শীতবিলাস

শীতবিলাস

-এইযে শুনুন।
-জ্বি বলুন.
-কেমন আছেন ?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি? -আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, একা একা বসে কি করেন?
-শীত বিলাস করি।
-কি রকম ?
-যে রকম হবার সেরকম।
-এভাবে বসে বসে ?
-হুম,কেনো হতে পারেনা ?
-না,পারেনা…ক্লু দিন তাহলে বুজব।
-বসে থাকেন তাহলে বুজতে পারবেন।
-বসে থাকার সময় নেই,আম্মু তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।
-তো যান ।কেনো দাড়িয়ে রয়েছেন?
-বারে,আপনার শীত বিলাসের কথা শুনব না,সংক্ষিপ্তভাবে বলেন।
-ঠান্ডা পানির গরম ধোঁয়া,নির্মল পরিবেশ,বৈধতার প্রাকৃতিক বাহার সব মিলিয়ে যেনো অনিনন্দ এক অনুভুতি হৃদয়কে নুয়ে দেয়।এটাই আমার শীতবিলাস।
-তাই বলে এতো ছোটো পরিসরে।
-হুম।
-শীত করতেছে খুব,ঠান্ডা লাগতেছে না।
-নাহ !
-কেনো?
-বললাম তো শীত বিলাস করতেছি।
-এতো রাগ!
-বুজলাম না।
-এইযে অল্পতেই রেগে যান।
-রাগ করিনি,ভাবনার ছেদ ঘটেছিলো তাই ওভাবে বলা।
-আমার সাথে কথা বলতে বলতে ভাববার সময় কোথায় পেলেন?
-লুকিয়ে থাকা সময় থেকে।
-কি ভাবে ?
-চিন্তাহীন ভাবনা থেকে।
-এটা আবার কেমন ভাবনা?
-জানিনা।
-আপনার প্যাচমারা কথা আমি বুঝিনা।যাইহোক যার জন্য এখানে আসা… আম্মু আপনাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে আমি গেলাম,আপনিও আসেন।
.
আবহাওয়াটা বড়ই সুপ্ত লাগছে আমার কাছে,ভালোই লাগছে এরকম কুল কুল ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ ।আমি কি ভুল বললাম; হাহাহাহা হয়তো বলেছি ।আজ একদমই

সূর্যের মুখ দেখা যায়নি তাই বলে প্রকৃতির রুপ আমি দেখবনা সেরকম মানুষ আমি নই ।প্রতিদিনের বিকেলটা নাহলেও কোন এক হঠাৎ দিনে বিকেলটা এখানে কাটাতে

আসি।সামনে একটা পুকুর রয়েছে,চারদিকে গাছপালাও রয়েছে,জায়গায়টা খুব বেশী আয়তন জুড়ে না হলেও সুন্দর মনোরম পরিবেশ। বিকেলের দিকে এখানে এসে

বসলে বিকেলের লাল টকটকে আলো সরাসরি মুখে এসে পড়ে।আজ রোদ নেই তাই আলো ও নেই।
.
কি নিদারুন ব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তার।চারদিকে কুয়াশার রেশ ভেসে বেড়াচ্ছে।আবছা আবছা রেশ, যেনো হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়া যাবে অথচ দেখো ধরাই যাবে না।উফ,ঠান্ডা

লাগতেছে কেনো ?আমি তো শীত বিলাস করতেছি আমাকে তো ঠান্ডা লাগার কথা না।নাহ,শীত বিলাসের ভুত মনে হয় চলে গেছে যার জন্য আমাকেও ঠান্ডা লাগতে

শুরু করেছে।আর থাকলাম না,এক পা দুপা করে বাসার দিকে এগুতে লাগলাম।এখান থেকে বাসা খুব বেশী দূরে না।প্রায় পাঁচ মিনিটের পথ।
.
.
ও হ্যা একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটির সাথে কথা বলতেছিলাম সে হলো আমার মামাতো বোন মৌ। সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকে।

আমাকে নাকি পচ্ছন্দ করে।কাউকে পচ্ছন্দ লাগতেই পারে স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু সে যা করে তা লিমিটের বাইরে।তাদের বাড়িতেই থাকি তাদের বাসা থেকেই

লেখাপড়া করি এজন্য কিছু বলিনা।দিন কয়েক আগে খুব কড়া কথা শুনিয়েছিলাম বিধায় তার জ্বালা যন্ত্রণা থেকে কিছুটা বেঁচে গেছি বলে মনে হয়।যদিও আমার থেকে

ছোট তবুও আপনি বলেই কথা বলি কারণ আমার ধারণা আপনি কথাটার মধ্যে আলাদা একটা সম্মান থাকে।
.
মামী অবশ্য ব্যাপারটা জানে বাট জেদি মেয়ে বলে কিছু বলেনা।যদিও জেদি তবুও আমার কাছে জেদ দেখানোর সাহস খুব কমই পায় কারণ আমি নিজেই তো

রাগকুমার।মামা মামী অনেক বিশ্বাস করে আমাকে,আর আমিও চাইনা তাদের বিশ্বাসের থালায় লাথি মারতে।তাই বিষয়গুলা কৌশলে এড়িয়ে যাই।
.
.
বাসায় পৌঁছেই গেলাম।কলিংবেল চাপতেই মৌ সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো যেনো অধীর আগ্রহে আমার অপেক্ষা করতেছিলো।আমি বাইরে থেকে বাসায় আসলেই

বরাবরই মেয়েটা এভাবে দরজা খুলে দে।সে বাসায় না থাকলে মামী দরজা খুলে দে।একদিন অবশ্য দেখেছিলাম সে এতো তাড়াতাড়ী কিভাবে বুজতে পারে আমি আসছি।
.
বেলকনি থেকে বাসার গেট দেখা যায়।আমি নির্দিষ্ট টাইমে বাইরে যাই আবার নির্দিষ্ট টাইমেই ফিরি।হয়তো এই সময়টা সে মনে রাখে এবং বেলকনি থেকে আমাকে দেখে

কখন আসতেছি। একদিন এভাবে লুকিয়ে দেখায় মেয়েটা আমাকে দেখতে পেয়েছিলো।সে কি লজ্জা রে বাবা !পরের দুদিন আমার সামনেই আসেনি।
.
দরজা খোলার পরে আমি সোজা রুমে গেলাম।কিছুক্ষণ পরেই চা নিয়ে মৌয়ের আগমন এসেই বলল…
-আপনার চা।
-জ্বি টেবিলের উপরে রাখেন।
-না,এখনি খেয়ে নিন আমার সামনে (রাগানিত্বস্বরে)।
.
.
কারণ অনেক দিন এভাবে চা পান করিনি ।ওভাবেই টেবিলের উপরেই ছিলো।আসলে চা পান করতে আমার তেমন ভালো লাগে না।ছোট বেলায় এমনকি বড় হয়েও

চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে অনেকবার জিহ্বা পুড়ে ফেলেছি।সে জন্য একটু ভয় লাগে চা পানে।ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দেই বাট পরে আর খাওয়া হয়ে উঠে না।আমি যে কেনো এরকম বুঝি না,চা কি কেউ ঠান্ডা হয়ে পান করে।কি অদ্ভুদ আমি তাই না !
.
চা টা শেষ করে কাপটা দিয়ে দিলাম।সেদিনের মতো আর কথা হইনি।শীতের দিন তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোনে দেখি মৌ এর

মেসেজ।”আজ বিকেল 4টায় পুকুরপাড়ে আসবেন” এক বাসায় থাকলেও তেমন দেখা হয়না কারণ আমি সবর্দা রুমের ভিতর থাকি।
.
তেমন কাজ ছাড়া বাইরে বের হইনা।লেখাপড়া প্রায় শেষের দিকে তাই বিভিন্ন চাকরির আবেদন করি ভাগ্যবশত গত কয়েকদিন আগে বস্ত্রমন্ত্রাণয়লে চাকরিটা হয়ে

গেছে।মাকে ছাড়া কাউকে জানায়নি,তবুও যে কিভাবে সবাই জানতে পেরেছে জানিনা,হয়তো মা বলেছে। সামনের মাস থেকে জয়েন করব।তাই ভাবতেছি অফিসের

আশেপাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব।নাহ,হাত পা গুটিয়ে থাকলে চলবে না।মামা মামীকে জানানো দরকার।আজ শুক্রবার ছুটির দিন মামাও বাসায় আছে ।মামা মামী বসে ঢিভি দেখতেছে।কুশলাটি বিনিময় শেষে মামাকে বললাম…
.
.
-মামা কিছু কথা বলার ছিলো।
-হুম,জানি।কি কথা বলবি।
-কিভাবে জানেন ?
-তোর মা বলেছে।
-তাহলে আমি সামনের মাসে যেতে চাচ্ছি।
-যখন সুবিধা যেতে পারিস।

.
আমি আর কিছু বললাম না। দুপুরে রুমে মৌ এর আগমন। ফোনে একটু ফেসবুকে গুতাগুতি করছিলাম।এসেই ফোনটা কেড়ে নিলো….
-মৌ কি হচ্ছে এটা।
-কই কি হচ্ছে ।
-ফোনটা নিলেন কেনো ?
-দেখলাম
-ফোন দেখার কি আছে,কোনদিন ফোন দেখেননি নাকি ?
-……..
(হুড়হুড় করেই ফোনটা নিয়ে চলে গেলো) আটকালাম না তাকে।রাগের মাথায় ফোনটা ভেঙ্গে ফেলতে পারে,জেদি মেয়ে বলে কথা।বিকেলে চলে গেলাম পুকুরপাড়ে দেখি মৌ আগে থেকেই বসে আছে।
.
.
যেতে না যেতেই বলল…
-রাগকুমার এসেছে তাহলে।
-হুম।কি জন্য ডেকেছেন বললে খুশি হতাম।
-কেনো তাড়া আছে নাকী ?
-না।
-তাহলে।
-এমনি।
-বসুন।
-ধন্যবাদ।
-কালো হিমু হতে চাও নাকী ?
-কেনো?এমনটা মনে হলো আপনার।[মেয়েটা আমাকে আপনি থেকে তুমি বলতেছে কিছু বুঝিনা যখন যেটা ইচ্ছা বলে৳]
-এই যে পুরো কালো কাপড়ে ঢেকে আছো তাই।
-ভালো লাগে তাই
-আচ্ছা তুমি আমাকে এভোয়েড কেনো করো বলোতো?
-কই, আপনার সাথে কথা বলি তো।
-এই তুমি আমাকে খালি আপনি আপনি করো কেনো,সেই আদিকাল থেকে আপনি আপনি করেই যাচ্ছে।আমি কি তোমার বড় নাকি ?(মেয়েটা প্রচন্ড রেগে গেছে,চোখে মুখে অগ্নির ঝলকের মতো দেখতে পাচ্ছি।রেগে গেলে যেকোন কিছু করতে পারে)
-……
-কি হলো মুখে কি সুপারগুলু লাইছো নাকি কথা বলছ না কেনো ?
-কি বলব ?
-এই আমার চোখের দিকে তাকাও তো,আমি কি দেখতে খারাপ ,না আমি ভালোবাসার পাওয়ার যোগ্য না।মেয়ে হয়েও কতদিন ধরে তোমাকে বিভিন্ন ভাবে প্রোপজ করেই যাচ্ছি তুমি তো বুঝেও না বুঝার ভান করো
.
।(কান্নার সুর উঠে গেলো,মেয়েদের এই একটা অভ্যাস সবারই আছে বেশী ইমোশনাল হলে কান্না করবেই)
.
আজ নাহয় তাকাই তার দিকে,সাধারণ দৃষ্টি দিয়ে নয় বিমহিত দৃষ্টিতে তাকাতে চাই।
.
মেয়েটা এমনিতেই সুন্দর।আজকের হালকা সাজে মেয়েটাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে,একদিকে শেষ বিকেলের রক্তিম আলো মুখে এসে পড়েছে অপরদিকে তার রাগের

অগ্নিমূর্তি সব মিলিয়ে আলাদা একটা সৌন্দর্য প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকেই বলে রাগলে মেয়েদের নাকী বেশী সুন্দর লাগে কিন্তু আমার চোখে তো বরাবরের মতোই লাগছে।

কেনো?তাহলে কি আমি মেয়েটাকে ভালোবাসার চোখে দেখতেছিনা না ?হয়তো তাই।কিন্তু কেনো হবে এরকমটা।আমার তো কোনো পিছুটান নেই।
.
নাহ,মেয়েটাকে আর কষ্ট দেওয়া যাবেনা।কিছু একটা করা দরকার। দু এক ফোঁটা চোখের জ্বল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে কাছে টেনে নিয়ে মুছে দেই,কেনো

যেনো এগোতে পারতেছি না।কি যেনো বিশাল মানসিক ধাক্কা দিচ্ছে।কেমনে যে কি করি বুঝতে পারছিনা।চোখের পানি মুছতে মুছতে মৌ আবার বলা শুরু করল …
-নুসরাত কে ?
-কোন নুসরাত?
-যার সাথে সকালে 25মিনিট49 সেকেন্ড কথা বলেছো।
-আমার ফ্রেন্ড অনেকদিন কথা হয়না তাই এতো টাইম ধরে কথা বলেছি।
-ফেন্ড না গার্লফ্রেন্ড।ঐদিকে মেয়েদের সাথে ঠিকি লুলুপুতু করো।আর আমি থাকতে চোখে পড়েনা। আমার সামনে তো খুব সাধু হয়ে বেড়াও।তলে তলে ঠিকি আছো।আমি থাকতে আর এরকম করতে দিবোনা।।
.
(মেয়েটা আরো রেগে গেছে।চট করে উঠে গেলো আর বলতে লাগল )
.
.
-আজকের মধ্যে যদি তোমাকে বিয়ে না করি তাহলে আমার নামও মৌ না।
.
মেয়েটার হাতের মোবাইলটা আর একটা গোলাপ মাটিতে ছুড়ে মেরে হনহনিয়ে চলে গেলো।গোলাপটা হয়তো আমাকে দেওয়ার জন্য এনেছিলো বাট মুডটাই নষ্ট করে

দিলাম।গোলাপটা আর ফোনটা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম।ফোনটা অন করতেই দেখি ফোনের স্ক্রিনে আমার ছবি ভাসছে,গ্যালারি ভর্তি আমার ছবি সবগুলাতে কেমন অপরিষ্কার ভাব রয়েছে।হয়তো লুকিয়ে তুলেছে।
.
মনের অজান্তেই ছোট্র একরাশ হাসি মুক্ত মনে খোলা আকাশে উড়িয়ে দিলাম।তবুও কেমন যেনো অপরাধবোধ কাজ করতে লাগল।আমি যে কেনো এরকম নিজেও

জানিনা।সন্ধা পার হয়ে গেলো নাহ,আর থাকা যাবে না।আজকের শীতবিলাসটা নাহয় ছাদে কাটাবো।কলিংবেল চাপতেই মামী দরজা খুলে দিলো কেমন অসহায় দৃষ্টিতে

আমার দিকে তাকালো।ভিতরে যেতেই দেখি মা বাবা আর ছোট বোনটা বসে আছে,সাথে মামাও।কিন্তু হঠাৎ মা বাবা আসার কারণ ?তাদের সাথে কুশল বিনিময় শেষে

রুমে এসে বসে ছিলাম।খানিক বাদেই ছোট বোনটা রুমে আসল।এসেই বলল আজ এই মহূর্তে নাকি মৌ এর সাথে আমার বিয়ে।
.
পাল্টা জিঙ্গাসা করাতে বলল তারা নাকি বিকেলে এসেছে,মৌ নাকি মাকে বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে,কিন্তু আমি তাকে অবহেলা করতেছি,তাকে বাদ দিয়ে অন্য

মেয়ের সাথে ইটিসপিটিস করতেছি আরো কি সব বানিয়ে বানিয়ে বলেছে।আর বলেছে আজকের মধ্যেই যদি আমার সাথে বিয়ে না দে তাহলে রাতেই আত্মহত্যা করবে।মামী অবশ্য মৌ এর ব্যাপারটা জানতো কিন্তু জানতো আমি তাদের বিশ্বাসের অমার্যাদা করব না।
.
দুপুরের দিক মামা তখন মাকে আসতে বলে।রুম থেকে বেরিয়ে মার কাছে জিঙ্গাসা করলাম
-মা,এসব কি ?
-কি সব,যা হবার তাতো হবেই।
-আমি কি বলেছি আমি মৌ কে ভালোবাসি।
-ভালোবাসিস না তাহলে এসব কি (আমার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে দেখাচ্ছে,মৌ আমাকে ফোনটা দেয়নি)তোর ফোনে মৌ এর এতো ছবি কেনো?তাও এতো ক্লোজভাবে-

ভালোবাসিস না তাহলে এসব কি (আমার ফোনটা এগিয়ে দিয়ে দেখাচ্ছে,মৌ আমাকে ফোনটা দেয়নি)তোর ফোনে মৌ এর এতো ছবি কেনো?তাও এতো ক্লোজভাবে?

…… নিশ্চুপ মনে মনে বলতেছি(মৌ কে আমি পচ্ছন্দ করিনা তেমন নয় বাট এতো ক্লোজভাবে তো কখনো বসিনি।নিশ্চয়ই ইডিট করেছে আমি নিশ্চিত।কিন্তু ছবি

তুলল কিভাবে?আমার সাথে তো কোনদিন ছবি তুলতে দেয়নি, তাহলে?মৌ নিয়ে তার ভার্সিটিতে একদিন গিয়েছিলাম হয়তো সে দিনই তার ফ্রেন্ড দ্বারা এসব করিয়েছে।আমি ঐ ভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র ছিলাম তাই তার কাজে সহজ করতে যাওয়া।)
.
মা আবার বলল…
.
-কি এরপরেও বলবি তুই মৌ কে ভালোবাসিস না,আজকেই মৌ এর সাথে তোর বিয়ে।
-কিন্তু মা
-কোন কিন্তু না।আজ হোক কাল হোক বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।তাছাড়া তুই বেকার ও না তোর চাকরি আছে।এখন যা রেডি হয়ে নে,কিছুক্ষণ পরেই বিবাহের কাজ শুরু হবে।
.
আমি আর কিছু বললাম না।যদিও ইচ্ছা ছিলো না এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করার তারপরে ও করতে হবে বাধ্য হয়ে।প্রেমটা নাহয় বিয়ের পরেই করব।সুপ্ত প্রেমকে নাহয়

বিয়ের পরেই জাগাবো।মৌ কে দেখিয়ে দিবো আমি রস-কষহীন নই আমিও প্রেমিক হতে পারি।বিয়েটা সমপন্ন হয়ে গেছে।রাত বারোটা, দরজা ঢেলে আমি বাসর ঘরে

ঠুকলাম।এতো টুকু সময়ের মধ্যেও বাসরঘরটাও সাজানো হয়েছে। হয়তো আদরের বোনটা করেছে,কি জানি?
.
মৌ খাট থেকে নেমে এসে সালাম করল।যদিও আমি এটার বিরুদ্ধে তারপরেও করতে দিতে হলো। দুই রাকাত সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করলাম।নামায শেষে মৌয়ের কাছে গেলাম আর বললাম—
.
-এটা কি ঠিক হলো।
-অবশ্যই ঠিক হলো।আমার চোখের সামনে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করবে এটা হতে দিতে পারি না।
-সত্যি বলছি সে আমার ফ্রেন্ড ছিলো।
-হোক ফ্রেন্ড তবুও আর যেনো কথা না বলো।এতো ভালোবাসি তবুও বুঝোনা কেনো?
.
-সইতে পারবে আমার ভালোবাসার জ্বালা।
-ইহ ঢং।শতভাগ পারব,এখন চলো ছাদে যাবো ।
-ঢং না সত্যি দেখে নিও বাট এতো রাতে ছাদে কেনো ?
-তোমার সাথে শীতবিলাস করব।
-ওকে মহারাণী চলো ।
.
চাঁদ উঠছে হয়তো কয়েকদিন আগে ।বাঁকা চাদের ম্লান আলোর সাথে যেনো কুয়াশার মিল রয়েছে।চারিদিকে পিন পতন নিরবতা,ঝাপসা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক,নির্মল

পরিবেশ।ভালো লাগবে হয়তো কিন্তু আসলেই কি এরকম করে শীতবিলাস করা যায়? জানিনা,হয়তো আমার কাছে শীতবিলাসের এটি ছোট একটি পন্থা।মৌ এর কথায় ছেদ ঘটল
.
-রাগকুমার।
-হুম ।
-প্রপোজ করবে না আমাকে?
-বিয়ে করেছি তাও প্রোপজ করতে হবে?
-করতে হবে না,করতেই হবে।
-তাও এতো রাতে!
-হুম,যদি না করো তাহলে আজ রুমে ঠুকতে দিবো না।
-বাব্বহা এতো কঠিন শর্ত।
-কঠিন না ছাই।এখনি প্রপোজ করো ।
-হুম মহারানী।
.
.তার ফেলে দেওয়া গোলাপটা রেখে দিয়েছিলাম।হয়তো কাজে লাগতে পারে এই ভেবে।সত্যি সত্যি কাজে লেগে গেলো
.
“এই মেয়ে তুমি কি হবে এই রাগকুমারের রাগকুমারী।শীত বিলাস না করাতে পারলেও এর থেকে বড় বিলাস করাব `মনের বিলাস,কথা দিলাম মনের বাহুডরে রেখে দিবো আজীবন ভরে”
.
.
মৌ ফুলটা হাতে নিয়ে জড়িয়ে ধরল।এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে স্পর্শ করল যার দরুন আলাদা একটা শিহরণ শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেলো।তার চোখে পানি।

হয়তো সুখের কান্না।আলতো করে মুছে দিলাম।সুপ্ত ভালোবাসা হয়তো জাগ্রত করতেই হবে শুধুমাত্র এই মেয়েটার জন্যই।চেয়ারের উপর থেকে চাদরটা নিয়ে মৌ কে

সহ চাদরের ভিতরের দিকে ঢেকে নিলাম,পুঙ্কলিত মন নেচে উঠল। যাক এবারের শীতবিলাসটা হয়তো সার্থক হলো। 
.
.
……………………………………………….সমাপ্ত……………………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত