বড় আপুর ভালোবাসা

বড় আপুর ভালোবাসা
রাগের মাথায় যখন আমি আপুর গালে থাপ্পড় দিলাম তখনও আমি আপুর ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। বেশ কয়েকদিন ধরেই আপু আমাকে বলে আসছে নিশিতার সাথে সম্পর্ক রাখতে।নানান বাহানা,কৌশলে আমাকে বুঝাচ্ছে ছাত্র অবস্থায় আমার এই প্রেমের পরিণতি নেই। সেদিন বিকেলের দিকে নিশিতার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম, এমন সময় আপু ছাঁদে আসে।আপুকে দেখে আমি কল কেটে দিলেও আপু আমাকে জিজ্ঞেস করে-“শুনলাম তুই নাকি তোর ক্লাসের এক মেয়ের সাথে প্রেম করিস?” আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে মাথা নাড়ালাম। আপু বললো-“কিন্তু তুই তো এখনো অনেক ছোট,সবে মাত্র এসএসসি দিবি।মাস খানেক পরই তোর এসএসসি পরীক্ষা।এখন এই সময়ে এসব হারাম প্রেমের মধ্যে থাকলে তো তুই পরীক্ষায় ফেইল করবি।”
-“না আপু,নিশিতা অনেক ভালো মেয়ে।এক সময় আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিলো।আমার পড়ালেখায় অনেক সাহায্য করতো।দুজনের ভালো বন্ধুত্ব থেকেই আমাদের প্রেম ভালোবাসার সৃষ্টি।”
-“হুম বুঝলাম।কিন্তু এখন তো তোর প্রেম করার বয়স নয়।এখন তুই ভালোভাবে পড়ালেখা করে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে অগ্রসর হবি।”
-“সেটা আমিও জানি আপু।কিন্তু নিশিতা অনেক ভালো মেয়ে,ও আমার পাশে থাকলে আমার পক্ষে ক্যারিয়ার গড়া অনেক সহজ হবে!”
-“ওই মেয়ে কিভাবে ভালো হয়?যেখানে ইসলাম নারীকে বলেছে “রাবিয়াতুল বাইত” অর্থাৎ ‘ঘরের রাণী’।কিন্তু সেখানে ওই মেয়ে ঘরে না থেকে তোর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেছে।সেখানে কিভাবে ওই মেয়ে ভালো হয়।আমি শুধু মেয়েটার দোষ বলছি না, এখানে তোরও সমান দোষ রয়েছে।এখন ওসব বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা কর,তারপর আমরা সবাই মিলে পছন্দ করে তোর জন্য একটা লাল টকুটুকে বউ নিয়ে আসবো।”
-“নারী ঘরের রাণী বলে কি সে বাইরে বের হতে পারবে না?কারও সাথে প্রেম ভালোবাসা করতে পারবে না?”
-“পারবে,অবশ্যই পারবে।নারী পর্দা সহিত ঘর থেকে বের হতে পারবে।প্রেম ভালোবাসাও করতে পারবে কিন্তু সেটা তার স্বামীর সাথে।কিন্তু তুই তো ওর স্বামী না।তুই ওই মেয়ের প্রেমিক।যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।”
-“দেখো আপু এত ভাবনা চিন্তা করলে জীবন চলবে না।তুমি নিজে সারাক্ষণ ঘরবন্ধি হয়ে থাকো বলে অন্য মেয়েরাও ঘর বন্ধি হয়ে থাকবে না।তুমি প্রেম করো বলে কি অন্য মেয়েরাও কি প্রেম করবে না নাকি?”
-“আমি কি এটা বলেছি তোকে?”যে যার ইচ্ছা মতো চলতে পারে,প্রেম করতে পারে।আমি তোর ভালোর জন্যই এসব বললাম।”
-“তাহলে আমাকেও আমার মতন চলতে দাও,প্রেম করতে দাও।নিজে তো কখনো প্রেম করোনি তাই প্রেমের মর্ম বুঝো না।”
-“এটা হারাম জেনে আমি কিভাবে প্রেম করি তুই বল।তুই আমার ছোটভাই, তোকে হারাম থেকে বাঁচানো আমার কর্তব্য। তাছাড়া এই সমাজে আমাদের পরিবারের একটা মান সম্মান আছে। তাছাড়া বাবাকে এলাকার লোকজন সবাই যথেষ্ট সম্মান করে।তুই যদি এসব করে বেড়াস আর তখন যদি লোক জানাজানি হয় তাহলে বাবার আর আমাদের পরিবারের মান সম্মান কোথায় যাবে ভেবে দেখেছিস?”
-“সব ভেবে চিন্তেই আমি নিশিতার সাথে রিলেশন করেছি।তোমাকে আর এসব নিয়ে আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না…বলেই আমি ছাঁদ থেকে নিচে নামতে হাটা শুরু করলাম।” এমন সময় আপু এসে পিছন থেকে আমার হাত টান দিয়ে বললো-” নিলয়,একটু বুঝার চেষ্টা কর ভাই।প্লিজ তুই এমন করিস না।ওই মেয়ের থেকে অনেক ভালো মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিবো।তবুও তুই আর ওই মেয়ের সাথে হারাম সম্পর্ক রাখিস না প্লিজ।” “আপুর এসব কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই রাগের মাত্রা বেড়ে গেলো।যার ফলসরুপ রাগের মাথায় আপুকে উল্টো ঘুরে থাপ্পড় মেড়ে ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসলাম।ছাঁদ থেকে নামার আগে শুধু এতুটুকুই দেখতে পেলাম আপুর দুচোখ পানিতে ছলছল করছে।” “তারপর থেকে আপুর সাথে আমার ভালোভাবে তেমন কথা হয়নি। এরই মধ্যে আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। আমার পরীক্ষার পরই আপুর বিয়ে।
মাস খানেক পর শুরু হলো আমার এসএসসি পরীক্ষা।প্রস্তুতি ভালো ছিলো বলে ভালোভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।
লাস্ট পরীক্ষার দিন ইচ্ছে ছিলো নিশিতাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে বেড়াবো। কিন্তু তা আর হলো না,নিশিতার নাকি পরীক্ষার সুবাধে অন্য স্কুলের একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে।তাই সেদিন নিশিতা ছেলেটার সাথে এলাকার সবচেয়ে বড় পার্কে বেড়াতে যায়।আমিও অপেক্ষায় থাকি নিশিতার বাসার সামনে। বিকেল শেষে যখন নিশিতার মুখোমুখি হই তখন চমকে যায় নিশিতা।” “নিশিতাকে অপরিচিত ছেলের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই নিশিতা অকপটে মুখের উপর বলে দেয়, সে নাকি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসে।আমার প্রতি এখন আর তার কোনো ফিলিংস’ই কাজ করেনা।যার ফলসরুপ সেদিনই নিশিতা আমার সাথে ব্রেকাপ করে দেয়।” “আপুর বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। কিন্তু আমার মনের মধ্যে আনন্দ নেই।শুনেছি বাড়িতে বিয়ে হলে নাকি মনের মধ্যে অন্যরকম একটি আনন্দ আমেজ কাজ করে কিন্তু নিশিতার সাথে ব্রেকাপের ফলে আমার মনে নেই সেই আনন্দ।”
“বরাবর মনে হচ্ছিল আপুর সেদিনের বলা কথাগুলি।সেদিন যদি আপুর বলা কথাগুলি মানতাম তাহলে আজকে আমার এই নিরানন্দ দিন দেখতে হতো না।রাগের মাথায় আপুর গালে চড় মাড়াতে এখন নিজের কাছে নিজেকে বিবেকহীন মনে হচ্ছে।নিজেকে মনে হচ্ছে নির্লজ্জ। আপু যখন জানতে পারবে যার কারনে সেদিন আপুর সাথে বেয়াদবের মতন কথা বলে তাকে থাপ্পড় পর্যন্ত মেরেছি কিন্তু এখন তার সাথেই আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে।তখন কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো আপুর সামনে?নিজের প্রতি লজ্জা আর ঘৃণায় অজান্তেই চোখের লোনা জল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।” “আমার নিরানন্দের মধ্য দিয়েই আপুর বিয়ে হয়ে গেলো।লজ্জায় আমি বিয়ের দিন আপুর সামনে যাইনি।বিদায়ের আগে আপু অনেক কান্না করছিলো। শুনেছি আমাকেও খুঁজেছিল আপু শুধুমাত্র এক নজর আমাকে দেখার জন্য। কিন্তু আমি যে তখন সবার থেকে আলাদা হয়ে বদ্ধ ঘরে মুখ লুকিয়ে আপুর জন্য কান্না করছিলাম।”
“সপ্তাহ খানেক পর আপু যখন আমাদের বাসায় আসলো তখন আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই।নিশিতার সাথে ব্রেকাপের কথা বলি।আপুর সাথে বেয়াদবি আর থাপ্পড় মারার জন্য অনুতপ্ত হয়ে যখন ক্ষমা চাই।তখন আপু আমাকে দুহাতে আগলে ধরে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে-“ধুর পাগল,তুই এসব কি নিয়ে পরে আছিস।ওগুলা তো অনেকদিন আগেই চলে গেছে।ওগুলা কি আর আমি এখন মনে রেখেছি নাকি।তুই হইলি ছোট মানুষ, ছোটরা এমন করবেই তাই বলে কি আমি রাগ করে থাকবো তোর উপর।যা হবার হয়ে গেছে,এখন ওগুলা বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনা কর।তারপর আমি নিজে দেখে তোর জন্য লালটুকুটুকে একখান বউ নিয়ে আসবো। যে তোর উল্টাপাল্টা কিছু দেখলেই তোকে ঝাঁড়ুপেটা করবে,বলেই আপু হেঁসে দিলো।” “আপু কথা শুনে আমিও তখন শত কান্নার মাঝে হেঁসে দেই।
আপু যখন দুইদিন আমাদের বাড়িতে ছিলো তখন মনে হয়েছিলো আমার কাছে সব ছিলো। কিন্তু দুইদিন পর যখন শুনতে পেলাম আপু দুলাভাই এর সাথে চলে যাবে,তাও আবার আমেরিকা। তখন আপুকে জড়িয়ে ধরে আবারও কান্না করে দেই। অকপটে মুখ খুলে বলে ফেলি-“আমি এখন তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না আপু,তুই আমাকে তোর সাথে নিয়ে চল ।” “আপুও তখন এক হাতে চোখের পানি মুছে দুলাভাই এর দিকে তাকায়। দুলাভাই মাথা কাত করে সম্মতি দিলে পড়ের সপ্তাহেই আমাদের ফ্লাইট রেডি হয়।” “এখন বিমানে বসে আছি আপুর পাশে।দুলাভাই বসেছে পেছনের সিটে। আপুর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।হাত ছাড়লেই মনে হয় আপু আমাকে ছেড়ে চলে যাবে দূর দেশে।যেখানে আমি আর আপুকে কোনো দিন খুঁজ পাবো না। আপু আমার দিকে তাকিয়ে হেঁসে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।
আমি মাথা রাখলাম আপুর কাধে। একসময় ইচ্ছে ছিলো বিদেশ ভ্রমন করার।বিমানে চড়ে শুন্য আকাশে ভেসে বেড়াবার।আজ যাচ্ছি বিদেশের উদ্দেশ্যে,বিমানে চড়ে ভেসে বেড়াচ্ছি শুন্য আকাশে।কিন্তু এত কিছুর মাঝেও আমি আনন্দ তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি না। আপু আমার পাশে আছে,আপুর সাথে কিছুদিন থাকতে পারবো।এখন আপুর কাধে মাথা রেখে বসে আছি এতেই এখন পরম তৃপ্তি পাচ্ছি।ভালোবাসার তৃপ্তি,কিছু বকাঝকা আর শাসনের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলা ভালোবাসার তৃপ্তি। বিমান শুন্য আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে আর আমিও ভেসে বেড়াচ্ছি আপুর অতল শাসন আর ভালোবাসার গহব্বরে।”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত