“শুন শিশির তোমার সাথে আমার অনেক গুরুত্বপূর্ন কথা আছে… ( কুয়াশা )
“হুম বলো…
“নাহ ফোনে বলা যাবেনা
“তো কিভাবে বলবে??
“কালকে দেখা করো আমার সাথে
“আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু একটু বলো কি হইছে??
“নাহ। রাখছি এখন
“আরে মাত্রইতো ফোন করলাম?
“আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা, রাখলাম…
“শুন, শুন…
কুয়াশা শিশিরের কথার উপর দিয়েই ফোন রেখে দেয়। ঐদিকে শিশির কিছুই বুঝতে পারছেনা, কি হলো ওর, কোন প্রবলেম হলোনাতো ওর!!! এটা ভেবে আবার কল
দেয়। কিন্তু বারবার কল আসাতে কুয়াশা সুইচ অফ করে দেয়। শিশির কুয়াশার এমন ব্যবহারে খুব কষ্ট পায়, আবার চিন্তাও হচ্ছে ওর জন্য, কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা।
:
কুয়াশা আর শিশির আজকে ৩বছরে ধরে একসাথে আছে, শুরুতে তা বন্ধুত্ব থাকলেও ভালোবাসায় রুপ নিতে বেশিদিন লাগেনি। দুজনই দুজনকে খুব ভালোবাসে,
কেয়ারিং, অভিমান, ঝগরা, দুস্টামি সবকিছুই ওদের মাঝে আছে। আবার হঠাৎ করেই গভীর রাতে কুয়াশার আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছে, রাতের শহরে ল্যামপোস্টের
আলোতে হাটতে, কুয়াশা ভেজা সকালে খালি পায়ে হাটতে যেতে এমন পাগলামিতো আছেই। এভাবেই চলছে তাদের সম্পর্ক।
:
সকাল আটটায় শিশিরের ফোনে কল আসে…
“কই তুমি?? আমিতো এসে বসে রয়েছি
“এইতো বাবুনি আসতেছি, একটু বসো
“জলদি আসো।
:
“এতক্ষন লাগে আসতে?
“সরি বাবুনি, রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল
“হুম।
“সরি বললামতো
“তো আমি কিছু বলছি? শুন তোমাকে কয়েকটা কথা বলার জন্যই এখানে ডেকেছি।
“হুম বলো, এই বলেই শিশির কুয়াশার হাতটা ধরে, সাধারনত কুয়াশা কোন সিরিয়াস কথা বলার সময় শিশির এমন করে, এতে নাকি কুয়াশা মনোবল পায়। কিন্তু এবার
কুয়াশা হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। শিশির প্রচন্ড অবাক হয় ওর কাজ দেখে। কুয়াশা এমন করদে কেন!!!
“আমিকি হাত ধরদে বলছি?? কথা শুনতে বলছি
“তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?
“কথা শুনবা?? না হলে আমি গেলাম
“হুম বলো….
“শুন, তোমার সাথে আমি আর সম্পর্ক রাখতে পারবোনা…
“এইনা বললে সিরিয়াস কথা বলবে? তো এখন আবার মজা করতেছ কেন??
“আমি সিরিয়াস!!! তোমার সাথে আমি আর সম্পর্ক রাখতে পারবোনা।
কথাটা শুনে শিশিরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কি বলছে এসব কুয়াশা!!! ওর কি মাথা ঠিকাছে!!!
“কি বলছো এসব??? তোমার মাথা ঠিকাছেত??
“হুম আমার মাথা একদমই ঠিক আছে।
“নাহ, তোমার মাথা ঠিক নেই
“উফফফ!!! আমার মাথা একদমই ঠিকাছে এবং আমি ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তোমার সাথে আমার আর সম্পর্ক রাখা যাবেনা।
“কিন্তু কেন কুয়াশা?? আমার অপরাধ কি??
“তোমার সাথে আমার যায়না…
“কিন্তু এই ৩ বছর কিভাবে গেল??
“ওটা ছিল আবেগ।
শিশির কুয়াশার হাতদুটো শক্ত করে ধরে।
“তুমি আমার দিকে তাকাও কুয়াশা। কি হয়েছে তোমার প্লীজ আমাকে খুলে বলো?? আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো!!!
“যেভাবে পারো থেক।
“প্লীজ কুয়াশা বলো আমাকে, আমি বাচতে পারবোনা তোমাকে ছাড়া, প্লীজ বলো
“উফফফ। বাচ্চাদের মতো কান্না করোনাতো, বিরক্ত লাগে!!!
কুয়াশার মুখে এমন কথা শুনে শিশিরের বুকটা ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, একরাতে কুয়াশার এমন কি হলো যে ও এতো পরিবর্তন হয়ে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা শিশির।
“সত্যি আর সম্পর্ক রাখবেনা??
“নাহ রাখবোনা
“সত্যিই রাখবেনা??
“বললামতো না।
“আচ্ছা। কথাটা বলার সময় মনে হয়েছিল শিশিরের বুক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছিল।
“হুম। ভালো থেক। আর পারলে ক্ষমা করে দিও
“হুম তোমার প্রতি আমার কোন কষ্ট নেই। আসলে সমস্যাতো আমার, আমিই তোমার যোগ্য না।
“হুম, এতক্ষণে তাহলে বুঝতে পেরেছ।
এই বলেই কুয়াশা উঠে সামনের দিকে এগুতে থাকে, কুয়াশার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, হেটে যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই, কিন্তু তাও তাকে যেতে হবে। খুব কান্না
পাচ্ছে কুয়াশার, কিন্তু বোকাটার সামনে কান্না করা যাবেনা। হঠাৎ করেই পিছন থেকে শিশির ডাক দেয়…
“বাবুনি শুন
ডাকটা শুনেই কুয়াশা হু হু করে কেদে উঠে, খুব পরিচিত এই ডাক, এই কন্ঠস্বর , কুয়াশা একটু দাড়ায়, তবে শিশিরের দিকে ফিরেনা, কারন তাহলে সে আর তাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা, কোনভাবেই না।
“নিজের প্রতি খেয়াল রেখো হুম?? ঠিকমতো খাবে, ঘুমাবে। আর আমার কথা জানিনা মনে পরবে কিনা, তবে ভেবনা, আমার চলে যাবে কোন একভাবে।
এই বলেই শিশির উঠে চলে যায়, খুব কষ্ট হচ্ছে ওর, প্রচন্ড কষ্ট। যেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি আজ সেটা তার সাথে হলো। কেন এমন করলো কুয়াশা, কি অপরাধ
করেছিলাম আমি!!! আমিতো তাকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম। এসব কথা ভাবতে থাকে শিশির। কিন্তু এর কোন উত্তর তার জানা নেই।
অপরদিকে কুয়াশা শিশিরের কথা শুনে আর একটা মুহুর্তও সেখানে দাড়ায়নি, কাদতে কাদতে চলে এসেছে সে। চোখের অশ্রুতে তার গাল ভিজে যাচ্ছে। বাসায় এসেই
কুয়াশা তার আম্মুকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। আম্মু আমি এটা কি করলাম ওর সাথে। ওতো বাচবেনা আমাকে ছাড়া, বিশ্বাস করো ও মরে যাবে দেখ। প্লীজ
তোমরা ওকে বুঝিয়ে বলিও সব।
“এইবলেই কুয়াশা তার রুমে দরজা লাগিয়ে কান্না শুরু করে দেয়, তাদের বাসায় একটা কান্নার রোল পরে যায়। কুয়াশার আম্মু-আব্বু, ছোটবোন সবাই কান্না শুরু করে
দেয়। তাদেরকে স্বান্তনা দেবার মতো কেউ নেই, কেউ না। কারন যে স্বান্তনা দিবে সেইতো কান্না করছে।
:
কুয়াশা শিশিরের সাথে ইচ্ছে করেই এমন করেছে, কারন তার আর সময় নেই। বেশ কয়েকদিন ধরেই কুয়াশা বারবার মাথা ঘুরে পড়ে যেত, মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হতো,
তবে শিশিরকে কিছু জানায়নি। বোকাটা তাহলে খুব কষ্ট পাবে। পরে ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার যেটা বলে এটা শুনেই কুয়াশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার শরিরে
ক্যান্সার। এটা সে বিশ্বাসই করতে পারছিলোনা। সাথে ডাক্তার আরো জানিয়ে দেয় বড়জোর কুয়াশা আর ১মাস বাচবে। সেদিন কুয়াশা কিছুই বলেনি, শুধু ভাবছিল এটা
কিভাবে সম্ভব!!! আমি কি এমন পাপ করেছিলাম যে আল্লাহ আমাকে এত বড় শাস্তি দিল। তার মনে তখন শুধু হাহাকার হচ্ছিল বোকাটার কি হবে, কিভাবে থাকবে সে!!!
তারপরদিন কুয়াশা তার আম্মুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিল, অনেক বেশি। সাথে বলেছিল আমি বাচতে চাই আম্মু, আমি বাচতে চাই, প্লীজ আমাকে চলে যেতে দিওনা
;
অপরদিকে শিশির বাসায় গিয়েই সোজা শুয়ে পড়ে, একটুপর একটা সিগারেট ধরায়, ধোয়াটার সাথে কষ্টটা দুর করার সামান্য বৃথা চেষ্টা মাত্র। কিন্তু এই কষ্টটা দুর
হওয়ার মতো না। পিছনের কথাগুলো শিশিরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে, কতো সুখে কাটছিল সময়গুলো, কুয়াশাতো তাকে কথাও দিয়েছিল তাকে কোনদিন ছেড়ে যাবেনা, কিন্তু আজ কেন গেল!!!! কি ছিল তার অপরাধ!!!
কথাগুলো মনে হতেই শিশির ছেলে হয়েও হু হু করে কেদে দেয়। তার ধম বন্ধ হয়ে আসছে, কি করবে সে ভেবে পায়না।
— ২দিন পরের কথা—-
:
কুয়াশা এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। সে শ্বাস নিতে পারছেনা, অনেক কষ্টে শ্বাস নিচ্ছে, ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে কুয়াশার টাইম শেষ, এখন আল্লাহ তাকে যতটুকু বাচিয়ে রাখে।
একটুপর কুয়াশার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়, শ্বাস প্রায়ই বন্ধ হয়ে আসছে, কুায়াশা অক্সিজেনের মাস্কটা তার মুখ থেকে খুলে নেয়, কারন পৃথিবীর একটু ছোয়া
শেষবারের মতো তার ভেতর নিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, খুব বেশি। শিশিরের কথা মনে হতেই কুয়াশা কেদে দেয়। কিভাবে থাকবে বোকাটা!!! তার মৃত্যুর কথাটা শুনে ঠিক
থাকতে পারবেত!!! কিছু করবেনাতো নিজের সাথে। কুয়াশা তার আম্মুকে কাছে ডাকে। হাতে একটা চিঠি দিয়েই কুয়াশা বলে যে…
“শিশিরকে বলিও ও যেন নিজের সাথে কিছু না করে, যেন নিজের খেয়াল রাখে, আর চিঠিটা ওকে দিয়ে দিয়ো
ওর আম্মু তখন চিৎকার করে কেদেছিল…
“তুমি কেদনা আম্মু, নিজের খেয়াল রেখ, আব্বুকে দেখে রেখ ..
এটা বলেই কুয়াশা তার চোখদুটো বন্ধ করে ফেলে, সবার কান্নাার শব্দ শুনে ডাক্তার আসে এবং চেকে করে বলে দেয় যে, কুয়াশা নেই। হারিয়ে গেছে আধারে। , যেখান থেকে আর কোনদিন বের হতে পারবেনা, কোনদিন ও না…
:
আজ ৫দিন হয়ে গেছে কুয়াশার কোন খোজ নেই, শিশিরও কল দেয়নি আর, ইচ্ছে হচ্ছেনা কল দিতে, যে চলে যেতে চায় তাকে আটকিয়ে কি লাভ!!! তবে শিশির
একটুও ভুলতে পারেনি কুয়াশাকে, প্রত্যেকটা মুহুর্ত কুয়াশাকে মিস করে, খুব মিস করে খুব বেশি। হঠাৎ করেই দরজায় টোকা পড়ে। শিশির দরজা খুলে দেয়। অচেনা
একজন লোক তার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়…. কে দিল, কেন দিল কিছুই জানার সময় পায়নি সে।
শিশির অনেকটা আগ্রহ নিয়ে চিঠিটা খুলে…
—আমার বোকাটা—-
কেমন আছো? জানি ভালো নেই। আমিও ভালো নেই। খুব মনে পড়ছে তোমাকে, খুব বেশি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার জন্য তাইনা?? কি করবো বাবু বলো? এটা ছাড়াতো আমার কোন উপায় ছিলনা।
আমার ক্যান্সার হয়েছে। জানো পিশাচ ডাক্তারটা জানিয়ে দিয়েছে আমি আর ১মাস বাচবো। কিন্তু বাবু আমিতো বাচতে চাই, তোমাকে নিয়ে হাজার বছর বাচতে চাই। প্লীজ আমাকে ভুল বুঝনা।
জানি যখন চিঠিটা পড়বে তখন আমি আর থাকবোনা, থাকবে আমার স্মৃতিগুলো, কিন্তু কেদনা তুমি প্লীজ। আমি দুর থেকেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো। কোন এক
জোছনা রাতের চাদের আলোর সাথে মিশে আমি তোমাকে ভালোবাসবো, মাঝেমাঝে ঐ দুর আকাশের তারা হয়ে তোমাকে দেখব। তোমার সবকিছুতেই আমি থাকবো। ভালো থেক তুমি।
আর হ্যা একটা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব, এনে দিবা?
ইতি, তোমার বাবুনি।
:
চিঠিটা পড়েই শিশির স্তম্ভিত হয়ে যায়, চোখদিয়ে অশ্রু পড়তে থাকে, হাউমাউ করে কেদে দেয়, হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার মা তাকে তখনি হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ডাক্তার অনেক চেষ্টা করে তাকে বাচাতে, কিন্তু হচ্ছেনা, তার শ্বাস প্রশ্বাস চালু হচ্ছেনা, দম আটকে আছে।
শিশিরের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে তাকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করে, অনেক চেষ্টা করেও শ্বাস নিতে পারছেনা সে, কিভাবে পারবে কুয়াশা না থাকলেত
শিশিরও থাকেনা। এই ধারাতেই হয়তো শিশিরও চলে যাচ্ছে। একটুপর শিশির মুখ থেকে অক্সিজেনের মাস্কটা খুলে নেয়, শেষবারের মতো পকেট থেকে বের করে
কুয়াশার ছবিটা দেখে, কতো মায়াবি মেয়েটা। খুব ভালোবাসতো তাকে, খুব কেয়ার করতো। এসব ভাবতেই শিশিরের চোখে পানি চলে আসে।
একটুপরেই শিশিরের বুকে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে, এটা কোন সাধারন চাপ নয়, মুহুর্তেই শিশিরের কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে, চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে। শেষ মুহুর্তে চোখদুটো বন্ধই করে ফেললো, যা হাজার ডাকলেও খুলবেনা….