তাজা স্মৃতি

তাজা স্মৃতি
মেয়েটির সাথে এই ৭বছর পর দেখা হলো। আমি গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে অন্তরাকে দেখছি।হালকা বাদামী রঙের শাড়ি পরে রাস্তার ফুটপাত এ দাড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে।খবর পেলাম অন্তরার বর এর হার্ট ব্লক হবার পর থেকে তেমন কাজ করতে পারেনা। ওর সাথে আমার ৫বছরের সম্পর্কে আমার মনে নেই ও আমাকে কখনো আঘাত করেছে।বেকার-বাউন্ডুলে এক ছেলেকে ভালোবাসা কোন সহজ কাজ কি! এটা -সেটা উপহার দিয়ে সবসময় মন ভালো করার চেষ্টা করতো মেয়েটা।বিনিময়ে আমি ওকে একটা ফুল ও দিতে পারিনি।
মনে আছে প্রায় ৭-৮দিন রাতে না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে ওকে একটা পায়েল কিনে দিয়েছিলাম।এক পোষাক পরে ওর কাছে যেতে যেতে কি লজ্জাতেই না পরতাম।মাঝে মাঝে মেস এর ছোট ভাইদের শার্ট পরে যেতাম আর গিয়ে অন্তরাকে বলতাম এটা আমার জামা না। ও তখন রেখে বলতো তোমার না তাহলে পরেছো কেন?তুমি যেমন তেমন ই ভালোবাসি।আর পরলেও আমাকে বলবেনা কারন আমার খারাপ লাগে। মেয়েটা নিজেকে ছোট করলেও আমাকে ছোট করতোনা কখনো।নিজে চুড়ি কিনে বান্ধবীদের কাছে বলতো আমি দিয়েছি।বান্ধবী মহল এ আবার এসব নিয়ে খুব গননাক্রম চলতে থাকে।অন্তরা কখনো মুখ শুকনো করে বলেনি না রায়হান আমায় কিছু দেয়না।
কিভাবে পারে,এতো নিখুঁত অভিনয় করে নিজের বুকের ঘা লুকিয়ে রাখতে! এরপর হুট করেই ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ওকে আমি ই বলি বিয়ে করে নেও।কারন ওর ভরণ পোষণ এর দায়িত্ব নেয়া যে তখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়! বিয়ে করে নিলো..তারপর থেকে আমার সাথে একবার ও যোগাযোগ করেনি অন্তরা।আজ আমার সব আছে শুধু নেই অন্তরা। গাড়ি থেকে নেমে শার্ট এর কলারটা এলোমেলো করে অন্তরার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। মেয়েটা আমায় দেখে না চেনার ভান করেনি। মুখ মলিন করে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো? আমি শুধু ওর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কত অযত্নের সাক্ষী এ মুখ!কাজল নেই,নেই টিপ আর শখের চুড়ি ও নেই হাতে। আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উত্তর দিলাম,নিজের যত্ন নেও না কেন?
অন্তরা: আমি কি আর আগের মতন বাচ্চা আছি?আমি যে এখন বাচ্চার মা।
আমি: তো বর কেমন আছে?
অন্তরা: ও বিজনেস এর কাজে বাইরে গেছে। আমি অবাক হয়ে মেয়েটির ধৈর্য দেখছি।আজ ও সে তার বরকে ছোট করেনি আমার কাছে।ঠিক আগের মতন নিখুঁত অভিনয় দিয়ে বরকে হাজার প্রশ্নের অধিনে রাখছে।মেয়েরা বুঝি এমন ই হয়।
অন্তরা: তুমি কি করো এখন? আমি হেসে বললাম,এখনো বেকার।কাজ পাইনা। অন্তরা হাসি দিল।
আমি: কি বেপার হাসছো যে?
অন্তরা: এমনেই।যাই এখন। শার্ট এর কলার ঠিক করে নেও।
আমি: আর বলোনা মেস এর ভাইয়ের শার্ট। এই বলে কলার ঠিক করতে করতে আসতে নিলাম। পিছন থেকে অন্তরা বলে উঠলো লাল গাড়ি আমার পছন্দের ছিল।গাড়ি টা নিশ্চই মেসেই ভাইয়ের না? আমি ওর দিকে হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছি।
অন্তরা: তুমি ঠিক আগের মতন ই আছো মিথ্যে বলরে গেলে গলা বসে যায়। গাড়ি -বাড়ি করেছো বিয়ে করোনি?
আমি : না।
অন্তরা: করে নেও।আমি এখন আসি। আমি অন্তরাকে ডেকে বললাম যার পছন্দে এ গাড়ি কেনা সে তো আজ রাস্তা হেটে পাড় হয়। আমি কি করে অন্যকে গাড়ি তে ওঠাই?
অন্তরা আমার দিকে এক রাশ বিষণ্ণতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।আজ আর ওর চোখ ছল ছল করছেনা বরং ও আমার কাছে ক্রমানয়ে ঝাপ্সা হয়ে আসছে। অন্তরা চলে গেল।আমি একবার সাহস করেও বলতে পারলাম না অন্তরা এ সমাজ-এ দুনিয়া ছেড়ে আমার হাত ধরতে পারবেনা? আমি পারিনি জোর করে হাত চেপে ধরে বলতে আমি আর থাকতে পারছিনা তোমার স্মৃতি নিয়ে। এ কড়া সমাজের কাছে বার বার হেরে যাবার নাম ই ভালোবাসা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত