মিথিলার গায়ে হলুদ আজ। কাল দিন বাদে বিয়ে। দু দিন আগেও সে মন মরা হয়ে ছিল, আজ সকাল থেকেই হঠাত করে অনেক খুশি খুশি। এতটা খুশি যে সবাই খুব অবাক। গায়ে হলুদের সব কাজ সে নিজে খেয়াল করে দেখছে। কোন ফুল দিয়ে বাসা সাজানো হচ্ছে, কিভাবে সাজানো হচ্ছে, কোথায় কি লাগবে, পায়েসে চিনি ঠিক মত হল কিনা, বিরিয়ানীতে মাংস আরেকটু লাগবে কিনা সব। বাবা সকালে হলুদ কিনে এনেছে কিন্তু সে হলুদ মিথিলার পছন্দ হচ্ছেনা, বাবাকে ভীষন মাত্রায় ভয় পায় বলে গিয়ে তা বাবাকে বলতেও পারছেনা। লুকিয়ে কিছু করতে হবে তাই সে চলে গেল বাসার দো’তলায়। মিথিলারা চার তলার এই ভাড়া বাড়িতে থাকে গত দশ বছর, এবাড়ির মানুষ গুলোর সাথে সম্পর্ক আত্ত্বিয়ের সম্পর্ক থেকে কোন অংশেই কম নয়।
-আন্টি কাচা হলুদ আছে বাসায়? আব্বা যে কি না! কই সুন্দর টসটসে রঙ দেখে হলুদ কিনে আনবে তা না কি বুড়ো বুড়ো হলুদ নিয়ে আসছে দেখে বোঝার ঊপায় নাই ওগুলা হলুদ না আদা! সবার হয় গায়ে হলুদ আর আমার হবে গায়ে আদা।
-আরে আয়তো ভিতরে এসে ঠান্ডা মাথায় বোস। নিজের গায়ে হলুদ নিয়ে আমি কাওকে এত লাফাতে দেখি নাই। গাধী একটা! মানুষ কি বলবে! লজ্জা নাই তো লজ্জার একটু অভিনয় তো করতে পারিস! আমার এখানে বসে থাক তোর কিছু করতে হবেনা যা করার ওরা ওরাই করবে।
-কি করবে তা তো দেখতে পাচ্ছি! গায়ে হলুদের হলুদটাও এখন আমার চুরি করে ধার করতে হচ্ছে! আর আমি ওইসব অভিনয় টভিনয় করতে পারবোনা। আরে একবারই তো বিয়ে আর একবারই তো গায়ে হলুদ, তাও আবার নিজের, তো নিজের মত করবোনা! হলুদ আছে কিনা সেটা বল তো!
-এখনকার দিনে প্যাকেটে হলুদের রঙ থাকতে কেউ হলুদ বেটে খায়!
-তারমানে নাই! তাহলে শুধু শুধু আমার টাইম ক্যান লস করলা! রুবেল ভাই কই, বাসায় নাই?
-নবাবজাদা যাবে কোথায় বাসাতেই আছে! কাজ কর্ম তো একটাই সারাদিন পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখা।
-তাহলে তোমার ছেলেকে একটু কামলা দিতে পাঠালাম?
-যেখানে খুশি পাঠা।
সকাল থেকে রুবেলের মাথা গরম হয়ে আছে, মায়ের সাথে একচোট ঝগড়া করে মাথা ঠান্ডা করতে আপাতত টিভির সামনে বসে আছে, যদিও সারাদিনে তার কাজ বলতে ওই “আপাতত” টিভি দেখাটাই, সন্ধায় গিয়ে মিথিলার ভাই মিনারকে টিউশন দিয়ে বের হয় আড্ডায়, ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। মাস্টার্স শেষ করে এভাবে টিভি দেখে কাটাচ্ছে প্রায় দুবছর, সে কারো চাকর হতে পারবেনা বলে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু বিজনেস করার জন্য বাবা এক পয়সা দিতেও নারাজ। টিউশনিটাও করতোনা শুধু সিগারেটের খরচ চালাতে করছে, ওটার খরচ মার কাছে চাইতে লজ্জা লজ্জা লাগে। টিভিতে ‘জাব উই মেট’ চলছে, কারিনা কাপুর সবে মাত্রই শাহেদ কাপুর কে জড়িয়ে ধরে কিস করা শুরু করেছে তখনই “রুবেল ভাই কি দেখেন?” বলে মিথিলার প্রবেশ। রুবেল অপ্রস্তুত, চ্যানেল পান্টাতে পাল্টাতে বিরক্তি ঝেড়ে বলল,
-ওই নক করে ঢুকতে পারিস না?
-আজব ড্রয়িং রুমে কেউ নক করে ঢুকে! আপনি এগুলা দেখবেন তো দরজা বন্ধ করে নিলেই হয়! আর এত লজ্জা পাওয়ার দরকার নাই এই সিন আমি বিশ পচিশবারের বেশি দেখসি।
-বেশি কথা বলিস ক্যান? কি চাস?
-দেখেন না ভাইয়া আব্বা আমার গায়ে হলুদের হলুদ নিয়ে আসছে অথচ হলুদ দেখে মনে হইতেসে আদা আপনি বাজারে গিয়ে ভালো দেখে কাচা দেখে টসটসে রঙ দেখে কিছু হলুদ এনে দেননা প্লিজ!
-আমি আদাও চিনি না হলুদও চিনিনা।আর এখন কাজ আছে আমার, পারবোনা।
-এনে দিবেননা সেটা বললেই তো হয়, এত ভাব ধরার কি আছে! আর আপনার কি কাজ আমার খুব ভালোভাবেই জানা আছে, হুহ। কিসিং সিন এতক্ষনে শেষ। বলেই গটগট করে বের হয়ে গেল মিথিলা, রুবেল কটমট চোখে ওর যাওয়া দেখছে। মাথা গরম আরো কয়েক ফারেনহাইট বেড়ে গেল। রুবেল মিথিলাকে ভালোবাসে, আর আজ তার ভালোবাসার মানুষের গায়ে হলুদ। মাথা গরম হবারই কথা।
মিথিলারা এ বাড়িতে যখন এল বয়স তখন তার বারো কি তের, রুবেলের ছোট বোন পিউ ও মিথিলার বয়সী। একই বাসা আর সমবয়সী হওয়াতে ভাবও হয়ে যায় দুজনের, সে থেকে রুবেলদের বাসায় তার যাতায়াত নিয়মিত, পিউ এর সাথে একত্রে স্কুলে যাওয়া একত্রে পড়াশোনা।
রুবেলকে সে কবে থেকে কিভাবে ভালোবাসতে শুরু করে তা মিথিলারও জানা নেই। বুঝতে পারে সেদিন, যেদিন মিথিলার হাতে রুবেল চিঠি গুজে দেয় মিথিলারই এক বান্ধবীকে দিতে। চিঠিতে কি লেখা আছে পড়ার আগ্রহ দমন করতে পারেনি ও। স্কুলের টয়লেটে গিয়ে লুকিয়ে চিঠি খোলে, স্কুলের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে তিথির জন্য রুবেলের লেখা সেই আবেগ ভারাক্রান্ত চিঠি পরে রাগে দুঃখে টপ টপ করে চোখ দিয়ে পানি পা্রেছিল তার, আর চিঠির স্থান হয়েছিল কমোডের ভিতরে। মায়ের চোখ এড়িয়ে সারারাত বারান্দায় বসে কেদেছিল, ভালোবাসা বুঝতে শিখেছিল সেদিনই। বয়স তখন পনের,পড়ে ক্লাস নাইনে। আসলে ওই বয়সটাই যেন কেমন কেমন!
হঠাত করেই সেদিনটার কথা মনে পড়ে মিথিলার, আর সাথে সাথেই মন খারাপের মাত্রাটা বাড়তে শুরু করলো।আসলে মন খারাপ যেদিন বিয়ে ঠিক হয় সেদিন থেকেই, অনেক কস্টে আজ তা লুকিয়ে লুকিয়ে চলার চেস্টা করছে, এখন রুবেলের কথা ভাবলে মন খারাপ ব্যাপারটা আর লুকিয়ে রাখা যাবেনা। তাই সে ঠিক করল সকালের মত আরেক দফা রুবেলের সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করার। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান তাই রুবেল বিকেল বিকেলই চলে এসেছে মিনারকে পড়ানোর জন্য, মিনার মন খারাপ করে বই নিয়ে বসে আছে,সে ভেবেছিল আজ পড়তে হবেনা, রুবেলকে বলেওছিল, বলেই উল্টো এক ধমক শুনতে হয়েছে। বই এর দিকে তাকিয়ে সে ভাবছে আজ রুবেলের মেজাজ এত খারাপ কেন, মিথিলার ধমকে চমকে তাকালো,
-ছোট তুই এখানে কি করিস, তোকে ঘরে ফুল লাগাতে বলসিলাম না! ওঠ!
-পড়তেসি তো!
-অ্যাই বোনের গায়ে হলুদ থেকে তোর পড়া বড় হয়ে গেল! আমি এক থেকে পাচ পর্যন্ত গুনবো এর মধ্যে যদি না উঠিস তাহলে তুই আমার ভাই না, তোরে যেন আর আমার আশেপাশে না দেখি! এক, দুই, তিন
-ভাইয়া না ছাড়লে কিভাবে যাব! রুবেল এবার গলা উচু করে বলল,
-মিনার তুই এবার এস এস সি দিবি ভুলে যাসনে! নে অঙ্ক বইটা বের কর আজ এক চ্যাপ্টার শেষ করাবো
-ছোট এখনও বলছি! চার, সাড়ে চার পাচ বলেই টেবিলের ঊপর রাখা গ্লাসের পানিটা টেবিলে ফেলে দিয়ে বই খাতা ভিজিয়ে মিথিলা প্রস্থান নিল। রুবেল এবং মিনার তখন একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
ঠিক যখন মিথিলার গায়ে হলুদ শুরু হয়েছে তখন রুবেল বাসা থেকে বের হল, কোথায় যাবে সে জানেনা, আড্ডা দিতে যাবেনা আজ সেই মুড নেই, তার মন চাচ্ছে এমন কোথাও চলে যেতে যেখানে কেউ তাকে চেনেনা। মিথিলার সমস্ত ওলট পালট কাজ গুলোই রুবেলকে ওলট পালট করে দেয়। যেমন আজকের এই পানি ঢেলে দেয়ার কাজ এটা তার নতুন না,এরকম সে অনেকবার করেছে রুবেলের সাথে। প্রথমবারের ঘটনা এমন, স্পাইক চুল নতুন শার্টে মাঞ্জা মেরে সে প্রথম তিথির সাথে ডেটিং এ যাবার জন্য গেট থেকে বের হওয়া মাত্রই ছাদ থেকে এক বালতি পানি এসে তার স্পাইক চুলকে নেতিয়ে দিয়ে যায়। উপরে তাকানো মাত্রই সে মিথিলার দেখা পায়, কান ধরে ছাঁদ থেকে নামিয়ে আচ্ছা মত ঝাড়ি দেয়া হয় সবার সামনে, যার সুফল ছিল পরের দিন সাদা শার্টে আরো এক বালতি নীল রঙ এর পানি।
একবার সিগারেট না নেভানের অপরাধেও পানির ঝাপটা খেতে হয়েছে, এরপর থেকে মিথিলার সামনে সে কখনো সিগারেট ধরায়নি। সেই ছোটবেলা থেকে এই বুড়োবেলা অবদি রুবেল একটা জিনিসকেই সবথেকে বেশি ভয় পায় তা হল মাকড়সা, বেছে বেছে বড় বড় কালো মাকড়সা এনে মাঝে মাঝেই রুবেলের গায়ে ছেড়ে দেয়া ছিল মিথিলার ভয়ঙ্কর কাজের একটি।মিনারকে পড়াতে গিয়ে সে মিথিলার লবন চা খাওয়াও শিখে গেছে। অবশ্য ততদিনে সে মিথিলার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তাই সে তখন বীষ মেশানো চাও অবলীলায় খেতে পারত।
কবে কবে সে এই পাগলী মেয়েটার প্রেমে পড়ল ভাবলেই অবাক হয়। বৃষ্টির তালে ছাঁদ ঝাপিয়ে হঠাত তার মুখোমুখি হওয়াতে যেদিন মিথিলার গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠেছিল সেদিন প্রেমে পরেছিল রুবেল, প্রথম সবুজ রঙের এক শাড়ি পড়ে মেহেদি পায়ে দৌড়ে এসে যেদিন সবাইকে জিজ্ঞেস করছিল কেমন লাগছে সেদিন প্রেমে পড়েছিল ও, এস এস সি তে এ প্লাস পেয়ে যেদিন নাকের পানি চোখের পানি এক করেছিল সেদিনও প্রেমে পড়েছিল রুবেল। বাগানে গাছের আড়ালে লুকিয়ে সিগারেট খেতে ধরেছিল যেদিন সেদিনো প্রেমে পড়েছে আরেকবার। নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছিল কোথাও হারাতে দেবেনা সে মিথিলাকে, যেদিন প্রচন্ড জ্বর এর ঘোরে মিথিলা বলেছিল “আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন” রুবেলও সেদিন কিছু চিন্তা না করে বুকে লুকিয়ে নিয়েছিল তাকে, মিথিলা বলেছিল “আরেকটু শক্ত করে”। সব কথা মনে হতেই তার মনে হচ্ছিল কেও যেন বুকের বা পাশটায় একে একে শুই বিধিয়ে যাচ্ছে।
-মিথিলা আপু, রুবেল ভাই তোমাকে ছাদে ডাকে।
-গিয়ে বল আমি এখন উঠে যেতে পারবোনা।আর জিজ্ঞেস করে আয় সে আমাকে হলুদ দিতে আসে নাই ক্যান? কি কাজে ডাকে এখানে এসে বলতে বল। আচ্ছা থাক গিয়ে বল আসতেসি একটুপর। রাত বাজে ১১টা সবাই হলুদের নাচ গান নিয়ে ব্যাস্ত, দম বন্ধ হয়ে আসছে একথা বলে সে ছাদে চলে এল। অন্ধকার ছাদে কিছুই দেখা যায় না শুধু এক কোনায় এক টুকরো আগুন উপর নিচ ওঠানামা করছে। বিড়ালপায়ে কখন এসে মিথিলা পাশে দাড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি রুবেল।
-সিগারেট ফেলেন বমি আসতেসে আমার।
চমকে পিছনে তাকায় রুবেল, হলুদ রঙের শাড়িতে সাদা হলুদ ফুলে অসম্ভব রুপবতী লাগছে মিথিলাকে, রুবেলের মন চাচ্ছে সেদিনের মত শক্ত করে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু সম্ভব না। খুব রাগ লাগছে তার তাই কপাল কুচকে তাকিয়ে আবার সিগারেটে টান দেয় সে,দিতেই থাকে
-কথা কানে যায়না? সিগারেট ফেলতে বললাম না!
-টাকা দিয়ে কিনসি ফেলবো কিসের জন্যে।
-আচ্ছা টানেন গেলাম আমি। শুধু শুধু কিসের জন্য ছাদে উঠালেন! অসহ্যকর!
-শোন, ফেলসি সিগারেট।
-তাড়াতাড়ি বলেন কি বলবেন?
-আচ্ছা তোর হবু বর যেন কি করে?
-প্রাইভেট একটা কম্পানিতে চাকরি করে।
-চাকরি করে!! তাও আবার প্রাইভেট, তাইলে সারাদিন অফিসেই থাকতে হবে তোরে টাইম দিবে কিভাবে?!
-মানে কি! চাকরি করলে অন্য জামাইরা যেভাবে বউকে টাইম দেয় আমাকেও ওইভাবেই দিবে!
-না শোন ব্যাবসা পাতি করে এমন কাউকে বিয়ে করলে চাইলেই কিন্তু তার কাছে টাইম পাওয়া যায়।
-ব্যাবসা! অসম্ভব ব্যাবসা করে এমন ছেলের কথা আমি ভাবতেও চাইনা! ‘ব্যাবসা করে’ শুনতেই তো কেমন শোনা যায়, ‘ব্যাবসা করে’। উহু অসম্ভব!
_ওই, ব্যাবসা করে সমস্যা কি! ওইটাইতো ভালো,কারো গোলামি করা লাগেনা, লেজ ধরে স্যার স্যার করা লাগেনা!
-না আমার কাছে এটা ব্যাবসা থেকেও হাজার গুন ভালো?
-না শোন অফিসে কিন্তু মেয়েরাও থাকে, দেখিস তোর জামাই আবার
-এগুলা বলার জন্য ডাকছেন আমাকে?
-না মেইন কথা হল, শুনলাম তুই বিয়ের পর নাকি ঢাকা চলে যাবি…
-জামাই ঢাকা থাকে তাহলে তো আমারো ওইখানেই থাকা উচিত তাইনা!
-তাইলে তুই ঢাকাই যাবি
-হ্যা!
-তাহলে আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখবে কে?
-আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখবে কে মানে! আমার তো একদিন যেতেই হবে তাইনা এখন যা পরে গেলেও তা! আর তারা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল রাখতে পারবে আব্বা আম্মার খেয়াল রাখবে আর আম্মা আব্বার, তাছাড়া মিনার আছে আপনারা আছেন। আর এমন তো না আমি একেবারে সারাজীবনের নামে যাইতেসি সবসময় আসা যাওয়া থাকবেই!
-না শোন আশে পাশে কাছে কোথাও বিয়ে হলে কিন্তু সবসময় মা বাবার চোখের সামনে থাকতে পারবি, সবসময় তাদের খেয়াল রাখতে পারবি।
-নাহ আমার আশে পাশে কাছে থাকার দরকার নাই, দূরে থাকলে সম্পর্ক ভাল থাকে। আর এখানে আশে পাশে কেঊ আমাকে বিয়ে করার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়ায় রয়নাই!
-এহ বেশি পন্ডিত হইসে! যাহ নিচে যা সারা শরীরে হলুদ লাগায় বসে থাক।
খুব কস্ট হয় মিথিলার, এমন তো না যে মিথিলা জানেনা রুবেল তাকে ভালবাসে! মেয়েরা কিভাবে কিভাবে যেন বুঝেই যায় ভালোবাসার কথা। ভেবেছিল রুবেল হয়তো আজ কথা গুলো বলবে যা শোনার অপেক্ষা তার সাত বছরের।ভেবেছিল হয়তো আজ আরেকবার রুবেলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে বলবে সে। শেষরাতে একবার ছাদে এসেছিল মিথিলা, আড়াল থেকেই দেখে রুবেল সিগারেট পুড়িয়েই চলছে।
-আন্টি চিনি আছে বাসায়?
-আছে
-চা পাতি?
-আছে।
-দুধ
-হুম
-তাহলে চা খাওয়াও তোমার বাসায় বিয়ের আগে শেষ চা খেতে আসলাম।
-রান্নাঘরে আয় গল্প করতে করতে বানাই
-আজকের দিনেও তুমি আমাকে রান্নাঘরে চা খাওয়াবা! মোটেও না আমি ড্রয়িং রুমে বসলাম তুমি চা নিয়ে আস আর আমি কিন্তু মোটেও খালি খালি চা খাবোনা!
-আচ্ছা যা বয় আর রুবেলকে জিজ্ঞেস কর ও চা খাবে কিনা ড্রয়িং রুমে পা রেখেই মিথিলা জানাল রুবেলও চা খাবে।
-ওই আমি বলসি আমি চা খাব?
-আমি বলসি তাই খাবেন
-ওই তুই কেরে তুই বললেই চা খেতে হবে মা, আমি চা খাবোনা এখন।
-চুপ!
টিভির সুইস অফ করে সামনে দাঁড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হল রুবেলকে, স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী আজ নিতেই হবে মিথিলার, হাতে তুলে নিল পাশের টেবিলের ফুলদানিটা
-রুবেল ভাই সত্যি করে বলেন তো কাল ছাদে ডেকেছিলেন কেন?
-কেন ডাকসিলাম তা তো তখনই বললাম!
-আমি সত্যি করে বলতে বলেছি
-আরে সত্যিই তো বলছি
-আপনি সত্যি বলছেন না এবং আমি এখন এক থেকে পাচ অবদি গুনবো……… এক দুই
-সত্যি ওগুলা বলার জন্যই ডেকেছিলাম
-তিন, সাড়ে তিন
-না শোন, তোর তো বড় ভাই টাই নাই এখন তুই বিয়েতে খুশি কিনা তা তো কারো জানতে হবে! তা জানার জন্য ডাক দিয়েছিলাম
-চার, সোয়া চার, সাড়ে চার… রুবেল ভাই, আপনি এখন ভাব্বেননা যে আমি পৌনে পাচ বলব, আমি সরাসরি পাচ বলব! সো যেকোন সময় যে ফুলদানিটা তার মাথায় এসে ভেঙ্গে পড়বেনা তার কোন গেরান্টি নেই বরং মাথায় ভাঙ্গার পসিবিলিটিই বেশি,তাই কোন রিস্ক না নিয়ে একদমে রুবেল জানালো,
-মিথিলা আমি তোকে ভালোবাসি, ঢিল দিসনা ঢিল দিসনা! ফুলদানিটা নামিয়ে রেখে মিথিলা বলল,
-আবার বলেন কি বললেন?
-ভালোবাসি তোকে।
-গাধা একটা।
-আর তুই?
-চুপ!
রজনী ৯ ঘটিকা, রুবেলের ফোনে মিথিলার মেসেজ- ami chade. 5 miniuter beshi 1 second o wait korbona.
তড়িঘড়ি ছাদের দিকে পা বাড়ায় রুবেল।
-নে পাচ মিনিটের আগেই চলে আসলাম
-ভেরি গুড। এখন শোনেন আমি আপনাকে আপনি আপনি বলতে পারবোনা আর আপনি আমাকে তুই তুই বলবেন না। ওকে? আর এখন আমি তোমাকে ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট কিছু কথা বলব, ভালভাবে শুনে বুঝে ঠিক করবে তুমি কি করবে
-কি কথা?
-রাতটা কাটলেই আমার বিয়ে তাই তোমার কাছে টাইম আছে এই রাতটাই। এখন শোন, চাকরি না করে ব্যাবসা করে এমন কারো কথা মনে হলেই আমার চোখের সামনে লুঙ্গি পড়ে পান খাওয়া লোকের ছবি ভাষতে থাকে সো আমি ব্যাবসা করবে এমন ছেলে্র সাথে সংসার করতে পারবোনা, সিগারেট খাওয়া ছেলে আগেই ডিসকোয়ালিফাই, সন্ধ্যা সাতটার পর আমার বাসায় ঢোকা নিষিদ্ধ, সারাদিন পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখা ছেলে আমার পছন্দ না। সো, এগুলা সব মেনে আমাকে পালিয়ে নিয়ে যাবার সাহস যদি থাকে তাহলে সকালে সবার ঘুম ভাঙ্গার আগেই এ বাড়ি থেকে আমাকে বের করে নিয়ে যেতে হবে, আর না পারলে কাল আমার অন্য কারো সাথে বিয়ে। এখন বল কি করবে?
-পালিয়ে যেতে হবে? এই বয়সে!
-জ্বী হ্যা! আর এটা তোমার আগে চিন্তা করা উচিত ছিল এবং আমাকে আগে বলা উচিত ছিল যে ভালোবাস!
-তোকে না মানে তোমাকে নিয়ে উঠাবো কোথায়! আর চলবোই বা কিভাবে?
-আমি জানিনা।
-মা বাবকে ছেড়ে এভাবে!
-কান্নাকাটি করার কিছু হয়নাই আমি একবারে নিয়ে যেতে বলছিনা পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে চলে আসবে আমাকে নিয়ে।
-যদি মেনে না নেয় ঘরে না ঢুকতে দেয়?
-অ্যাই তুমি এত ভিতু ক্যান! অসম্ভব আমার এত ভীতু কাউকে দিয়ে চলবেনা। আমি গেলাম।
-আই না শোন, চল পালাবো।
-এখন তাহলে শক্ত করে জড়িয়ে ধর।
পরের দিন সকালে মিথিলার খোজে রুমে গিয়ে ছোট একটি চিরকুট পাওয়া যায় তাতে লিখা, “মা-বাবা, আমার এ বিয়েতে মত নেই। আমি একজনকে ভালোবাসি তাই অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। যাকে ভালোবাসি তার সাথে যাচ্ছি, তাকেই বিয়ে করবো। বরের নাম মুখে আনতে নেই তাই নাম জানাচ্ছিনা, তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে। দোয়া কোরো।
ইতি,
মিথিলা।”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা