লেইম লাভার

লেইম লাভার

নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তায় চলেছি একা- সেই আদি আমলের গানটা গাইতে গাইতে আপন মনে হাঁটছিলাম ! হঠাত্‍ বজ্রাহত হলাম !

না, ভুল ভাবছেন । ঢাকা শহরের অগণিত ম্যানহোল গুলোর মাঝে একটি আমাকে আপন ভেবে কাছে টেনে নেয় নি ! আপন মনে হাঁটলেও আমি যথেষ্ট সতর্ক ভাবেই হাঁটি ।

স্তম্ভিত হলাম কারণ ছোটকাল থেকে যেরকম রাজকুমারীর ছবি আমার মানসপটে লালন করে এসেছি ঠিক তার এক বাস্তবরূপই রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে । চোখে মুখে বিচলতি ভাব । কি যেন খুঁজছে !

“পাইলাম ! আমি ইহারে পাইলাম !!” চারপাশের এত লোকজন, গাড়ি-ঘোড়া, বিল্ডিং সব হঠাত্‍ অদৃশ্য হয়ে আমি নিজেকে অবারিত সবুজের মাঝে আবিস্কার করলাম ! ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর নাচ চলছে ! কিন্তু গান শুরু হওয়ার আগেই প্রচন্ড এক ধাক্কা খেয়ে বাস্তব জগতে ভূপাতিত হলাম । সাথে কর্কশ একটা কন্ঠস্বর কানে বিঁধল- ঐ মিঞা ? খাম্বার লাহান রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়্যা রইলেন কিল্লাইগ্যা ? রাস্তারে কি বাপের মাল মনে অয় নি ?

ইচ্ছে করছিল লোকটারে কসাই একটা থাপ্পর দিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনাই দিই !

কিন্তু বহুকষ্টে নিজেকে দমন করলাম । কারণ আমার আমার স্বপ্নকুমারী ততক্ষণে হাঁটা শুরু করেছে । এখানে যদি একটা গ্যান্জ্ঞাম বেজে যায় তবে তাকে মিস করে ফেলতে পারি ! তাই কোন রকমে স্যরি বলে ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে রাস্তা পার হলাম ! ঘন্টায় ৮০ মাইল বেগে ছুটে আসা একটা ট্রাকের নিচে পড়তে পড়তেও কপালের জোর ছিল বিধায় বেঁচে গেলাম ! কিন্তু এ কি ?

মেয়েটা খুঁড়িয়ে হাঁটছে । দেখলে হঠাত্‍ বুকের মাঝে ধাক্কার মত লাগে । এত সুন্দরী একটা মেয়ে অথচ সে খোঁড়া ! মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে । মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করলাম । তবে আরেকটু এগুতে প্রচন্ড হাসি পেয়ে যায় । মেয়েটি খুঁড়েয়ে হাঁটছে বলে নয়, কিসব উল্টা পাল্টা চিন্তা করছি সেসব ভেবে ! কারণ সে মোটেও খোঁড়া নয় । সম্ভবত স্যান্ডেল ছিঁড়ে ফেলেছে !

কাছে গিয়ে আমার বহুল প্রশংসিত হাসিটা উপহার দিয়ে জানতে চাইলাম- কোন সাহায্য করতে পারি ?

বেচারি প্রথমে থমথমে খেল । তারপর হতবিহ্বল ভাবটা কাটিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন এই মাত্র শনির বলয় থেকে নেমে এসেছি ! অথবা আমার পেছনে বড় একটা লেজ গজিয়েছে কিংবা আমি কিম্ভুতকিমাকারের এক এলিয়েন ! তার ভাবসাভ দেখে মনে হল- ছেঁড়া স্যান্ডেল নিয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আর তাকে সাহায্য করতেই চাওয়াটাই চূড়ান্ত অস্বাভাবিক !

সে তার অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আমাকে অবিরাম ভস্ম করার বৃথা চেষ্টা চালাতে লাগলো ! কিন্তু আমি নির্বিকার ! মুখে সেই অমায়িক (!) হাসিটা ফুটিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । ভেতরে ভেতরে অবশ্য ঘামছি । যদি মেয়েটি হৈ হুল্লো শুরু করে দেয় তবে পাবলিক আমাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে ! তবে বাইরে সেটা প্রকাশ পেতে দিলাম না !

অবশেষে মেয়েটা হার মানলো । দৃষ্টি সরিয়ে শান্ত স্বরে বলল- কি বললেন ? আমার সেই একই ভঙ্গি একই প্রশ্ন- কোন সাহায্য করতে পারি ?

মেয়েটা নার্ভাস একটা হাসি ফুটিয়ে বলল- একটা মুচির সন্ধান দিতে পারবেন ?

আহ ! কি যে মায়া লাগছিল মেয়েটাকে । এই মায়াবতী মুখটার দিকে তাকিয়ে পুরো একটা স্যান্ডেলের ফ্যাক্টরি খুলে দিতে পারি ! আর মেয়েটা চাইল কিনা একটা মুচির সন্ধান ? ভেতরের কথা ভেতরে জমিয়ে রেখেই বললাম- এই তো ! সামনের মোড়েই একজন বসে !

সে আর দাঁড়াল না । চলে গেল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে । পিছনে বিভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে রইলাম আমি । কি করব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না !

সেদিনের পর থেকে তাকে কত খুঁজলাম আমি ! নাওয়া খাওয়া সব ভুলে শুধু তাকে নিয়েই ভাবি । ফেসবুকের ‘Bios’ অপসনে লিখলাম-

কেউ একজন উড়ে নয়,

দৌড়েও নয়,

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমার মন নিয়ে চলে গেল !

আর সেটা দেখে বন্ধুদের সে কি হাসি ! সকাল বিকাল সন্ধ্যা এমন কি গভীর রাতেও তাদের ঠাট্টাভর্তি মেসেজ ! ফেসবুকের কল্যাণে সেটা পুরো ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে গেল । আমার উপাধিই হয়ে গেল ‘ডাবল এল’ !

Lame Lover !

ওরা ভেবেছিল ওদের ঠাট্টা গায়ে মাখিয়ে আমি সব ছেড়ে ছুড়ে ভদ্র হয়ে যাব !

কিন্তু কিসের কি ? আমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগলো ! আমার করুণ অবস্থা দেখে এক সহৃদয় বন্ধুর উপদেশ- দোস্ত, মুচি হয়ে যা ! আবার হয়ত কোন একদিন স্যান্ডেল ছিঁড়লে তোর কাছে আসতেও পারে !

কারো পৌষ মাস,

আর কেউ খায় বাঁশ !

আমার এহেন করুণাবস্থা বোধহয় সৃষ্টিকর্তার পছন্দ হল না ! তাই তিনি আপন ক্ষমতা বলে এক মিরাকল ঘটালেন ।

ক্লাস শেষে কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম । আমার অবস্থা আগের মতই । আড্ডায় তেমন একটা সরব নই । এমন সময় এক পিচ্চি এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল । আমি হতবম্ভ ! তবে চিরকুটের দিকে তাকিয়ে 440 ভোল্টের শক খেলাম ! তাতে লেখা- “Facebook এ ছ্যাঁচরামি করে লাভ কি ? খুঁজে পাবেন বলে মনে হয়? আর ঐদিন ধন্যবাদ জানানো হয়নি । তাই আজ বলছি- Thanks !”

ঝট করে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি । অস্তির চোখে কেউ একজনকে খুঁজছি । বন্ধুরা আমার এহেন আচরণ দেখে বলল- কি রে ? উঠে পড়লি ক্যান ? বোলতা কামড় দিল নাকি? ঠিক তখন দেখলাম তাকে ! যার জন্য আমি আজ কপালে ‘LL’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘুরছি ! খানিক দূরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে । মুখে অদ্ভুত হাসি !

তারপর ?

তারপরের কিছুদিন ছিল আমার জীবনের সেরা কিছু দিন । কিভাবে যে চলে যাচ্ছিল টেরই পাচ্ছিলাম না । কত স্বপ্ন, কত কল্পনা, কত আশা একসাথে বুনছিলাম আমরা।

পুলক ভাই নামক জনৈক মনীষী বলেছেন- সুখের সময় বেশিদিন স্থায়ী হয় না !

ঠিক সেটাই ঘটল আমার সাথে । একদিন ওর জন্য ফার্মগেইট অপেক্ষা করছিলাম।

চারটায় দেখা করার কথা ছিল ওর সাথে ! কিন্তু চারটা পার হয়ে পাঁচটা বেজে গেল কিন্তু ওর কোন দেখা নেই । আশ্চার্য ! ওতো কখনো এমনটা করে না । ফোন দিয়ে এই প্রথম বারের মত ওর মোবাইল বন্ধ পেলাম ! অস্থিরতা বাড়ছে আমার । ও কোন বিপদে পড়ে নি তো ? ওর ফোন বন্ধ কেন ? হাজারো দুশ্চিন্ত গ্রাস করতে চাইছিল আমাকে । আমি জোর করে সব অশুভ চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম । মনে প্রাণে ভাবতে চাইলাম যে আমার রাজকন্যা ভালই আছে । সন্ধ্যার অনেকক্ষণ পরও আমি সেখানে ওর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম । কিন্তু ও আসে নি । যখন বাড়ি আসলাম

তখন পুরোপুরি বিধ্বস্ত আমি ।

ওর বাসা চিনতাম না আমি । ওর তেমন কোন বন্ধুবান্ধবের সাথেও আমার পরিচয় ছিল না । আসলে ওকে পাওয়ার পর শুধু ওকে নিয়েই এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সুযোগই পাই নি । আর এখন সে জন্য সাফার করতে হচ্ছে । সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা চালালাম ওর কি হয়েছে, কোথায় আছে, কেমন আছে তা জানার জন্য । কিন্তু আমার সব চেষ্টা বিফলে গেল ।

জলজ্যান্ত একটা মানুষ হঠাত্‍ করেই গায়েব হয়ে গেল । কোন খোঁজ পেলাম না আমি ।

আমার স্বপ্নকন্যা আমার সাথে নেই- একথা বিশ্বাস করতেই অনেক কষ্ট হচ্ছিল । কিন্তু বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই । কারো জন্য নাকি জীবন থমকে দাঁড়ায় না ! একথা পুরোপুরি ভাবেই ভুল প্রমাণিত হল আমার ক্ষেত্রে । আমার

জীবন সেখানেই থমকে দাঁড়াল যেখানে আমার রাজকন্যা ছেড়ে গিয়েছিল ।

প্রায় চার মাস কেটে গেল । এই চারমাসে আমার অবস্থা হয়েছে দেখার মত । তবে বন্ধুরা এ নিয়ে কোন দুষ্টামি করে না । আগে যেখানে পান থেকে চুন খসলেই তুলকাম কান্ড বাজত এখন তারা আমার কঠোরাগত চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেই ভয় পায় !!

পুরাপুরিই বদলে গেলাম আমি । উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে ঠাসা এক যুবক থেকে

পরিণত হলাম এক ধ্বংসস্তুপে !!

সৃষ্টিকর্তা বরাবরই আমার প্রতি দয়ালু ছিলেন । আমার এই দুরাবস্থা তার বেশিদিন সহ্য হল না । তাই তিনি আবার স্বপ্নকন্যার সাথে আমার দেখা করিয়ে

দিলেন । অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই….

সেদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতেই কেন জানি মনটা অনেক ভাল হয়ে গেল । কোন কারণ ছাড়াই ! দাড়িতে জন্জ্ঞাল হয়ে যাওয়া মুখটা অনেক সময় নিয়ে শেইভ করলাম। অনেক দিন পর উদরপূর্তি করে খেলাম । আমার স্বপ্নকন্যার উপহার দেয়া

টিশার্ট টা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলাম ।

সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরি করলাম । হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম সেই রাস্তাটায় !

বছরখানেক আগে এই ঘটনার সূত্রপাতটা যেখানে হয়েছিল ।

কোন কারণ ছাড়াই মনটা ফুরফুর ছিল । হয়ত আমি না বুঝলেও আমার অবচেতন মন ঠিকই বুঝে গিয়েছিল আমার স্বপ্নকন্যার দেখা আজ আবার পাবো আমি !

আপন মনেই গুনগুনিয়ে গাইতে শুরু করেছিলাম- নীল আকাশের নিচে আমি, রাস্তায় চলেছি একা…

ইয়েস ! ইটস মিরাকল !

আমি দেখলাম রাস্তার ওধার ধরে একটা মেয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলছে ! বছরখানেক পর আমার পুরো পৃথিবী আবার থমকে দাঁড়াল !

মেয়েটাই যে আমার স্বপ্নকন্যা তা বুঝতে বাকি রইল না । কারণ তার গায়ে শোভা

পাচ্ছিল আমার দেয়া থ্রি পিছটাই !!

দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে তার কাছে গেলাম । আমাকে দেখতে পায় নি । ডাকতে গিয়েও চুপ করে গেলাম । একরাশ অভিমান এসে ঘিরে ধরল আমাকে । চেপে রাখা ক্ষোভ

মেশানো কন্ঠেই বললাম- কি ? আবারও স্যান্ডেল ছিঁড়েছ !?

আমার কন্ঠস্বর শুনেই থমকে দাঁড়াল ও । এক ঝলক পিছনে তাকিয়ে আবার দ্রুত হেঁটে চলে যেতে চাইল ও । আশ্চার্য ! ও পালিয়ে যেতে চাইছে আমার কাছ থেকে ! কিন্তু খোঁড়া মানুষ ! কতদূরই বা আর যাবে ! ধরে ফেললাম ওকে ।

চার মাসের জমিয়ে রাখা সব রাগ ঝাড়লাম ওর উপর । ও মাটির দিকে তাকিয়ে চুপটি করে সব শুনলো । কিন্তু কোন উত্তর দিল না । এক ফোঁটা জল নীরবে গড়িয়ে পড়ল ওর চোখ থেকে !

আমি অবাক হলাম । আমার স্বপ্নকন্যা কাঁদছে । প্রচন্ড কষ্ট হল । কিন্তুসান্ত্বনা দিলাম না ওকে । ওর কাঁদাই উচিত । গত কয়েকমাসে আমি তো আর কম কাঁদি নি !

ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম । জুতা তো ঠিকই আছে । তাহলে খুঁড়িয়ে হাঁটছে কেন ?

অবাক কন্ঠেই জিজ্ঞাসা করলাম- কি ব্যাপার ? তোমার জূতা তো ঠিকই আছে ।

তাহলে খুঁড়িয়ে হাঁটছ কেন ?

কাঠের নকল পা দিয়ে ঠিকভাবে হাঁটা যায় না- ওর মৃদু উত্তর । কাঠের পা ! বলছে কি এসব ! বছর খানেক আগে প্রথম বার ওকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে যে ধাক্কাটা বুকে লেগেছিল সেটা আবার অনুভব করলাম । কিছু জিজ্ঞাসা করতেও ভয়

হচ্ছিল । যদি অপ্রত্যাশিত কিছু শুনি !

আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার স্বপ্নকন্যা তার মুক্তোঝরানো কন্ঠে বলতে লাগলো অসহনীয় কথাগুলো- আমাদের বাড়ির কাজ চলছিল । তোমার সাথে যেদিন দেখার করার কথা ছিল সেদিন সকালেই ঘটে দূর্ঘটনাটা । আমি তিনতলার ছাদ থেকে পা পিছলে পড়ে গেলাম । আর একটা রড় গেঁথে গেল পায়ে । পুরো এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল । আব্বু ইমার্জেন্সি ভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যান । কিন্তু শেষরক্ষা হয় নি । পা টা কেটেই ফেলতে হয় ।

আমি তখন আর আমার মাঝে নেই । পুরো দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে ভাসছে । তীব্র যন্ত্রনায় চোখ বন্ধ করলাম আমি । রড়টা যেন তার পায়ে নয়, আমার পায়েই ঢুকেছে।

নীরবে কাঁদছিল সে । কিভাবে সান্ত্বনা দেব তা বুঝতে পারছিলাম না ।

একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল- তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সাহস হয় নি । নিজের অক্ষমতা নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে নি । তাই আর তোমাকে জানাই নি কিছু । কালই দেশে ফিরেছি । তোমাকে একবার খুব….. খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছিলো । তাই বাসার নিষেধ সত্ত্বেও এখানে এসেছিলাম যদি ভাগ্যদেবীর কৃপায় দূর থেকে হলেও তোমাকে একটি বার দেখতে পাই ! দেখা তো

হয়েই গেল ।

আমি তখনো চুপ । হে খোদা, এই মিষ্টি মেয়েটার সাথে তুমি কেন এমনটা করলে? কি দোষ করেছিল এই নিরাপরাধ মেয়েটা ? কেন তুমি এমনটা করলে ?

আমাকে চুপ থাকতে দেখেই স্বপ্নকন্যা আবার বলে উঠল- আর হয়ত দেখা না ও হতে পারে । ভাল থেকো ।

তারপর সে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্ধত হল । আশ্চার্য ! কি সুন্দর করে বলল ভালো থেকো ! মেজাজ আর ধরে রাখতে পারলাম না ।

ওর হাত ধরে বললাম- ঐ মেয়ে ? পেয়ছটা কি তুমি ? সব সিদ্ধান্ত তুমি একাই

নেবে ? আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না ?

ও অবাক হয়ে বলল- মানে ?

‘মানে মানে ? মানে… মানে… ‘ আমার একটা সমস্যা আছে । আমি রেগে গেলে তোতলাতে থাকি । এই ভাবে রেগে থাকলে তো কথা বলা যাবে না । কথা বলতে হলে আগে ঠান্ডা হতে হবে । ঠান্ডা হওয়ার জন্য একটু সময় নিলাম ।

তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বললাম- মেয়ে, তোমার জন্য আমার বন্ধুরা আমাকে কি নাম দিয়েছে জানো ? Lame Lover ! কিন্তু আমি এতে মোটেও অসুখী না । তোমার জন্য আমি এক জনম কেন, সাত জনমও Lame Lover হিসাবে কাটিয়ে দিতে পারবো । আমি তোমাকে কখনোই একা খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেবো না । তোমার পাশে তোমার হাতটি ধরে আমিও বাকি জীবনটা হাঁটতে চাই….

:- কিন্তু আমি…..

:- ইশশশশশ…..

থামিয়ে দিলাম ওকে । কোন অজুহাত আমি শুনতে চাই না । দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি । কতক্ষণ জানি না !

এমন সময় পাশ থেকে কেউ একজনকে বলতে শুনলাম- ঐ মিঞারা ? রাস্তার মাঝখানে বেক্কলের মত খাড়াইয়্যা রইছেন কিল্লাইগ্যা ? রাস্তা কি বাপের মাল পাইছেন

স্বপ্নকন্যা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল । এর ফাঁকে আমি কিন্তু একটা জিনিস দেখে ফেলেছি- মেয়েটার চোখ অস্বাভাবিক সুন্দর !!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত