আমি অবাক হলাম। শুধু অবাক নয় ভীষণভাবে অবাক হলাম।।নিশি আমাদের বাসায়। ভাবতেই পারছি না আমাদের বাসায় ও আসবে। দুপুরে যোহর নামাজ পড়ে বাসায় এসে দেখি নিশি মা এর সাথে বসে গল্প করছে।নিশিকে দেখে অবশ্য খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু নিশি হটাৎ আমাদের বাসায় কেনো এটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। . একটু পর নিশি আমাকে দেখে বললো,,
-কেমন আছো ?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি?
-হুম ভালো।
-কখন আসলে। ?
-এইতো একটু আগেই। নামাজ পড়ে আসলা? -হুম। হটাৎ মা রান্না ঘর থেকে নিশিকে ডাকলো। নিশি বললো
-মা ডাকছে।আসি।
কি বলে গেলো ও।মা ডাকছে।নিশি তাহলে আমার মা কে মা বলে ডাকছে ।তাহলে কি নিশি ব্যাপারটা মেনে নিলো। মনে তো হচ্ছে তাই।হলে ভালোই হতো। নিশি আর আমি একটি প্রাইভেট কম্পানিতে একি পোস্টে চাকরি করি।আর এই সুবাধে নিশির সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক আছে। নিশি আমাদের কম্পানিতে জয়েন করেছে প্রায় ছয়মাসের মতো হবে।
প্রথমে নিশির সাথে আমার তেমন কোনো কথা হতো না। একই অফিসে চাকরি করলেও মাঝে মাঝে শুধু দেখা হতো।আর টুকটাক কথা। কিন্তু হঠাৎ একদিন কম্পানির একটা প্রজেক্টে আমাকে আর নিশি কে একসাথে কাজ করতে দেওয়া হয়।আর যার ফলে নিশির সাথে নানারকম কথার মাধ্যমে তার সাথে একটা ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অফিসের প্রায় অবসর সময়ে নিশির সাথে আমার কথা হতো। মাঝে মাঝে একসাথে দুপুরের লাঞ্চ ও হতো। এছাড়া অফডেটে তার সাথে মাঝে মাঝে বই কিনতে যেতে হতো। আমি বই পড়তে ততোটা পছন্দ না করলেও নিশি বই পড়তে ব্যপক পছন্দ করতো।আর তাই আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে যেতে হতো। ব্যাপারটা আমার কাছে যে খারাপ লাগতো তা নয় বরং ভালোই লাগতো। নিশির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও আমি নিশি কে নিয়ে অন্যকিছু ভাবতাম।কোন মহাজ্ঞানী লোক যেনো বলেছিলো একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো ভালো বন্ধু হতে পারে না। এদের মধ্যে কেউ না কেউ প্রেমে পড়বে।আর আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হলো। আমি ও নিশিকে নিয়ে আমার মনের ঘরে স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম।
নিশি কে যে আমি চাই এটা আমি নিশি কে কখনো বলতে পারিনি। মূলত নিশি যদি মেনে না নেয়।আর তাই হয়তো তাই সাহসটা হয়ে উঠেনি ওকে মনের কথা বলার।আর আমি ভালো করেই জানতাম নিশির জীবনে তেমন কেউ নেই।আর তাই আমি আমার মাকে দিয়ে তাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। পাত্র হিসেবে ঠিকঠাক ছিলাম ।আর আমরা যেহেতু দুজন দুজনকে ভালো করে চিনি আর তাই কেউ আর অমত করেনি। কিন্তু আমার মনে হয় নিশি ব্যপারটা মেনে নিতে পারেনি।সে হয়তো আমাকে শুধু একজন ভালো বন্ধু ভাবতো আমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে সে হয়তো কখনো ভাবেনি।যদিও নিশি এই ব্যাপার টা তার পরিবারকে বা অন্য কাউকে বলেনি। কিন্তু আমার মনে হতো সে আমায় পছন্দ করেনি।আর তাই বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর নিশি আমার সাথে আর আগের মতো করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
আমি কিছু বলতে গেলেও সে নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলে। আর তাই আমি ভেবে ছিলাম নিশি হয়তো আমাকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিবে না।আর তাই কাল আমি তাদের বাসায় গিয়ে আমি নিজেই বিয়ের সমন্ধটা ভেঙে দেই।আর যাইহোক জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। কিন্তু আজ হঠাৎ নিশি যে আমাদের বাড়ি আসবে তা আমি জানতাম না। তাহলে নিশি কি চায়? নিশি আর মা দেখি রান্না ঘরে। দুজনে মিলে ইফতার তৈরি করছে। মনে হচ্ছে তারা সত্যিকারের শ্বাশুড়ি আর বউমা। দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে আর কাজ করছে।দেখতে ভালোই লাগছে।ভাবছি নিশি যদি আমার বউ হয়ে আসতো কতো ভালো হতো।বাবা মারা গেছে পাঁচবছর হবে।মা একা একা আর কতো থাকবে।আর তাই একজনকে মা এর একাকী সঙ্গী দূর করার জন্য চাইলাম আর কি দূভাগ্য আমার সে আমাকে পছন্দ করে না।
ইফতারের সময় দেখি নানা খাবারের আয়োজন।কোনটা ছেড়ে কোনটা দিয়ে ইফতার করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।মা আর নিশি মিলে এতো আয়োজন করেছে।অবশ্য মা বলেছে নিশি নাকি প্রায় সব খাবার তৈরি করেছে।যাক ভালোই হলো। ভাবছি ইশ নিশি যদি আমার বউ হতো তাহলে প্রতি রোজার দিনে এমন রাজকীয় ভাবে ইফতার করতে পারতাম। নিশি আর আমি রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। উদ্দেশ্যে নিশির বাড়ি।আজ সারাদিন আমার কাছে অন্যরকম একটা ভালো লাগার দিন ছিলো। নিশির রান্না গুলো অসাধারন ছিলো।মা তো প্রশংসা করতে করতে শেষ। সত্যি নিশি যদি আমার বউ হয়ে ঘরে আসতো মা খুব খুশি হতো। কিন্তু নিশি তো আমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু তাহলে সব শেষ হওয়ার পরও আজ কেনো আমাদের বাসায় আসলো।
-কি আরিফ সাহেব ! চুপ কেনো?কি ভাবছেন এতো? আমি নিশির কথায় একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।কি বলবো আমি।এটা কি বলবো যে নিশি তুমি যদি আমার মায়ের বউমা হও তবে মা খুব খুশি হবে।আমার কোনো উত্তর না পেয়ে নিশি আবার বললো,,
-কি হলো? চুপ করে আছো কেনো?এটাই ভাবছো যে নিশি যদি আমার বউ হতো তবে কতো ভালো হতো। প্রতিদিন এমন সুস্বাদু রান্না খেতে পারতাম।” আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। নিশির এই কথায় আমার কি বলা উচিত তাই ভাবছি। নিশি আবার বললো,,
-চেয়েও লাভ নেই।কারণ এটা হবার নয়।“ আমি এবার চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম
-কেনো নিশি?
-কেনো নিশি না। বদমাশ লোক একটা।এই তোমার জন্যই তো হবে না।
-আমার জন্য মানে?আমি কি করলাম। বরং আমি তোমাকে চাই বলেই তো তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম।
-তাই না।তাহলে কাল কেনো বললে যে আমায় বিয়ে করবে না। আমি কি দেখতে খারাপ। আমার নাক কি বোচা।না আমার চোখ ত্যারা।না আমি মুটকি। না আমার গায়ের রং কালো।“ . আমি অবাক হয়ে গেলাম নিশির কথায়।কি বলছে ও। আমি তো মনে করছি নিশি আমাকে পছন্দ করে না আর তাই আমি না করে দেই। কিন্তু নিশি এসব কি বলছে। আমি বললাম,,
-না তা হবে কেনো। তুমি যথেষ্ট সুন্দরী আর মায়াবী। আমার স্বপ্নের পরী।তোমাকে ভালো লাগে বলেই তো বিয়ে করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমি ভাবলাম আমাকে তুমি পছন্দ করো না।আর তাই আমি..! নিশি আমার কথায় হাসতে শুরু করলো। এমনভাবে হাসছে যেনো আমি কোনো জোকস বলেছি। নিশি হাসতে হাসতে বললো,,
-আমি তোমাকে কোনদিন বলেছি যে তোমাকে আমি পছন্দ করি না।
-তা ঠিক বলোনি। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর তুমি আমার সাথে আগের মতো করে কথা বলতে না। এড়িয়ে চলতে।আর তাই আমি ভাবছি..!
-আর তাই তুমি ভাবছো তোমাকে আমার পছন্দ হয়নি। তুমি এতো বোকা কেনো আরিফ? তোমার প্রতি আমার রাগ হয়েছিল ভীষণ। গাধাটা আমায় ভালোবাসি কথা না বলে সরাসরি বাসায় আমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।আর তাই তোমার সাথে কথা বলিনি একারণে যে আগে তুমি আমায় তোমার মনের কথা বলবে তারপর আমি তোমায় মেনে নিবো। কিন্তু গাধাটা কি থেকে কি বুঝে আমাকে বিয়ে করতে না করে দিলো।আর তাই আজ তোমার বাসায় আসলাম।আর তোমাকে বোঝালাম তুমি আমাকে বিয়ে না করতে চেয়ে কি হারিয়েছো? আমি নিশির কথায় আহাম্মক হয়ে গেলাম।এই ছিলো তার মনে।একবার আমায় বলতে পারতো গুছিয়ে সবকিছু।তা না করে কি করলো।আসলে মেয়েদের মনে কখন কি চায় তা আমি কেনো কোনো মহাপুরুষ বুঝতে পারে নাই।আর আমি ও গাধা।আসলে নিশি তো কোনদিন এই কথা বলে নাই যে আমাকে তার পছন্দ করেনা।আমি এখন কি করবো।নিশি কি আমায় মেনে নিবে আবার।আমার চুপ থাকা দেখে নিশি আবার বললো,,
-ধ্যাত তোমাকে দিয়ে কিছু হবেনা। একটা গাধা তুমি। এখনো চুপ করে আছে।কি লোক এটা গো আল্লাহ।এতো গাধা কেউ হয়। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।নিশিকে কি বলবো নিশি তুমি যেও না। আমার এমন একটা তুমি চাই।আমার চুপ থাকা দেখে নিশি রাগ করে হাঁটা ধরলো আমায় ছাড়া।আর বললো,,
-খবরদার আমার পিছন তুই আসবিনা।তোর মতো মানুষ কে দিয়ে কিছু হবেনা।যে এখনো ভালবাসি কথাটা বলতে পারেনা।তার সাথে আমি সারাজীবন থাকতে পারবো না।গাধা একটা। নিশি আমাকে ছাড়া হাঁটতে লাগলো।আসলে কি আমি গাধা।নাহলে কেনো আমি তাকে আটকাছি না।আমি এবার দৌড় দিয়ে নিশির হাত ধরলাম।নিশির চোখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে। চোখ গরম করে বললো,,
-হাত ছাড় বলছি। হাত ধরার তোর কোনো অধিকার নেই।
-হাত ছাড়ার জন্য এই হাত ধরি নি।এই গাধাটাকে আপন করে নেওয়ার জন্য এই হাত ধরেছি।কি আপন করবে না আমায় ? নিশি কিছু বলছে না।দেখি তার রাগ পানি হয়ে ঝরে পড়ছে। নিশি কাঁদছে।তার কান্না আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। আমি নিশির চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম
-ভালোবাসি নিশি। খুব ভালোবাসি তোমায়।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা