বেলাশেষে

বেলাশেষে
নিধি আর তার বান্দবী আমার ঠিক সামনে এসে বসলো,আমি তাদের দেখেও আমার মতো আমি বসে রইলাম।সুন্দরী মেয়েদের এই এক সমস্যা কিছু থেকে কিছু হলেই নাক মুখ লাল হয়ে যায়,অবশ্য নিধির মুখখানা রাগে এখন লাল হয়ে রয়েছে।কেননা সে বেশ কিছুদিন ধরে আমার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে আমার কাছে,আর আমি বার বার তাকে এড়িয়ে যাচ্ছি।সে আমাকে ভালোবাসি বললেও আমি তা বুঝার চেষ্টা করছি সে কি আদো আমাকে ভালোবাসে নাকি ফান করছে।অবশ্য নিধির মতো মেয়ে আমার মতো পাগল কে ভালোবাসবে তা মানা একটু কষ্টকর। এবার নিধি বলতে লাগলো
-ইমু আমি তোমার কাছে কিছু জিজ্ঞাস করবো,উওর দিবে কি ?
-বলো…..
-তুমি র্ভাসিটিতে ২ বছর ধরে রয়েছো তবুও তোমার বন্ধু নেই কেন ?আর কারো সাথে তুমি কথা কেন বলো না ?
-ইচ্ছা করে না। নিধি আবারো রেগে গেল,শ্বাস টা টেনে নিয়ে তা আবারো দ্রুত বাহিরে বের করে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
-আচ্ছা এবার নিজের পছন্দের বিষয়ে কিছু বলো তুমি ।
-কেন ?
-কেননা,আমরা সবাই জানতে চাচ্ছি তুমি কি মানুষ নাকি এলিয়েন ।
-আচ্ছা বলো।
-তুমি কি এক বা দুই শব্দ ছাড়া আর কথা বলতে পারো না ?
-পারি ।
-ইইই,রাগে আমার তোমাকে মারতে ইচ্ছে করছে ইমু ।আচ্ছা বলো তোমার পছন্দের ফুল কি ?
-ধুতুরা ।
-দেশে কি আর কোন ফুল নেই ইমু?(নিধি আমার উওর শুনে রেগে যাচ্ছে আর তার বান্দবী তাকে কন্ট্রোল করছে।)আচ্ছা এখন বলো পছন্দের ফল কি ?
-শুকনো নারিকেল ।
-পছন্দের নায়ক বা নায়িকা ?
-ইমরান হাসমি,নায়িকা সব ই পছন্দের ।
-শালার কার প্র্রেমে পড়লার আমি ?আচ্ছা পছন্দের মুভি ?
-ডার্টি পিকচার
-কি খেতে ভালোবাসো ?
-সিগারেট ।
-ভালোলাগার মুর্হূত কোনটা ?
-যখন আমার সামনে কেউ কান্না করে ।
-কখন খুব খারাপ লাগে ।
-সনি ম্যাক্স এ যখন কোন মুভির কিসিং চাপ্টার টা কেটে দেয় ।
-বোরিং সময়ে কি করো ?
-এটা আবার কেমন প্রশ্ন ?বোরিং সময়ে বোরিং হই আর কি ?
-আমাকে তোমার কেমন লাগে ?
-তুমি কি কোন খাবার যে টেষ্ট করে দেখছি কেমন লাগে ?
-তা ও ঠিক।তুমি তো আবার সবকিছু ওল্টা করে চিন্তা করো ।তা আমাকে কেন ভালোবাস না তুমি ?
-কেন বাসবো ?
এবার নিধি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না,১০-১২ টার মতো গাল দিয়ে উঠে চলে যেতে লাগলো।আমি আবারো আমার মতো চুপ করে বসে রইলাম।এ জগৎ এর মানে আজকাল আর বুঝতে চাই,এটা এখন বেশ জটিল।
আমরা সবাই এখন ভালোবাসা নামক জটিল রোগে আক্রান্ত ,এ থেকে ততদিন মুক্তি মিলবে না যতদিন না আমরা আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবো।এখানে সবাই আমায় অদ্ভুত মনে করলেও আমার কাছে আমি ঠিক আছি আর এটাই আমার পাওয়া নিজের কাছ থেকে । সন্ধ্যা হয়ে গেল বাসার দিকে হেটে চললাম,আর রাস্তায় বাহারি মানুষের বাহারি র্কাযকলাপ দেখছি।
এর ভেতর আবারো নিধির কথা মনে পড়লো।সে প্রতিদিন ই আমার সামনে আসবে,এসব প্রশ্ন করবে আর রেগে চলে যাবে।আসলে আমি তাকে বুঝি না ,মূলত কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি।কেননা প্রেমিকেরা প্রেমিকার না বলা কথা বুজলেও প্রেমিকারা তা পারে না।তারা সর্ম্পক এর মরিয়া হয়ে উঠলেও পরিশেষে এ সর্ম্পক এর মানেই বুঝতে পারে না।তারা বুঝতে পারে না ব্যস্ততার চাপে ফোন টা কেটে দেওয়ার কারণ টা,তারা বুঝতে পারে না যে সব আরাম আয়েশ ছেড়ে সারাদিন কষ্ট করে শুধুমাত্র তাকে পবিত্র করে পাওয়ার জন্য ।তারা সন্দেহ ছাড়া কখনো জানার চেষ্টাও করে না গভীর রাতে বাসায় যাবার কারণ টা কি ? আসলে তারা কখনো এগুলো বুঝতেই পারবে না।কেননা তারা যে প্রেমিকা।
আমার মতো একাকী মানুষের জন্য হয়তো এ প্রেম না,আমাদের মতো মানুষের জন্য ই রয়েছে এ কৃষ্ণপক্ষ ,লাল তরল আর কাগজে পেচানো সিগারেট।সবাই বলে আমি কম কথা বলি আসলে এমন নয় আমি অনেক বেশি কথা বলি আর তা নিজের সাথে।আমার আমিত্বের সাথে গভীর সর্ম্পকে আমি আবদ্ধ । সকালে আবারো যখন আমি ক্যাম্পাসে পাশে যে টং রয়েছে সেখানে বসে আছি তখন নিধি এসে হাজির ।আমি তখন বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম।মেয়েটা আজ হলুদ রঙের একটা ড্রেস পরে এসেছে,দেখতে আজ আরেকটু মায়াবী লাগছে।প্রতিদিনের মতো আজো সে এসে আমার ঠিক মুখামুখি হয়ে বসলো ।আমার হাতে সিগারেট দেখে বলতে লাগলো
-তুমি সিগারেট খাও কেন ?
-দেশের অর্থনীতির অবস্থা সচল রাখার জন্য ।
-মানে ?
-মানে হলো যে দিনে ৫০ টাকার সিগারেট খায় সে দিনে মোট ট্যাক্স দেয়৩০ টাকা,মাসে ৯০০ টাকা আর বছরে ১০৮০০ টাকা ।সুতরাং আমরা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালক করছি ।
-তুমি এত অদ্ভুত কেন ইমু ?
-কেন কথার কোন উওর নেই।
-কখনো কি জানতে চেয়েছো আমি তোমায় কি জন্য ভালোবাসি ?
-ভালোবাসতে কোন কারণ লাগে না,নির্দিষ্ট কিছু দেখে কেউ কখনো ভালোবাসতে পারে না।কেননা ,নির্দিষ্ট কিছু দেখে ভেতরে যেই ফিল টা আসে সেটা হলো ভালোলাগা ।
-তুমি কথা কম বলো,আর যা বলো সেটার উওর আমার কাছে অজানা।
-অজানা থাকাই ভালো কেননা জানতে গেলেই যন্ত্রণা বাড়ে ।
-আমি কি দেখতে খুবই খারাপ ?
-আমি সেভাবে কখনো সুক্ষ দৃষ্টিতে দেহের আলোচিত অংশ গুলো কখনো ই দেখিনি।তাই ভালো কি খারাপ তার মূল্যায়ন আমার কাছ থেকে আশা না করে নিজের কাছ থেকে জেনে নিও ।
-তোমার ধুতুরা ফুল কেন পছন্দ ?
-তোমাদের কাছে সেটা অপছন্দ তাই ।
-র্ডাটি পিকটার মুভি কেন পছন্দ ?
-এখানে সৌর্ন্দয আর কামুকতা দিয়ে কিভাবে মানুষ উচ্চ পর্যায়ে যাচ্ছে আর সেখান থেকেই কিভাবে মুখ থুবরে মাটিতে পড়ছে তা দেখতে পাওয়া যায় ।
-আর ইমরান হাসমি ?
-প্রেমের সাথে দেহ ভোগের যে একটা ধাপ রয়েছে সেটা তার মুভি তে র্স্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছে ।
-এত সিগারেট যে খাও এটা তো ক্ষতি ,ভয় করে না জীবনের জন্য ?
-যেহেতু জন্মেছি তাহলে ভয় তো হবেই কিছুটা।এতই যদি সেফটির কথা চিন্তা করতাম তাহলে মাতৃ গর্ভেই সারাজীবন থেকে যেতাম।
নিধি আর কিছু বললো না,সে চুপ থেকে আমার হাতে তার হাতটা চেপে ধরলো।আর আমার মাথার অগুছালো চুল টা ঠিক করে দিয়ে নিচু গলায় বললো ভালোবাসি ।আমি আমার মতোই চুপ করে বসে রইলাম।নিধি আমার সামনে থেকে উঠে যাওয়ার পর পর ই আমি উঠে দাড়ালাম ।হাটতে হাটতে ক্যাম্পাস টা ত্যাগ করলাম। আসলে সুন্দরী মেয়েরা হচ্ছে এলকোহল মতো,অল্পতে সুখের অনুভূতি হবে আর বেশি নিলেই লিভার পচে মারা পরবে।আমার সত্তা এখনো নিধিকে ভালোবাসার কোন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে নি,যদি কখনো মনে হয় তাহলে না হয় ভালোবাসার এ সাপ লুডু খেলায় আরো একবার ৯৩ এর ঘরে কাটা পড়বো।তখন না হয় আবারো একবার বাউন্ডুলে রূপে নতুন কোন বাউন্ডুলেপণায় শামিল হবো। থাক না আপাদত এবাবেই ,চলুক না যেভাবে চলছে ক্ষতি টা কি ? ”প্রেমের বিড়ম্বনায় আমি ফের র্ব্যাথ কেননা গভীর ভালোবাসায় আমি যে আহত, নিহত হবার টানে জ্বলছে সিগারেট। যদি বেঁচে থাকি তাহলে হয়তো বা ছুয়ে দেব , তোমার সেই মেঘে ঢাকা কালো কেঁশ ”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত