-কেমন আছো নিধি?
-তুমি এখানে![কাঁপা কাঁপা কন্ঠে]
-এমনি,দেখতে ইচ্ছা করছিলো।
-আসার আর সময় পেলেনা,কিছুক্ষণেই আব্বু চলে আসবে।।
-ওকে একটু পরেই চলে যাবো।
-কিন্তু…..
-একটা কথা রাখবা।
-তাড়াতাড়ি বলো।
-তোমার ঠোঁটেরর ছোঁয়াটা কি পেতে পারি।
-ব্রেকআপ কড়ার সময় মনে ছিলোনা।
-ব্রেকআপ আমি করছিলাম নাকি তুমি!
-যেটাই হোক,এখন প্লিজ যাও।
-নাহ্,তুমি আমার জেদ সম্পর্কে তো জানোই।পাপ্পি না দিতে দিলে যাবোনা।
-মানে কি![চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে]
-দিবা কি না!
-ওহ্ গড,ওকে।
আদেশ পেয়ে আস্তে আস্তে বালিকার ঠোঁটের দিকে এগোলাম।আমার এগোনো দেখে নিধি চোখ বন্ধকরে ফেললো,আমিও তখন চোখজোড়া বন্ধ করে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম।
একমিনিট যাবৎ সেভাবেই চলতে থাকলো,হঠাৎ বিকট কন্ঠে একজন ভদ্রলোক জোরে বলে উঠলো “নিধি।”
দুজনেই তখন চমকে উঠলাম।
ভদ্রলোককে দেখে বুঝতে বাকি রইলোনা তিনিই নিধির আব্বু।
পালানোর পথ না পেয়ে তখন সেখানেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-এগুলো কি চলছে।[নিধির উদ্দেশ্যে]
নিধি নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে রইলো।ভদ্রলোক কোনো উত্তর না পেয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসলো।
-বাসা কোথায় তোমার?
-ফরিদপুর।(নিচু স্বরে)
-এখানে কি?
-(……..)
-কি হলো উত্তর দাও,এখানে কি করছো?
-মানে আংকেল…..
তারপর “ঠাসসসস” করে একটা শব্দ হলো।
-এক্ষনি এখান থেকে বেড়িয়ে যাও।
আর কিছু বলার ভাষা না পেয়ে মাথা নিচু করে হাসপাল থেকে বেড়িয়ে সোজা আলিমের কাছে চলে গেলাম।
-কিরে ডেট কেমন হইলো।(আলিম)
-আগে একটা আইসক্রিম নিয়ে আয়,তারপর বলছি।
-আইসক্রিম দিয়ে কি করবি?(আলিম)
-নিয়ে আয়,কি করি এমনিতেই দেখতে পাবি।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা কড়ার পর বালক মাচো আইসক্রিম নিয়ে আসলো।
আইসক্রিম নিয়ে পরলাম মহা বিপদে,চল্লিশ টাকার আইসক্রিম গালে লাগাই কি করে!
-দোস্ত এদিকে আয়।
-হুম বল।
-গালটা এদিকে বাড়াতো।
গাল বাড়িয়ে দিতেই কষে মারলাম এক চর।
-মারলি কেনো?
-এখন তুই গালে কি লাগাবি?
-বরফ।
-যাহ্ নিয়ে আয়।
-ঢাকা শহরে বরফ খুবি এন্টিক দ্রব্য,পাঁচ টাকার আইসক্রিম দিয়েই কাজ চালাইতে হইবো।
-ওকে সেটাই লাগা,কিন্তু দুইটা নিয়ে আসিস।
-কেনো।
-বুঝবিনা।
মাচোটা শেষ করতে করতে বালক পাঁচ টাকার আইসক্রিম নিয়ে হাজির হলো।
তারপর দুই বন্ধু মিলে গালে আইসক্রিম লাগাতে লাগলাম।
-দোস্ত তোর গালে কি হইছে?
-তোর যেইটা হইছে।
-মানে!তোরে কোন শালা চর মারছে?
-রেস্পেক্ট দে,আমার হবু শ্বশুর হয়।
-ক্লিয়ার কইরে বলতো।
তারপর আলিমকে সবটা ক্লিয়ার করে বললাম।
শুনে বালক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
তারপর আর কিছুক্ষণ মজা করে ওর সাথে ওর ম্যাচে গিয়ে উঠলাম।
*
বিকেলে খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রকৃতির সাথে একলা সময় কাটাতে ছাদে চলে গেলাম।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে যেদিকেই তাকাই শুধু পাহাড়ের ন্যায় দালান।
চাইলেই যেন খুব সহজে এক পাহাড় টপকে অন্য পাহাড়ে যাওয়া যায়।
ছাদ থেকে নিচে সুন্দরী রমণীদের তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম “এযেন এক ময়দার গুডাউন।”
হঠাৎ পকেটে থাকা সেলফোনটা বেজে উঠলো।
unknown নাম্বার দেখে খুশি মনে রিসিভ করলাম….
-হ্যালো,আসসালামু ওয়ালাইকুম।
-তুমি রফি!
-জ্বি।
-হাসপাতালে চলে আসো তাড়াতাড়ি।
-কেনো!
-ডাক্তার টাইম টু টাইম নিধিকে ঔষধ খেতে বলেছে,কিন্তু মেয়েটা তোমার জন্য জেদ করে দুপুরে ঔষধ খায়নি।
-ওকে আংকেল আমি এখনি আসছি।
কলটা কেটে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে নিধির কথা ভাবতে লাগলাম।ব্রেইন টিউমার ধড়া পরায় ডাক্তার সকাল আর রাতে দুইটা ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
টাইম টু টাইম সব ভালোই চলছিলো।বালিকার প্রব্লেমটাও ধীরেধীরে ঠিক হয়ে যাচ্ছিলো।ভাগ্যক্রমে একদিন ওর সাথে ঝগড়া হয়ে যায়।
কথাবলা টোটালি অফ,নিধি তখন আমার প্রতি জেদ দেখিয়ে ওভার ডোজ ইনজেকশন ওর শরীরে ইনজেক্ট করে।
যার জন্য প্রব্লেমটা কিছুদিনেই বিশাল রূপ ধারণ করে।
ডাক্তারকে জানানোর পর ডাক্তার একমাত্র উপায় অপারেশনের কথা বলে,যেখানে চাঞ্চ মাত্র ২০%।
তবে ভাগ্য আর দূরভাগ্যের লড়াইয়ে ভাগ্যের জয় হয়।
খবরটা আমি অনেক পরে জানতে পারলেও নিধির কাছে ছুটে আসতে খুব একটা দেরী করিনি।
নিজের কাছেই তখন খারাপ লাগতে লাগলো,ঘটে যাওয়ার এতকিছুর কারণ আজ শুধুই আমি।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনের মাঝে ভয় বিরাজ করলো,”নিধির আব্বু ডেকে নিয়ে আবার চর মারবে নাতো!”
.
ছাদ থেকে নেমে ফ্রেস হয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
পৌছে তৃতীয় তলায় ৩০৭ নম্বর কেবিনে উকি দিতেই দেখলাম নিধি বেডে শুয়ে আছে।আর পাশে ওর আব্বু-আম্মু বসে কথা বলছে।
আমায় দেখতে পেয়ে ওর আব্বু ভেতরে আসতে বললেন।
ভদ্র ছেলের মতো তখন ভেতরে প্রবেশ করলাম।
-নে মা,এখন খেয়েনে।[নিধিকে উদ্দেশ্য করে](আংকেল)
-আগে দোকান থেকে একটা স্প্রিড নিয়ে আসো।(নিধি)
-একটু পরে এনে দিচ্ছি।(আংকেল)
-এখনি এনে দাও।(নিধি)
-আচ্ছা।(আংকেল)
-আম্মু তুমিও আব্বুর সাথে যাও।(নিধি)
-আমি যাবো কি করতে?(আন্টি)
-ঠিকিতো,তোর আম্মু যাবে কেনো?(আন্টি)
-ঔষধ ফুরিয়ে গেছে,আনতে যাবে।(নিধি)
-আচ্ছা আমিই নিয়ে আসবো।(আংকেল)
-না,তুমি নার্চদের দিকে তাকাবা,তাই আম্মুও যাবে।(নিধি)
-আচ্ছা রফিও চলো,একটু দরকার আছে।(আংকেল)
-নাহ্ ও থাক,একা ভয় করে।(নিধি)
-এত্ত বাহানা না করে,সোজা বললেই পাড়িস রফির সাথে একা কথা বলবি।(আন্টি)
নিধি তখন বিড়বিড় করে বললো,”বুঝোই যখন যাওনা কেনো।”
আন্টি আংকেলকে নিয়ে মিট মিট করে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলেন।
.
দুজনেই কিছুক্ষণ নিশ্চুপ।
নিধির দিকে তাকানোর সাহস না পেয়ে আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-কিহলো,বসবানা!
-হুম।[বসতে বসতে]
-দুপুরে খেয়েছো?
-হুম।
-আব্বু চর মেরেছে বলে রাগ করে আছো?
-এটা তোমার আব্বুর অধিকার।
-সরি।
-কিসের সরি!খাওনি কেনো?
-আব্বু তোমায় চর মেরেছে বলে।
-আজব,এখন খেয়ে নেও।
-হাত দিয়ে খাবো কিকরে!
-ওহ্,আমি খাইয়ে দিবো?
-সত্যি!
-হুম।
.
নিধির পাশে বসে নিধিকে খাইয়ে দিচ্ছি,আর বালিকা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।
ভাত খাওয়ানো শেষ করে বালিকাকে ঔষধ খাইয়ে দিলাম।
তারপর বালিকা বেডে শরীর মেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমি পাশে বসে নিধির বেন্ডেজে মোড়ানো মাথায় হালকা করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
জানালা দিয়ে তাকিয়ে বুঝলা সুর্য অস্ত যেতে আর বেশী সময় বাকি নেই।
মনটা তখন অপরূপ দৃশ্যটা স্পেশাল কাওকে সাথে নিয়ে দেখা বায়না ধরলো।
অবুঝ মনকে বোঝাতে না পেরে নিধিকে সাথে করে হাসপাতালের ছাদে চলে গেলাম।
দুজনে পাশাপাশি বসে নীল আকাশের লাল সূর্যটার হারিয়ে যাওয়া দেখতে লাগলাম।
আস্তে চারিপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলো,কিছুক্ষণ বাদে দেখা দিলো চাঁদ।
ঝিকিমিকি তারাগুলাও এক এক করে উকি দিতে লাগলো।
নিধি পাশে বসে আমার হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে সময়টা উপভোগ করছে।
আমিও রাগি কুমারীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
তারপর মনে পড়লো নিধির আব্বু-আম্মুর কথা।
-নিধি চলো।
-কোথায়।
-কেবিনে।
-আর একটু পরে যাই।
-নাহ্,তোমার আব্বু-আম্মু এসে দেখতে না পেলে টেনশন করবে।
-ফোন দিয়ে বলে দাও।
-ধুরর,কি ভাববে?
-যা ইচ্ছা ভাবুক।
তখন আমি উঠে নিধিকে অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নিলাম।
তারপর ছাদ থেকে নেমে সবার সামনে নিধিকে কেবিনে নিয়ে আসলাম।
.
-এখন আমি যাই?
-আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করে যাও।
-ওকে,তাঁরা আসতে আসতে চলো আবার হয়ে যাক।
-কি?
-সকালে যেটা হলো।
-কিইইই,না।
-সত্যি!
-না না না।
-ওরে আল্লাহ্,ওকে।
তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা।
-নিধি শোনো।
-কি।
-কানে কানে বলি।
-কেউ নেই,জোরেই বলো।
-নাহ্,খুবি ইম্পরট্যান্ট কথা।
-ওকে।
বলেই কান এগিয়ে দিলো।
আমি তখন আলতো করে দুই হাত দিয়ে বালিকার মুখ ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম।
নিধিও পেছন থেকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
ভাগ্যক্রমে তখনি নিধির আব্বু-আম্মুর এন্ট্রি।
আবারো বিকট কন্ঠে ডাক পরলো,”নিধি।”
দুজনে আগের মতন চমকে উঠলেও কিছুক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে,আবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।
*
ভালবাসা এক পাগলামির নাম।
“যেখানে একটা পাগল আর একটা পাগলী,বাকি সবাই দর্শক”
………………………………………………<সমাপ্ত>………………………………………………
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা