বউয়ের আবদার

বউয়ের আবদার
বিয়ের তিনমাস পেরিয়ে গেছে। আমার বৌ বলেছিলো রোজ সকালে তাকে ডেকে তুলতে হবে আমি সেটাই করি তবে ঠিক এভাবে আমি রোজ সকালে ঘুম ভেঙে দেখি ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ওর বাচ্চাদের মতো করে থাকা মুখটা দেখে আমি একটু মৃদু হেসে দেই।
তারপর মিষ্টি করে ঘুমন্ত পরিটাকে একটা চুমা দেই। ও আমার সেই ঠোটের স্পর্শ অনুভব করতে পেরে একটু নড়েচড়ে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, উমমমম!!!! না আরেকটু ঘুমাবো। আমি তখন দুষ্টামি করে ওকে সুড়সুড়ি দেই। ব্যস অমনি লাফিয়ে উঠেই আমারে মাইর শুরু করে। কত আনন্দের সাথে !!!, সকালটা আমাদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা দিয়েই শুরু হয়। বলেছিলো রান্নাঘরে আলগা পিরিত যেন না দেখাই । আরে ভাই আমি কি দেখাবো সে তো নিজেই এখন আলগা পিরিত দেখায় । আমি দাড়িয়ে থাকি আর সে চুলায় তরকারী বা ভাত টা তুলে দিয়ে অমনি এসে আমার হাতদুটো টেনে নিয়ে ওর কোমড়ে রাখে। আর তারপর আমার শূন্য বুকটাতে আশ্রয় নেয়। আমি বলি যে, যাও, তরকারী পুড়ে যাবে সে বলে, পুড়ুক একদিন পোড়া তরকারীই খাবে। কি হয় খেলে? আমার এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে করছে।
কি পাজি মেয়েটা!!! বলেছিলো তিনবেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিতে। সে কারণে আমি এখন অফিসে টিফিন নেইনা। লাঞ্চ আওয়ারে এসে ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলে তবেই খায়। নয়তো সারাটা দুপুর না খেয়ে থাকে। বলেছিলো শুক্রবার দিনটায় তার সাথে বাসার সব কাজ করতে হবে। সত্যিই তাই। এই পাজি মেয়েটা ইচ্ছে করেই সারা সপ্তাহের কাজ একদিনে জমিয়ে রাখে। তারপর আমাকে দিয়ে করায় মাঝে মাঝে আমার যখন বিরক্ত লাগে আমি রেগে গিয়ে চেচিয়ে উঠি। ও দৌড়ে এসে আমার শুকনো ঠোটদুটো ওর ঠোট দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে বলে, রাগেনা সোয়ামি। আমি না তোমার আদরের বউ। আমি না থাকলে তখন
( বাকিটা আর বলতে দেইনা । ওর মুখটা চেপে ধরে বলি তুমি থাকবে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে) আমার বৌ পাগলি বলেছিলো সে কাদলে তার সাথে আমাকেও কান্না করতে হবে। কান্না করবো কি? এখন তো ওকে কখনো চুপচাপ গোমড়া মুখো হয়ে থাকতে দেখলেও আমার চোখে পানি চলে আসে। মাঝখান থেকে ও নিজেই এসে আমার সাথে কান্না জুড়ে দিয়ে বলে,আরে বোকা ছেলে কাদছো কেন? আমি তো এমনিতেই চুপ করে রয়েছি ওর আবদার ছিলো যেদিন ওর মন ভালো থাকবে না সেদিন আমি অফিস না গিয়ে ওর পাশে বসে থাকবো। আমি এখন এমনিতেই মাসে ৩-৪ দিন অফিস বাদ দিয়ে বৌয়ের সাথে রোমান্স করি। বরং বৌ টা নিজেই প্রতিদিন আমাকে ঠেলে ঠেলে অফিসে পাঠায়
পাগলি বলেছিলো, মেয়ে তো দূর কথা কোনো বুড়ির দিকেও তাকাতেপারবো না। ও ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে তাকাবোই বা কিভাবে। আমি তো যে মেয়েটাকে দেখি মনে হয় এর থেকে তো আমার বউই অনেক সুন্দরী। খামোখা এসব মেকাপওয়ালির দিকে তাকিয়ে আমার পাগলি বৌয়ের ভালোবাসা হারাবো কেন? পাগলি বলেছিলো সে না খেলে আমাকেও না খেয়ে থাকতে হবে। হা হা হা সত্যি আমি ক্ষিদে সহ্য করতে পারিনা । কিন্তু এখন ক্ষিদে লাগলে খাওয়া তো দূর বউ না খেয়ে আছে শুনলে আমার পুরো পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যায়। অভিমান করলে ওর হাসিমুখ টা না দেখা অবধি আমার গলা দিয়ে ভাত নামেনা। ভালোবাসা মানুষকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
একবার ওর জ্বর হইছিলো। কিছুই খেতে পারছিলো না । সত্যি বলতে ওই সময়টার কথা আমি মনে করতে চাইনা। আমার বৌ টা খেতোনা। কোনো আবদার করতো না। আমার সাথে দুষ্টামি করতো না। শুধু চোখ দুটো মেলে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতো, দেখো আগামীকাল সকালেই আমি সুস্থ্য হয়ে যাবো। আমি পুরোটা রাত ওর মাথায় হাত বুলাতাম। আমার বুকে ওর মাথাটা রেখে চুপচাপ কান্না করতাম। ও বারবার কাদতে নিষেধ করতো। আমার বৌ টা ঠিক যতোটুকু খাবার খেতো আমিও ততটুকুই খাবার খেতাম। কারণ ওর কষ্টটাকে আমি নিজে অনুভব করতে চেয়েছিলাম। ও রাগ দেখিয়ে বলতো, তুমি যদি খাবার না খাও তাহলে আমি ভালো হবোনা কিন্তুু। দেখো আমি মরে যাবো।
আমি ওকে সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরে কেদে দিতাম পাগলিটা বলেছিলো রেগে গেলে ও আমাকে ঘরের দড়জা লাগিয়ে পেটাবে। সত্যি বলতে এই তিনমাসে সেই সময়টা এখনো আসেনি। আর মনে হয়না আসবেও। কারণ আমার ওপরে ওকে কখনো রাগ দেখাতে দেখিনি।যেটা দেখেছি সেটা অভিমান। ও বলেছিলো রোজ চাঁদনি রাতে ওকে ছাঁদে নিয়ে গিয়ে গল্প শোনাতে হবে। এখন চাদনি হোক বা আঁধার রাত । আমি প্রতিরাতেই ওকে ছাদে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তুু লক্ষ্মী বৌ আমার নিজেই বলে, থাক চলো ঘুমাবে।কাল সকালে তোমার কাজ আছে। বউয়ের আবদার ছিলো যখন যেটা খেতে চাইবে তখন তাকে সেটাই এনে দিতে হবে। তবে তার খাবারের আবদারগুলো বড়ই অদ্ভুত এই যেমন : এক গ্লাস পানি হাতে এনে বলবে
— শুনোনা আমার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে (বৌ)
— হ্যা তো পানি খাও (আমি)
— না আগে তুমি অর্ধেক খাও
— আমি খাবো কেন?
— কারণ স্বামীর এটো করা জিনিস বৌ খেলে ভালোবাসা বাড়ে।
বুঝেছো এরকম বৃষ্টির দিনে বলবে বেশি করে ঝাল দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে দাও। মুড়ি মাখিয়ে দিলে সেই মুড়ি খাবে আর আমাকে কিলাবে এসব বলে, এতো ঝাল দিছো কেন ইতর? দিতে বলছি বলেই এতো ঝাল দেবে নাকি?
তেল হয়নি কেন? এভাবে কেউ মুড়ি মাখায়? ওর শেষ আবদার টা ছিলো দিনে ১০০ বার আই লাভ বলতে হবে আর ২০০ টা  চুমা দিতে হবে রোজ। সত্যি বলতে আগে মনে হতো এটা সম্ভব না। কিন্তুু যেদিন থেকে বউকে ভালোবাসতে শিখেছি এই মায়াবিনীর মায়ায় জড়িয়ে গেছি সেদিন থেকে শুধু মনে হয়েছে, এই পাজিটা ওইদিন ১০০ বারের বদলে ৫০০ বার আই লাভ ইউ টু বলতে বলেনি কেন? ১০০০ টা চুমা চাইলোনা কেন? আমি এখন বৌকে যখনই সুযোগ পাই তখনই চুমা দেই।
মাঝে মাঝে ও নিজেই বিরক্ত হয়ে রেগে যায় । তখন আমিও অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকি। শয়তান বৌ টা এসে টুক করে আমার ফোলা গালে একটা চুমা দিয়ে হিহি করে হেসে ওঠে আর বলে, আমার সোয়ামি রাগলে তাকে পুরো কার্টুনের মতো লাগে। এইতো আমাদের বিবাহিত জীবন। দিন দিন তার আবদার যেন বেড়েই চলেছে। আর আমিও তার সব আবদার যথাযথভাবে মিটিয়ে নতুন কোনো আবদারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। কারণ আমি জানি এই শয়তান, হাড় বজ্জাত মেয়েটার প্রতিটা আবদারের মাঝে লুকিয়ে আছে আমার প্রতি তার অন্তহীন ভালোবাসা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত