বছরের মাথায় আমাদের ঘর আলো করে অভ্র এলো।
তোমার অবশ্য ইচ্ছে ছিলো আমাদের সন্তানটা মেয়ে হোক কিন্ত আমার ইচ্ছে তোমার মতো একটা ছেলে হোক।
শেষমেষ উপরওয়ালা আমার ইচ্ছাই পূরণ করলো।
.
রাত ৮টা
–দাদু দিদা বাবা তোমাদের ড্রয়িং রুমে ডাকছে।
— কেন দাদু ভাই?
— জানি না।
ড্রয়িং রুমটা বেশ অন্ধকারছন্ন হঠাৎ সমস্ত লাইট জ্বলে উঠলো,
–শুভ বিবাহ বার্ষিকী আব্বু- আম্মু।
পারিবারিক ছোট একটা অনুষ্ঠানে কেট কাটার মাধ্যমে পঁচিশ তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করা হলো। অভ্র দিনটার কথা মনে রেখেছে এটা ভেবেই শুভ্রের চোখে অশ্রু এসে গেল।
–আজকের দিনটার কথা বুঝি তোমার মনে ছিলো না? (নিধি)
–ছিলো।
–তাহলে আমার উপহার কই?
— শুভ্র পাজ্ঞাবীর পকেট থেকে এক ঠুংঙ্গা বাদাম, একগুচ্ছ সাদা গাঁধা ফুল আর আলতা-কাজল হাতে দিয়ে বললো, জানতাম আজকের দিনে এ উপহার তোমার লাগবেই তাই বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে বাজারে গিয়ে এনে রেখেছিলাম।
— জানতাম তুমি সব ভুলে গেলেও আজকের দিনটা ভুলে যাবে যাবে না।
— তাহলে রেডি হয়ে নাও।
–হুম কড়িডরে চেয়ার রাখা আছে তুমি বসো আমি আসছি।
শুভ্র নিধির পাশে বসে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে নিধি কিছুটা খাচ্ছে আর কিছু শুভ্রকে খাইয়ে দিচ্ছে! রাতটা বেশ গভীর থেকে গভীরতম শুভ্র নিধির দিকে চেয়ে আছে অপলকে! যেন হাজার বছরের তৃজ্ঞা মেটাচ্ছে!
সময় বদলে গেছে প্রতিটি চুলে পাক ধরেছে গায়ের চামড়া ঢিলে হয়ে গেছে তাতে কি মন তো আর বদলায়নি, ভালোবাসা তো আর কমেনি বরং একটু একটু করে ভালোবাসা জমতে জমতে আজ পাহাড় সমান হয়ে গেছে!
.
চলতে থাকুক এরকম ভালোবাসা বেঁচে থাকুক এরকম নিঃস্বার্থ নিঃপাপ ভালোবাসা।পৃথিবীর বুকে এরকম ভালোবাসা এখনো বিদ্যমান আছে বলেই ভালোবাসা শব্দটা এখনো মানুষ মর্যাদার সহিত উচ্চারন করে।
যে ভালোবাসা বেঁধে রাখতে পারে সে প্রকৃতপক্ষে সম্পদশালী ব্যক্তি কারণ ভারোবাসার মত বড় সম্পদ পৃথিবীতে আর বিদ্যমান নেই! “ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে ভালোবেসে ভালোবাসা বেঁধে যে রাখে”
সর্বপরি সত্যিকারের ভালোবাসা বেঁচে থাকুক চিরকাল যুগযুগ ধরে।
*******সমাপ্ত********