আজকের আমার বাসর রাত। বাসর রাত নিয়ে সবারই অনেক সপ্ন থাকে আমারও ছিলো। কিন্তু আমি রাতে রুমে ঢুকে দেখি দুইটা বালিশ একসাথে করে কাত হয়ে শুয়ে আছে আমার নতুন বিয়ে করা বউ রুনা। আমি রুনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম..
— কি হয়েছে?? (মেহেদী)
রুনা কিছু নাহ বলল নাহ। শুধু মাথাটা তুলে একবার আমার দিকে তাকালো। রুনার জ্বর আসছে কি নাহ দেখার জন্য আমি ওর কপালে হাত রাখলাম কিন্তু ওর কপালে হাত রাখা যাচ্ছে নাহ। হাত পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। আমি আর দেরী নাহ করে বালতি আর মগ নিয়ে এসে রুনার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর রুনা বললো,,,
— থাক আর লাগবে নাহ। (রুনা) আমিও আর পানি নাহ ঢেলে বালতি আর মগ রেখে দিয়ে গামছা এনে ভালো করে মাথাটা মুছে দিলাম। তারপরে হাতের তালুতে একটু নারকেল তেল নিয়ে রুনার মাথায় দিয়ে দিলাম। একটু পরে রুনা হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমি রুনার কান্না দেখে ভয়ে গেলাম।তারপরও বললাম,,,
— তেল দেওয়াতে কোনো সমস্যা হয়েছে?? আর যদি বেশি খারাপ লাগে তাহলে আমি ডাক্তার ডাকি?? (মেহেদী)
রুনা চোখে দিয়ে নদীর স্রোতের মতন পানি পড়ছেই।রুনা কিছু বলছে নাহ দেখে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম…
— কি হয়েছে বলবেন তোহ?? (মেহেদী)
জ্বরের ঘোরে রুনা আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,,,
— জানেন নীল আমাকে অনেকদিন বলেছিলো,,,, রুনা তোমার জ্বর হলে তোমার মাথায় পানি ঢেলে দিবো,,, মাথা মুছে মাথায় তেল দিয়ে দিবো। আজ নীলের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। ছেলেটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমিও অনেক ভালোবাসি ছেলেটাকে। কিন্তু বাবার কারনে আপনাকে বিয়ে করতে হয়েছে। আমি কখনোই আপনাকে মেনে নিতে পারবো নাহ।।
রাত প্রায় পাঁচটা বাজে,,, রুনা ঘুমাচ্ছে। আর আমি পাশে বসে জল পট্টিটা বারবার ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে রুনার কপালের উপর রাখছি। আমি শুধু বারবার রুনার বলা কথাটাই ভাবছি। আমার ঠিক কী করা উচিত এখন?? কিছুই মাথায় আসছে নাহ। সবকিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এইভাবেই আরও কিছুহ্মন জল পট্টিটা দিলাম। অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই উঠে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরবেলা,,, রুনা ঘুম থেকে জেগে উঠে আমাকে আস্তে আস্তে ডাকছে। আমি শুনতে পেয়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম…
— কি হয়েছে?? কিছু কি দরকার আপনের?? (মেহেদী)
— আমি নামাজ পড়বো। আমার একটা জায়নামাজ দরকার। দয়া করে আমাকে একটা জায়নামাজ এনে দিবেন??
(রুনা) আমি আলমারির ভেতর থেকে জায়নামাজ বের করে ফ্লোরে বিছিয়ে দিলাম। রুনা অজু করে এসে নামাজ পড়তে বসে পড়ল। প্রায় আধাঘন্টা সময় নিয়ে মোনাজাতে অঝোরে কাঁদলো আরও অনেক কিছু বলল। শুনেই আমারও অনেক কষ্ট লাগলো মেয়েটার জন্য। বিয়ের প্রথম দিনগুলো মানুষের যেভাবে যায়,, আমার ক্ষেত্রে ঠিক সেরকম কিছু ঘটছে নাহ। তবুও আমার দুঃখ নেই। কিন্তু রুনা এখন আমার বউ,, সে এভাবে কষ্ট পাচ্ছে,, এটা আমি মানতে পারছি নাহ। মা বাবার সম্মান রক্ষার্থে রুনা এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। এইজন্য রুনা আমার সাথে কথা বলে নাহ ঠিকমতো। একেবারেই নিজের মত করে থাকে। কোনকিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে চায় নাহ। তবে আমি ওকে বুঝে উঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটা নীল শাড়ি আর নীল চুড়ি এনে রুনার হাতে দিয়ে বলেছিম,,
— আজকে তুমি এগুলো পরবে। বিকালে আমরা বাইরে ঘুরতে যাবো। আর এগুলো পড়লে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে। রুনা ছোট করে বলে দিলো,,,
— দেখুন আমার ঘুরাঘুরি ভাল লাগে নাহ। দয়া করে আনাকে মাফ করবেন। (রুনা) একদিন রাত দেড়টায় আমি ছাদে উঠে রুনাকে টেক্সট করলাম,,,
— একটু ছাদে আসবে? খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে। আসো আজকে আমরা দুইজন একসাথে জোস্ন্যা দেখি। (মেহেদী)
রুনা ছোট করে রিপ্লাই দিলো,,,
— সরি! আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে.. আমি ঘুমাবো।
আমাদের বিয়ের বয়স প্রায় তিন মাস হয়ে গেলো। আমাদের দুজনের বিছানা আলাদা। তবুও নিয়ম করে সকালবেলা আমি নিজ দায়িত্বে দুজনের ভেজা কাপড়চোপড় বেলকুনিতে টানিয়ে রাখি। রুনা মোবাইল থেকে আমি নীলের নাম্বারটা রুনার অজান্তেই নিয়েছি। নীলকে কল করে নিজের পরিচয় দিলাম। আর বললাম,,,
— রুনাকে নিয়ে সংসার করাটা আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে নাহ!! রুনা এখনো আপনাকে ভালোবাসে,, সারাহ্মন আপনাকে খুব মিস করে,,, আপনার জন্য প্রতিদিন কাঁদে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রুনাকে আপনার হাতে আমি নিজেই তুলে দিবো। যতটুকু সম্ভব পাশে থাকবো আপনাদের। (মেহেদী) নীল হা হা হা করে হেসে উঠে বললো,,,
— আরে ভাই পাগল হইছেন আপনি, তিনমাস ধইরা আপনি ঘুইটা সেই মাল আমারে দিবেন? ভাই আমি ওতো পাগল না। আমার একটা সম্মান আছে ভাই। দয়া করে আমাকে আর কল করবেন নাহ। আপনি আপনের বউ নিয়া সুখে সংসার করেন। আর আমাকেও ভালো থাকতে দেন।। (নীল) অপ্রস্তুত ভাবেই আমি রুনাকে আমার সাথে নীলের কথা বলার রেকর্ডটা শোনালাম। রুনা পলকহীনভাবে বেশ কিছুহ্মন সময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,,,
— আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ!! আমার ভালো লাগছে নাহ আমি কিছু নাহ বলে বাসার বাহিরে চলে এলাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা শেষ হতে যাচ্ছে। সন্ধ্যাও শেষ। বাসায় ফিরছি নাহ আমি। যে মেয়ে এমন রেকর্ড শোনার পরেও সেই ছেলের জন্যেই কাঁদে, তাকে নিয়ে আর যাহোক সংসার করা যায় নাহ। ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত নিতে হচ্ছে। একটু পর রুনা টেক্সট করেছে,,,
— এখুনি বাসায় আসুন। (রুনা) আমি টেক্সট পেয়েই বাসায় ফিরলাম। রুমে এসে দেখি রুনা নেই। একটু পর আবার টেক্সট করল,,,,
— একটু ছাদে আসবেন?
আমি দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠলাম। ছাদে উঠে দেখি রুনা আমার দেওয়া নীল শাড়ি আর হাতে নীল চুড়ি পড়েছে। আকাশের চাঁদ থেকে জোসনা গলে গলে পড়ছে। রুনা নীল চুড়ি পরা হাতটা উঁচু করে টুকি বাজিয়ে আমাকে বলল,,,
— মেহেদী এসো আমরা দুজনে একসাথে চাঁদ দেখি। রুনার টুলিতে আমার হুস ফিরে। আজকে অপরুপ সুন্দর লাগছে রুনাকে। একদম নীল পড়ি মনে হচ্ছে। নিজেকে রুনার কাছে সপে দিতে মন চাচ্ছে। আমি হাঁটু গেড়ে বসে রুনাত হাতটা ধরে বললাম,,,
— ভালোবাসি তোমাকে অনেক প্রিয় ভালোবাসা কি তাহ হয়তো আমি জানি নাহ
কিন্তু তোমার কষ্ট দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয়,, তোমার চোখে পানি দেখলে আমার চোখেও পানি এসে পড়ে,, তোমার জন্য অনেক মায়া আর আবেগ কাজ করে আমার ভিতরে হয়তো এটাই ভালোবাসা। যদি এটাই ভালোবাসা হয় তাহলে আমি ভালোবাসি তোমায় অনেক তোমার কাজল কালো আখি আমাকে তোমার প্রতি আরও দূর্বল করে দেই,,, সারাহ্মন শুধু তোমার এই মায়া ভরা চোখেই দেখতে ইচ্ছে করে আামর বুকের বামপাশটা তোমার নামে লিখে দিলাম আজ। তুমি কি আমাকে দিবে তোমার ঐ বুকের বামপশে একটু জাগা আমায় দিবে কি তোমার হাতটি ধরতে,, কখনো একা তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো নাহ,, সবসময় হাতটি ধরে তোমার পাশে থাকবো আমার কিউট বেবির আম্মু কি তুমি হবে দিবে কি তেমার ঐ মনটা আমায়?? তোমার ওই ভালোবাসার ভান্ডার থিকা কি একটু ভালোবাসা দিবে আমায়
— হুম দিবো
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা