আমার বাসর রাতে আমি সবথেকে বেশি অবাক হই যখন আমার নতুন বর ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করেই আমাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি। প্রতিত্তোরে আমি কোনো জবাব দিতে পারি নাই, কেনো জানি শুধু অবাক হয়ে দেখছিলাম তাকে।
বসে আছি কেমন অস্বস্তি লাগছিল, উঠে দাঁড়ালাম বিছানা ছেড়ে ওনার পা ছুঁয়ে সালাম করার জন্য মা-চাচীরা শিখিয়ে দিয়েছেন বাসর রাতে বর কে সালাম করতে হয় এটাই নিয়ম। কিন্তু মাথা নিচু করতেই উনি সরে দাঁড়ালেন আর বললেন এসব কুসংস্কার আর ইসলামেও পা ছুঁয়ে সালাম করার বিধান নেই। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। সেই পনেরো ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ভারী শাড়ী ও গহনা পড়ে ছিলেন, আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন এখন। আমি আচ্ছা ঠিক আছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ি আর ভাবছি মানুষটা এমন কেন, তিনি কি ভালো নাকি অন্যরকম মানুষ। ওনার কথা আচরণে তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,বাসর রাতের অনেক গল্প শুনেছি বড় আপু ও বান্ধবীদের কাছে। কিন্তু আমার বাসর রাত তো সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখছি। তাহলে কি উনি আমাকে পছন্দ করেন নি কিংবা অন্য কোনো মেয়ের সাথে ওয়াদাবদ্ধ যার কারণে কথা বলছেন না আমার সাথে। শুয়ে শুয়ে এসব অনেক চিন্তা ভাবনা আসছে আমার মাথায়।
হঠাৎ তিনি বিছানার এক কোনে বসে ডাক দিলেন এই যে জেগে আছেন কি আপনি। আমি উঠে বসলাম, জ্বী বলুন। দেখি আমার হাতে একটা খাতা আর কলম ধরিয়ে দিলেন, ভয় পেলাম কি লিখতে বলবে এখানে আমার এই বিশ বছরের জীবন কাহিনি নয় তো। কি লিখবো এতে আমি প্রশ্ন করলাম? আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের লিস্ট তৈরি করুন ঘুমাতে হবে না এখন কেবল রাত একটা বাজে। সকল বিষয়ে লিখবেন যা যা এখন মনে আসবে সব লিখে আমায় দিন। আমিও লিখে ফেললাম যা কিছু মনে হচ্ছিল সব, লিখে ওনার দিকে খাতাটা বাড়ায় বললাম আপনিও লিখেন আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের জিনিস গুলো কি কি। না আমি লিখবো না, কারণ আমি তো আমার নিজের বাড়িতেই আছি। আপনি চলে আসছেন আমার সাথে নিজেকে জড়িয়ে আপন জন্মস্থান রক্তের বন্ধন ত্যাগ করে।
তাই আজ থেকে আপনার যা পছন্দ তা আমারও পছন্দ অনুরূপ ভাবে অপছন্দ গুলো আমি নিজের করে নিবো। চোখের কোণে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসছে আমার, মানুষটা তাহলে খারাপ হবে না মন বলছে আমার।
আর শুনেন আমরা এখন বন্ধু/ বান্ধবীর মতো থাকবো, সবকিছু শেয়ার করবেন আমার সাথে ভালোমন্দ, আগে ভালোভাবে বুঝুন আমায় তার পর স্বামী স্ত্রী র সম্পর্কে যাওয়া যাবে। এতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে এখনো আছে নাকি, ওনার জন্য মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হলো আমার। বেশ প্রশান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি নিজের বাসর রাতে। সকালে উঠে বেশ ফুরফুরে লাগছে নিজের আর অজানা এক সুখ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমায়।
ঘরে খুঁজছিলাম ওনাকে কিন্তু পেলাম না, ফ্রেশ হয়ে নিজেই ঘর থেকে বাইরে চলে এলাম বাড়ির বাকি সবাই কি করছে তা দেখতে। কিন্তু আমার মন তো শুধু ওনাকেই খুঁজছে, সবাই নতুন বউ নতুন বউ বলে ঘিরে রাখলো আমায়।
এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন খুব তাড়াতাড়ি মন দেয়া-নেয়া হয়ে গেছে আমাদের। ওনার পছন্দের তালিকা জানতে পারিনি আমি অনেক চেষ্টা করেও, বাড়ির অন্য কারো থেকেও। কড়া নিষেধ ছিলো ওনার আমি যেন তা জানতে না পারি কিন্তু আমাকে তো জানতেই হবে কারণ ভালোবাসি আমি ওনাকে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ননদ দুটো সবাই ওনার মতোই সাদা মনের মানুষ আর কেয়ারিং। পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ওনার পূর্ণ সমর্থন পাই। এখন সময় অসময়ে আমার ভেজা চুলের স্মেইল নিতে ব্যস্ত তিনি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা