-হ্যালো শুনছো!!
-হুম বলো
-কি করছো
-এইতো টং দোকানে বসে আছি।
-আমাকে আজকে দেখতে আসবে।
-হুম
-প্লিয কিছু একটা করো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
-হুম
-কি হুম হুম করছো? প্লিজ রাতুল!! অবন্তী নিচের ঠোট কামড়ে ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করছেচোখের পানি আটকে রাখার, কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে। অপাশ থেকে হঠাৎ ফোন কেটে দেওয়ার শব্দটা যেন ওর চোখের বাধ ভেঙে দিয়েছে। হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখল তনিমা দাঁড়িয়ে আছে পিছনে।
-কি বলল রাতুল?
-জানিস আপু, আমি ওকে ভালবেসে ভুল করিনি, ভুল করেছি বিশ্বাস করে।তনিমা কি বলবে ভাষা খুজে পায় না। শক্ত করেঅবন্তীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-যা ফ্রেশ হয়ে নে। উনারা একটু পরেই আসবে। আমি কিচেনে যাচ্ছি খালাকে সাহায্য করতে। অবন্তী ওয়াশরুমে চলে যেতেই অপরিচিত নাম্বার থেকেত একটা মেসেজ আসে তনিমার ফোনে। কার নাম্বার? কে মেসেজ করতে পারে তনিমাকে?হাতের জ্বলন্ত অগ্নিশলাকাটা পায়ে পিশে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো রাতুল।
অবন্তীর দেওয়া নিল শার্টটা খুজে বের করতে হবে এখন তাকে। কি মনে করে হঠাৎ ফোনের কন্টাক্ট লিষ্ট চেক করতে থাকে রাতুল। একটা নাম দেখে ওর আঙুল থেমে যায়। তনিমা। অবন্তী মাঝেমাঝে ওর খালাতো বোন তনিমার ফোন থেকে ওকে কল করতো। তাই সেভ করে রেখেছিল নাম্বারটা। কিছুক্ষণ ভেবে তারপর মেসেজ অপশনে গিয়ে দ্রুত হাতে টাইপ করা শুর করলো রাতুল। একটা একটা করে হাতের চুড়ি খুলছে আর আপ্রাণ চেষ্টা করছে চোখের পানির অবাধ্যতাকে শাসন করার, কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে অবন্তী । একটু আগেই বিদায় নিয়েছে ছেলেপক্ষ। অবন্তীকে তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পাকা কথা জানাবে। হঠাৎ তনিমা রুমে এসে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় অবন্তীর চোখে জল দেখে।
-চল আমার সাথে, নীচে যাব।
-কেন..?
-তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে একটা।
– কি…
-উফফ বেশি কথা বলিস না তো, যা বলছি তা কর। অবন্তী যন্ত্রচালিতের মতো তনিমার পিছে পিছে রুম থেকে বের হয়ে আসে।
-তুই দাড়া, আমি একটু দেখি খালা খালু কি করছে। নিতা পা টিপে টিপে খালার রুমের কাছে গিয়ে উকি মারে। তাদের খোশগল্পের আওয়াজ কানে আসতেইনিশ্চিন্ত মনে ফিরে আসে অবন্তীর কাছে। খুব সন্তর্পণে দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসে অবন্তী আর তনিমা। নীচে নামার পর অব্যক্ত এক ভাললাগায় মনটা ভরে যায় অবন্তীর। রাতুল বাইক নিয়ে গলির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে তারই দেওয়া নীল শার্ট। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তনিমার দিকে তাকাতেই তনিমা বলে উঠল
– একটু আগে রাতুল আমাকে মেসেজ দিয়েছিল ওকে সাহায্য করার জন্য। ছোট দুইটা ভাইবোন সারাজীবন কষ্টে থাকুক, সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না।
-কিন্তু বাবা…..
– তোকে সেসব নিয়ে ভাবতে হবে না। খালুকে সামলানোর দায়িত্ব আমার। তনিমাকে একবার জড়িয়ে ধরে অবন্তী পা বাড়ায় গলির দিকে।
-কি দরকার ছিল আসার? টং দোকানেই থাকতে। ঠোট উলটে কিছুটা অভিমান নিয়েই কথাগুলো বলল অবন্তী।
-কাঁদলে তোমাকে কতটা সুন্দর লাগে সেটা দেখার জন্য এসেছি। ব্যাকসিটে বসে আলতো করে পিঠে কিল দেয় অবন্তী। কাধে নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে বাইক স্টার্ট দেয় রাতুল। পিছনে ফিরে একবার তাকালে লজ্জায় রক্তিমবর্ণ ধারণ করা মুখের সৌন্দর্যও দেখতে পেত রাতুল।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা