অবশেষে ভালোবাসার জয়

অবশেষে ভালোবাসার জয়

একদিকে অভাব অনটনের সংসারের পুরো দায়িত্বটা কাঁধে, অপরদিকে রিয়ার বিয়ের জন্য চাপ। এমন অবস্থায় কি করবে, আর কি করা উচিৎ ঠিক ভেবে পাচ্ছে না

রবিন। এমনিতে ছয় জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তার উপর যদি রিয়াকে বিয়ে করি তাহলে ঝামেলা আরো একটু বেড়ে যাবে। বিয়ে, নতুন সংসার গোছাতে

একজন স্বাবলম্বী পুরুষ যেখানে হিমশিম খায় সেখানে সামান্য একটা চাকরী করে কেমন করে কি করবো।

বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতে রবিনের মোবাইলে বাসা থেকে ছোট বোনের কল চলে আসে। কলটা রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে রবিনের ছোট বোন বলতে শুরু করে

ভাইয়া আজকে তো বাসায় চাল শেষ হয়ে গেছে।বাসায় ফেরার সময় চাল,ডাল আর সবজী নিয়ে আসিস। চাল না আনলে আজকে রান্না হবে না, না খেয়ে থাকতে হবে সবাই কে।
ছোট বোনের কথাগুলো নিরব দর্শকের মতো করে শুনে আনবো বলে কলটা কেটে দিলো রবিন। পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের করে হাতে নিলো। তারপর মানিব্যাগ টা

খুলে দেখলো মাত্র দুইশত টাকা। এই দুইশত টাকা দিয়ে কি বাজার করবে,চিন্তায় পড়ে গেলো। আস্তে আস্তে করে হাঁটতে হাঁটতে পরিচিত এক চাচার দোকানের সামনে

গিয়ে থামলো। চাচার দোকান থেকে চাল,ডাল, তেল, ডিমসহ প্রয়োজনীয় কিছু কিনে নিলো এবং চাচাকে বুঝিয়ে বলে খরচের টাকাটা বাকি রেখে দিলো।

রবিন রিক্সায় উঠবে এমন সময় রিয়া হঠাৎ করেই কল করে বসলো। কলটা রিসিভ করা মাত্র ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ কানে ভেসে এলো। কান্নার আওয়াজ পেয়ে

রবিন কি হয়েছে,কি হয়েছে বলে রিয়াকে বলে উঠলো। কিন্তু রিয়া কোন কথা না বলে একনাগাড় কেঁদে গেলো। কিছুসময় পর রিয়া বলে উঠলো আমি বাসা থেকে বের

হয়ে আসতেছি তুমি তাড়াতাড়ি করে একটা সিএনজি নিয়ে আমার বাসার কাছাকাছি আসো। রিয়ার এমন কথা শুনে আরো চিন্তা বাড়তে থাকলো রবিনের। বাসায় খরচ দিয়ে আসবে নাকি রিয়ার কাছে যাবে?
অনেক ভাবার পর বাসায় কল করে ছোট ভাইকে এসে চাচার দোকান থেকে খরচ গুলো নিয়ে যেতে বললো। তারপর একটা রিক্সা নিয়ে রিয়ার বাসার সামনে হাজির

হলো। রিয়া তাড়াতাড়ি করে রিক্সায় উঠে পড়লো। রিয়াকে নিয়ে রবিন শহর থেকে একটু দূরের নিরিবিলি পরিবেশে গেলো।তারপর দুজন রিক্সা থেকে নেমে নিরব স্থানে বসলো।
রিয়ার কাছে রবিন জানতে চাইলো হঠাৎ করেই এমন করলা কেন বলো? আর কয়েকটা দিন কষ্ট করলে কি হতো।রবিনের কথা শুনে রিয়া বলে উঠলো আমাকে এখন,

এমুহূর্তে বিয়া করবে কি না? হ্যা অথবা না বলো,এর থেকে বেশি কিছু বলতে হবে না। এই দুটো কথার একটা কথা খোলাখুলি আমাকে এখন বলবা। রবিন আরো বেশি

চিন্তায় পড়ে গেলো। এভাবে বিয়ে করলে নিজের উপর একটা চাপ তো আসবেই সাথে পরিবারের উপরেও আসবে। অনেক সময় মাথাটা নিচু করে ভাবলো রবিন।

তারপর রিয়ার হাতটা ধরে বলে উঠলো চলো আমার সাথে। রিয়া মনেপ্রাণে অনেক খুশি হলো। রবিন একটা সিএনজি তে রিয়াকে নিয়ে বসলো।চড়ার সময় ইশারায়

যায়গার নাম বলে দিয়েছে। সিএনজি তে চড়ে রিয়া বেশ খুশি। কারণ রবিন আজ রিয়াকে বিয়ে করবে। কিন্তু সিএনজি সোজা রিয়ার বাসার সামনে গিয়ে থামলো। বাসার

সামনে সিএনজির থামানো দেখে রিয়া কাঁদতে শুরু করলো। বার বার রবিন কে বলতে লাগলো বাসায় যাবো না।আমি একবারে বের হয়ে আসছি।বাসায় গেলে সবাই

মিলে তোমাকে মেরে ফেলবে। রিয়ার কোন কথার উত্তর না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো। রবিনসহ রিয়াকে দেখে বাসার সবাই অবাক হয়ে

গেলো। রবিন কে মারার জন্য রিয়ার ভাই ছুটে গেলো কিন্তু রিয়ার বাবা ঠাণ্ডা মাথার মানুষ হওয়ায় ছেলে কে থামিয়ে দিলো।রবিনের সাথে বসে কথা বললো রিয়ার বাবা।

কথা বলা শেষ হলে রবিন রিয়াকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।যাওয়ার সময় রিয়াকে শুধু বলে গেলো ভালোবাসি , ভালোবাসবো আজীবন। বিশ্বাস রেখো শুধু।
রিয়াকে বাসার অনেকে বকাঝকা করতে লাগলো। রিয়া শুধু একটা কথায় বললো রবিন ভালো ছেলে বলে আজকে সে স্ব সম্মানে তোমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়ে

গেলো। আমি সাথে করে অনেক গহনা আর টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম রবিন ইচ্ছে করলে আমাকে সহ এসব নিয়ে পালিয়ে যেতে পারতো কিন্তু সে মহান বলে কাজটা করলো না। সুতরাং বিয়ে করলে রবিন কে করবো আর অন্য কাউকে নয়।
পরিবার থেকে বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগলো রিয়ার। কিন্তু রিয়ার এক কথা বিয়ে করলে রবিন কে করবো। অনেক চেষ্টা করেও রিয়াকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে

পারলো না কেউ। রিয়ার বাবাও বুঝতে পারলো মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। জোর করে বিয়ে দিলে যদি পরবর্তী সময়ে কিছু করে ফেলে। আর মেয়ে তো

খারাপ ছেলেকে পছন্দ করে নাই। সেদিন রবিনের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছে রিয়ার বাবা । অনেক চিন্তা ভাবনা করে রিয়ার বাবা রবিনের সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত

নিলেন। কারণ তিনি ভেবেছেন মেয়ে যদি সুখী না হয় তাহলে বিয়ে দিয়ে কি হবে।আর রবিনের সাথে যদি মেয়ে সুখী হয় তাহলে তো আমরাও নিজেকে সুখী ভাবতে পারবে।
অনেক ভাবার পর রবিনের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো রিয়ার পরিবার। রবিনের পরিবারের সাথে রবি বিষয় খোলাখুলি ভাবে বললো রিয়ার পরিবার। ছেলের সুখের

কথা ভেবে তারাও রাজি হয়ে গেলো। এরপর পারিবারিক ভাবে রবিন আর রিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত