বিকালের দিকে আমার স্ত্রী শ্রাবণীর সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি পাশের রুম থেকে একটা কোলবালিশ এনে মাথায় তুলে আছাড় মারলাম। শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
– আরে, এমন করছো কেন? আমি রেগে গিয়ে বললাম,
–কি আর করবো, তোমায় তো মারতে পারি না কারণ প্রথমত তুমি মেয়ে মানুষ আর দ্বিতীয়ত তোমার বাবা পুলিশ৷ তোমার গায়ে হাত তুললে তোমার বাবা আমাকে চৌদ্দশিকের ভাত খাওয়াবে। তাই কোলবালিশকে মেরে মনের জ্বালা মিটাচ্ছি আমার কথা শুনে শ্রাবণী বললো,
– আজ জ্বালা মিটানোর জন্য কোলবালিশ আছাড় মারলে কাল তো আমায় মাথায় তুলে আছাড় মারবে আমি মুচকি হেসে বললাম,
— আরে না, তোমার মত মুটকিকে কখনোই মাথার উপর তুলা সম্ভব না শ্রাবণী আমার কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলো। ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছে বাপের বাড়ি চলে যাবে। আমার সাথে আর সংসার করবে না। কয়েকদিন পর আমাকে নাকি ডিভোর্স লেটার পাঠাবে। রুম থেকে বের হবার সময় আমায় বললো,
– আমি তো এখন পুরাতন হয়ে গেছি তাই আমাকে মুটকি লাগে। কিন্তু ভার্সিটি লাইফে এই মুটকির পেছন পেছন অনাথ কুকুরের বাচ্চার মত ঘুরতে
— তুমি আমাকে কুকুর বললে?
– তুমি কুকুরের চেয়েও নিচু স্তরের শ্রাবণী এক রিকশা দিয়ে যাচ্ছে আর আমি পিছন পিছন অন্য একটা রিকশা দিয়ে ওকে ফলো করছি। শ্বশুরবাড়ি সামনে আসলে আমি রিকশা থেকে নেমে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
— তোমার পিছন পিছন এসেছি বলে এটা ভেবো না আমি তোমাকে নিতে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো রাস্তায় তোমার কোন সমস্যা হলে তোমার বাপ আমাকে জেলে ঢুকাতো। তাই তোমার সাথে সাথে এসেছি শ্রাবণী রেগে গিয়ে বললো,
– তোমার কি ধারণা তোমার মতো নিচু চরিত্রের মানুষ আমাকে নিতে চাইলেই আমি যাবো? যে পুরুষ স্ত্রীকে সম্মান না দিয়ে মুটকি বলে সেই পুরুষের সাথে সংসার করার কোন মানেই হয় না বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আফজাল সাহেব উনার স্ত্রী রিনাকে বললো,
~ওদের ভবিষ্যৎ কি হবে বলো তো? ওরা দুইজন দুইজনকে ছাড়া থাকতেও পারে না আর দুইজন একসাথেও থাকতে পারে না আফজাল সাহেবের স্ত্রী রিনা মুচকি হেসে বললো,
~ওরা আর পাল্টাবে না।ওরা এমনি থাকবে আফজাল সাহেব তখন বললো,
~যাও দরজা খুলো গিয়ে। দেখো গিয়ে আজ আবার নতুন কি নাটক নিয়ে এসেছে । আমি গেলে তো আমাকে দেখে জামাই দৌড়ে পালায়। আমি বুঝি না এই ছেলে আমাকে দেখে এত ভয় পায় কেন? কলিংবেলের আওয়াজ শুনে শ্বাশুড়ি দরজা খুললো। শ্বাশুড়িকে দেখেই শ্রাবণী বললো,
-আমি কিন্তু আর ওর সাথে যাচ্ছি না। ও আজ আমায় মুটকি বলছে আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
— মা, আপনার মেয়ে আমায় অনাথ কুকুরের বাচ্চা বলছে। আপনাদের মেয়ে আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম এখন আমি যাই শ্বাশুড়ি তখন বললো,
~এসেছো যখন রাতের খাবারটা খেয়ে যাও মা, আমি কিন্তু খেতে আসি নি। তারপরও আপনি যেহেতু বলছেন শুধু আপনার কথা রাখার জন্য হলেও আমি রাতে খেয়ে যাবো পাশ থেকে শ্রাবণী মুখ বাঁকিয়ে বললো,
– কুকুর কি আর এমনি এমনি বলেছি? কার্যকলাপে বলেছি। এতকিছুর পরেও উনি রাতে খেয়ে যাবেন
এই অপমান আর সহ্য করা যায় না। আমি রাগে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর যায় হোক শ্রাবণীকে আর বাসায় আনবো না। ওর কথা মনে করারও চেষ্টা করবো না।আজ থেকে আমি ওকে ছাড়াই একা শান্তিতে থাকবো নিজের বাসায় এসে পরলাম। কিন্তু বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই রাগ কমতে লাগলো আর শ্রাবণীকে প্রচন্ড মিস করতে শুরু করলাম। ফ্রিজ থেকে যখন ঠান্ডা পানির বোতলটা বের করলাম তখন মনে পরলো, এই ফ্রিজ কিনার সময় আমাদের কত ঝগড়া হলো। আমি বলেছি কালো রঙের ফ্রিজ নিবো আর ও বলে লাল রঙের নিবে। কিছু ভালো লাগছিলো না দেখে টিভিটা যখন অন করি তখনও শ্রাবণীর কথা মনে পরলো। চাকরির বেতন পেয়ে আমি ৪২ ইঞ্চি এই টিভিটা কিনেছিলাম বলে শ্রাবণী খুব রাগ করেছিলো। ও বলেছিলো, “আমার ২১ ইঞ্চি হলেই চলতো শুধু শুধু এত টাকা কেন নষ্ট করলে।”
নিজের রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সামনে দাঁড়াতেই শ্রাবণীর কথা মনে হলো। প্রতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম শ্রাবণী এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে খুব ক্লান্ত লাগছিলো দেখে বিছানায় শুয়ে পরি কিন্তু পাশের বালিশটা দেখে শ্রাবণীর কথা মনে পরে গেলো। ও সব সময় এই বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতো বিছানা থেকে উঠে বসলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই সব আমি কি ভাবছি। শ্রাবণীর কথা আর ভাববো না। ও একটা বদরাগী মেয়ে। নিজের স্বামীকে কুকুর বলেছে। চোখ মুখে পানি দেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যখন ঢুকলাম তখন মনে পরলো, গোসলের সময় শ্রাবণী যতবার আমাকে তোয়ালেটা দিতে এসেছে ততবারি আমি শ্রাবণীকে টেনে ওয়াশরুমের ভিতর নিয়ে এসেছি। তারপর ওর গোলাপি ঠোঁ এমন সময় দেয়াল ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ হতে লাগলো। রাত ১২টা বাজে। এই দেয়াল ঘড়িটাও শ্রাবণী কিনে এনেছে না আর সহ্য করতে পারছি না। শ্রাবণীকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকা সম্ভব না। এই বাসার প্রতিটা কোণায় প্রতিটা আসবাবপত্রে শ্রাবণীর অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে তরকারির ঘ্রাণ পেয়ে আফজাল সাহেব আর উনার স্ত্রী রিনা রান্নাঘরে গেলেন। গিয়ে দেখেন উনাদের মেয়ে রান্না করছে। আফজাল সাহেব অবাক হয়ে মেয়েকে বললো,
~এত রাতে মা কার জন্য রান্না করিস? মেয়ে মুচকি হেসে বললো,
-তোমাদের জামাইয়ের জন্য। রাতে না খেয়ে থাকলে ও আবার অসুস্থ হয়ে যায় আফজাল সাহেব বলবো,
~জামাই তো রাগ করে চলে গেছে মেয়ে মুচকি হেসে বললো,
– গিয়ে দেখো হয়তো গেইটের বাইরে ঘুরঘুর করছে। তুমি ডেকে বাসায় নিয়ে আসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি
বেলকনিতে এসে আফজাল সাহেব দেখে পিয়াস বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আফজাল সাহেব উনার স্ত্রীকে বললেন,
~জামাইকে ডেকে বলো উপরে আসতে। আমি ডাকলে ভয়ে আবার আসবে না বাসায় ঢুকে দেখি ডাইনিং টেবিলে আমার পছন্দের সব খাবার। নিশ্চয়ই শ্রাবণী রান্না করেছে। এই মেয়েটা আমায় অসম্ভব রকম ভালোবাসে। আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
— মা, আমি কিন্তু আপনার মেয়েকে নিতে আসি নি। খাবার রেখে রাগ করে চলে গিয়েছিলাম বলে আবার এসেছি
আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ি হাসতে লাগলো আর আড়চোখে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণীও মিটিমিটি হাসছে। এই সেই হাসি, যে হাসি দেখে আমি প্রথম শ্রাবণীর প্রেমে পরেছিলাম
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা