I Love You লিখে ম্যাসেজ পাঠাইলাম, চ্যাটিং লিস্টের প্রথমে থাকা মারুফাকে। মারুফার সাথে পরিচয়, প্রায় তিন বছর ধরে। তার সাথে অনেক চ্যাটিং হয়। তারচেয়ে বড় কথা সে, সিঙ্গেল আছে। আমি তাকে প্রায়ই বলি, তুমি কি এখনো সিঙ্গেল? (মারুফাকে অনেক আগে থেকেই তুমি করে বলি।) মারুফা রিপ্লাই দেয়, মনের মতো কাউকে তো পাচ্ছি না। যাকে এই মন দিব। যেহেতু মারুফা সিঙ্গেল আছে, আর তার সাথে আমার অনেক চ্যাটিং হয়। আমাদের সম্পর্কও “তুমি” তে আছে, তাই সাত পাচ না ভেবে, মারুফাকে প্রোপজ করলাম। “I Love You” লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন রিপ্লাই আসে। পাঁচ মিনিট পর মারুফা রিপ্লাই দিছে, “ছিঃ ভাইয়া, আপনি এটা বলতে পারলেন! আমি কখনো আপনার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করিনি। ছিঃ।”
আমি আকাশ থেকে পড়লাম, মারুফা আমাকে ভাইয়া বলছে। আমি বেশ লজ্জা পেলাম। এতদিন মারুফার সাথে অনেক চ্যাটিং করেছি, কিন্তু এখন এই ঘটনার পর নিশ্চই মারুফা আমার সাথে আগের মতো চ্যাটিং করবে না। মনে মনে মারুফা কি ভাববে কে জানে। আমিই বা তার সাথে কোন মুখে চ্যাটিং করবো! ভাবতেই কেমন যেন অস্থির লাগছিল। সেদিন মারুফাকে আর কোন ম্যাসেজ করলাম না। মারুফাও আমাকে আর কোন ম্যাসেজ করলো না। আমি এত সহজে হাল ছাড়ার লোক নই। এক মারুফা গেছে তো কি হইছে! চ্যাটিং লিস্টে তো আরও অনেক আছে।
চ্যাটিং লিস্টের দ্বিতীয় স্থানে থাকা, তানিয়াকে “I Love You” লিখে ম্যাসেজ করলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন রিপ্লাই আসে তানিয়ার সাথে পরিচয় প্রায় বছর দেড়েক হবে। তানিয়াও সিঙ্গেল আছে। আমার প্রতিটা পোস্টে, লাভ রিয়েক্ট দেয়। তার প্রতি আমার আলাদা কনফিডেন্স আছে।
প্রায় তিন মিনিট পর তানিয়া এ্যাংড়ি ইমু দিয়ে রিপ্লাই করছে, “আপনার লেখাগুলো ভালো লাগে, তাই আপনার সাথে চ্যাটিং করি। তাই বলে আপনি প্রপোজ করবেন! নিজেকে দেখছেন কখনো আয়নায়। আর আপনি জানেন, প্রতিদিন কয়টা স্মার্ট ছেলে আমার পিছু পিছু ঘোরে বাইক নিয়ে।” তানিয়া এইভাবে আমাকে অপমান করবে, এটা কখনোই ভাবিনি। তানিয়াকে আর কোন ম্যাসেজ করলাম না। এতদিন যাও দুষ্টামি করতাম, এখন সেটাও বন্ধ হলো। লজ্জা থাকলে নিশ্চই আর তানিয়াকে ম্যাসেজ করবো না। চ্যাটিং লিস্ট এত ছোট নয় যে, মারুফা-তানিয়া ছাড়া আর কেউ নেই।
চ্যাটিং লিস্টের তৃতীয় অবস্থানে আছে নাদিয়া। অতী চঞ্চল টাইপের মেয়ে। রিলেশনের জন্য পারফেক্ট। গতকাল তাকে তাকে বলছিলাম, তুমি কি সিঙ্গেল? নাদিয়া বলল, আসলে যাকে লাভ করি সে বুঝতেছে না। তাই এখনো সিঙ্গেল। নাদিয়া আমাকে মীন করে কথাটা বলেছে সম্ভবত। তার সাথে প্রেম বিষয়ক অনেক কথাই আলাপ হয়। সে হয়তো আমাকে মনে মনে লাভ করে, মুখে বলার সাহস পাচ্ছে না। অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাদিয়াকে, “I Love You” লিখে ম্যাসেজ করলাম। অপেক্ষায় আছি কখন রিপ্লাই আসে প্রায় বিশ মিনিট পড় রিপ্লাই আসছে, “আপনি এইডা কি কইলেন! আপনার বয়স দেখছেন। আমার সাথে কি মানায় আপনাকে? আপনার অর্ধেক বয়স আমার।”
অনেকটা মন খারাপ হয়ে গেল। নাদিয়াকে আর কোন ম্যাসেজ করলাম না। কথায় আছে, “একবার না পারিলে দেখ শতবার” আমার শতবার হতে অনেক দেরি আছে। মাত্র তিনটা হইছে। চ্যাটিং লিস্টে চতুর্থ অবস্থানে আছে, তিন্নি। একটু ঠান্ডা টাইপের মেয়ে। ভালোই কথাবার্তা হয়। আমার সব পোস্টে, ওয়াও দেয়। মনের মতো কাউকে পেলেই বিয়ে করবে। মারুফা, তানিয়া, নাদিয়ার মতো নয়। অনেক মেধাবী। তিন্নিকে আমি, “I Love You” লিখে ম্যাসেজ করলাম। রিপ্লাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি এক মিনিট না হতেই রিপ্লাই আসছে, “বেয়াদব কোথাকার, সিনিয়রদের সম্মান দিতে জাননা!? ফাজিল কোথাকার।” ওহ্ শীট। আমি জানতাম না, সে আমার সিনিয়র। যেভাবে ১৮+ কথাবার্তা হতো। আমি তো ভাবছিলাম, সেম এজ হবে।
আমি আর তিন্নিকে কোন ম্যাসেজ করলাম না। এক এক করে, লিস্টের সকল মেয়েকেই, “I Love You” লিখে ম্যাসেজ করলাম। দুঃখজনক হলেও সত্যি, কেউ পাত্তা দিলনা। কেউ কেউ তো ভয়ানক গালীও দিল। আমি মন মরা হয়ে বসে আছি আর ভাবছি, এতদিন প্রেম না করতে পারছি, তবে চ্যটিং করে তো কিছুটা সান্তনা পেয়েছি। এখন তো কাউকে ম্যাসেজ দিতেও লজ্জা লাগবে। সবাই আমার প্রতি নেগেটিভ চিন্তা করবে। সবাই ভাববে, আমি ফালতু। মারুফা, তানিয়া, নাদিয়া, তিন্নি সহ অারও অনেককে মিস করতে লাগলাম। হুট করেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। এমন একটা বুদ্ধি, যাতে সাপ মরবে লাঠি ভাঙবে না।
ফেসবুকে গিয়ে পোস্ট দিলাম, “কোন কুত্তার বাঁচ্চা যেন, আমার আইডি হ্যাক করছিল। মাত্র আইডি ফিরে পেলাম। কারো কাছে কোন উল্টা-পাল্টা ম্যাসেজ গিয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।” মারুফা কমেন্ট করছে, “জানতাম এমন কিছুই হবে” তানিয়া কমেন্ট করছে, “আমি কতকিছু ভাবছিলাম” নাদিয়া কমেন্ট করছে, “আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম, আইডি হ্যাক হইছে” তিন্নি কমেন্ট করছে, “কতদিন বলছি, আইডি ঠিক করো, এখন তো বুঝছ। সাবধান, আর যেন হ্যাক না হয়।” থ্যাংকস গড, সবাইকে ফিরে পাওয়ার জন্য। আবার আগের মতই চলছে…..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা