হানিমুন

হানিমুন
বিয়ের দিন সুমী এতোটাই কান্নাকাটি করল যে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্নীয়-স্বজন সবাই কানাকানি শুরু করে দিলো!! এই জবর-জং মেকাপের যুগে যেই মেয়ে আটা-ময়দা-উপেক্ষা করে চোখের জলে আসল রং দেখায় সেখানে সামথিং সামথিং এটা বুঝতে আন্টিকুলদের একটু ও বেগ পেতে হয় না। একজন তো চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে সুমীর মা কে বলেই ফেললো,
-আপা, সুমীকে কি জোর করে বিয়ে দিলে নাকি? ওই কী যেন বলে বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড ছিল নাকি? সুমীর মা থতমত খেয়ে যায়। আড়ষ্টভাবে বলে,
– না না আপা, কী যে বলেন? সুমী এমন মেয়েই না, আমার কলিজার টুকরা। আমাদের ছেড়ে যাবে তাই এমন করছে। দেখেন, আপা, আমারই তো বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে, না জানি ওর কেমন লাগছে!!
কথা সত্য৷ সুমী এমন মেয়েই নয়। বয়ফ্রেন্ড তো দূরের কথা ওর কোন ছেলে বন্ধু ও নাই। ওর জগত জুড়ে এতো হাহাকারের একমাত্র কারণ ওর বাবা-মা। আজ ওর মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে, এটা যতবার ভাবছে ততবার হৃদয় ভেঙ্গে-চুরে যাচ্ছে। নীরব নামের যে ছেলেটার সাথে বিয়ে হচ্ছে, সুমী এখন ও জানে না সে কেমন, ওর বাবা-মা কে কোন চোখে দেখবে৷ সুমী ওর বাবা-মার একমাত্র সন্তান। এখন ও ওর চোখে ভাসে ওর মাকে সবাই কত কথা শোনাতো, কেউ বলতো কাক-বন্ধ্যা, কেউ বা বলতো ছেলে নাই বৃদ্ধ বয়সে কে দেখবে? সুমীর ওই কথা গুলো এখন বাস্তব মনে হচ্ছে। সত্য তো এখন এটাই সে তো তার বাবা-মা কে ছেড়ে চলেই যাচ্ছে। এই সব ভাবতে ভাবতেই এক বুক কান্না নিয়ে সে বাবার ঘর ছেড়ে বাসর ঘরে ঢুকে পড়ল।
-সুমু, তুমি কি ড্রেস চেঞ্জ করবে? নীরবের কণ্ঠে বাসর ঘরের নিরবতা ভাঙলো। সুমী চুপ করে রইলো।
– সুমু, শোনো, জানি তোমার খারাপ লাগছে, আমি নোটিশ করেছি সারাপথে তুমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছ। এখন, প্লিজ একটু কান্নাটা থামাও, তোমার চাঁদ মুখ খানা দেখি। ও শোন আর একটা কথা, আমরা হানিমুনে যাবো। আমি শুনেছি তুমি নাকি কখন ও বিমানে চড়নি। প্রথম আমাদের লং জার্নি বিমানেই হোক। কাল বিকাল ৩ টায় আমাদের ফ্লাইট। সব গুছিয়ে ফেলো কেমন? আর এখন দয়া করে একটু অনুমতি দেবে, তোমায় একটু বুকে জড়িয়ে রাখি।।
নীরবের মিনতি শুনে সুমি ফিক করে হেসে ফেললো।
পরদিন সকালে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে সুমীর বুকে চিনচিনে করে ব্যথা হলো৷ বিয়ের পরের দিনই ট্যুর। আনন্দে বুকটা কেঁপে ওঠে, আবার কষ্টে চোখে পানি ও আসছে। এতদিন আব্বু -আম্মু কে না দেখে ও কীভাবে থাকবে, আর ও হয় হানিমুনের আনন্দে সব ভুলেই গেল কিন্তু ওর আব্বু – আম্মু এত্তদিন কিভাবে থাকবে?? পরের দিন যথারীতি এয়ারপোর্টে পৌছালো।পথে বারবার ওর আম্মুকে আর আব্বু কে ফোন করল। কেউ রিসিভ করল না। আব্বু -আম্মু এতো সহজেই ওকে ভুলে গেলো। অভিমানে ওর বুক ফেটে কান্না আসলো। চোখ মুছতে মুছতে সুমী প্লেনে উঠল। ঠিক জানালার পাশেই সুমীর সিট। বসেই ও চোখ দুটো বন্ধ করল।
-খারাপ লাগছে সুমু? পানি খাবে?
– না লাগবে না। প্রথম জার্নি তো, একটু নার্ভাস।
– ওকে তুমি বস আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আছি।
হঠাৎ একটা কোমল হাত সুমির কপালে। চমকে উঠল সুমী। এ যে তার অতি পরিচিত একটি হাত। চোখ বন্ধ করেই মা বলে চিৎকার দিল ও।
-আস্তেরে মা, আস্তে। মানুষজন তো ভয় পেয়ে যাবে রে। ওই দেখ, ওই বাচ্চাটা কাঁদছে। পাগলী একটা। আর কাঁদিস না, দেখ তো তোর আব্বু ও আসছে।
– আচ্ছা, মা, তুমি কেমন বলতো? একটাবার আমার ফোন ধরোনি? আর আসবা, বলবা না?
-কেমনে বলবো বল? তুই এক পাগল, আর তোর জামাই তোর চেয়েও এক ডিগ্রি। রাতে ফোন দিয়েই বললো মা কাল আমরা হানিমুনে যাবো, আপনারা ও কাল যাচ্ছেন। কোন ভাবেই তাকে বোঝানো গেল না। সে তোর মতনই জেদী। আসতেই হলো। আর শর্ত দিল তোর ফোন ধরা যাবে না৷ বোঝ তোদের দুই পাগলের পাল্লায় পরে আমাদের কী অবস্থা। আত্মীয় -স্বজনকে কোন মতে বিদয় দিয়ে আসলাম। দেখ, জামাই তোর আব্বু র কাছে বসে আছে। পাঠাই দিচ্ছি। এখন একটু ভাব-ভালোবাসার কথা বল। আর জ্বালাসনা আমাদের। নীরব এসে সুমীর পাশে বসতেই সুমী ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে। টপটপ করে ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ল।
– আরে বাবা, এখন ও কান্না। প্লিজ সুমু, এখন অন্তত বলো, আই লাভ ইয়ু।
-আমি জানিনা, আই লাভ য়ু কাকে বলে। কিন্তু আজ যে উপহার পেলাম আমৃত্যু ভালেবাসায় তোমায় মুড়িয়ে রাখলে ও আমার জন্য তা কম মনে হবে। আজ থেকে এটাই সত্য, আমি তোমার, শুধু তোমার এবং শুধুই তোমার। যে ভালোবাসার ঋণে তুমি আমায় বন্দি করলে তা সুদাসলে তোমায় ইনশাআল্লাহ ফেরত দিবো। নীরব আলতো করে সুমীর হাতটি ধরল। সুমী শুধু অপেক্ষা করছে কখন সে পৌছাবে। কখন সে তার জীবনের সেরা আনন্দ মুহূর্ত গুলো কাটাবে। খুব কাছ সমুদ্রের গর্জন শুনবে। ও ভাবছে, আচ্ছা, কে বিশাল?? সমুদ্র, পাহাড় , আকাশ,নাকি নীরবের হৃদয়!!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত