সুখের হাসি

সুখের হাসি
সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আমার স্ত্রী পাশে নাই। ভাবছি হয়তো ওয়াশ রুমে গেছে। চোঁখ বন্ধ করেই শুইয়ে আছি। কয়েকটা ডাক দিলাম, কোন সাড়া নাই। আমি ডাক দিয়ে বললাম, আজকে আমার অফিস নাই ছুটি নিয়েছি। শরীরটা ভালো নাই। নাস্তা দেরী করে বানিয়ো। কোন উওর নাই।
আমি আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। হঠাৎ শুনতে পাচ্ছি কেউ সুন্দর করে কোরআন তেলওয়াত করছে। আমি একটু ভাবনার ভিতর পড়ে গেলাম। ঘরে আমার বউ আর আমিই থাকি। তাহলে কোরআন কে পড়ছে? আমি বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম পাশের রুমে। দেখে বড়সড় একটা শখ খেলাম। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। শুনছি কি সুন্দর করে কোরআন পড়ছে সে। আমার মনটা জুড়ে গেলো। নিজের রুমে বসে ভাবছি, ইরা এত সুন্দর করে কোরআন পড়তে পারে, আগে জানতাম না। আর আজকে ফজরের নামাজও পড়ছে! যে মেয়ে কিনা সকাল ৭’টার আগে ঘুম থেকে উঠে না। আজকে ফজরের নামাজ পড়ছে। আমি বসে বসে হিসাব মিলাতে পারি না। ইরা রোজার মাস ছাড়া নামাজ পড়ে না। রোজা রাখে আর যোহর, আছর,মাগরিব পড়ে। এশা, ফজর পড়তো না।
প্রতিদিন সকালে অফিসে যেতে একবার ঝগড়া হয়ই। কোনদিন চায়ে চিনি কম, কোন দিন রুটি কাঁচা থাকে, কোনদিন তরকারিটা ভালো হয় না। এইসব কিছু জানতে চাইলেই ঝগড়া শুরু। আর বলতে শুরু করে, আমার মতো ছেলের সাথে বিয়ে হয়েই জীবন শেষ তার। তাকে গহনা দিতে পারি না,ভালো বাড়িতে রাখতে পারি না, কোন স্বাদ-আল্লাদ পুরুন করতে পারি না। আমিও মাঝে মাঝে ভাবি কেমন মেয়ে বিয়ে করলাম। না আছে ভালবাসা, না আছে কোন সাপোর্ট। ঝগড়া লেগেই থাকে সারাক্ষণ। রাতে পাশাপাশি ঘুমানো ছাড়া আর কিছু নাই। আজ মনে হয় ঝগড়া করবে না।মন ভালো মনে হচ্ছে। আমি আবার চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। প্রায় ঘন্টারখানিক পর।
_উঠে নাস্তা করে নাও। তারপর আবার ঘুমাও যেহেতু অফিস নাই।
_তুমি টেবিলে নাস্তা দাও। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসতেছি। একটু পরই টেবিলে গিয়ে দেখি চা, বিস্কুট আর কিছু নাই। আজ কেনো জানি রাগ হচ্ছে না।
_তোমার শরীর খারাপ নাকি? নাস্তা বানাও নাই যে?
_না, কোরআন পড়ে চা বানাতেই কেমন জানি লাগছে।
_তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
_এখন ঠিক আছি। লাগবে না ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
_আমাকে ডাক দিলে নাস্তা বানিয়ে দিতাম।
_থাক লাগবে না।
একটা হাসি দিয়ে বললো। আজকে ইরাকে কেনো জানি সহজ সরল মনে হচ্ছে। ঝগড়া নাই, কিছু নাই। আজকেই মনে হচ্ছে ভালবেসে বিয়ের করার পর একটা সকাল ভালো ভাবে গেলো। বিয়ের আগে কত স্বপ্ন দেখতাম তার সব আশা পুরুন করবো। কপালই খারাপ কম বেতনে চাকুরী করি। কোন রকমই সংসার চালাই। আমি নাস্তা করে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরই আসলো ইরা।
_বিরিয়ানী রান্না করবো? তোমার তো খুব পছন্দ বিরিয়ানি।
_না, থাক। শরীর খারাপ তোমার। আমরা বাহিরে গিয়ে খাবো।
তারপরও রান্না করবে বলতেছে। আমিও বললাম করো পারলে। সে হাসিমুখে চলে গেলো। আজকে ইরার কি হলো এত ভালোবাসা, চুপচাপ থাকা। সকাল ১০টার আগেই রান্না শেষ। আমাকে বললো বিরিয়ানি খেতে। বিরিয়ানিতে লবন কম। আর তেমন ভালো করেও রান্না করতে পারে নাই। তারপর খেয়ে নিলাম পেটভরে। আজকে আর কিছু বললাম না। এটায় ভালবাসা দেখছি, তাই যা দিয়েছে সেটায় স্বাদ খোঁজে ফেলাম ভালবাসার। ইরা নিজেই খেয়ে বুঝতে পারছে। টেবিলে দু’জন খেতে বসছি।
_লবন কম হয়ে গেছে, তাই না? (ইরা)
_ না, ঠিক আছে। তোমার মুখে হয়তো সমস্যা। আমার কাছে ভালো লাগলো।
_হবে হয়তো।
আমি চুপচাপ খেয়ে রুমে এসে বসে ভাবছি মেয়েটার এত পরিবর্তন কি করে? আজ মন চাচ্ছে একটু ভালবাসা দরকার। ইরাকে বললাম আমরা ঘুরতে যাবো। সেও রেডি হয়ে নিলো। বাসার কাছেই একটা পার্ক আছে। ওটা গিয়ে দুজন কয়েক ঘন্টা ঘুরলাম। ঘাসের উপর বসে দুজন অনেক গল্প করে দুপুরেই বাসায় ফিরে আসলাম। আজকে কেনো জানি দুজনের মনই ভালো।
যোহরের আজান দিলে নামাজ পড়ে নিলাম দুজনেই। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আসরের সময় ইরা ডেকে তুলে দিলো। নামাজ পড়তে মসজিদে গেলাম। মসজিদ থেকে বের হয়ে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম মাগরিবের নামাজ পড়ে। এসে দেখি ইরা কোরআন পড়ছে। রাতে এশা পড়ে দুজন খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
আজকের দিনটা কেমন করে কেটে গেলো। আজ আর একবারও ঝগড়া হয়নি। অন্য দিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে ঝগড়া করে বের হতাম। রাতে ফিরে খাবার খেয়েই শুয়ে পড়তাম। সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম। আজ আর ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে বাসায় কিছু রেখে আসছি। বিয়ের ১বছর কেটে গেলো আজই মনে হচ্ছে ভালবাসাটা দুজনের ভিতর বাহিরে আসতছে। দুপুর হতেই কল আসলো।
_তুমি খাবার খেয়েছো? নামাজ পড়ে নিয়েছো?(ইরা)
_হুম, তুমি?
_আমিও। নিজের খেয়াল রেখো।
ইরার কলটা কেটেই মনটা কেমন শান্ত হয়ে গেলো। বউয়ের সাথে কথা, ভালবাসা এত মধুর হয় জানা ছিলো না। এজন্য আল্লাহ বলছে জান্নাতের একটু সুখ জীবন সঙ্গীর ভিতর দিয়ে দিছে। আসলে আমরা সেই সুখটা বের করতে পারি না। তাইতো সংসার জীবন তেঁতো লাগে । সারাদিন অফিস করে বাসায় গিয়ে দেখি বউ খাবার নিয়ে বসে আছে। অন্য দিন নিজে খেয়ে শুয়ে থাকতো। আমি নিজে খেয়ে নিতাম কোনদিন, কোনদিন খেতাম না। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বসলাম। ইরাও বসলো খেতে। ইচ্ছে করছে তাকে খাইয়ে দেই। আমি বললাম, তোমায় খাইয়ে দেই।
সে মাথা নেড়ে সায় দিলো। আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছি। ওর মুখে কত হাসি। আমি সারাদিন কাজ করেও আজ কেনো জানি ক্লান্ত লাগছে না। দু’জন খাবার খেয়ে বসে বসে গল্প করলাম। তারপরই ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের সময় উঠে নামাজ, নাস্তা করে অফিস যাওয়া। সঁন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় ইরার জন্য কয়েকটা রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে আসলাম। তার রজনীগন্ধা পছন্দ। আমার হাতে ফুল দেখে জড়িয়ে ধরলো। তার হাতে ফুল গুলো দিয়ে বললাম ভালবাসি। সে অনেক খুশী হলো। এভাবে চলছে আমাদের সংসার। দুজনই আল্লাহর ইবাদত করি। নামাজ রোজা সবই ঠিক মতো পালন করি। কথায় আছে না। যার বউ ভালো হয় সে সংসারের রহমত আসে। আমার তা হলো। কয়েক মাস পরই ইরা মা হবে বললো। আরো ভালবাসা যত্ন করতে থাকি।
ইবাদাতে আল্লাহর কাছে বলি যেনো।দুজনে ঠিক এভাবেই সারাজীবন কাটাই। দেখতে দেখতে বাচ্চা হওয়ার সময় চলে আসলো। ইরাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। আমি দৌড়ে চলে গেলাম হাসপাতালের নামাজের জায়গায়। নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম, নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে হাত তুলে বললাম, ইয়া আল্লাহ আমার বউকে তুমি সুস্থ রাখো। ওকে আমার কাছেই ফিরিয়ে দিও। ঘন্টাখানিক পর ডাক্তার এসে বলে আমার মেয়ে হয়েছে। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া জানালাম। ইরার কাছে গিয়ে মেয়েটাকে একটা চুমু দিয়া ইরার পাশে বসলাম।
_আজকে অনেক খুশী। জানো আল্লাহর কাছে বলছি যেনো দুজনে সারাজীবন থাকি একসাথে। তোমার যেনো কিছু না হয়।
_আমি জানি এমনই কিছু বলবে। দেখো মেয়েটা তোমার মতোই হয়েছে।
_আজকে একটা কথা বলি?
_হুম।
_আমরা একসময় অনেক ঝগড়া করতাম। তোমার ভালবাসা ও পরিবর্তনে সুখ নেমে আসলো জীবনে। শিখে গেলাম দুজনে কি কে দুজনকে ভালবেসে থাকতে হয়। এত পরিবর্তন কি করে আসলো তখন?(আমি)
_আমার নিচের ফ্ল্যাটে থাকে যে হাফেজা মহিলাও তার স্বামী। একদিন বিকালে ওনার সাথে ছাদে দেখা। আর আমার মন খারাপ দেখে জানতে চাইলো। আমাদের অভাব, ঝগড়া সব কিছু। তাকে বললে বলে, দুনিয়ার সুখ বাদ দিয়ে দুজনে মিলে থাকলে ভালবাসা নেমে আসবে। আল্লাহই সুখ দিবে আমাদের। আর তখনই আমিও ভাবলাম দেখি নিজেকে আল্লাহর পথে এনে পরিবর্তন করে। আর তা করতে শুরু করলাম। তাইতো আল্লাহর রহমতে শান্তি নেমে আসলো। (ইরা) আমি ইরার কপালে একটা চুমু দিলাম।
_আমরা এভাবে আল্লাহর পথে থেকে জীবনটা পার করবো।
_মেয়েকে হাফেজা বানাবো। আমার পেটে থাকতেই ইচ্ছে ছেলে মেয়ে যেটাই হউক হাফেজ বানাবোই। (ইরা)
_তোমারই সব ইচ্ছে। আমার জীবনটাই তুমি যে। দুজনে হাসতে থাকলাম। এটা সুখের হাসি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত