অব্যক্ত ভালোবাসা

অব্যক্ত ভালোবাসা

আগামি কাল কলেজের শেষ দিন। কালকে যেভাবেই হোক বলতেই হবে মাহিকে যে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি একা একা হাটছে আর ভাবছে মেহরাব। কিন্তু কি করে বলব যদি রাগ করে? যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়? নাহ থাক।
গল্পটা শুরু হয়েছিলো কয়েক বছর আগে।
.
মেহরাব কলেজে দেড়ি হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি করে কলেজে চলে গেলো। গিয়ে প্রথমেই দেখতে পেলো তার কলেজে অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে মঞ্চে একটি ছেলে আর

একটি মেয়ে অভিনয় করছে। মেয়েটির গায়ের রঙ শ্যামলা চুল গুলো এলোমেলো। মায়ের অভিনয় করছে। মেহরাব খেয়াল করলো মেয়েটি যে কথা গুলো বলছে তা

চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আরে হ্যা এটা তো আমারই লেখা গল্প। কিন্তু এই মেয়েটির কাছে আসলো কিভাবে? তেমন কিছু না ভেবে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলো। আড্ডা শেষ করে বাড়ি ফিরলো।
.
পরের দিন আগেই কলেজে চলে গেলো তার বন্ধু সোহগ এর সাথে। ক্লাসে ঢুকতেই অবাক আরে এই তো সেই মেয়েটি। কিন্তু এখানে কি করছে? সোহাগ বলল ওর নাম

মাহি আমাদের ক্লাসে নতুন। মেহরাব খুব খুশিই হলো কিন্তু খুশির কারন খুজে পেলো না। তবে মেয়েটিকে তো কালকের মতো লাগছে না অত্যন্ত সুন্দরী। একদম পরীর

মতো।যেন চোখ সরাতেই পারছে না মেহরাব। এতক্ষনে মেয়েটি কাছে চলে এসেছে এই যে মিস্টার? মেহরাব ঘোর কাটিয়ে…
-জ্বী
-কি দেখছেন?
-নাহ কিছুনা।
-বাই দা ওয়ে আমি মাহি বলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
-আমি মেহরাব। মেহেদী মেহরাব।
-হুম আপনার গল্পটা অনমুতি ছাড়া ব্যবহার করার জন্য সরি!
-আরে নাহ ব্যাপার না।
-হুম থ্যাংকস। আপনার গল্পগুলো অনেক সুন্দর
-হুম ধন্যবাদ।
এরই মধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মেহেদী বার বার ক্লাসের মধ্যে মাহির দিকে তাকায় চোখ পড়তেই অন্যদিক। মাহি তা দেখে হেসে ফেললো। মেহরাব তা অবাক হয়ে চেয়ে থাকলো।আহা কি হাসি যেন অপরূপ একটি পরী হাসছে।
এইবার মাহি ঘুষি দেখালো। মেহরাব ভয় পেয়ে মনে মনে ভাবলো সব সুন্দর জিনিশেরই একটা খারাপ দিক থাকে। বাপ রে এতো মনে হয় রাগি। মাহিকে দেখতে দেখতে কখন যে ক্লাস শেষ হলো তা টেরই পেলো না মেহরাব।
.
বাসায় আসার পর শুধু মাহিকেই মনে পড়তে লাগলো। একটি মেয়ে কি করে এত সুন্দর হয়।
হঠাৎ ফোনটা উচ্চস্বরে বেজে উঠলো।
-হ্যালো কে বলছেন?
-আমি মাহি।
-কিহ মা মাহি?
-হ্যা তোতলাতে হবে না কেমন আছেন?
– তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
– কেন বিরক্ত করলাম নাকি?
– আরে না না।
– তাহলে?
– নাহ মানে একটু অবাক হলাম তো তাই।
– হ্যা আপনার তো অবাক হওয়া ছাড়া কোন কাজ নেই।
– কেন?
– ক্লাসে আমার দিকে ওভাবে তাকিয়েছিলেন কেনো?
– কই না তো।
– হুম থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না।
– কাল ঠিক সময়ে ক্লাসে চলে আসবেন।
– আচ্ছা।
মাহির সাথে কথা বলে যেন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিলো তার। বেশি চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়লো রাতে।
.
পরের দিব খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো। সামনেই মাহি। কেমন আছেন?
– হুম ভালো আপনাকে ডেকেছি চলুন একটা যায়গায়
– কোথায়?
– ভয় পাবেননা আপনাকে বেচে দেবো না বলে হাসতে লাগলো।
মেহরাব হাসি দেখছে কি অপরূপ। মাহি মেহরাবককে একটা নদীর ধারে নিয়ে গেলো আর সেখানে বসলো। সেখানের হাওয়ায় যেন প্রান জুরিয়ে যায়। তারা অনেক্ষন

গল্প করলো আবার ক্লাসে ফিরে এলো। তারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। কিন্তু একদিন ক্লাসে মাহি না আসলে মেহরাবের খুবই খারাপ লাগতো। মেহরাব মাহিকে ফোনও

দিতো না তাহলে যদি রাগ করে? এই ভেবে। রোজ তারা নদীর তীরে যেতো গল্প করতো কিন্তু কখনই মাহিকে ভালোবাসার কথা বলতো না ভয়ে।যদি বন্ধুত্বটা হারায়?
.
আজ কলেজের শেষ দিন যেভাবেই হোক বলতেই হবে মাহিকে তার ভালোবাসার কথা।
কিন্তু মাহি কোথায়? আজ মাহির দেখা নেই। ফোন যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি মাহির বাসায় চলে গেলো কিন্তু সেখানেও মাহি নেই।মাহির মা তাকে বসতে বললো। সে মাহির রুমে বসে আছে হঠাৎ দেখতে পেলো বিছানায় একটা ডায়েরী। ডাইরীটা খুলতেই।
.
ডায়েরীঃ আজকে কলেজে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। অভিনয় করতে হবে।কি যেন একটা গল্প ও হ্যা মমতা। আর যে বাদর টা লিখেছে তার নাম মেহরাব। মেহরাব নাম টিতে কেন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে দেখতে কেমন হবে? কিজানি?
আজ প্রথম মেহরাব কে দেখলাম থুক্কু বাদরকে। একটা ছেলে কিভাবে এত সুন্দর হতে পারে? আর আমি এতো বোকা ছেলে জীবনেও দেখিনি।
কি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি এরকম বোকা আর সুন্দর ছেলে কখনই দেখিনি।আমি ওর প্রেমে পরে যাবো না তো? আরে নাহ ওর মতো বাদরের প্রেমে কে পড়বে?
(মেহরাব পড়ছে আর হাসছে)
সেখানে অনেক কথা লেখা লাস্ট দিকে লেখা। আজ কলেজের শেষ দিন আজ কি ও আমাকে প্রোপোজ করবে? ও কি বলবে যে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মাহি?
আর যদি না বললে তাহলে কি হবে? উহ ভাবতেই পারছি না।কিন্তু আমি তো বলতে পারবো না। যদি ও রাগ করে? আমার সাথে কথা না বলে?যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়? আজ আমি সেই যায়গায় অপেক্ষা করব যেই যায়গায় যেখানে ওর সাথে কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি সত্যিই মেহরাবকে অনেক ভালোবাসি।
.
ডায়েরীটা পড়েই উঠলো। যাওয়ার সময় মাহির মা বললো বাবা তুমি মাহির বন্ধু প্রথম এলে কিছু খেয়ে যাও। মেহরাব বললো আন্টি ভবিষ্যৎ এ অনেক খাওয়াতে পারবেন এখন না গেলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলেই দৌড়।
নদীর তীরে যেতেই দেখলো মাহি দাঁড়িয়ে। কাছে গিয়ে বললো এখানে কি করছো? কিছুনা।
মাহি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
মাহি খুব খুশি হয়ে বললো বলো।

– আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
– মাহি ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হয়েও বললো তোমাকে আমি ভালোবাসতে যাবো কেন?
– এই মিথ্যে বলবেনা আমি তোমার ডায়েরী পড়েছি।
– কিহ তুমি আমার ডায়েরী পেলে কোথায়?
– তোমার বাসায় গিয়েছিলাম।
– তুমি আমার ডায়েরী পড়ে আমার মনের কথা সব জেনে নিয়েছো? বাদর কোথাকার।
– কিহ আমি বাদর তুমি কি? তুমি তো পেচা
– কি?? ( রাগী হয়ে)
– হ্যা তাই হাহাহা বলে দৌড় দিলো মেহরাব।মাহিও ছুটলো মেহরাবের পিছু পিছু। তবে এই দুষ্টুমি আজও শেষ হয়নি তাদের।চলছে একিভাবে মাহি আর মেহরাবের গল্প।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত