প্রেমিকা হতে পারিনি

প্রেমিকা হতে পারিনি
আমি কখনো বাধ্য প্রেমিকা হতে পারিনি, কেননা সে আমাকে কখনো নীল শাড়ী আর নীল চুড়ি পরে ঘুরতে যাওয়ার আবদার করলে, আমি সোজা নিষেধ না করে সিল্কের থ্রিপিস পরে ঘুরতে গিয়েছি। আমি এটাও জানতাম সে ভেতরে প্রচন্ড কষ্ট পেত,অথচ প্রকাশ করেনি। আমি কখনো গুছালো প্রেমিকা হতে পারিনি, কারন তার দেওয়া সময়ে কখনো আমি তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। হয়তোবা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাম হাতের ঘড়ি ডান হাতে পরে এসেছি, নয়তোবা স্যান্ডেল পরে এসেছি। এজন্য সে আমাকে কখনো অভিযোগ পর্যন্ত করেনি।
আমি কখনো হালের আধুনিক প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারিনি, কেননা যেখানে অন্য কাপলগুলো বড় বড় পার্ক, রেস্টুরেন্টে দেখা করে। সেখানে আমি তাকে শহর ছেড়ে নাম না জানা কোনো এক নদীর ধারে নিয়ে যাওয়ার বায়না করতাম। নয়তো উঁচু উঁচু পাহাড় দেখিয়ে বলতাম চলো না পাহাড়ে উঠি। আমার এসব পাগলামীর জন্য ও সে কখনো আমাকে কিছু বলেনি, উল্টো মিষ্টি করে একটা মুচকি হাসি দিতো। আমি কখনো কেয়ারিং প্রেমিকা হতে পারিনি, কেননা অন্য সব মেয়েরা তাদের প্রেমিকের জন্য নিজের হাতে রান্না করে প্রিয় খাবারগুলো নিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। সেখানে আমি কখনো তার ইচ্ছেমত পছন্দের খাবারটুকুও খাইনি। আমি কখনো রান্না করে নিবো দূরের কথা।
আমি যা খাবো তাকেও সেটা খেতে হবে, এইরকমের জোর জবরদস্তি করেছি। তাকে কিসে ভালো লাগে কিসে মন্দ লাগে সেটাও কখনো লক্ষ্য করে দেখিনি। অথচ সে আমাকে প্রায়’ই বলতো দেখোতো এই শার্টটা আমাকে কেমন মানিয়েছে! আমি সোজা বলতাম তুমি হুঁতোম পেঁচা কিছুতেই তোমাকে মানাবেনা। সে শত কষ্ট পেলেও ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দিতো। আমি কখনো রোমান্টিক প্রেমিকা হতে পারিনি। কেননা সে আমাকে ভালোবেসে হাত ধরতে চাইলে আমি বলতাম তোমার হাত পঁচা,শক্ত আমাকে ধরবেনা। কখনো হাতের ঘড়ি ডান হাত থেকে বাম হাতে নিয়ে লাগিয়ে দিতে চাইলে বলতাম, তুমি নিজেরটা ঠিক করে চলো আমাকে ঠিক করে দিতে হবে না।
আমাকে খুব মিষ্টি করে ভালোবাসি প্রিয় বললে, আমি এক সেকেন্ড লেইট না করে বলে দিতাম আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি তোমায়, ভালোবাসিনা একটুও। সে বলতো থাক, এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি মূলত প্রেমিকা ই হতে পারিনি। সে যেটা না করতো আমি সেটাই বেশি করতাম। তার বায়না,আবদার,ইচ্ছে,পছন্দ, কেয়ার কোনোকিছুই আমাকে ছুঁতে পারেনি। অথচ আমি তাকে ভালোবাসতাম,ভালোবাসি আর ভালোবাসবো এটা দাবী করতাম নিজের কাছেই। এটাকে ভালোবাসা বলে কি না সেটা না জানা এই আমি তার একটু ধমকে চিৎকার করে কাঁদতাম,ফোন না ধরলে ওর বাসার নাম্বারে জ্বালাতাম।
কথা না শুনলে অনেক মারতাম। তাও আমি ওকে ই দোষারোপ করতাম তুমি আমায় ভালোবাসোনা একটুও। আর ভালোবাসোনা বলা এই আমি আজ অন্য ছেলের সংসার করে সুখেই দিন কাটাচ্ছি। একদম বাধ্য সংসারি বউ হয়ে উঠেছি। আমি যে বড় স্বার্থপর ছিলাম সেটা এখন বুঝতেছি। হ্যা এটা সত্যি প্রকৃতি পাল্টায় তার সাথে পাল্টে যায় মানুষের মন।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত