অদ্ভুত ভালোবাসা

অদ্ভুত ভালোবাসা
২ জনকে খুন করে সব কিছু লুট করে নিয়েছি। ৩ নাম্বার শিকারের জন্য আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে যখন সামনে ছুটছি তখন সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একটা নাম, রিনা খান আসলে আমার গার্লফ্রেন্ড শ্রাবণীরর নাম্বারটা আমি বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী রিনা খান লিখে সেভ করে রেখেছি। আর আমি এতক্ষণ পাবজি গেম খেলছিলাম। আমি ফোনটা রিভিস করে মিষ্টি হেসে বললাম,
–আমার ময়না পাখিটা কি করে? আমার কথা শুনে একরাশ বিরক্ত নিয়ে শ্রাবণী বললো,
-তুমি এখন কোথায়? আমি আবারও হেসে বললাম,
— আমি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গায় বসে আছি.. শ্রাবণী এইবার রেগে গিয়ে বললো,
– তোমার তো অভ্যাস খারাপ। এই গরমে নিশ্চয়ই তুমি কোন শোরুমে ঢুকে বসে আছো তাই না? আমি বললাম,
— আরে না, আমি বাথরুমে কমোডের উপর বসে আছি এইকথাটা বলে আমি আমার কান থেকে ফোনটা ২ মিনিটের জন্য নামিয়ে রাখলাম। কারণ এই দুই মিনিট শ্রাবণী আমায় খুব অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করবে। এই মুহূর্তে এইসব গালি শুনার কোন মানেই হয় না। মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি এত সুন্দর একটা মেয়ে কি করে এমন অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শিখলো । ঠিক ২মিনিট পর আমি ফোনটা কানের কাছে আনলাম। শ্রাবণী তখন বলছে,
-পিয়াস, আজ কিন্তু আমায় দেখতে এসেছিলো আমি তখন কান্নার সুরে সুরে বললাম,
— মাইয়া ও মাইয়ারে তুই অপরাধী রে আমার যত্নে গড়া ভালোবাসা দে ফিরাইয়া দে শ্রাবণী রেগে গিয়ে বললো,
– ফাইজলামি বন্ধ করে কিছু একটা করার চেষ্টা করো। তা না হলে আমি কিন্তু বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো এইবার আমি জোরে জোরে কান্নার সুরে বললাম,
–প্রেমের সমাধি ভেঙে মনের শিকল ছিড়ে পাখি যায় উড়ে যায় শ্রাবণী রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললো,
– কুত্তা তুই জীবনে আমায় ফোন দিবি না। আজকের পর তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ আমি তখন বললাম,
— পরাণ যায় জ্বলিয়ারে পরাণ যা জ্বলিয়ারে গানটা আর গাইতে পারলাম না তার আগেই শ্রাবণী রেগে গিয়ে ফোনটা রেখে দিয়েছে এই জগতে যে মেয়েগুলো নম্র ভদ্র। বিড়াল যেভাবে হাটে সেইভাবে নিঃশব্দে চলাচল করে। চলাচলের সময় ডানদিক বামদিক তাকিয়ে দেখে না সেইসব মেয়েগুলোই কয়েকদিন পর বয়ফ্রেন্ডে বুকের উপর হামাগুড়ি দেয়। আর যে মেয়েগুলো বদরাগী, চলাচল করে পুরুষদের মত। কথায় কথায় গালিগালাজ করে সেইসব মেয়েগুলো আর যায় হোক ভিতর থেকে একদম সলিড শ্রাবণী হলো দ্বিতীয় টাইপের মেয়ে। একবার দুইজনে বৃষ্টিতে ভিজে ওর ভেজা শরীরটা দেখে বলেছিলাম,
— জানো, তোমায় এই অবস্থায় দেখে আমার মনের ভিতর একটা অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে। শ্রাবণী আমার কথা শুনে আমার দুই পায়ের মাঝখানে এমন জোরে লাথি মেরেছিলো আমি ৩ দিন পর্যন্ত ভালো করে হাটতে পারি নি পার্কে ২ ঘন্টা ধরে শ্রাবণী বসে আছে। আমি ২ ঘন্টা দেরি করে এসেছি ওর সাথে দেখা করতে। ভেবেছিলাম বরাবরের মত আজকেও শ্রাবণী আমায় কথা শুনাবে কিন্তু আজ শ্রাবণী আমায় কিছুই বললো না। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম শ্রাবণী কান্না করছে। আমি যখন সরি বলতে যাবো তখন শ্রাবণী বললো,
–পিয়াস, তোমার সাথে আমার ৩ বছরের রিলেশন। এই ৩ বছরে তুমি ৩মিনিটের জন্য একটু সিরিয়াস হও নি। আমি একা একটা মেয়ে ২ ঘন্টা ধরে বসে আছি অথচ সেদিকে তোমার কোন খেয়াল নেই। তোমার মত এমন একটা ননসেন্সের সাথে আমি সারাজীবন সংসার করতে পারবো না। তুমি আমায় ভুলে যাও আমি শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
–তোরে ভুলে যাবার লাগি আমি ভালোবাসি নি সব ভেঙে যাবে এইভাবে ভাবতে পারি নি শ্রাবণী রাগে নিজের গালে নিজে থাপ্পড় মেরে বললো,
-আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ভুল তোর মত একটা বান্দরের সাথে প্রেম করা। আমি এখন চলে যাচ্ছি। তুই মোটেও আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবি না শ্রাবণী চলে যাচ্ছে আর আমি পিছন থেকে গান গাইছি,
— ও পাষাণী বলে যাও কেন ভালোবাসো নি মুছে দিয়ে যাও তুমি এ চোখের পানি কয়েকদিন পর শ্রাবণীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই প্রথম অনুভব করলাম আমি শ্রাবণীকে কতটা ভালোবাসি। ভালোবাসার কষ্টে নিজেকে আজকাল দেবদাস মনে হয়। ফার্মেসি থেকে অনেক কষ্টে ১ পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে এনেছি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শ্রাবণীর বিয়ের দিন সবগুলো খেয়ে সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে যাবো। কিন্তু আজকাল ঘুমাতে পারি না। তাই ঘুমের পাতা থেকে প্রতিদিন একটা একটা করে ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমায়। আজ শ্রাবণীর বিয়ে। সুইসাইড করার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। সবার কাছে ফোন দিয়ে মাফ চেয়েছি। বাবা মার কাছে একটা ছোট চিঠি লিখেছি, প্রিয় বাবা মা, তোমারা আমাকে ক্ষমা করে দিও। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো নিজের ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হয়ে যাওয়া। আমি এই কষ্ট সহ্য করতে পারি নি।তাই মরে যাচ্ছি। আমার বালিশের নিচে পাওনাদারদের একটা লিস্ট আছে। আমি মরার পর পাওনাদারদের ঋণ শোধ করে দিও…
ইতি
তোমাদের ছ্যাঁকা খাওয়া সন্তান ঔষধের পাতায় দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মাত্র ট্যাবলেট পড়ে আছে। প্রতিদিন একটা একটা করে ট্যাবলেট খেয়ে সব ট্যাবলেট শেষ করে ফেলেছি। আবার ঘুমের ঔষধ কিনতে ফার্মেসিতে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম, মরে যেহেতু যাবোই যার জন্য মরবো তাকে একটু শেষ দেখা দেখে আসি ঘরোয়া পরিবেশে শ্রাবণীর বিয়ে হচ্ছে। ড্রয়িংরুমে দেখি জামাই সহ অনেক লোক বসে আছে। সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— আমি একজন মৃত্যু পথ যাত্রী প্রেমিক। আজ এই বিয়েতে আমি একটা গান গেয়ে সবাইকে শুনাবো। তারপর ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড করবো। ঘুমের ঔষধ আমার পকেটেই আছে। আমি চিৎকার করে গান শুরু করে দিলাম, বুকের জমানো ব্যাথা কান্নার নুনা জলে ঢেউ ভাঙে চোখের নদীতে অন্যের হাত ধরে চলে গেছো দূরে পারি না তোমায় ভুলে যেতে ও শ্রাবণী ও শ্রাবণী তুমি কোথায় শ্রাবণী অন্য রুম থেকে দৌড়ে আসলো। বিয়ের সাজে শ্রাবণীকে অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে। আমায় দেখে শ্রাবণী রেগে বললো,
– কুত্তা তোকে আজ আমি সত্যি সত্যি খুন করবো নিরিবিলি রাস্তায় হদুল সোডিয়ামের আলোর নিচে একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে আর তার পিছন পিছন বউ সাজে একটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে। ছেলেটা মনে মনে ভাবছে, এই মেয়েটা যেন সারাটা জীবন ওর পিছনে এইভাবেই ছুটে আর মেয়েটা ভাবছে, এই পাগল ছেলেটা যেন সারাটা জীবন ওর পিছনে এইভাবেই লেগে থাকে..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত