অসময়ের জুই ফুল

অসময়ের জুই ফুল

ল্যাপটপের পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো কিরন। ঘড়িতে সময় দেখল – ৫টা বাজে। মনির অফিস ছুটির

সময় হয়ে গেছে। অন্যান্য দিন ওর ফিরতে দেরি হলেও আজ মনে হয় তাড়াতাড়িই ফিরবে। কারন আজ কিরন বাসায় আছে।

কিরন আজকে অফিস যায়নি। শরীর খারাপের কথা বললেও আসলে শরীর তার ঠিকই আছে। শুধু দীর্ঘ সময় ধরে একটানা

ল্যাপটপের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য চোখদুটো একটু ব্যাথা করছে এখন। এছাড়া সে আর পুরোটাই ঠিকঠাক।

নাহ! পুরোটা বলাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। শরীরের দিক থেকে ঠিক থাকলেও মনের দিক থেকে সে ঠিক নেই সকাল থেকেই।

তারিখটা আজ ১১ই জানুয়ারি। শীতকালের মাঝামাঝি । জুই ফুল ফোটার সময়। প্রতিবছর এই সময়টা তার অস্থির লাগে। বিশেষ

করে আজকের দিনটায়। ড্রইংরুমের টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে বেড্রুমের ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা জুই ফুলগুলো আরেকবার

দেখে কিরন । ফুলগুলো ও কিনে এনেছে অনেক দূর থেকে, মনিকে দিবে বলে। মনি অনেক খুশি হয় প্রতি বছর জুই ফুল পেয়ে।

বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর এই দিনে কিরন মনিকে জুই ফুল দেয়, আজ নিয়ে মোট ৩ বছর। প্রথম বছর মনি অবাক

হয়েছিল খুব, খুশিও হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রশ্ন করেনি। এরপর থেকে প্রতি বছর মনি কিরনকে একই প্রশ্ন করে, যার উত্তরে একটু

হাসি দিয়ে একই কথা বলে যায় কিরন।
“এ কী! তোমার চোখে জল কেন?” – সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে মণি চলে এসেছে, দেখতেই পায়নি; তাই হঠাৎ মণির

প্রশ্নে চমকে উঠে কিরন। “ও কিছু না, অনেকক্ষণ ধরে ল্যাপটপের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য চোখদুটো একটু ব্যাথা

করছে” – কিরনের তাৎক্ষনিক উত্তর । মণি কিরনকে ধমক দিতে গিয়েও জুই ফুলগুলো দেখে হেসে ফেললো। জানে, কিরনকে

কিছু বলে লাভ নেই, কম্পিউটার ছাড়বে না সে এত সহজে। তার চেয়ে রুটিন প্রশ্নে চলে যাওয়াই ভাল! “এবারও অসময়ে ফুল

নিয়ে আসলে তুমি! প্রতিবার এমন কর কেন? সবসময় বল আমার সাথে প্রথম ঘুরতে যাওয়ার দিন তুমি জুই ফুল দিয়েছিলে! অথচ

আমাদের প্রথম দেখা বর্ষাকালে। বর্ষার সময় তুমি জুই ফুল কোথায় পেয়েছিলে, বলবে? আর তুমি আমাকে দিলে, আমি জানলাম

না কেন!” প্রতিবারের মতই একই প্রশ্নগুলো করে যায় মণি কিরনকে। জানে, কী উত্তর আসবে, তবুও। এই পাগল পাগল ছেলেটার

কাছ থেকে একই উত্তর পেতে প্রতিবারই একই রকম ভাল লাগে তার। কিরনের উত্তরও এবারও প্রস্তুত ছিল অন্য সব বারের মতই,

“তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা শীতকালে, তোমার ভুবনে না, আমার ভুবনেঃ কল্পনায়।আমিতো কাল্পনিক রাজপুত্র। কল্পনায়

দেখতে পাই আমি তোমাকে, ঘুরতে যাই তোমার সাথে, ছুঁয়ে দেই তোমার হাত- গুটি গুটি জুই ফুল দেবার বাহানায়।

“পাগল একটা! আমি ফ্রেশ হয়ে চা নিয়ে আসছি, দুজন একসাথে বসে চা খাব।“ এই বলে জুইফুলগুলো হাতে নিয়ে গভীর

ভালবাসায় একবার হাত বুলিয়ে মণি চলে গেল ফ্রেশ হতে আর কিরন ড্রইংরুমে।

ল্যাপটপে ওপেন করে রাখা ওর ব্যক্তিগত ডায়েরিটার স্ক্যান কপিতে আরেকবার চোখ বুলালো কিরন। আজ থেকে ৭বছর আগের

পাতা খোলা। স্পষ্ট বর্ণনা লেখা আছে সে কিভাবে জুইকে জুই ফুল দিয়েছিল আর তার সাথে সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরেছিল।

স্বপ্নের ৪টা বছরের বর্ণনা। মণি বাথ্রুম থেকে বেরুনোর আওয়াজ পাওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত ফাইলটা বন্ধ করে দিল কিরন। কী

দরকার মণিকে এটা দেখানোর? কী দরকার মণিকে জানানোর যে কিরনের জীবনের প্রথম প্রেম জুই, যাকে জুই ফুল দিয়েছিল

আজ থেকে ৭ বছর আগে আর জুই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছি আজ থেকে ৩ বছর আগে।অন্য জনের ঘর সাজাতে। তারপর

থেকে কিরন আর কোন মেয়েকে ভালবাসেনি, বিয়ে করতে চায়নি, যতদিন পর্যন্ত না ও আরেক জুইকে খুঁজে পেয়েছে!

……………………………………..সমাপ্ত…………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত