সারমিন খুব ভদ্র একটা মেয়ে। কেবল অনার্স ফাস্ট ইয়ার এ ভর্তি হল। কলেজে একদম নতুন কেননা তার বাবা আর্মি অফিসার।
বদলি হয়ে কলকাতায় এসেছে, এইখানের নামকরা কলেজেই সারমিন ভর্তি হল।
প্রথম দিন তেমন কেউ পরিচিত হল না।
শুধু পাশে বসা একটা মেয়ের সাথে কথা হল।মেয়েটার নাম ছিল লামিয়া।
খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় দুই জনের মাঝে।
মেয়েরা এমনই খুব সহজে মিশতে পারে আবার খুব সহজে ভাঙতে পারে।
পরের দিন আবার কলেজ আসে,এমনি করে তাদের বন্ধুত্ব খুব ভাল হয়ে গেল এবং ক্লাসে তারা খুব ক্লোসফ্রেন্ড হয়ে গেল।
”
”
“ক্লাসে ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকায় তাদের কিছু কিছু ছেলেদের সাথে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
এক সাথে ক্লাস করা,এক সাথে স্যারের ব্যাচে পরা এতে করে বন্ধুত্ব হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
কিন্তু লামিয়া কইদিন ধরে খুব ফলো করছে একটা ছেলে খুব চুপচাপ বসে থাকে ক্লাসে,তেমন কারো সাথে কথা বলে না।
স্যার পরা জানতে চাইলে খুব আস্তে করে বলে।কিন্তু খুব মেধাবী ছাত্র.
লামিয়া যখনই সারমিন কে বলতে যাবে কথাটা তখনই সারমিন বলে দেখ ওই ছেলেটা একদম চুপ করে থাকে কেন?
কোন কথা বলে না,অথচ কি মেধাবী দেখছিস?
মনে হয় ভাব নেয় তার জন্য কারো সাথে কথা বলে না।
”
”
“একদিন ক্লাসে বাংলা স্যার
“”””আমার প্রিয় মা”””””
পড়াচ্ছিলেন,তখন ছেলেটা তার মা এর কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দিল,স্যার জানতে চাইল কাঁদছ কেন?
তখন ছেলেটা বলল স্যার আমার মা ক্যান্সারে মারা গেছেন।
তখন স্যার ছেলেটাকে অনেক বুজালো।
এর পর ক্লাস শেষে লামিয়া আর সারমিন দুই জন নিজেদের ভুল বুজতে পেরে স্বিদ্বান্ত নিল তারা দুইজনই ছেলেটার সাথে ভাল ফ্রেন্ডশিপ করবে।
যদি ছেলেটা আপত্তি না করে।
এর পর ছেলেটাকে পিছন থেকে লামিয়া প্রথমে ডাক দিল এই যে ভাইয়া শুনছেন?
জ্বি আমাকে বলছেন?
হুম আপনাকেই বলছি………
আমি লামিয়া আর ও আমার বান্ধবী সারমিন,আপনি?
জি আমি অরন্য।
অরন্য- আমাকে ডাকছেন কিছু বলবেন?
লামিয়া- না মানে আমরা আপনার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
অরন্য- আমরা তো একি ক্লাসে পরি তবে আমরা কি ফ্রেন্ড না?
সারমিন- না মানে আমরা চাচ্ছি আমরা তিনজন খুব ভাল ফ্রেন্ডশিপ করব।
অরন্য- কিন্তু একটা শর্ত আছে প্রমিস করতে হবে কেউ কাউকে কোনদিন কষ্ট দিবে না আর ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করবো না।
এর পর প্রমিস করে তিনজনই আর তাদের নতুন বন্ধুত্বের দিন চলতে থাকে।
”
”
“সারা দিন একসাথে কলেজ করা,পড়তে যাওয়া,বাসায় গিয়ে আবার এসএমএস এ চ্যাট করা সব হতে থাকে।
কারন অরন্য একলা আর সারমিন আর লামিয়া দুই জন।
একজনকে এসএমএস এর রিপ্লাই দিতে দেড়ি হলেই চিল্লা পাল্লা শুরু করে দিত।
খুব বেশি পেইন যাচ্ছিল অরন্যের উপর দিয়ে।
কিন্তু তবু অরন্য খুব হ্যাপি কারন তার মা মারা যাবার পর এত দিন খুব মন মরা থাকত আর এখন সে একটু হাসি খুশি থাকে।
এমনি করে দিন গুলি খুব ভালো যাচ্ছিল।দেখতে দেখতে তাদের ফাস্ট ইয়ারের পরিক্ষা শেষ।
সেকেন্ড ইয়ারে যখন উঠল তাদের দিন গুলি আরো ভালো যাচ্ছিল।
এক সাথে ৩জন মিলে ফুসকা খাওয়া,দুই জন মিলে এক জনের জন্য অপেক্ষ্যা করা,আবার এক জনের দুইজনের জন্য অপেক্ষ্যা করা।
ক্লাসের সবাই তাদের বলত দুই বধু এক স্বামী।
”
”
“কিন্তু এতে তারা মন খারাপ করত না।
কেননা তারা ছেড়ে যাবার জন্য বন্ধুত্ব করেনি।
একদিন লামিয়া সারমিন কে বলে সারমিন হয়ত আমি আমি তোকে একটা কথা বলব কিন্তু তুই কাউকে বলবি না,
সারমিন ও বলে আমি ও একটা কথা বলব তুই ও কাউকে বলবি না।
এর পর লামিয়া বলে সারমিন আমি হয়ত অরন্য কে ভালোবাসি।
দেখ ওর সব কিছু আমার ভালো লাগে।
খুব বেশি ভালোবাসি ওকে কিন্তু বলতে পারছি না।
সারমিন লামিয়া এর কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেল।কেননা সেও যে অরন্য কে ভালোবাসে।
কিন্তু কি করে বলবে এখন?
লামিয়া তার প্রিয় বান্ধবী যে আগে বলেছে।
নিজের বুকের মাঝে জমানো ভালোবাসা টা আরো শক্ত করে জমিয়ে রেখে বলল আচ্ছা আমি অরন্যকে বলে দিব।
এবার লামিয়া জানতে চায় তুই কি বলবি বল।
সারমিন বলে আরে আমি তো এই কথাই বলতে চাইছিলাম,আমার মনে হয় অরন্য তোকে ভালোবাসে।
তোর দিক কেমন কেমন করে তাকায়।
দেখছিস লামিয়া আমার কি ভাগ্য আমি অরন্যের শালিকা হয়ে গেলাম।
এর পর তারা ঠিক করল পরের দিন সারমিন অরন্যকে বলে দিবে লামিয়ার কথা যে লামিয়া তাকে ভালোবাসে।
”
”
“পরের দিন সারমিন লামিয়াকে নিয়ে অরন্যের কাছে গেল,আর অরন্যকে সব খুলে বলল অরন্য প্রথমে ভালোবাসার মাঝে যেতে চায়নি।
কারন তাদের ফ্রেন্ডশিপই ভাল আছে তাই।
কিন্তু সারমিন এর জোড়াজুড়িতে এক সময় রাজি হয়।
সারমিন তাদের মিলিয়ে দিয়ে চলে যায়।
সারমিন বাসায় যাবার পর নিজের ডাইরি তে কয়েকটা লাইন লিখে নিজেই কাঁন্না করে।
কি আর করবে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে তুলে দিল অন্যের হাতে তা আবার সে নিজেই।
এর পরের দিন গুলি খুব কষ্টে যাচ্ছিল সারমিনের।
লামিয়া এসে এসে বলত আজকে অরন্য এইটা করছে,অমুক যায়গায় ঘুরতে নিয়ে গেছে,সব কথা বলত আর সারমিনের ভিতর পুরে যেত।
কিছু বলতে পারত না সইতে পারত না।
দেখতে দেখতে তারা অনার্স পাশ করে।
খুব ভালো রেসাল্ট হল তিন জনের।
”
”
“অরন্য খুব ভালো একটা জব পেল তার পরে লামিয়া কে বিয়ে করে ফেলল।এটা অবস্য লামিয়ার জোরাজুরি তেই করল।
আর ফ্যামিলিগত ভাবে সব হয়েছে কারন দুই ফ্যামিলে তাদের পছন্দ করছে।
বিয়ের দেড় বছরের মাথায় লামিয়া পেগনেন্ট হয়।
কিন্তু পেইন বেশি হলে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়।
বেবি হলেও লামিয়া খুব অসুস্থ হয়ে যায়।ডাক্তার বলে হয়ত বাঁচবে না।
যখন লামিয়া অরন্য কে বলে অরন্য আমি হয়ত বাঁচব না তখন অরন্য এর চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।
লামিয়া বলে অরন্য তুমি আমার কাছে সারমিন কে ডেকে দিবা।
এর পর অরন্য সারমিন কে ফোন দিতে আসতে বলে।
সারমিন যখন আসে তখন লামিয়া সারমিন কে বলে সারমিন তুই বল আমি যা বলব তাই শুনবি সারমিন প্রমিস করে।
এর পর লামিয়া বলে সারমিন আমি যেইদিন তোর জন্মদিনে তোদের বাড়ি তে আমার বিয়ের পর গিয়েছিলাম তখন তোর ডাইরি পরি।
কিন্তু আমি জানতে পারি তুই অরন্য কে ভালোবাসিস কিন্তু দেখ আমি যখন তোর কাছ থেকে আগে অরন্য কে চেয়ে নিলাম।
”
”
“তবুও দেখ বিধাতা আমায় অরন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল।
আমি হয়ত বাঁচব না তোকে আমার সন্তান আর তোর ভালোবাসার মানুষ অরন্য কে দিয়ে গেলাম হয়ত তুই আজও আমায়
স্বার্থপর ভাব্ববি তবু তুই আমার শেষ কথা টা রাখিস।
এর পর ব্লেডিং এত পরিমান হয়ে গেছিলো আর লামিয়া বেঁচে রইল না ঘন্টা ২পরই মারা গেল।
রেখে গেল একটা ফুঁটফুঁটে মেয়ে।
আজকে সেই বাচ্চা মেয়েটার ৫ম জন্মদিন আর তার মায়ের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী।
আজকে সারমিন কেক না কেটে মিলাদ দিছে লামিয়ার নামে।
প্রতি বছর এমনই করে।
কারন বান্ধবী কে দেওয়া কথা রাখতে গিয়ে আজকে সে অরন্যের স্ত্রী আর নাদিয়ার মা।
এই মেয়েটার কথা চিন্তা করে নিজে কোন সন্তান নেইনি।
কারন যদি বান্ধবী কে কষ্ট দেওয়া হয়,,