তুই একটা ফালতু ছেলে।তোকে দেখলেই আমার মেজাজ গরম হয়।কি করে যে ১৮ টা বছর ধরে সহ্য করছি তোকে আমি নিজে ভেবেই অবাক হই।আর কখনো আমার অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করলে ঠাস করে একটা চড় খাবি।
আমি আসলে তোর জন্য চা নিয়ে এসেছিলাম মিলি।ফুফু খুব বিজি আজকে।রান্নাঘর থেকে নড়তেই পারছেনা।সকালবেলা ঠিক সময়ে চা না পেলে তোর তো আবার মাথা গরম হয়ে যাবে। তুই কি এই বাসার চাকর?অবশ্য সেই যোগ্যতাও তোর নেই।ভাগ্যিস আমার মা ভালো মানুষ।তোকে আমাদের বাড়িতে রেখে বড় করেছে।অন্য কেউ হলে লাথি,ঝাঁটা জুটতো।
মেয়ের চিৎকার শুনে কুলসুম বেগম রান্নাঘরের কাজ ফেলে ছুটে এল।কিরে মিলি,আবার শুরু করলি?ছেলেটাকে আর কত অপমান করবি?মুখে যা আসে তাই বলে দিস।রাসেল এখন আর ছোটটি নেই।ছোটবেলার অভ্যাসগুলো এবার তোর ত্যাগ করা উচিত।ওর মত সোনার টুকরো ছেলে লাখে একটা মিলে।দুইদিন পর তো ছেলেটা চলেই যাবে।
সোনার টুকরো না ছাই!ওকে আমি সহ্যই করতে পারিনা।ওর হাতে চা থাকবে কেন?ও কি চাকর?সেদিন দেখলাম একটা ছেঁড়া শার্ট পড়ে ইন্টারভিউ দিতে গেল।আর মুখের কি ছিরি!কি করে যে চাকুরীটা পেল আল্লাহই জানে।এখন তো একটু পরিপাটি হয়ে থাকতে পারে। আর সেদিন আমাকে জড়িয়ে ওকে নিয়ে কয়েকটা ছেলে কিসব বলছিল!ও একটা কথা না বলে বাবুসোনার মত চলে এলেন।আমি শুধু দূর থেকে কাহিণীটা দেখলাম।
আচ্ছা লোকের কথা এত শুনলে চলবে?দুদিন পর ছেলেটা চলে যাবে।তোরও বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে।এই কয়দিন একটু ভালো ব্যবহার কর ছেলেটার সাথে। পারবো না মা!আমি জীবনেও পারবো না।ও একটা অসহ্যকর।এখনো কেমন দাঁড়িয়ে আছে।রাসেল!তুই আমার সামনে থেকে যা প্লিজ।তোকে আমি নিতে পারছি না জাস্ট! আরে বাবা!আমি চলে গেলে তোর ফ্যানটা লাগিয়ে দিবে কে?আমি এসেছিলাম ফ্যানটা লাগাতে।ভাবলাম চা টাও নিয়ে যাই।আজকে ফুফু খুব বিজি। কারণ তোর মামা শ্বশুড় হুট করে আসবে বলে জানিয়েছে।সামনে বিয়ের সানাই বাজতে চলেছে।তোর এসব ওভার অ্যাক্টিং রাইসুল সাহেব সহ্য করবে না।
দেখেছো মা।কাকে কি বলি।ওকে এতো অপমান করলেও ওর গায়ে লাগেনা।তোর মুখে আমার বিয়ে নিয়ে যেন কোন কথা না শুনি।আর ফ্যান লাগাতে হবেনা।এই কয়দিন তোকে যত কম দেখবো ততই আমার মঙ্গল।তোর জন্য মানুষের কাছ থেকে আমি অনেক কথা শুনেছি। মিলি!তোরা দুজন ভাইবোন।লোকের কথায় কান দিস না মা! ওসব বিষয় তুমি বুঝবে না মা।নিজের ভাই তো না!তুমি তো চলে যেতে স্কুলে।থাকতাম আমরা দুজন।যখন একটু বড় হতে থাকলাম তখন থেকেই মানুষের এসব সস্তা ম্যান্টালিটির কথা কানে আসা শুরু হল। এসব কথা শুনতে ভাল্লাগছেনা রে মিলি।ফুফু তুমি ওকে রান্না ঘরে নিয়ে যাও তো!একটু আধতু কাজ শিখুক।আমি ততক্ষণে ফ্যানটা ফিট করি।কালকে তো দেখলাম সারারাত মশা আর গরমে ছটফট করলো। এই বলে মিলি আর কুলসুম বেগমকে এক প্রকার জোর করেই বাইরে পাঠিয়ে দিল রাসেল।
প্রিয় রাসেল,
বিয়ের দিনটা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মনটা ছটফট করছে।ছোট থেকে তোকে অনেক অপমান করেছি কারণে অকারণে।আমাদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকলেও একসাথে অনেকগুলো দিন পার করে এসেছি।আজকাল আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,তবুও অন্ধকারটা ভালো লাগছে।আমার মনে হয় আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু বিশ্বাস কর এই কথাটা আমি তোকে জীবনেও বলতে পারবো না।কেন যে এমন একটা জটিল অবস্থায় আটকে গেলাম।তুই হয়তো আমাকে বোনের মতই দেখিস,স্নেহ করিস।আমি সেই জায়গাটাতে আঘাত করতে চাইনা।আমার বিয়ে হয়ে গেলে তুই নিশ্চয় অনেক খুশি হবি রে।একা একা মায়ের আদর খাবি।কতবার শপথ করেছি তোর সাথে ভাল ব্যবহার করবো।কিন্তু পারিনা!কত রজনী তোর কথা ভেবে কেঁদেছি।কিন্তু দিনের আলোয় আমি তোর সেই চিরচেনা মিলি।এই চিঠিটা হয়তো তোকে দেওয়াও হবেনা।আর লিখতে পারছি না…..
ইতি
তোর চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মেয়ে মিলি চিঠি শেষ করেই মিলি মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো।কেউ জানতেও পারলো না।চারদিকে শুধুই নীরবতা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা