রিসা : আম্মু কোথায় তুমি?(৫ বছরের মেয়ে)
মনি : এইতো আমি মামনি। কি ব্যাপার আজ আমার প্রিন্সেস এতো তাড়াতারি ফিরে এলো যে?
রিসা : আম্মু দেখো আমি কাকে নিয়ে এসেছি। মনি তাকিয়ে দেখে এক বৃদ্ধা মহিলা,,কপালে কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে।একটা চোখ নেই পরনে তাঁতের শাড়ি।
মনি : মামনি কে উনি?
রিসা : দাদীমা রাস্তা পার হতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। ফাস্টেড বক্স টা নিয়ে আসো তো,,
মনি : এক্ষুনি আনছি মামনি, মনি বৃদ্ধার কাটা যায়গায় ড্রসিং করে দিয়ে বলে,,
মনি : আন্টি আপনি এখন রেস্ট নিন, পরে সব শুনবো আপনার থেকে,,
বৃদ্ধা : না মা আমাকে যেতে হবে,,এখন রেস্ট নিলে হবেনা।
মনি : আচ্ছা আপনার ঠিকানাটা বলুন আমি গিয়ে আপনাকে পৌছে দিয়ে আসবো।
বৃদ্ধা : আমি এখানকার কিছুই চিনি না।কেউ নেই আমার,,
রিসা : তুমি আজ থেকে এখানেই থাকো দাদীমা।ও আম্মু বলো না দাদীমা এখানেই থাকবে।
মনি : ঠিক আছে মামনি দাদীমা এখানেই থাকবে।
বৃদ্ধা : না সোনামণি আমাকে জেতেই হবে,,
রিসা : না না না,, তোমায় কোথাও যেতে দিবোনা।আমার তো দাদীমা নেই আজ থেকে তুমি আমার দাদীমা।
মনি : রিসা যখন বলে দিয়েছে তখন আর আপনাকে কোথাও যেতে দিচ্ছি না। মামনি তুমি দাদীমার সাথে গল্প করো আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
রিসা : আমার মিষ্টি আম্মু,, বৃদ্ধার চোখে জল চলে আসে,,ভাবতে থাকে,
– আমার একটা চোখ নেই বলে পেটের সন্তান কতো অপমান করেছে।বিদ্বান হয়ে মাকে ভুলে গিয়েছে। আর এই মেয়েটি পর হয়েও আপন করে দাদীমা বলে ডাকছে।
রিসা : একদম কাঁদবেনা বলে দিচ্ছি।
বৃদ্ধা : ঠিক আছে সোনামণি আর কাঁদবো না। ৫ দিন হয়ে গেছে বৃদ্ধা এখানে আছ।মনি ও রিসা আপন করে নিয়েছে বৃদ্ধাকে। নীল এই কদিন বাসায় ছিল না।আজ বাসায় ফিরেই রিসাকে ডাক দেয়,,
নীল : মামনি,, রিসা নীল কে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে,,
রিসা : আব্বু তুমি এসেছ,, বৃদ্ধা নীল কে দেখেই থ হয়ে যায়।নীল দেখার আগেই আড়াল হয়ে যায়,,
রিসা : আব্বু জানো আমি একজন দাদীমা পেয়েছি।দাদীমার না একটা চোখ নেই,,আর এখানে নাকি কেউ নেই তাই আমাদের বাসায় নিয়ে আসছি। আম্মু বলেছে আমাদের সাথেই থাকবে,,
নীল : ওকে মামনি তুমি এখন যাও,,
রিসা : ওকে আব্বু,, রিসা চলে যাই আর নীল মনিকে ডাক দেয়,,
নীল : মনি,,মনি?
মনি : কী হয়েছে এসেই এতো চিৎকার করছো কেনো?
নীল : তোমরা মা মেয়ে কাকে নিয়ে এসেছ বাসায়? কে না কে তাও নাকি চোখে দেখে না।কে বলেছে আমার বাসায় রাখতে? আমি কি আশ্রম খুলেছি নাকি?
মনি : ওভাবে বলছো কেনো? পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিল বলে রিসা বাসায় নিয়ে এসেছে আর তাছাড়া এই শহড়ে বৃদ্ধার কেউ নেই তাই রেখেছি।
নীল : রিসা নাহয় বাচ্চা তুমিও কি বাচ্চা? কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করতে পারনি?
মনি : কি বলছো এসব? আর উনি শুনতে পেলে খুব কষ্ট পাবে,,
নীল : পেলে পাবে আমার কি? আমি চাইনা কেউ আমার বোঝা হয়ে থাকুক,, বলেই নীল চলে যাই ফ্রেস হতে,,
মনি : মামনি যাও তো তোমার দাদীমাকে ডেকে নিয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করে নাও।
রিসা : ওকে মামুনি,,
নীল : যত্তসব আদিক্ষ্যেতা,, নীল ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠতেই রিসা এসে বল লে,,
রিসা : আম্মু দাদীমাকে কোথাও পেলাম না,শুধু এই ছোট বাক্সটা আর কাগজ টা ছিল রুমে,, নীল এসে রিসার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে।মনিও এসে পাশে দাড়ায়,, খোকা,, তুই আমাকে ভুলে যাবি কখনো ভাবিনি।আমি তোকে জন্ম দিয়েছি নিজে না খেয়ে তোকে খাইয়েছি কি করে পারলি ভুলে যেতে? তুই তো সবসময় বলতি তোমার চোখ নেই বলে বন্ধুরা কথা শুনায় আমায়।তুমি আর পরিচয় দিবানা যে তুমি আমার মা।আমি তো মেনে নিয়েছিলাম রে খোকা।তবুও তো তুই আমার কাছেই ছিলি। ডক্টরি পড়তে সেই যে ঢাকা আসলি আর গেলি না দেখা করতে।শুধু চিঠিতে বলতিস সাগরকে দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিতে।
যানিস খোকা আমার ও ২ টা চোখ ছিল।তুই যখন খুব ছোট ছিলি এ্যাক্সিডেন্ট এ তোর বাবা মারা যায় আর তোর একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়।আমি চাইনিরে খোকা তুই সারাজীবন এক চোখ দিয়ে দেখিস তাই আমার চোখটা তোকে দিয়েছিলাম।তুই সেই মাকে পর করে দিলি খোকা? সাগর বলেছিল তুই নাকি মস্তবড় ডক্টর হয়েছিস।বিয়ে করে ঢাকাতেই আছিস।সেদিন খুব অভীমান করেছিলাম রে।বলেছিলাম আর কোনোদিন তোর খোজ করবো না।কিন্তু আর পারলাম নারে তোকে আর তোর সংসার দুর থেকে দেখার জন্য ছুটে আসলাম।
রাস্তায় রিসার সাথে দেখা হয়েগেল।অনেক বায়না করায় আর মেয়েটির মায়াভরা মুখ দেখে না করতে পারিনি তাই চলে আসলাম।বিশ্বাস কর খোকা আমি জানতাম না এটা তোর বাড়ি। তোকে একটা নজর দেখার ইচ্ছা ছিল দেখেছি।তোর ছোট্ট সংসার দেখে নিয়েছি।এবার আমি শান্তিতে মরতে পারবো। বৌমা আর সোনামণি খুব ভাল রে খোকা।আমার অনেক যত্ন নিয়েছে।বাক্সটায় কিছু গয়না আছে।জমানো টাকা থেকে গড়িয়েছিলাম বৌমাকে দিস। আমি তোর বোঝা হয়ে থাকতে আসিনি রে খোকা। আর লিখতে পারলাম না,চলে যাচ্ছি ভাল থাকিস দুর থেকে তোদের জন্য দোয়া করবো,,
ইতি
হতভাগী মা নীল চিঠিটা পড়ে হতবাক হয়ে যায়।বসে পড়ড়ে ফ্লোরে,,
মনি : তোমার মা বেঁচে আছে আর তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে নীল? তুমি ভুল করেছ নীল।আজ যদি মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে মাকে ফিরিয়ে আনতে না পারো তবে তবে আমিও রিসাকে নিয়ে তোমার বাড়ি ছেরে চলে যাবো।
নীল চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে,
নীল : মা আমি তোমার কেমন ছেলে, তুমি আমার জন্য এতো কিছু করলে আর আমি তোমায় বুঝতেই পারলাম না।আমার কাছে থেকেও চিনতে পারলাম না। রিসা এসে নীলের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,
রিসা : আব্বু চলো আমরা দাদীমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।
নীল : চলো মামনি আমার অভীমানি মাকে ঠিক নিয়ে আসবো।
মনি : আমিও যাবো তোমাদের সাথে নীল,মনি ও রিসা বেরিয়ে পড়ে অভীমানি মা ও দাদীমাকে ফিরিয়ে আনতে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা