তুমি আমার ঈদ

তুমি আমার ঈদ
৬ বছর পর ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাচ্ছি পরিবারের সাথে।অসম্ভব এক ভালোলাগা কাজ করছে।৬ বছর আগে সব কিছু ছেড়েছুড়ে চলে গিয়েছিলাম দেশের বাইরে।পড়ালেখা শেষ করে কিছুদিন হলো দেশে এসেছি।সবার ইচ্ছে আমি এসেছি এতগুলো বছর পর তাই নাকি বাড়িতে ঈদ করবে।
মনে পড়ে গেলো ৬ বছর আগের অতীত ।যার জন্য নিজের দেশ আপনজনকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম অজানা মানুষের ভীড়ে।এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। হয়তোবা সে অনেকটাই বদলে গেছে।৬ বছর তো আর কম সময় নয় অনেক কিছুই হতে পারে। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা জার্নি করে ফাইনালি পৌঁছালাম গ্রামে। সেই চিরচেনা গ্রাম টা আজ অনেকটাই বদলে গেছে। কারো সাথে দেখা না করেই চলে গেলাম নদীর পাড়ে সেই পরিচিত বেঞ্চের কাছে। এই নদী এই বেঞ্চের সাথে আমার অদ্ভুত এক টান কাজ করে। মনে পরে গেলো সব স্মৃতি। চোখ টা ঝাপসা হয়ে এলো।
কত দিন পর সবার সাথে দেখা হলো।কিন্তু আমার চোখ দুটি যে একজনকেই খুঁজছে।মনে হয় সে আসেনি। সবাই আমাকে দেখে কত খুশি যে হয়েছে।এতগুলো বছর এদের থেকে কিভাবে দূরে ছিলাম ভাবলেই অবাক লাগে।একজনের উপর অভিমান করে কতই না কষ্ট পেলাম নিজে।সে কি আমার অভিমানের কোনো দাম দিয়েছে?একটাবার আমাকে দেখতেও তো এলো না। রাতে সব কাজিন ভাবিদের মেহেদী দিয়ে দিলাম।নিজেও মেয়েদী পড়লাম।আজ ও আমার মেহেদীতে তার নাম লেখা থাকে।কেমন যেনো অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।মেহেদী দিয়ে চলে গেলাম সেই নদীর পাড়ে। বেঞ্চটিতে বসে ডুব দিলাম সেই ৬ বছর আগের স্মৃতিতে।
ঈদের দিন ছিলো সেদিন।আমি তার পছন্দ মতো জামা পরেছিলাম।কিন্তু নাহ সে দেখলো না আমাকে।তার কাছে যেয়ে যখন জিজ্ঞেস করলাম আমাকে কেমন লাগছে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলো।সেদিন রাতে ঠিক এখানটায় দাড়িয়ে সে বলেছিলো “দেখো নিয়ামা তুমি যেটাকে ভালোবাসা মনে করছো সেটা শুধু তোমার আবেগ আর কিছুইনা। আমি শুধু তোমাকে ভালো বন্ধু মনে করি।আর আমরা যে কাজিন তা ভুলে যেও না।আমি তোমাকে ভালোবাসিনা শুধুই ভালোলাগা আর কিছুইনা।তুমিতো এখন অনেক ছোট তাই বুঝতে পারছোনা।সবে তো এইচ এস সি দিয়েছো।কদিন পর তোমার আবেগ মোহ কেটে যাবে। ” সেদিন মন চেয়েছিলো তোমাকে মেরে ফেলি।রাগে কষ্টে অপমানে কি করবো বুঝতে পারছিলামনা। তখন ই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি চলে যাবো অনেক দূরে। যেহেতু আমার থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না তার জন্য আমার মনেও কোনো জায়গা থাকবে না।
হায় কপাল আমার এই ৬ বছরেও এমন কোনো দিন নেই যে ওকে আমার মনে পরেনি। হঠাৎ কারো স্পর্শ পেলাম।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে কেউ। সেই চিরচেনা স্পর্শ। সেই অনুভূতি। চোখ দিয়ে এখন পানি পরছে।বুঝতে পারছিনা খুশির কান্না নাকি অভিমানের কান্না।আমি ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারলামনা।খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।ছেড়ে দিলে এই বুঝি পালিয়ে যাবো। আমি যেনো এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ নেই।পিছে ফিরে তাকালাম কাউকে পেলামনা আমি কি তাকিয়ে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম হতেও পারে। এই হনুমানটা আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। বাড়ি এসেও ওকে দেখতে পেলামনা।কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিনা।মনে হয় আমার মনেরই ভুল ছিলো।একরাশ কষ্ট নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।ঈদের আমেজ লেগে গেছে পুরো বাড়িতে।আজব কেউ ওর কথা বলছেই না।
আমি খুব সুন্দর একটা কালো জামা পরে রেডি হলাম। সবার সাথে বসে গল্প করছি।কিন্তু মন টা তো তাকেই খুঁজছে।
বিকেলে কাজিনরা বায়না ধরলো কানামাছি খেলবে।যথারিতী আমাকেই চোর বানালো শয়তানের দলগুলো।আমার চোখ বেঁধে দেওয়া হলো।হঠাৎ কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম।খুব শক্ত করে আমাকে ধরে ফেললো।
তার স্পর্শ চিনতে আমার একদম ই ভুল হলো না।হাত পা কেমন যেনো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।এটা সত্যি নাকি আবার আমার মনের ভুল বুঝতে পারছিলাম না।সে আমাকে ধরে থাকা অবস্থায় চোখের কাপড় খুললাম।কিন্তু চোখ খুলার সাহস পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে খুললেই সে নাই হয়ে যাবে।ধীরে ধীরে তাকালাম। তাকানোর সাথে সাথে তার ৩২ টা দঁাত বের করে ভুবল ভুলানো হাসি দিলো।আমি সাথে সাথে আবার চোখ অফ করে ফেললাম।মনে মনে দুয়া দরুদ পড়া শুরু করলাম।হাত পা অনবরত কাঁপছে।দাড়ানোর শক্তিটকু পাচ্ছিনা।তার উপর পুরো ভর ছেড়ে দিয়েছি। আবার চোখ খুলে দেখলাম সে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার কি হলো বুঝলামনা আমি তাকে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম।সে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
“পাগলি আমার মাফ করে দাও আমাকে আমি বুঝতে পারিনি তুমি এত কষ্ট পাবে। তোমাকে সেদিন ঐরকম করে বলেছিলাম কারণ তুমি অনেক ছোট ছিলে।আমি চাইনি তোমার পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হোক।তুমি ভুল কিছু করো।আর আমারও তো তখন পড়ালেখা শেষ হয়নি।তুমি এত কষ্ট পেলে যে সব ছেড়েছুড়ে একদম চলেই গেলে? তুমি কি কোনোদিন বড় হবে না? অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমার মহারানী। তোমাকে ভালো না বেসে কি থাকা যায়।আর কান্না করোনা প্লিজ এই দেখো কান ধরলাম। তুমি চাইলে উঠবস ও করবো। এবার নিয়ামা হেসে দিলো।আশেপাশের সবাই হাসছে।এবার সে লজ্জা পেয়ে গেলো।আবার মুখ লুকালো যাবিদের বুকে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত