রূপা

রূপা
রূপা রাগে লাল হয়ে প্রায় চিৎকার করে বলল,
-তোমার সাথে সংসার করা প্রায় অসম্ভব। রূপা যতটা রেগে চিৎকার করে কথাটা বলল, আমি তত নরম সুরে বললাম,
-হু। শুধু হু বলেই কি শেষ? তুমি মানুষ নাকি রোবট আমার প্রতি তোমার ভালবাসার এই নমুনা।
-তিনশত গ্রামের হৃদপিণ্ডটা তো পুরোটাই তোমার দখলে তারপরেও কি ভালবাসা হয় না।
-ফিসফিস করে কি বলো যা বলার জোরে বলো, তোমার কাছে জীবনেও ভালবাসা পাইনি।
-যাদের ভালবেসেছি পুরা হৃদপিণ্ড তাদের দখলে দিয়েই ভালবেসেছি তারপরও কেউ বিশ্বাস করে না। রূপা আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল,
-কতজনকে তোমার এই হৃদপিণ্ড দিয়েছো।
-ইয়ে না মানে শুধু তোমাকেই তো দিলাম।
-যাই হউক আমি চলে যাচ্ছি তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ, প্লিজ দয়া করে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব সাইন করে দিও।
-আচ্ছা।
-শুধু আচ্ছা বাহ এই তোমার প্রেমের নমুনা, আমাদের বিয়ের কতদিন হয়েছে বলতে পারো।
-প্রায় ২বছর হবে।
– ২বছর ৩মাস ১৫দিন হয়েছে এতগুলা দিনের মাঝে কখনো আমাকে সময় দিয়েছ, কখনো হাত ধরে হাটতে বের হয়েছিলে।
-ভুলে গেছি ২/১বার তো ধরার কথা।
-ফাজলামি করবা না, সুখে শান্তিতে একা থাকো।
রূপা রাগ করে ঠিকি ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে গেল। রূপা যাওয়ার ঘন্টাখানিক বাদেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়তে লাগল এই সময় রূপা থাকলে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজার জন্য পাগল হয়ে যেত তারপর গরম ধোয়া উঠা এক কাপ চা দুজন ভাগ করে খাওয়া লাগত। সে সব কিছুতেই রোমান্টিক তার শরীলে রক্ত কম প্রেম বেশি। ঘুম প্রায় লেগে গিয়েছিল ফোনের শব্দে জেগে উঠলাম বাহিরে বৃষ্টি নেই বললেই চলে রোদ উঠে গেছে আকাশ একদম পরিস্কার। ফোন রিসিভ করতেই আম্মু ফিসফিস কণ্ঠে বললেন,
-এই হারামজাদা বৌমা নাকি ভাইয়ের বাড়ি চলে গেছে।
-হু।
-নিশ্চই বড় কিছু করেছিস নইলে ভাইয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা না কত লক্ষী মেয়ে।
-হু।
-হু হু করছিস কেন দিব এক থাপ্পড় তোর বাপ যদি জানতে পারে কি হবে ভেবেছিস, তুই এক্ষুনি গিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে আয়।
-গেছে যখন থাকুক ২/৩দিন তারপর না হয় নিয়ে আসব।
-এ কেমন কথা এক্ষুনি তুই যাবি এবং গিয়ে নিয়ে আসবি। তোদের ঝগড়া লাগছে কি নিয়ে?
-সে ভালবাসার সমুদ্র আর আমি নাকি সেই সমুদ্রের তুলনায় খাল-বিল।
-কথা সত্য তোর মাঝে ভালবাসা জিনিসটা কম।
-ডাক্তারের কাছে যেতে হবে দেখি কোন ভালবাসা বৃদ্ধির ঔষধ দেয় কিনা।
-ফাজলামি না করে গিয়ে নিয়ে আয় আমি ঘন্টা দুয়েক পরে আবার ফোন দিব।
বাসার বিড়াল ২টা মিয়াও মিয়াও শুরু করছে মনে হয় দুজনের পেটে আজ কিছু পরে নাই। আমিও তো খাই নাই খাওয়ার কথা মনে হতেই পেটে যেন গুড়গুড় শব্দ শুরু হইছে। সারা ঘর খোজে খাবার মত কিছুই পেলাম না, এই মেয়েটা কি আমাকে হাতে না মারতে পেরে ভাতে মারার প্ল্যান বানিয়ে গেল। এই মেয়েটার সাথে সংসার করা অসম্ভব অন্তত আমার জন্য কয়েক পিস বিস্কুট রেখে যেতে পারতো। চিনি আর দুধের কৌটা পেয়েছি আপাতত গুঁড়ো দুধ খেয়ে পেটের জ্বালা কিছুক্ষণের জন্য থামানো যাবে, বিড়াল ২টাকেও গুঁড়ো দুধ দিলাম বাহ এরা আমার থেকে দ্রুত সাবার করে দিচ্ছে।
রূপা তার ভাইয়ের বাসায় গেছে এখান থেকে ভাইয়ের বাসা সব থেকে কাছে কিছু হলেই ভাইয়ের বাসায় চলে যাবে, তার ভাইকে বলতে হবে বাসাটা দূরে কোথাও ভাড়া নিতে। তবে সমস্যা হচ্ছে তার এই ভাইয়ের সাথে কথা বলতে আমার ভয় হয় দেখতে যেমন মোটা তেমনি ভয়ংকর গোফ যেন পাকিস্তানি মিলিটারি। বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে লাগল প্রথমে আস্তে আস্তে পরে ঝুম বৃষ্টি পুরো কাক ভেজা হয়ে রূপার ভাইয়ের বাসায় উঠলাম। আজ সর্দি হবে শিওর বৃষ্টি আমার অতি পছন্দের জিনিস তবে ভিজলেই সর্দি জ্বর যাকে বলে কুত্তার পেটে ঘি হজম হয় না। রূপা আমাকে দেখে বলল,
-বৃষ্টিতে ভিজে আসার কি দরকার কি ছিল, আমি তো এমন প্রয়োজনীয় কেউ না।
-বের হওয়ার সময় বৃষ্টি ছিল না।
-গরম চা দিচ্ছি তুমি কাপড় বদলে আসো ভাইয়ার কাপর আছে।
-সমস্যা নেই ঠান্ডা যা লেগে যাওয়ার লেগে গেছে, তুমি ব্যাগ নিয়ে চটজলদি চলে আসো।
-আমি তো তোমার সাথে যাচ্ছি না, আমি এখানে কিছু দিন থাকব।
-সত্যি কি যাবে না।
-না যাব না, তবে কিছু শর্ত আছে যদি ঠিকমতো মানতে পারো তাহলে ভেবে দেখব।
-বাসায় গিয়ে শর্ত নিয়ে আলোচনা হবে এখন চলো আমার শরীর খারাপ লাগছে।
রাতে আমার জ্বর এসেছে এমন জ্বর যে সব কিছু ঘোলাটে দেখছি। ঘুম ভেঙ্গেছে রাত প্রায় ৩টার দিকে চেয়ে দেখি রূপা মাথার কাছে বসে আছে ভিজা টাওয়াল দিয়ে কপাল মুছে দিচ্ছে। তার দিকে চেয়ে হেসে বললাম,
-এসে তো লসে হয়ে গেল তোমার এখন স্বামীর সেবা যত্ন করতে হচ্ছে।
-বেশি কথা বলবা না, তোমারে এই বৃষ্টিতে যেতে কে বলছিল?
চেয়ে দেখি রূপার চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে নিশ্চই কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের মনটা আশ্চর্য রকম নরম এবং একি সাথে শক্ত এরা ছোট্ট একটা কথা নিয়ে রেগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে পারে তেমনি অল্প কিছুতে কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দিবে।
-রূপা এক কাপ গরম চা দেও তো।
-শুয়ে থাকো আমি নিয়ে আসছি।
রূপা মিনিট পাঁচেক পর চা নিয়ে আসলো। জ্বরের জন্য চায়ে তেমন স্বাদ না পেলেও রূপার মুখের হাসিতে ঠিকি ভালবাসা পেয়েছিলাম, যদি আজ রাতে ঘুম না ভাঙ্গতো তাহলে সারা রাত কান্নাকাটি করতো। ভালবাসা জিনিসটাই অন্যরকম যখন সেটা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন তখন পুরো পৃথিবীটা ভালবাসার কাছে তুচ্ছ মনে হবে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত