— আমার একটা পিক দাও তোহ.. যেটা তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে!! (মিহিন)
মিহিনের ম্যাসেজটা সিন করে একটু নাহ.. অনেকটাই অবাক হলাম আমি। আমার ভালো লাগা দিয়ে মিহিন কি করবে?? আর মিহিন জানলো কি ওর পিক যে.. আমার কাছে আছে??
— তুমি কি করে জানলে.. তোমার পিক আমার কাছে আছে?? (আমি)
— হুম.. অবশ্য আছে.. আমি জানি। আর নাহ থাকার তোহ কথা নাহ?? তারাতাড়ি দেও.. তোমার পছন্দের পিক.. প্রোফাইল পিক দিবো এবার। (মিহিন)
— হঠাৎ আমার পছন্দের পিক.. প্রোফাইল পিক দিবে কেনো?? (আমি)
— হঠাৎ করে আমার ইচ্ছা হলো.. তাই দিবো। তুমি এখন তারাতাড়ি পিক দাও তোহ!! (মিহিন)
— আচ্ছা.. দিচ্ছি। (আমি)
মিহিনের কনফিডেন্স দেখে আমি একটু অবাক হচ্ছি। ওর পিক যে আমার কাছে.. এইটা ও জানলো কি করে?? যদিও মিহিনের অনেক পিক আমার কাছে আছে। মিহিন আগে ফেবুতে পিক আপ দিতো কিন্তু এখন কেনো জানি অনেকদিন ধরে পিক আপ দেই নাহ। মিহিনের আগের যত পিক ছিলো.. সব আমি সেভ করে রেখে দিয়েছিলাম। কারণ মাঝে মাঝেই দেখতে হয় মিহিনকে.. মাঝে মাঝে বলতে প্রায় প্রতিদিনই ৩-৪বার করে আমি মিহিনের পিক দেখি। মিহিনকে নাহ দেখলে রাতে আমার ঠিক মত ঘুমই আসে নাহ। আচ্ছা.. আমি যে মিহিনের পিক গুলি সেভ করে রেখে দিয়েছি.. এইটা মিহিন জানলো কি করে?? এই কথাটা মোটেও মিহিনের জানার কথা নাহ। মিহিন আবার মেসেজ দিলো,,,,
— কি গো.. কই গায়েব হয়ে গেলা?? পিক দিচ্ছো নাহ কেনো?? (মিহিন)
আমার কাছে থাকা মিহিনের সব চেয়ে সুন্দর পিকটা মিহিনকে সেন্ড করে দিলাম। পিকটা মিহিনকে সেন্ড করতেই আমার মনে পড়ে গেলো.. এই পিকটা মিহিন কখনো ফেবুতে আপ দেই নি!! এই পিকটা আমি লুকিয়ে তুলেছিলাম। আমার এখন মনে হচ্ছে.. পিকটা সেন্ড করে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।
– আচ্ছা.. এই পিকটা তুমি কোথায় পেলে?? এইরকম পিক তোহ আমি কখনো তুলি নাই। (মিহিন)
– সরি.. আমি তোমার থেকে লুকিয়ে এই পিকটা তুলেছিলাম।
– কবে তুলে ছিলে?? (মিহিন)
– আমাদের ক্লাস পার্টির দিনে। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো.. তাই লুকিয়ে পিকটা তুলেছিলাম।
– সত্যিই.. তুমি অনেক সুন্দর পিক তুলতে পারো। অসম্ভব ভাল হয়েছে পিকটা। (মিহিন)
– ধন্যবাদ
– নিহান.. তুমি একটু চন্ডিতলার মাথায় আসো তোহ!! তোমার সাথে আমার একটু জরুরি কথা আছে। (মিহিন)
– কি কথা আছে.. এইখানে বলো??
– নাহ.. তুমি ওইখানে এখুনি আসো। আমিও আসছি। (মিহিন)
– আচ্ছা।
মিহিনের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম.. মিহিন কি খুব রেগে গেলো নাকি?? রাগ করাটাই স্বাভাবিক ব্যাপার!! লুকিয়ে কোনো মেয়ের ছবির তুললে.. সে মেয়ে তোহ রাগ করবেই। যাইহোক.. আমি অন্য ছেলেদের মত নাহ.. আমি তোহ মিহিনিকে ভালবাসি। মিহিনকে ভালবাসি বলেই.. মিহিন আমার বন্ধু হওয়া সত্তেও কখনো তুই করে বলি নি। এ নিয়ে আমাদের বন্ধু মহলে চলে নানান কথাবার্তা। বন্ধুরা কথা বলতেই পারে.. আমি এইসব কথার ধার ধারি নাহ।
আমি সবসময় মিহিনকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কখনো মুখে বলতে পারি নি.. আমার ভালোবাসার কথা। কারণ মিহিন যদি রাগ করে আমাদের বন্ধুত্তটা ভেঙে দেয়। এখন যাও মিহিন সাথে কথা বলতে পারি.. তখন তোহ আর কথাও বলতে পারব নাহ!! আমার খুব ভয় হচ্ছে আজকে। তবে আজ কি হবে কে জানে? মিহিন হয়ত অনেক রাগ করে আছে আমার উপরে। আজকে মিহিন আমাকে অপমান করতে পারে.. চড় থাপ্পড়ও মারতে পারে। একটা মেয়ে যদি আমাকে মারে.. তাহলে আর আমার কি করার আছে।
আমার বাসা থেকে চন্ডিতলা যেতে সময় লাগে ১০-১২মিনিট। ভাবনাচিন্তা করে.. চন্ডিতলা যেতে আমার ২০-৩০মিনিটের মত সময় লাগলো। চন্ডিতলা গিয়ে দেখি মিহিন আমার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছে। দূর থেকে মিহিনকে দেখে ওর মুডের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে নাহ। মিহিনের মুডের অবস্থা দেখতে হলে মিহিনের আরও কাছে যেতে হবে। কিন্তু আমার অনেক ভয় হচ্ছে.. এখন মিহিনের সামনে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?? আমি এইসব ভাবছি এমন সময় দেখি মিহিন ওর হাতের ইশারা করে আমাকে ওর কাছে ডাকছে।আমার আর কিছুই করার ছিলো নাহ, উল্টে ঘুরে দৌড় দিলেও নিজের এলাকায় সব মান-সম্মান হারাবো। এলাকার পোলাপান আমাকে দেখলে বলবে আমি মেয়ে দেখে পালিয়েছে। তাই আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম মিহিনের দিকে.. কি হবে আজকে দেখা যাবে!! আমি মিহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মিহিন আমাকে বলল,,,,
– কেমন আছো.. নিহান?? (মিহিন) মিহিনের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম। মিহিন এতো সুন্দর করে এর আগে কখনো আমার সাথে কথা বলে নি। আমি স্বপ্ন দেখছি নাহ তোহ!! নাহ.. এটা মনে হয় ঝড়ের পূর্বাভাষ??
– কি হলো?? চুপ করে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো?? আমি তোহ তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। (মিহিন)
– ওহহ.. হ্যাঁ। আমি ভালো আছি.. তুমি কেমন আছো?? (আমি)
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি তোহ অনেক ভালো ছবি তুলো। (মিহিন)
– আরে.. কি যে বলো নাহ!!
– তোমার ফোনে আমার কত গুলা পিক আছে?? (মিহিন)
– ঐ একটাই ছিল।
– সত্যিই.. একটা ছিলো?? (মিহিন)
– হুম।
– আচ্ছা.. মোবাইলটা একটু আমাকে দেও তোহ!! (মিহিন)
– আরে আমি তোহ মোবাইল আনতেই ভুলে গেছি।
আমার মোবাইলে মিহিনের অনেক পিক আছে.. যদি মিহিনের হাতে আমার মোবাইল যায়.. তাহলে আজকে আমি শেষ। তাই মিহিনকে মিথ্যে কথা বললাম।
– আরে মিথ্যে বলছো কেনো?? ওই তোহ মোবাইল তোমার পকেটে ভেসে আছে.. আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। (মিহিন)
– ওহ.. মনেই নেই!! আনছি তাহলে।
আমি মোবাইলটা বের করে মিহিনের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। টেনশন নাই.. পাসওয়ার্ড দেয়া আছে। মিহিন পাসওয়ার্ড দেয়া দেখে বলল,,,
– তোমার ফোন তোহ লক করা। পাসওয়ার্ড কি তোমার ফোনের?? (মিহিন)
– পাসওয়ার্ড তোহ আমি ভুলে গেছি।
– সমস্যা নাই.. তোমার পাসওয়ার্ড খুব ভালোই মনে আছে আমার। (মিহিন)
আমার পাসওয়ার্ড মিহিনের মনে আছে.. এই কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। আমি হেসেই মিহিনকে বললাম,,,
– তোমার মনে আছে আমার পাসওয়ার্ড??
– হুম.. মনে আছে।(মিহিন)
– মাইন্ড হ্যাকার হয়ে গেছো নাকি?? আমার মাইন্ড হ্যাক করে ফেলছো মেবি????
– হুম.. হয়ত করেছি। (মিহিন)
– আচ্ছা.. বলো তো দেখি পাসওয়ার্ড টা কি?
– ‘মিহিন’
আমি মিহিনের শুনে আবার অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম। মিহিন কিভাবে জানলো?? অবশ্য জানা ব্যাপার নাহ.. ছেলেরা সচারচর যাকে ভালবাসে তার নামই মোবাইল অথবা ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হিসেবে ইউজ করে। তাহলে কি মিহিন বুঝে গেছে আমি ওকে ভালবাসি??
– তুমি কিভাবে জানলে এইটা যে পাসওয়ার্ড??
– এমনি জানি আমি। (মিহিন) পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনের লক খোলার সাথে সাথেই মিহিনের একটা পিক সামনে এলো।
– ওয়ালপেপারেও আমার পিক?? সত্যিই আমি ইমপ্রেস। (মিহিন)
– হুম।
আমার টেনশন ওয়ালপেপার নিয়ে নয়.. টেনশন হচ্ছে গ্যালারি নিয়ে। আমার গ্যালারিতে সব মিহিনের ছবিই রাখা। আমার কাছে মিহিনের এতো ছবি আছে.. যা হয়ত ওর কাছেই নাই। গ্যালারি ওপেন করে মিহিন অবাক হয়ে.. একটার পরে একটা পিক দেখতে লাগল। সব দেখা শেষ করে আমাকে বলল,,,,
– আমার এত্তগুলা পিক তোমার কাছে?? (মিহিন)
– হুম…
– শুধু হুম?? আর কিছু বলবে নাহ?? (মিহিন)
– হুম..
– বলো.. কি বলবে?? (মিহিন)
– দেখো মিহিন.. পিকগুলার জন্য আমি সরি। আমার লুকিয়ে তোমার ছবি তোলা উচিৎ হয় নি!!
– এটুকুই আর কিছুই বলবা নাহ?? (মিহিন)
– হুম…
– তোহ বলছো নাহ কেনো?? (মিহিন)
– আমি তোমাকে খুব……
– কি ভালবাসো?? (মিহিন)
– হুম…
– কবে থেকে ভালোবাসো?? (মিহিন)
– ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে.. যেদিন তুমি আমার পাশে এসে বসলে। সেদিন আমি একবারের জন্যও ক্লাস রুমের বোর্ড এর দিকে তাকাই নি। আমি শুধু তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে দেখেছি। তোমার নীল রঙের ওড়না টাও একবার ছুঁয়ে দিয়েছিলাম।
– আমি কি রঙের জামা পড়ে এসেছিলাম.. তোমার কি তাও মনে আছে?? (মিহিন)
– হুম.. মনে নাহ থাকার কি আছে??
– তিন বছর পার হয়ে গেছে সে দিন টার?? (মিহিন)
– আমার তোহ মনে হচ্ছে.. ওটা গতকাল ছিলো।আর আমি ওইদিনের মত সুন্দর দিন টাকে পুরানো করে.. ভুলে যেতে চাই নাহ। আমার কথা শুনে মিহিন আর কিছু বলল নাহ.. শুধু ঠোঁটটা বাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিলো। মিহিনের এই হাসিটাই আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মিহিনের এই ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দেওয়া দেখলেই.. আমি মিহিনের প্রেমে পড়ে যায়। মিহিনের হাসি দেখে আমিও মুচকি হাসলাম। তারপর আমার পকেট থেকে একটা কানের ঝুমকা বের করে.. মিহিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,,,,
– এইযে তোমার ঝুমকা?? মিহিন আমার হাত থেকে ঝুমকা টা নিয়ে বলল,,,,
– এই ঝুমকা তোহ ভার্সিটির প্রথম দিন আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। (মিহিন)
– হুম…
– তোমাকে তোহ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম.. তুমি পেয়েছো কি নাহ?? (মিহিন)
– হুম.. সেদিন আমি নাহ বলেছিলাম।
– কেনো নাহ বলেছিলে?? (মিহিন)
– তখন আমার কাছে তোমার কিছুই ছিল নাহ.. তাই এটা নিজের কাছে রাখার জন্য সেদিন তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। আমার কথা শুনে মিহিন আবার হাসল। কিছুহ্মন হেসে.. একটু পরে হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,
– আচ্ছা.. এখন কি কি আছে আমার.. তোমার কাছে?? (মিহিন)
– বেশি কিছু নেই.. তবে তুমিই আছো এখন আমার।
– আচ্ছা.. যাও আইস্ক্রিম নিয়া আসে তোহ। অনেক গরম পড়েছে.. আইস্ক্রীম খেতে ইচ্ছে হচ্ছে অনেক। (মিহিন)
– এইখানে একটা মাত্রই দোকান আছে। তারপরেও এই দোকানে আমাদের জন্য কিছু নেই।
– আমাদের জন্য কিছু নেই মানে?? (মিহিন)
– এইখানে সারাদিনই পোলাপান গাঁজা খাই.. তাই দোকানে তাদের জন্য জিনিস আছে। আমাদের জন্য কিছু নেই।
– এতো কিছু তুমি জানো কি করে?? তুমি ওই পোলাপানদের সাথে গাঁজা-টাজা খাও নাকি?? (মিহিন)
– আরে নাহ.. এমনি জানি।
– হয়েছে.. এখন যাও.. আইস্ক্রীম নিয়ে আসো। (মিহিন)
– আচ্ছা.. যাচ্ছি।
এতোহ্মন আমরা ছোট দেয়ালের উপরে বসে ছিলাম। আমি যখনি বসা থেকে উঠে সামনের দিকে পা বাড়িয়েছি তখনি পিছন থেকে মিহিন ডাক দিলো,,,
– এইযে শোনো?? (মিহিন)
– হুম..
– একটা আইস্ক্রিম আনবা কিন্তু!!
– একটা আনবো কেনো?? আমারও তোহ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
– দুজনেই ওই একটা আইস্ক্রীম খাবো। তাহলে আমাদের মধ্যে ভালবাসা বাড়বে। আর এই গরমের ভিতরে বেশি আইস্ক্রীম খেলে.. গলা বসে যাবে।
– হুম.. তুমি ঠিক বলেছো।
অবশেষে মিহিন আমার ভালোবাসা বুঝতেই পারল। ৩ বছর শুধু ওকে বুঝিয়েছি আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু কখনো মিহিন বুঝে নাই। কিন্তু আজকে নিজেকে একজন সার্থক মানুষ মনে হচ্ছে। নতুন করে মিহিনকে নিয়ে আমার জীবন শুরু করতে হবে। আচ্ছা.. এখন আমি আর মিহিন আইস্ক্রীম খাবো.. আপনেরা ঘুরে আসেন.. নাহলে আবার আমাদের পেট খারাপ হতে পারে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা