রাস্তার এক ধারে বসে একমনে সিগারেট টানছিলাম। হঠ্যাৎ কারো ডাক শুনলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আমাকে ডাকছে..
“এই যে শুনছেন মি.”
“জি!বলুন”
“তা বলব তবে আগে আপনি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন?”
“কি বিপদ রে বাবা।বলুন কি জিজ্ঞেস করবেন!”
“আপনি কি কানে কম শুনেন?”
“না তা কেন হবে। আমি অনেক ভালো ভাবেই শুনি।আর আপনার জিজ্ঞাসা শেষ হলে আমি আসতে পারি”
“আমি কি বলছি যে আমার প্রশ্ন শেষ”
“না তা বলেন নি।চালিয়ে যান”
“তা এই মুহুর্তে পারছি না ”
“মানে!!!”
“মানে আমার মাথা ”
“অহ”
“এই মি. কি অহ করছো”
“আপনি মাফ করেন আর আমাকে মুক্তি দেন”
“তা পারবো না।আপনি সিগারেট কেন খাচ্ছেন ”
“পরিক্ষায় ফেল করেছি তাই”
“হিহিহি,তা সিগারেট খেলে কি পরিক্ষায় ভালো করবেন”
“জানিনা”
“শুনেন আমার বাই সাইকেলের চেইনটা পড়ে গেছে তাই আপনি যদি”
“না পারবো না”
“তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।জানেন আমার বাবা পুলিশ ”
“চুরের দল (মনে মনে)”
“কি হলো ভয় পেলেন। চলেন”
আগত্যা তার সাথে যেতে হলো গিয়ে তার সাইকেলের চেইন টা ঠিক করে দিয়ে এলাম।সে হন হন করে চলে গেল।কি মেয়েরে বাবা একটা ধন্যবাদ ও বলল না।
আমি বাসায় চলে গেলাম। পরদিন সকালে নতুন কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য রওনা দিলাম।মিরপুর এর কাছাকাছি এসেই জেমে পড়ে গেলাম।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে
তাই লোকাল বাসেই চাপতে হয়।আমি একদম জানালার পাশের সিটা টায় বসে আছি। একটু পর জানালার দিকে উকি মারলাম।দেখি গতকালকের সেই মেয়েটা রাস্তার
অই পাশে একটা দোকানের সামনে বসে আছে সাথে অই সাইকেল। দেখে মনে হচ্ছে কারো অপেক্ষা করছে। আমি তাকে দেখা।মাত্রই চোখ ফিরিয়ে নিলাম।ততক্ষনে
আমাদের বাস টা ও চলতে শুরু করেছে। কলেজে গিয়ে বিরাট আকারের একটা ধাক্কা খেলাম।কলেজ গেইটের সামনে সে দাডিয়ে আছে।
আমি নিচের দিকে চেয়ে চুপচাপ চলে যেতে থাকলাম।হট্যাৎ মনে হলো কেউ আমার কলার ধরে পেছন থেকে টানছে।
আমি হুট করে পেছনে তাকালাম।দেখলাম সেই মেয়ে আমার কলার চেপে ধরে আছে।
“কি হলো, আপনি আমার কলার এভাবে ধরলেন কেন।কলার ছাড়ুন”
“না ছাড়বো না”
“কি পেইন। আপনাকে ভালো ভাবে বলছি কলার ছাড়ুন”
“না ছাড়বো কি করবে”
“দেখেন কি করি”
আমি ঠাস করে তার গালে একটা থাপ্পড় মারলাম।সে আমার কলার ছেড়ে দিলো।আমি কলেজের ভিতর ঢুকে পড়লাম।সাবাই দেখি আমার দিকেই তাকাচ্ছে।আমি চিন্তা করলাম আমি কি এলিয়েন নাকি সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে।
আমি সেসব পাত্তা না দিয়ে সোজা প্রিন্সিপাল এর রুমে চলে গেলাম।
সরি, আমি আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।আমি তৌহিদ। বদের হাড্ডি। এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি।
সার আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকালেন।আমি রুমে ডুকার পর,
“আসন গ্রহন করেন জনাব তৌহিদ ”
“আমি গিয়ে একটি সিটে বসলাম”
আমি রীতিমতো একটা ধাক্কা খেলাম।আমি আজ কলেজে নতুন আর সার আমার নাম জানলো কি করে। সে সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সার এর টেবিলে আমার ফাইল গুলো রাখলাম।
“সার এই আমার সার্টিফিকেট গুলো”
“তার প্রয়োজন হবে না”
“কেন সার। সব কলেজে তো এসব লাগে”
“তা লাগে আমাদের কলেজে ও কিন্তু তুমার লাগবে না”
আমি চুপ করে বসে রাইলাম।
একটু পর সার একটা কল করলেন। সার তিশা নামের একটি মেয়েকে সার এর কেবিনে আসতে বললেন।একটু পর অই দিনের অই মেয়েটি আসলো আমি বুঝলাম অই
মেয়েটির নাম তিশা।আমি এই প্রথম মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালাম। মেয়েটি যেন একটি পরি। খুব সিম্পল ড্রেস পরে আছে। তার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে
পিঠের দিকে ছিটিয়ে আছে। লম্বার মুখ।গায়ের রঙ একদম সাদা। দেখতে যেন একটি পরির মতো।আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম।সে সার এর কথায় আমার পাশের সিটে বসলো।
“আমি কি তৌহিদ কে এই কলেজে সিট দিবো”
“দেন সার”
“কিন্তু সে যে তুমাকে”
“তার হিসাব আমি নিবো।এবং সে যদি আমার কথা না শুনে তাকে যেন ভরখাস্ত করা হয় এবং এমন ব্যবস্তা যাতে নেওয়া হয় যেন সে আর কোনো কলেজে ভর্তি না হতে পারে”
“মি.তৌহিদ শুনলে তো।এবার কিন্তু সাবধান”
তার পর সে উঠে চলে গেলো। তখন সার আমায় বললেন তুমি জানো না মেয়েটা কার মেয়ে।
“কার সার”
“এই এলাকার একজন অসির মেয়ে”
অহ এই জন্যই এতো পাওয়ার।সেদিন আর ক্লাস না করে বাসায় চলে এলাম।
.
“আজ দুই বছর পার হয়ে গেলো তাইনা”
“হুম”
“তুমার কি আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে আছে”
“সেই দিনটা আমার সবচেয়ে প্রিয় দিন”
“আচ্ছা আমি যদি চলে যাই”
“না তুমাকে আমি যেতে দেবো না ”
“যদি চলে যাই,যদি হারিয়ে যাই কোনো অচিন দেশে”
“চুপ।আর কোনোদিন এরোকম কথা বলবা না। একদম খুন করে ফেলবো”
“তাহলে তো আর আমাকে পাবে ”
তিশা কেঁদে দিলো। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
“কি হলো কাঁদিস কেন পাগলি”
“তুমি যে অই রকম কথা বলছো তাই।প্রমিজ করো আর জীবনে ও এরকম কথা বলবা না ”
“প্রমিজ।কিন্তু যদি বলি”
“আমার বাবা অসি মনে থাকে যেন”
“হাহাহা।জানো তিশা তুমাকে অনেক ভালোবাসি ”
“হুম জানিতো। আমি ও তুমাকে অনেক ভালোবাসি ”
.
অইদিন রাতে আমার ঘুম ঠিক মতো হচ্ছিলো না। বার বার অই মেয়েটির কথা মনে আসলো আমার মনে হয় মেয়েটিকে এভাবে চড় মারা ঠিক হয় নি।নিজেকে কেমন যেন লাগলো।ছটফট করতে থাকলাম।ভাবলাম পরদিন সকালে গিয়ে সরি বলবো।
পরের দিন সকাল থেকে তার জন্য গেটে অপেক্ষা কররে থাকলাম।না সে আসে নি অইদিন। মুখ কালো করে আমি ক্লাসে চলে গেলাম।এর পরের দিন অ আসার সাথে সাথেই তাকে বললাম,
“তুমার সাথে কিছু কথা আছে”
“কি কথা”
“এখানে বলা যাবে না”
“তাহলে!!”
“কোনো কফি শপে চলো”
আমি তাকে নিয়ে একটি কফি শপে চলে গেলাম।কফি শপে বসে কফি খাচ্ছিলাম। আমি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।কতো লক্ষি একটা মেয়ে। মেয়েটি হাসায় সময় তার গায়ে ডোল পড়ে।কতমায়াবি তার চেহারা। একসময় আমাদের চোখাচোখি হয়ে গেল।
“কি বলতে এনেছো বল জলদি”
“আসলে সেদিন আমার অনেক বেশি রাগ উঠেছিল তাই প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও”
“হুম”
আমি তাকে দাঁড়াতে বললাম।দাঁড়ানোর সাথে সাথেই আমি হাটু নিচু করে,
“রব তুমাকে পরির মতো বানিয়েছেন
যদিও আমি কখনো পরি দেখিনি।তবে আমার মনে হয় পরি তুমার চেয়ে বেশি সুন্দর হবে না। পরিদের সবাই পায় না আবার দেখেও না আমি দেখেফেলেছি তাই আমি পরি কে যেতে দিবো না ”
বলেই হাতের পেছন থেকে তাজা একটি ফুল তার দিকে বাড়িয়ে বললাম I Love You Tisha.
সে আমাকে তুলে জড়িতে ধরলো। এবং বলল, “I Love You Too”
তার পর দুজন উঠে বসলাম।সে আমাকে বলল আমার সাথে প্রেম করতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হবে।
“নিয়ম গুলো কি কি। আমি সব নিয়ম মানতে রাজি”
“আরে আগে নিয়ম গুলো শুনো,
আমাকে ভালবাসতে হবে”
“অনেক ভালবাসবো”
“অন্ন কোনো মেয়ের দিকে তাকেবে না ”
“তওবা আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না”
“আমাকে কখনো ছেড়ে যেতে পারবে না”
“না ছেড়ে যাবো না”
“তাইলে ঠিক আছে”
.
এর পর আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক আরো গভির হল।আমি আজ তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।হয়তো জীবনের চেয়েও বেশি।