অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ লাভ

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ লাভ
আমার বিয়ে হয়েছিল বাবা মার পছন্দে।বিয়ের আগে ছেলে কে দেখি নি। বিয়ের পর দেখলাম ছেলে ভীষণ কালো,বেশি স্মার্ট না,বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়,শুধুমাত্র কথাবার্তায় বুঝা যায় সে প্রচণ্ড মেধাবী। কিন্ত কথাও সে কম বলে,১০ প্রশ্নে তার একটা উত্তর। মাঝে মাঝে আমার কিছু কিছু প্রশ্নে সে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করত না! খুব মনোকষ্টে ভুগতে লাগলাম।
তার উপর আমি থাকতাম হলে আর ও মেস এ।ছোট একটা চাকরি করত।সপ্তাহ শেষ এ হলে দেখা করতে আসতে বললেও আসত না।পরে অবশ্য জেনেছিলাম এসবের কারণ। ও ভার্সিটি লাইফে একটা মেয়ে কে ভালবাসতো।কিন্তু মেয়েটা ওকে পাত্তা দেয় নি।কিন্তু ও ওকে এখনও ভুলতে পারেনি।আমি এসব জেনেও ওকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি কখনও।ক্রমেই আমাদের মধ্যে দুরত্ব তৈরি হচ্ছিল। প্রতিনিয়ত ওর অবহেলা পেয়ে আমিও ওর জন্য কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলাম।এমন অবস্থা দেখে আমার শ্বাশুড়ি আমাদের জোর করে ফ্লাটে তুলে দিলেন!
দুপ্রান্তের দুজন মানুষ থাকতে লাগলাম এক সাথে।প্রথম প্রথম দূরে সরে থাকতাম।কিন্তু ছেলেটার কম খাওয়া, এত পরিশ্রম করা দেখে কেমন মায়া পরে গেল।জোর করে ঢুকলাম ওর জীবন এ।সকালে তাড়াহুড়ার জন্য আগে না খেয়ে যেত।এখন আর যেতে দেই না! জোর করে খেতে বাধ্য করতাম। টিফিনে খাবার ভরে দিতাম।যাতে দুপুরে না খেয়ে থাকতে না পারে।এজন্য কত বকা শুনতে হত। তাও করতাম প্রতিনিয়ত।আমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে হওয়ায় কখনও প্রেম করিনি।
বান্ধবীরা যখন প্রেম করত তখন আমি একা থাকতাম।ওরা বলত প্রেম করতে কিন্তু আমি বলতাম আমার জামাই আমাকে সব রকম ভালবাসা দিবে দেখিস! কেন যে আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেন নি, বুঝিনা এখন ও।আমার তো এসব প্রাপ্য! আজকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালবাসা দিবস! কিন্তু জানি এটা আমার জন্য না। প্রতিদিন কার মত আজকেও ও রেডি হচ্ছিল আর আমি খাবার রেডি করছিলাম টেবিলে! টাই টা ঠিক করে দিয়ে চোখ থেকে কাজল টা আঙ্গুলে লাগিয়ে ওর কানের পিছনে হালকা করে লাগিয়ে দিলাম।যাতে নজর না লাগে। প্রতিদিন করি,আর ও প্রতিদিন রেগে যায়। আজকেও ধমকে উঠল,”এসব কি ছেলেমানুষি কর প্রতিদিন” চোখে পানি চলে আসল!কেন যেন আজকাল বড়ো অভিমান হয়!
আমাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেল। দরজাটা আটকে দিলাম। চোখ দিয়ে পানি পরছিল। একবারও কি ভালবাসা দিবসের জন্য উইশ করা গেল না ওর! মনে হল আজকের তারিখটাই জানে নাহ। মন খারাপ করে কফির মগ নিয়ে বসলাম। এই ছেলেটাই যদি তার প্রেমিকাকে বিয়ে করতো। তাহলে কি এমন করত? করত নাহ অবশ্যই, দুজন নিশ্চয়ই আজকের দিনে ঘুরতে যেত। সিনেমা দেখত। বাইরে খেতো। আজকে আমি তার প্রেমিকা না বলে আমার দিকে সে কোনো নজরই দেয় নাহ। যত ভাবলাম তত অভিমান হতে লাগল আমার। দুপুরে হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ।কখনো এই সময় কেও আসেনা। দরজা খুলে দিলাম। ওর অফিসের পিয়ন দাড়ানো। কিছু কি ফেলে গেল নাকি!
– কিছু লাগবে
– না ম্যাডাম। স্যার কিছু জিনিস পাঠিয়েছে
– অফিসের?
– নাহ, আপনার জন্য
অবাক হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিলাম। পিয়ন যাওয়ার পর প্যাকেটটা খুললাম। একটা গোলাপ, চকোলেট আর একটা চিঠি। চিঠিটা পড়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো।
আমি জানিনা কিভাবে তোমাকে ভালবাসার কথা বলব। যাকে একদিন ভালবাসার কথা বলেছিলাম সে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।সেদিন থেকে ভেবেছিলাম আর কাওকে কোনোদিন ভালবাসার কথা বলব নাহ। কিন্তু তুমি আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিলে।বিকেলে রেডি থেকো।সিনেমা দেখতে নিয়ে যাব।„ এতদিনে এসে যখন জানলাম মানুষটা আমাকে ভালোবাসে তখন একটা কথাই মনে হল ভালবাসা মানুষের জীবনে যেকোনো সময় এসে যেতে পারে।বিয়ের পরেও আসতে পারে।শুধু সত্যিকার ভালবাসাটা খুঁজে নিতে হবে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত