আজ আমার গার্লফ্রেন্ড নীলার সাথে একান্তই কাছাকাছি হয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।যেটাকে যুবক যুবতীরা রুম ডেট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। যা হয়েছে দুজনের সম্মতিক্রমে হয়েছে।কিন্তু আমার চোখে আজ আমিও একজন ধর্ষক।আজ আমি নীলার সাথে যা যা করেছি একজন ধর্ষক তো তাই করে,তফাৎ শুধু জোরপূর্বক। নীলাকে একটা রিকশায় তুলে দিয়ে পিচঢালা কংক্রিটের রাস্তাটায় হেটে চলছি বাসার দিকে। ভাবছি রাস্তাটার যদি প্রাণ থাকতো, তাহলে হয়তো আমায় গালি দিতো তুই পাপী, তোর কোনো অধিকার নেই আমার উপর দিয়ে হেটে চলার।আশেপাশের গাছগুলো হয়তো বকা দিচ্ছে, একটি আরেকটিকে বলছে দেখ একজন পাপী হেটে যাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন বাসায় এসে গিয়েছি খেয়াল নেই। বাসায় এসে নীলাকে ফোন দিলাম, বাসায় গিয়েছো?
~হুম হিমু।তুমি?
–হুম এসেছি।নীলা নিজেকে খুব পাপী মনে হচ্ছে। আর নিজের উপর একটা ঘৃণা কাজ করছে।
~আমি জানি হিমু।তুমি মানুষটা অন্যরকম। তোমার অনুভূতি কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ। তোমার মনমানসিকতা আকাশের ন্যায় বিশালতা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমার দোষ বেশি ছিলো।আমার উস্কানিমূলক কথাবার্তায় তুমি রাজি হয়েছো।একজন নারীর উস্কানিমূলক কথাবার্তায় একজন পুরুষ কতক্ষণ পুরুষত্বকে কন্ট্রোল করবে?
–শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করছো কেনো।আমারও অনেক কিছু করার ছিলো।আমি চাইলেই পারতাম তোমাকে বুঝাতে। আমাদের প্রেমময় গল্পটা হতে পারতো আরও সুন্দরতম।
~কেমন হতে পারতো?
–তুমি আমি যখন প্রথম কথা বলতাম দুজনেই কথা বলার মাঝে চুপ থাকতাম। আমরা কথা খোঁজে না পেলে নিরবতা অবলম্বন করতাম।কিন্তু এটাও একটা ভালো লাগা কাজ করতো। যেদিন আমরা প্রথম দেখা করেছিলাম সাভারের স্মৃতিসৌধে- তোমার মনে আছে? তুমি আমার পছন্দের রঙ নীল শাড়ি পড়ে এসেছিলে।
তুমি লজ্জায় আমার দিকে তাকাতে পারছিলে না।এই সুযোগে আমি প্রায় ২৫ মিনিট তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তোমার সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। এই ২৫ মিনিট আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দরতম মুহুর্ত ছিলো। ২৫ মিনিট পর তোমায় বলেছিলাম। নীলা কিছু বলবে না। তুমি নিচু হয়ে উত্তরে বলেছিলে আপনি বলুন। এই মুহুর্তটা ছিলো আমার কাছে সুন্দরতম। তারপর আমি বলেছিলাম চলো নীলা হাটি কিছুক্ষণ। তুমি আমার সাথে হাটছিলে আর নিচু হয়ে মুচকি হাসছিলে। এই মুহুর্তটা ছিলো আমার কাছে সুন্দরতম। তোমার ফুচকা পছন্দ। এর আগে অনেকবার বলেছিলে।আর বান্ধবীদের সাথে মাঝে মাঝে দুই প্লেইট ফুচকাও খেয়েছো। কিন্তু ওইদিন তুমি মাত্র একটা ফুচকা খেয়েছিলে।লজ্জায় খেতেই পারছিলে না। এই মুহুর্তটা ছিলো আমার কাছে সুন্দরতম।
তারপর যখন তোমাকে রিকশায় তুলে আমি হেটে যাচ্ছিলাম, তুমি বারবার পেছনে ফিরে দেখছিলে আমাকে যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো। সেই মুহুর্তটা ছিলো আমার কাছে সুন্দরতম মুহুর্ত। তারপর দ্বিতীয় বার যখন আমরা দেখা করি, আমি তোমার হাত ধরে হাটার আবদার রাখি।তুমি আমার আবদার না করো নি,কিন্তু তোমার হাত ধরে হাটার সময় অনুভব করছিলাম, তোমার হাত কাপছিলো। সেই মুহুর্তটা আমার কাছে সুন্দরতম মুহুর্ত ছিলো। কিন্তু আজ আমরা কি করলাম..! যতটুকু সুখ পেয়েছি তারথেকেও হাজার গুন বেশি কষ্ট পাচ্ছি এই মনে। নীলা কথাগুলো শুনে কান্না করে দিলো।সত্যিই মেয়েটা নিজেও বুঝতে পারছে ভালোবাসার প্রকৃত সুখ কিসে। আমি নীলাকে বললাম নীলা তোমাকে তো বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে তাই না। নীলা কান্না ময় কন্ঠে বললো
~হুম।গত সপ্তাহে এসেছিলো দেখতে।
–নীলা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি। তোমার ফ্যামিলি কি আমায় মেনে নিবে?
~আমার ফ্যামিলি আমার মতামতের বিরুদ্ধে কোনো ডিসিশন নিবে না আমার বিশ্বাস আছে।
আমার বাবা-মা ভালো একজন ছেলে চায় শুধু উনাদের মেয়ের জন্য।ছোটখাটো একটা চাকরি হলে আমার সুবিধা হবে উনাদের রাজি করাতে।
–নীলা আমার একটা চাকরি হয়েছিলো তোমাকে বলেছিলাম। কিন্তু প্রাইভেট ছিলো বলে আমি গুরুত্ব দেই নি।চাইলে আমি জয়েন করতে পারবো।তুমি কি বলো।
~আমি চাই না তুমি আমাকে রাজার রাজ মহলে রাজরানী করে রাখো।আমি চাই তুমি তোমার মনের রাজ্যে আমাকে রাণী করে রাখো।আমি আজই আমার পরিবারকে তোমার ব্যাপারে বলবো।
–আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে ছাদে বসে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। ঠিক এই মুহুর্তে নীলার ফোন।নীলা বলছে
~এই যে হিমু সাহেব কি করছেন?
–এইতো চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।
~একা একা উপভোগ করছো।আমার বুঝি হিংসে হয় না।
–পাশে তুমি থাকলে চাঁদের সৌন্দর্যটা আরও বেড়ে যেতো।খুব মিস করছি তোমায়।
~আর মিস করতে হবে না।আমি আমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলেছি।তুমি আগামীকাল তোমার ফ্যামিলি কে আমাদের বাসায় আসতে বলো।
–এই কথাটা শুনার পর মনে হচ্ছে আমার থেকে খুশি হয়তো এই মুহুর্তে আর কেহ নহে। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে আমার পরিবারকে জানাই। সমস্ত জল্পনা কল্পনা শেষে দুজনের পরিবারের সম্মতিক্রমে আমাদের বিয়েটা হয়েই গেলো। নীলা লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পড়ে আমার সামনে বসে আছে। নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কি স্বপ্ন দেখছি নীলা?তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি নিজের করে পাবো কখনো ভাবিনি।
নীলা আমাকে একটা চিমটি কেটে বললো-
~এবার তো বিশ্বাস হয়েছে হিমু সাহেব?
–হুম বেশ হয়েছে। আচ্ছা নীলা ভালোবাসার পূর্ণতা কিসে?
~ভালোবাসার পূর্নতা তোমাতে।
–মানে?
~মানে আমি আমার জীবনে একজন শুদ্ধ পুরুষ পেয়েছি। এটাই আমার ভালোবাসার পূর্ণতা।
–শুদ্ধতা আর রইলো কিসে..? ওইদিন যে রুম ডেট করলাম বিয়ের আগে।
~হিমু সাহেব ওইদিন যা হয়েছে আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি।আল্লাহ আমাদের মাফ করুন।
–হুম শুদ্ধতাকে ঘিরে বিশুদ্ধতার সৃষ্টি। আমিও আমার জীবনে একজন বিশুদ্ধ নারী পেয়েছি। যা কে ঘিরে স্বপ্নগুলো দিনের পর দিন আরও রঙিন।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা