-তুমি কি কখনো ভালো হবেনা?
-ভালতো ছিলামই। আর ভাল থাকতে ইচ্ছে করেনা।
-কেন? নতুন করে জিবনটা শুরু করতে পারছ না?
– নাহ। আর তোমার এত দরদ কিসের??
-কে ছিলাম তোমার ভুলে গেছ?
-হাহ ! ওসব মনে করিনা আর। এতই যদি ভালবাসতে তবে ছেড়ে যেতে পারতে না । তোমরা মেয়েরা এমনই।
-আমি ইচ্ছে করে অন্যের হইনি।
– চুপ করো। একদম চুপ । তোমার এইটা ছাড়া আর কি বলার আছে?? কেন আমাকে ফোন করো? তোমার স্বামি নেই? তোমার ভালবাসার মানুস নেই?
-আছে। ঠিক আছে চুপ থাকবো কিন্তু প্লিজ সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দাও রাফা । প্লিজ!
– তুমি বলার কে? তোমার এত কস্ট কিসের আমার চলাফেরাতে?? বলেছিই ত ওসব দিন আর নেই। আমি একা থাকতে ভালবাসি।
-রাফা প্লিজ এভাবে চলো না । আমার কস্ট লাগে । প্লিজ !
-শোনো তুমি আমাকে কখনো ফোন দিবেনা। আমার খোজ নেবার দরকার নেই। আমি একা চলতে শিখে গেছি ।
-কে শেখালো?
-তুমিই শিখিয়েছ ।
– ঠিক আছে আর কখনো ফোন দেব না । কখনো বিরক্ত করব না। শুধু চাইবে তুমি ভাল হও। ভাল হয়ে চলো। জিবনটা নতুন করে সাজাও । ভালো থেক।
-আমার ভালো থাকার দরকার নেই। তুমি ভালো থাক ।
ফোনটা রেখেই কাদতে শুরু করল রাফা । ফোনের ওপাশের মেয়েটা ওর খুব কাছের একজন ছিলো । আরিফা । ক্ষয় হয়ে যাওয়া চাদের ম্লান আলোয় হারিয়ে গেছে ওকে নিয়ে সেই স্বপ্ন বোনা রাত গুলো। এই ত কয়েক মাস আগে রাফা অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু ভাল থাকার দিন নাকি তাড়াতাড়ি শেষ হয়। হলোও তাই।
সেদিন দুজনে নিশ্চুপ বসে ছিলো। আরিফার একটু আগে বলা কথাটার অর্থ খুজেছিল রাফা । ” আমি আর তোমাকে ভালবাসতে পারব না”
কথাটার বিপরীতে শুধু একটা কথাই বলতে পেরেছিল ও। দুটো ছোট্ট শব্দের কথা- ভালো থেকো ।
তারপর কয়েক মাস কেটে গেছে।ওর দিন কাটে সিগারেট এর ভালবাসায়। দুনিয়ার সবাই বেইমানি করতে পারে কিন্তু সিগারেট কখনো বেইমানি করেনা। এটাই ওর জিবনের ভালবাসা। শুন্য মনের থলিটাকে সে সিগারেটের ধোয়ায় ভরিয়ে দেয়।পড়াশোনায় মন নেই। অনেক চেষ্টা করেছে কিছু করতে কিন্তু পারেনি। আস্তে আস্তে ও আরিফার সব স্মৃতিকে দুরে পাঠিয়ে দেয়। চলতে শেখে একা একা।
আজ অনেকদিন পর কলেজে যাবে রাফা । ফরম ফিলাপ করাটা দরকার। সমাজের লোকদের কাছে খারাপ ছেলে হওয়া চালচলন থাকলেও পড়াশোনাটা কোনমতে শেষ করতে চায় ও। কলেজে এসে বুঝল সবাই তাদের আপন গতিতে চলছে। শুধু ও ই অনেক পিছিয়ে।
-পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে মশায়?
– হ্যা আছে।
– তো এতদিন কই ছিলেন? গত চার মাসে একদিনও কলেজ আসোনি। ব্যাপার কি?
-একটু সমস্যা ছিলো।
-হুম । ত পড়াশোনা করে কি করবে? পড়ার প্রতি তোমার মন নেই। এসব বাদ দিয়ে যাও অন্য কাজ করো। এতে দিনটা ভালো চলবে ।
রাফা কিছু বলল না । স্যারের কাছ থেকে কাগজটা নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসলো। এটা নিয়ে এখন প্রিন্সিপালের রুমে যেতে হবে । ভাবতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর ছাড়া ফরম ফিলাম হবে না। কারন ও এখন অনিয়মিত স্টুডেন্ট।
কলেজের শহিদ মিনারের সিড়িতে বসে একটা সিগারেট ধরালো ও। ভাবছে ফিলাপ করবে না । আবার ভাবছে করবে। দুটানায় পড়ে গেলো ও। স্যারের কথাগুলো ভাবতেছে- সত্যিই ত আমার পড়ালেখার প্রতি মন নেই। তাহলে পড়ালেখা করে কি করবো ?
-এই যে কি ভাবছেন?
হঠাত একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রাফা ।
-কিছু না ।
-কিছু ত ভাবতেছিলেনই। হাতের সিগারেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।
-হ্যা ভাবতেছিলাম । ত আপনাকে ত চিনলাম না !!
– না চেনারই কথা । না চেনাই থাক। আপনার পাশে বসা যাবে ?
– কেন? আমার পাশে বসবেন কেনো? কিছুটা অপ্রস্তুত আর অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রাফা ।
-এমনি । কেনো? কারো জন্যে ফাকা রেখেছেন নাকি?
-নাহ।
– তাহলে বসতে পারি । আর অনুমতি নেবার দরকার নেই ।
রাফার পাশে বসে আছে মেয়েটি। কালো বোরখা পড়া । মাথায় সুন্দর করে স্কার্ফ পড়া । তবে মুখোশ নেই। সুন্দর মায়াবি চেহারা । তবে চেহারাটায় অত জৌলুস নেই একদম সাধারন সহজ চেহারা। রাফা ভাবতেছে উঠে যাবে। এসব মেয়ে টেয়েদের সাথে কথা বলার ইচ্ছা ওর নেই। তার চেয়ে একা কোথাও বসে সিগারেটটা শেষ করবে ভেবে উঠতে যাবে তখনই মেয়েটা বলল
-সিগারেট শেষ করেন। না হলে ফেলে দেন ।
-এই যে শুনুন । বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে বসেই বলছেন সিগারেট ফেলে দিতে!!
– মেয়েদের পাশে বসে সিগারেট খাওয়া উচিত না ।
– ও হ্যালো এখানে আমি একা বসেছিলাম।
-হুম। ত ?? কি?? কতদিন সেভ করেন নি?? দেবদাস হয়েছেন নাকি??
– এটা আমার ইচ্ছে ।
-হুম । হাতে কি এটা ?? ওওওও কলেজ করেন না তার সুপারিশ??
একপ্রকার ছো মেরেই কাগজটা রাফার হাত থেকে নিয়ে নিলো মেয়েটা ।
-আপনার ত খুব সাহস দেখছি??
– হুম । ত প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে পারমিশন নিয়ে এসে ফিলাপ টা করেন ।
– এটাও আমার ইচ্ছে । পড়ালেখার ইচ্ছা নেই । দেখতেছেন না সিগারেট টানছি। এখন এখান থেকে যান। অনেক হইছে ।
-তার মানে আপনি ফিলাপ করবেন না??
-নাহ ।কাগজটা দিন ।
– দিব না । এখন উঠেন আমার সাথো প্রিন্সিপালের রুমে যাবেন ।
-পাগলি হইছেন ? মাথা ঠিক আছে ত?
-হু আছে ।
বলেই রাফার হাত ধরে টানতে লাগলো মেয়েটি। কলেজ ভর্তি ছেলে মেয়ের সামনে যদি কোন মেয়ে এভাবে টানে তবে কেমন লাগবে??? বাধ্য হয়ে হাটতে শুরু করল রাফা মেয়েটির সাথে ।
মেয়েটির জোরাজুরিতে ফিলাপটা করে ফেলল ও।
-আমার নাম রাবিবা । একই ডিপার্টমেন্ট। আর আপনি রাফা যদি আমি কোন ভুল না করি ।
-হ্যা আমি রাফা । কিন্তু আপনাকে ত কলেজে দেখিনি কখনো??
-দেখবেন কিভাবে আমি ত মুখোশ পড়ে আসতাম। শুধু আজকে আসিনি ।
-ওওওও ।
-শোনেন আর দু মাস পর পরিক্ষা। কলেজে নিয়মিত আসবেন।
-বলতে হবে না। আপনি নিজেরটা সামলান আমি ঠিক আছি।
-ঠিক না থাকলেও ঠিক করে দিবো
কথাটা বলেই রাবিবা হাটা ধরল । ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রাফা মেয়েটার গন্তব্যের দিকে। হঠাত মেয়েটা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কানে লাগিয়ে বলল “- হ্যা সব ঠিক আছে ।”
ভাবছে এই মেয়েটা অদ্ভুত রকমের। হুট করে এসে আবার হুট করেই উধাও। কিছু বুঝতে পারল না রাফা । আর বোঝার চেষ্টাও করলো না। কারন এসব ভাবনা তার কাছে ঠায় পায় না । পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালো । তারপর হাটা শুরু করলো ও…..
সকালবেলা ফোনের রিং এর আওয়াজে ঘুম ভাঙল । ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অপরিচিত নাম্বার । তাই ফোনটা রেগে গিয়ে রেখে দিয়ে আবার ঘুমানোর চেস্টা করলো ।
আবার বাজতেছে ফোনটা । এবার ফোনটা ধরলো ও ।
-ঘুম থেকে উঠেন। উঠে কলেজে আসেন তাড়াতাড়ি।
-কে আপনি?
-রাবিবা । কলেজে আসেন । আসতে দেরি করলে কিন্তু খবর আছে ।
-আমার নাম্বার পেলেন কই? আর আমি কলেজে যাব কিনা সেটা আমার ব্যাপার ।
-বেশি কথা না বলে উঠেন। ফ্রেশ হোন। কলেজে আসেন।
টুট টুট করে কেটে গেলো ফোনটা । নাহ মেয়েটার জালায় মেজাজ ঠিক থাকতেছে না । কোথাকার কোন রাবিবা হুট করে এসব কি শুরু করতেছে কিছু বুঝতেছেনা রাফা । ঘুমটা নস্ট হলো যখন তখন শুয়ে থেকে লাভ নেই ভেবে উঠে পড়ল ও । ফ্রেশ হয়ে কলেজের দিকে হাটা দিলো ।
কলেজে এসে দেখলো মেয়েটার কালকের শহিদ মিনারের ওই জায়গায় বসে আছে । কাছে যেতেই রাগি কন্ঠে বলতে লাগলো
– এত দেরি করে ?? এত ঘুম কিসের হাহ?? কি করেন রাতে?? সিগারেট খেয়ে রাত পার করে সকালে এসে ঘুমান???
– হুম ।
– হুম কি?? বসেন ।
রাফা কি করবে কি বলবে বুঝতেছে না । রাগও লাগছিলো আবার ভালোও লাগছিলো । এভাবে আরিফাও ওকে শাসাত । অনেক ভেবে নিজেকে শান্ত করলো রাফা । দেখি মেয়েটা কি করে এই ভেবে বসে পড়ল । পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে যাবে তখনি সিগারেট টা ধরে ফেলে দিলো রাবিবা।
-আর কখনো যদি দেখি সিগারেট খাচ্ছ তবে বুঝবে আমি কি ??
-ঠিক আছে খাব না । খুশি ??
– হু ।
– তাহলে এখন বলেন তুমি করে বলার অনুমতি কে দিলো আপনাকে??
– এখন থেকে তুমিও আমাকে তুমি বলবা ।
– বুঝলাম । কিন্তু দেখো আসলে যেটা চাচ্ছ সেটা আমার দ্বারা সম্ভব না । আমার গল্পটা তুমি জানো না । তাই আমি মনে করি আমাকে আমার থাকতে দেয়া উচিত তোমার ।
– ওসব বুঝিনা আমি । এখন উঠো আমার সাথে যাবা
– কোথায় যাবো??
– সেভ করাবো তোমায় ।
– আল্লাহ ! আমি ঠিক আছি ।
– উঠো বলছি-….
– না আমি সেভ করবো না ।
কালকের মত আবার রাবিবা রাফার হাত ধরে টানা শুরু করলো । আর বিব্রত হবার আগেই হাটা দিলো রাফা ।
এভাবেই দিন কাটতে লাগল রাফার । প্রতিদিন রাবিবা রাফাকে শাসিয়ে শাসিয়ে কেয়ার করে। আর রাফারও একটু একটু ভাল লাগতে শুরু করে । এখন রাফা প্রতিদিন কলেজে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে। কিন্তু সিগারেট খাওয়াটা ছাড়তে পারেনি । শুধু রাবিবার সামনে খায় না। এত অধিকার রাফা ওকে দেয়নি। তবু যতটুকু কেয়ার করে তাতেই রাফা অনেক খুশি। কিন্তু মাঝে মাঝে আরিফাকে খুব মনে পড়ে । খুব বেশিই মনে পড়ে। কারনটা রাবিবা। ওর জন্যেই আরিফাকে মনে পড়ে বেশি বেশি। ওই সেদিনের পর থেকে আর কথা হয়নি দুজনার মধ্যে। রাফাই ত নিষেধ করেছিল। করবে নাই বা কেন?? রাফা জানে ওর বিয়ে হয়ে গেছে । কথা বলে কস্ট বাড়িয়ে লাভ নেই। এজন্যেই সেদিন ওভাবে বলে দিতে পেরেছিল।
দুমাস পেরিয়ে গেছে। রাবিবা এখন অনেক কাছের হয়ে গেছে। কিন্তু রাফা নিজের মনটাকে এখনও কন্ট্রোলে রেখেছে। আর রাবিবাও তেমন ভাবে ভালবাসার কথা বলেনি। এটাই সবচেয়ে অবাক লাগে রাফার কাছে। অন্য মেয়ে হলে এতদিনে বলেই ফেলতো। কে জানে কোনদিন হঠাত করে ভালোবাসি বলে ফেলে। আর বললেও সেদিনের উত্তরটা গুছিয়ে রাখা আছে রাফার।
আজ পহেলা বৈশাখ। কলেজের সবাই নতুন সাজে ক্যাম্পাসটাকে ভরিয়ে ফেলেছে। মেয়েরা বৈশাখি শাড়ি পড়ে এসেছে। আর ছেলেরা পড়ে এসেছে পান্জাবি। রাফাও ।
পাশে বসে আছে রাবিবা। ওকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ। আজ হয়ত মেয়েটা ভালবাসার কথা বলবে। কিন্তু এটাই রাফার কাছে অপ্রিয় পরিস্থিতি। কারন ও চায়না মেয়েটাকে কস্ট দিতে। মনের ভিতরে এখনো একটা মেয়ের ছবি আকানো আছে। শুধু রংগুলো ফ্যাকাশে । নিরবতা ভেঙে মুখ খুলল রাবিবা।
-আজকে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো ।
– কি?
– একটু ধৈর্য ধরো।
– ঠিক আছে।
রাবিবা হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে একটা মেসেজ করলো । একটু পরে ওদের সামনে একটা মেয়ে আসলো।
রাফা দেখেই চমকে উঠলো । বুকের ভেতরটাতে স্পন্দন দ্রুত হতে লাগলো। এটা কি দেখছে ও ।
মেয়েটা আরিফা । খুব সুন্দর করে সেজেছে । মাথায় দেয়া ফুলগুলো ওকে অসম্ভব সুন্দরি করে তুলেছে। কিন্তু মুখটা ম্লান ।
পাশে বসা রাবিবাকে কিছু একটা বলতে যাবে রাফা। কিন্তু রাবিবা কখন চলে গেছে টের পায়নি ও।
-কাকে খুজছো???
– রাবিবা কে….
– আমার চাচাতো বোন ।
– কিহ?? অবাক হয়ে গেল রাফা । বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে।
-হ্যা । অবাক হয়ে গেলে??
চুপ করে আছে প্রশ্নটা শুনে। উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলো উল্টো
-তুমি এখানে? তোমার স্বামি কই??
– স্বামি থাকলে ত ,….
-মানে??
– মানে আমার বিয়ে হয়নি । মিথ্যে বলেছিলাম।
– কেনো??
-তোমাকে দেখলাম। রাফা কি আমারই নাকি আমায় কস্ট দিয়ে চলে যাবে ।
-হাহ !! এভাবে?? আমাকে কস্ট দিয়ে??
-হ্যা । কস্ট দেবার অধিকার আমার আছে ।
– কিন্তু তোমাকে আর ভালবাসি না ।
-সত্যি বলছো??
রাফা জানে কথাটা সত্য নয়। ও এখনো মনের ভিতরেই রেখেছে আরিফা কে।
কিছু বলার আগেই আরিফার দেহের সাথে জড়িয়ে গেলো রাফা ।
-সবাই দেখছে ছাড়ো আরিফা…
ইতস্তত বোধ আর বিব্রত স্বরে বলল রাফা ।
-দেখুক । আমি ছাড়া তোমাকে কে জড়িয়ে ধরবে??
খানিক পরেই একজোড়া নরম ঠোট রাফার ঠোটদুটোকে জড়িয়ে ধরলো।
আর পাশ থেকে একজোড়া কাপল তালি বাজাতে লাগল … রাবিবা আর রবি…..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা