ভালোবাসা। এই একটি শব্দে জড়িয়ে আছে প্রেম, আবেগ, অনুভূতি, হাসি-কান্না, সুর, তাল, লয়, ছন্দ, আরো কত কী। এখনো চলছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কিংবা পরিচয়
ঠিক করার পালা। নশ্বর এই পৃথিবীর একমাত্র অবিনশ্বর শব্দ ভালোবাসা। যুগে-যুগে কত শত মানুষ হাতড়ে বেরিয়েছেন ভালোবাসার পরিচয়। বিশ্বকবির খেতাব পাওয়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ভালোবাসা নিয়ে পাতার পর পাতা লিখে কালো চুলে পাক ধরিয়েছেন। এই তিনিই আবার জীবন সায়াহ্নে এসে সদ্য ভোল ফোঁটা শিশুর মতই বিস্ময়
ছড়িয়েছেন, “তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা’Ñসখী, ভালোবাসা কারে কয়!” এই বিস্ময় চিরন্তন। সময় গড়ালেও এখনো ভালোবাসার বিস্ময়
ফুরিয়ে যায়নি। ম্লান হয়নি ভালোবাসার আবেদন, হবে না কখনো। তবে ভালোবাসা কীÑজানাতে গিয়ে শিল্পী গেয়েছেন, ‘মেঘ হয়ে কাঁদো বলে আমি শ্রাবণে ভাসি, এরই নাম প্রেম প্রিয় ভালোবাসাবাসি।’
বাংলা সাহিত্যে প্রেম এসেছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাত ধরে। কারো বারণই শুনেননি তিনি। বঙ্কিম সারা জীবনে যা লিখেছেন তার অর্ধেকের বিষয় ভালোবাসা, বাকি অর্ধেক ধর্ম,
সমাজ ও ইতিহাস। ভালোবাসা নিয়ে যা কিছু লিখেছেন, তার অর্ধেকটা জুড়েই আছে নারী। বাকিটা সমাজ, সংস্কার ও সংঘাত। নারীদের নিয়ে যা লিখেছেন তার
আধটাতেই জড়িয়ে আছে নারীর রূপ, তাদের সৌন্দর্যের মোহ, দেহের আকর্ষণ। বাকি অর্ধেকটা হৃদয়ের ভেতরকার নদ-নদী, জল, জলস্তম্ভ এবং জোয়ার ভাটা। মোটের
ওপর রূপবতী রমণী ও ভালোবাসাই বঙ্কিমচন্দ্রের অর্ধেক সৃষ্টির বুনন। বঙ্কিমের পর প্রেমের জন্য নর-নারীকে অবাধ্য করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনিই মূলত প্রেমে পড়তে
শিখিয়েছেন। তার ভাষা দিয়েই প্রেম করি। তার ভাব দিয়েই প্রেমে পড়ি-প্রখ্যাত মনীষী ধূর্জটি প্রসাদের মূল্যায়ন এমনটাই।
ভাববাদীরা বলবেন, পৃথিবীর গোড়া থেকেই প্রেম ছিল। প্রেম স্বর্গ থেকে এসে মানুষের জীবনে অমর হয়ে রয়েছে। তবে এই প্রেম যে শুধু নারী-পুরুষে তা নয়। নারীতে-
নারীতে কিংবা পুরুষে-পুরুষেও হতে পারে প্রেম। প্রেম হতে পারে জননী, জন্মদাতা, সহোদর, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে। মনীষীদের ভাষায়, পৃথিবীই দাঁড়িয়ে
আছে ভালোবাসার খুঁটিতে। গর্ভে আসার পর মায়ের সঙ্গে প্রেম দিয়ে শুরু। আবার ভালোবাসার মানুষের চোখের জলই সঙ্গী হয় শেষ বিদায়ে।
এত এত ভালোবাসা যে মানুষটির জন্য তার সঙ্গে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কি এক রকম কাটে? কাছে-দূরে থাকা মানুষগুলো একবাক্যেই বলবেন-‘না। মোটেও নয়।’
কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি। আবার কখনো রোদ ঝলমলে দিন। কখনো ভালোবাসার তুলনা চলে বহতা নদীর সঙ্গে। আবার কখনো অথৈ সাগরের উত্তাল ঢেউ এলোমেলো
করে দেয় জীবনকে। শীতের পর পাতাঝরা গাছের মতো জীবনেও যৌবন আনে প্রেমের বসন্ত। ছন্দহীন জীবনে আনে অন্ত্যমিল। ভালোবাসাÑএ এক ভাঙা-গড়ার খেলা।
কিন্তু তারপরও কি ভালোবাসতে কেউ ভুলে গেছে? ভুলে গেছে প্রিয় মানুষের হাত ধরতে, খোঁপায় ফুল গুঁজে দিতে? যায়নি, এ যে ভুলে থাকা যায় না। নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে
জড়িয়ে থাকা ভালোবাসা, রক্তে মিশে যাওয়া ভালোবাসা, জীবন যুদ্ধে জয়ী ভালোবাসা শত যন্ত্রণা আর দ্রোহের আগুনে পুড়ে ঝলসে গেলেও বলে ওঠে-‘ভালোবাসি, ভালোবাসি। তবুও ভালোবাসি।’
সখী, ভালোবাসা কারে কয়? বিস্ময় ছড়ালেও রবিঠাকুর দিয়ে গেছেন প্রেমের ব্যাখ্যা। ‘বাংলা ভাষায় প্রেম অর্থে দুটো শব্দের চল আছে, ভালোলাগা আর ভালোবাসা।…
যেখানে ভালোলাগা, সেখানে ভালো আমাকে লাগে, যেখানে ভালোবাসা সেখানে ভালো অন্যকে বাসি। আবেগের মুখটা যখন নিজের দিকে তখন ভালোলাগা; যখন
অন্যের দিকে, তখন ভালোবাসা। ভালোলাগায় ভোগের তৃপ্তি, ভালোবাসায় ত্যাগের সাধনা।’ কবিগুরু প্রেমের বিশ্লেষণে ত্যাগের মহিমার গুরুত্ব স্বীকার করলেও
অনাদিকাল থেকেই নর-নারী দুজনের সম্প্রীতির ওপরেই যে প্রেমের ম-প গড়া হয়েছে তা তিনি অস্বীকার করেননি। বরং এটুকুও বলেছেন যে, প্রেমের পক্ষ হিসেবে
নারীর ভূমিকা ছোট নয়। পুরুষের শক্তিমত্তা ও পৌরুষের দীপ্তি নারীপ্রেমই জাঁকিয়ে তোলে।
ভালোবাসার বয়স নিয়ে অনেক বাৎচিত প্রায়ই শোনা যায়। আশপাশের মানুষই এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্কে মাতেন। কিন্তু ভালোবাসার মওকা পেতে কার না ভালো লাগে
বলুন? শিশু থেকে বুড়ো সবার মনেই প্রেম আছে। সবার মনই ভালোবাসা চায়। ভালোবাসার স্পর্শ চায়। ষাটোর্ধ্ব বুড়োর সঙ্গে কোনো তরুণীকে গাঁটছড়া বাঁধার কথা
শুনলেই অনেকে নাক উঁচু করে বলেন, ‘এও কি মানার মতো?’ আপনি মানুন আর নাই মানুন, এ কথা তো স্বীকার করতেই হবে ভালোবাসা বয়স মানে না। জীবনের শেষ
বিকালে দাঁড়িয়েও বলতে ইচ্ছে করে, তবুও ভালোবাসি।
আধুনিক বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম পুরোধা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ‘লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা’র কথা মনে আছে? সেই ফ্লোরেন্টিনো
আরিজা ও ফারমিনা ডাজার কথা কি ভুলে গেছেন? ফ্লোরেন্টিনো যখন ফারমিনার অপ্রতিরোধ্য প্রেমে পড়ে তখন দুজনেই ছিলেন অল্পবয়সী তরুণ-তরুণী। ফারমিনা
ডাজার বিয়ে হয়ে যায় শহরের সবচেয়ে কাম্য অভিজাত বংশের বিত্তশালী উচ্চশিক্ষিত সুদর্শন যুবক চিকিৎসক জুভেনাল উরবিনোর সঙ্গে। পঞ্চাশ বছরের সুখী দাম্পত্য
জীবনের শেষে উরবিনো যখন মারা যান তখন দেখা হয় পূর্ব প্রেমিক ফ্লোরেন্টিনোর সঙ্গে। ফ্লোরেন্টিনোও কখনো ভুলতে পারেননি ফারমিনাকে। বুড়ো বয়সে আবারও
সেই প্রেম নিয়ে একে অন্যের মুখোমুখি হন নদীর বুকে নৌকায়। বয়সের ছাপ শরীরের প্রতিটি জায়গায় ফুঁটে উঠলেও প্রেমিক হৃদয় যে এতটুকু বদলে যায়নি, শব্দ শৈলীতে তার প্রমাণ দিয়েছেন মার্কেজ।
বাংলা সাহিত্যের আরেক জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেকে দিয়েই গেঁথে গেছেন ভালোবাসার মালা। যে মালা তিনি পরিয়েছিলেন বিদেশিনী মার্গারিট
ম্যাতিউয়ের গলায়। ফরাসি এই বান্ধবীই নিজ দেশ সম্পর্কে হাতে ধরিয়ে শিখিয়েছেন নীললোহিতকে। মার্গারিটকে নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাস ফেঁদেছেন তিনি। ‘ছবির দেশে
কবিতার দেশে’ বইতে অকপটে বলে গেছেন মার্গারিটের সঙ্গে তার গভীর অন্তরঙ্গতার অজানা কাহিনি।
আমেরিকা ছেড়ে আসার কয়েক যুগ পরেও যে তিনি মার্গারিটকে ভুলতে পারেননি, তা বেঁচে থাকতে সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিয়েছেন সুনীল। তাই বলে সহধর্মিণী
স্বাতীর প্রতি তার ভালোবাসার কমতি ছিল এ কথা বলা অন্যায় হবে। স্বাতী আর কবিতাÑএ দুটোকে ভালোবেসেই সুনীল যে বিভূঁই ছেড়ে অভাব-অনটনের কলকাতা
শহরের অলিগলিতে হেঁটেছেন পাতার বিড়ি ঠোঁটে চেপে, এ কথা অজানা নয়।
বিশ্বখ্যাত প্রেম কাহিনিগুলোতেও প্রেম ও বিরহ এই দুটি শব্দ পাশাপাশি বসে আছে। যেখানে প্রেম, সেখানেই বিরহ। আর বিরহ সেখানেই প্রেম জমে একাকার। বিশ্বের
নামিদামি অনেক গবেষকের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক থাকতে আপনি যতবার না তাকে নিয়ে ভাবেন, বিরহে গেলে তার চেয়ে
কয়েকগুণ বেশি ভাবনা ঘুরে বেড়ায় আপনার মস্তিষ্কে। এ কারণেই হয়ত বিরহের দীর্ঘ রজনী পেরিয়ে সবার চাওয়া ঊষার আলো।
সমাজে একটা সময় প্রেম ছিল মহাপাপ। এই পাপ অমার্জনীয়। এখনো যে সময় খুব একটা পাল্টেছে, তা নয়; তবে পাল্টাচ্ছে। মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারের
যুগে এখন কি চাইলেই বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন নিজেকে? নিয়ম, কানুন, ধর্ম-অধর্মের পাঁচিল টপকে কখন যে আপনার মন বারান্দায় কার ছায়া পড়বে তা আপনি
হলফ করে বলতে পারবেন না। কতটুকু সচেতন হলে নিজেকে প্রেমের বাইরে রাখবেনÑসেই তত্ত্বও কেউ দিতে পারেনি এখনো। তা না হলে অবচেতন মন গাইত না,
‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, সেকি তুমি নও, ওগো তুমি নও।’
ভালোবাসা নিয়ে এত এত কথার পরও বলা হয়নি অনেক কিছু। হয়ত প্রেম নিয়ে বলার শেষ হবে না কোনোদিন। আবার ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে যুগের পর যুগ
পার করার পরও মনে হতে পারে কত কথাই না রয়ে গেছে বাকি। প্রকৃতির অকৃত্রিম এই দানকে অবজ্ঞা করা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এ নিয়ে জীবনবিনাশী খেলাও কাম্য
নয় কারো কাছে। আজকাল সমাজে যেমন প্রেমের ভালো উদাহরণও আছে তেমনি মন্দের হাঁড়িও খালি নয়। এ দায়িত্ব আমাদেরই। ভালোবাসার মতো ঐশ্বরিক
শব্দটিকে কলুষিত করার মধ্যে যে সুখ তা মোটেও প্রকৃত সুখ নয়, নেহাত অন্ধত্ব, মনের বন্ধ্যত্ব। একবার ভেবেছেন, কারো ভালোবাসা পেতে আপনাকে কতটা চাতকের
মতো দিন পার করতে হয়েছে? কয়টা রাত কাটাতে হয়েছে জেগে? ভালোবাসার মর্ম এত সহজেই কি বোঝা যায়? আমরা বুঝতে পেরেও কি এর লালন করেছি? চর্চায়
মেলে এই সম্পদ। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় মান্না দে গেয়ে গেছেন অবলীলায়, “ক’ ফোঁটা চোখের জল ফেলছ যে তুমি ভালোবাসবে?/ পথের কাঁটায় পায় রক্ত না
ঝরালে কী করে এখানে তুমি আসবে।” ভালোবাসার জন্য এত যন্ত্রণা, এত রক্ত ঝরানোর পরও কি কেউ ভুলেছে ভালোবাসতে? একদম না।
ভালোবাসা নিয়ে কতশত গবেষণা হয়েছে, এখনো হচ্ছে, কী তার ফলাফল তা নিয়ে প্রতিনিয়তই জানতে পারছি আমরা। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে একটু
মনে করিয়ে দিতে চাই কানাডার মনোবিজ্ঞানী জন অ্যালান লি ভালোবাসার প্রকারণগুলো। এই গবেষক ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন ভালোবাসাকে।
এক. এমন এক শ্রেণির প্রেমিক-প্রেমিকা যারা প্রেমের প্রতি উদাসীন। প্রেমকে তারা খেলা মনে করে। একাধিক প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে এতটুকু বাধে না। এই প্রেমে
কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। এদেরকে বলা হয় লুডাস।
দুই. এরোস। এই ভাগে যারা আছেন তারা দেহের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। এদের প্রেমের মূল উপাদান কামনা, বাসনা ও ভোগ। আত্মার চিন্তার খুবই নস্যি তাদের কাছে।
তিন. যে প্রেমের শুরু হয় ভালোলাগা দিয়ে আর শেষটা ভালোবাসায়, সেই প্রেমকে অ্যালান বলেছেন স্টোরজ। এ ধরনের প্রেমের সম্পর্ক গড়তে বেশ সময় লাগে।
বোঝাপড়া ভালো হয়। তাই সহজে ভেঙে যায় না।
চার. প্রাগমা। এই ধরনের প্রেমিক-প্রেমিকারা খুবই বাস্তববাদী। ভেবেচিন্তে তারপর পা বাড়ান তারা। বললেই প্রেমে পড়ে যাবে, মোটেও তা নয়।
পাঁচ. প্রেমিক হিসেবে যারা একটু পাগলাটে অ্যালান তাদের রেখেছেন ম্যানিয়ার ভাগে। মাঝেমধ্যে এদের কাছে প্রেম ছাড়া সবই অর্থহীন মনে হয়।
ছয়. চাওয়া-পাওয়াহীন নিঃস্বার্থ প্রেমের নাম দিয়েছেন অ্যাগোপ। এই প্রেম দুর্লভ বৈকি।
ভালোবাসার বিভাজনেও একটা কথা কিন্তু চিরন্তন, তা হচ্ছে মনের দামে মন। ভাবের বাজারে গিয়ে মনের বিনিময়ে মন কিনতে পারলেই জীবনে আসবে প্রকৃত সুখ।
অর্থ কিংবা বিত্ত বৈভবের বিনিময়ে এই সুখ মিলবে না। যেটা মিলবে তা ভালোবাসা কি না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে। রবিঠাকুরের গল্পের নায়ক অপু নিজের বালিকা
বধূ হৈমন্তী সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সে যে আমার সাধনার ধন ছিল; সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ।’
নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে সম্পত্তি নয়, সম্পদ করে তুলতে পারলেই প্রেমের সার্থকতা। প্রেম কোনো না কোনো সময় সবার জীবনেই আসে। জীবন ঘনিষ্ঠ এই
বিষয়টিকে যখন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই তখন না হয় নিখাঁদ ভালোবাসাই থাকুক মনের মানুষটির জন্য। কী লাভ অযথাই মনের ক্যানভাসের রংধনুতে মেঘ ছড়ানোর?
ভালোবাসার দীর্ঘ পথ চলতে একঘেয়েমি হয়ে যেন না যান সেজন্য হলেও মাঝেমধ্যে রাগ-অনুরাগের ভেলায় ভাসিয়ে দিন না নিজেকে। তবে সেটা যেন দীর্ঘ না হয়। দূরে
থেকে প্রিয় মানুষকে অনুভবের সুখ-কষ্টটাও তো মাঝেমধ্যে উপলব্ধি হওয়া দরকার। তা না হলে কী করে বুঝবেন পাশের মানুষটি কতটা দখলে নিয়েছে আপনাকে?
শেষ করব মার্কিন মুলুকের সর্বকালের সেরা রোমান্টিক ছবি রোমান হলিডে দিয়ে। ১৯৫৩ সালে উইলিয়াম উইলার পরিচালিত এই ছবিটিতে সাংবাদিক জো ব্রাডলি
চরিত্রে অভিনয় করেছেন গ্রেগরি প্রেক এবং রাজ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারিণী রাজকুমারী চরিত্রে সর্বকালের অন্যতম সেরা সুন্দরী ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে
হেপবার্ন, ছবিটির গল্পে অ্যান। দেশ সফরের এক পর্যায়ে তিনি এসেছেন ইতালির রাজধানী রোমে। সব কাজে ধরাবাঁধা। বেশ ক্লান্তও বটে। চিকিৎসক দিয়েছেন ঘুমের
ইনজেকশন। কিন্তু চপলমতি এই রাজকুমারী সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েন রোম ভ্রমণে। ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার পাশে এক বেঞ্চিতে শুয়ে
থাকেন তিনি। সাংবাদিক ব্রাডলি ফেরার পথে তাকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যান। তারপর শুরু হয় রোমান্স। রোমের অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যাপিত জীবনের
মুহূর্তগুলো ভালোবাসার সুতোয় গাঁথেন দুজন। শেষমেশ রাজকুমারী প্রাসাদে ফিরে যেতে বাধ্য হলেও ভুলতে পারেননি। তিনি ভালোবেসেই গেছেন।
ভালোবাসার পথে ফুল ছড়ানো থাকবে এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েই পৌঁছতে হবে মনের মন্দিরে। তবে তা যেন হয় স্বচ্ছ, সুন্দর ও
সাবলীলতার প্রতিচ্ছবি, যা পরিবার, সমাজ, রাজনৈতিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় জীবনের বিশৃঙ্খলার দেয়াল ভেঙে আনবে শৃঙ্খলা। এটি দেখে দূর থেকে সবাই
বলবেÑভালোবাসা তুমি অমর হও”