“কে? কে ওখানে? সাহস থাকে তো সামনে এসে দাঁড়ান!” সদ্য অফিস থেকে ফিরে, গোসল সেরে, বিছানায় গা’টা একটু এলিয়ে দিয়েছিল শুভ্র। হঠাৎ দরজার দিকে দৃষ্টি যেতেই চমকে গেলো। ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো। একজোড়া চোখ প্রত্যেহ তাকে আড়াল থেকে দেখে, এটা শুভ্র হাতেনাতে ধরতে না পারলেও টের পায়, অনুভব করতে পারে। বিগত কয়েকটা মাস ধরেই শুভ্র সেটা অনুভব করে আসছে। বাসায় ফেরার পর প্রত্যেকটা মুহূর্ত শুভ্রর কেমন যেনো লাগে!
তার অবচেতন মন জানান দেয়, কিছু তো একটা আছেই যেটা ভীষণ সংগোপনে আড়াল থেকে রোজই তাকে অনুসরণ করে চলেছে। কিন্তু আজ! আজ তো শুভ্র দরজার ঈষৎ ফাঁক দিয়ে তার চোখ দুটোই দেখে নিয়েছে! জায়গা থেকে নড়ে বসলো শুভ্র। উঁচু গলায় প্রশ্ন করলো, কে? কে ওখানে? সাহস থাকে তো সামনে এসে দাঁড়ান! দরজা ঠেলে অবনত মস্তকে এক মেয়ে এসে দাঁড়ালো সামনে। বিস্ময়ে হতবাক শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আপনি? আমাদের নীচতলার ভাড়া বাসার মেয়েটা না? কি যেনো নাম? ওহ্, হ্যাঁ, মনে পড়ছে, লাবণ্য। আপনি? আপনি এতরাতে আমার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে? বুঝলাম না!
মেয়েটি কেঁপে উঠলো। কেঁপে উঠলো তার ঠোঁটজোড়াও! প্রচন্ড এক ভয়ে অবনত মস্তকে নীচের দিকে তাকিয়ে সে। হাতদুটো তার মৃদু কাঁপছে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে? সেই শক্তিও যেনো হারিয়েছে সে! শুভ্র যখন প্রশ্নের পর প্রশ্ন মেয়েটির দিকে ছুড়ে দিতে থাকলো, ছটফট মেয়েটি তখন অসহায়ের মতোন এদিক-সেদিক করতে লাগলো।
চা হাতে রুমে ঢুকলো শুভ্রর খালাতো ভাইয়ের বউ সুবর্ণা। রুমে দাঁড়ানো মেয়েটাকে চিনে নিতে তার খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। চায়ের কাপটা দেবরের দিকে এগিয়ে দিয়ে সুবর্ণা তাকালো মেয়েটির দিকে। সুবর্ণার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি জ্বলজ্বল করছে। সুবর্ণা অনেকটা উচ্ছ্বাসের সাথে বললো, আরে লাবণ্য যে! কখন এলে? কতোদিন পর এলে! বসো না একটু গল্প করি! কি খাবে? চা নাকি কফি?
লাবণ্য ভীরু চোখে একবার সামনে দাঁড়ানো শুভ্রর দিকে তাকালো। তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সুবর্ণার প্রশ্নের জবাব দিলো তেজ হীন গলায়। না, আপা। অন্য আরেকদিন। অন্য আরেকদিন এসে চুটিয়ে গল্প করবো। আজ রুমমেট একা আছে, আজ যাই। লাবণ্য চলে যেতেই ভাবীর মুখোমুখি দাঁড়ালো শুভ্র। বললো, একে আপনি চেনেন? ঘোর কাটিয়ে সামনে তাকালো সুবর্ণা। হ্যাঁ, চিনি। চমৎকার একটা মানুষ। সমস্যা শুধু একটাই! কথা একটু বেশি বলে। কিন্তু হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো? তুমি চেনো না তাকে? আমাদের নীচতলার ভাড়াটিয়া সে!
সশব্দ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো শুভ্র। ধীর গলায় বললো, ‘আচ্ছা!’ সুবর্ণা দরজার কাছে গিয়ে বাহিরটা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে শুভ্রর পাশে এসে দাঁড়ালো। প্রশ্ন করলো বিনীত ভঙ্গিতে – একটা কথা বলবো, ভাই? চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শুভ্র বললো, অনুমতি নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন কবে থেকে? গলা খাঁকারি দিলো সুবর্ণা। লাবণ্য মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগে? ভ্রু কুঁচকালো শুভ্র। ভাবী, কিসের মধ্যে কি টানছেন? মেয়েটা তখন দরজার ফাঁক দিয়ে বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তাই ডেকে এনেছিলাম। তাল মেলালো সুবর্ণা। আমিও সে কারণেই জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগে?
শুভ্রর মুখভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সুবর্ণা বলে উঠলো, আসলে এই মেয়েটাকে আমি অনেকদিন ধরেই দেখে আসছি তোমাকে কেমন গোপনে গোপনে ফলো করে। কখনো দরজার ফাঁক দিয়ে, কখনো বা জানালা দিয়ে তোমাকে দেখে। সেদিন দুপুরে তো দেখি তুমি ঘুমিয়ে আছো আর মেয়েটা তোমার রুমের জানালা দিয়ে তোমার ওই উন্মুক্ত বুকের পশমের দিকে তাকিয়ে। শুভ্র বড়বড় চোখে ভাবীর দিকে তাকালো। সুবর্ণা দেবরের সন্দিহান চোখের ভাষা বুঝে নিয়ে হাসলো। হা হা বুঝতে পারলে না এখনো? সে তোমার প্রেমে পড়েছে। ভালোবাসে তোমায়। কৌতুক করে বলে উঠলো শুভ্র, হা হা হা ইন্টারেস্টিং তো! তারপর? তারপর বলুন! সুবর্ণার কথা বলার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো শুভ্রর কৌতুক ভরা গলা শুনে। চায়ের কাপ হাতে হনহনিয়ে তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাত্রি প্রায় দুটো বাজে। ফেসবুকিং করছিল শুভ্র। এমন সময় মেসেঞ্জারে টুং করে একটা আওয়াজ হয়। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তাকালো মেসেঞ্জারের মেসেজের দিকে। চমকে গেলো সে। সুবর্ণা ভাবী স্মরণ করেছে তাকে! শুভ্র মেসেজ পাঠায়, ভাবী, এতো রাতে? সাথে সাথে রিপ্লাই, ওই মেয়েটার সম্পর্কে পুরোটা না জানানো অবধি আমার ভালো লাগছিল না। তাই এতো রাতে তোমায় নক করতে বাধ্য হলাম।
শুভ্র শুধু মেসেজ সিন করলো। কিছু বললো না। ওদিকে টাইপিং শুরু হয়। দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট ধরে টাইপিং করার পর সুবর্ণা মেসেজ পাঠায়, মেয়েটার আপন বলতে তেমন কেউ নেই। সব হারিয়ে মেয়েটা যখন নিঃস্ব, মেয়েটার পড়ালেখা যখন বন্ধের পথে, তখন তার এক খালা, মায়ের আপন চাচাতো বোন হোন যিনি, তিনি মেয়েটাকে সার্বিকভাবে দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। আর এই খালা-ই তাকে এইচএসসির পর ঢাকায় নিয়ে আসেন। কোচিং এ ভর্তি হয় মেয়েটি। এবং একটা সময় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চান্স পায়। ঢাকা শহরে হলে থেকে পড়াশোনা তো খুব ব্যয় সাপেক্ষ তাই মেয়েটাকে তার খালা ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে বলেন। নীচতলায় সে ছাড়াও আরো ছয়টা ছাত্রী উঠেছে। ওরা প্রত্যেকেই ঢাবিতে পড়ে।
জানো, মেয়েটার চোখেমুখে না অদ্ভুত এক মায়া আছে! আমায় যখন আপা, আপা বলে ডাকে আমার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামান্য একটা ডাকই তো! অথচ যতবার সে আমায় আপা, আপা বলে ডেকেছে আমার ভেতরটা কেমন জুড়িয়ে গেছে! এতো কিছু বললাম তোমায় এই কারণে, তোমারও তো বাবা সেই ছোট্ট বেলায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে! মা? অন্যত্র বিয়ে করে নিয়েছেন। থাকার মধ্যে যে ভাইবোন গুলো ছিলো, যাদের তুমি নিজের শরীরের রক্ত পানি করে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুললে, তারাও তো আজ ব্যস্ত ভীষণ নিজের ক্যারিয়ার, নিজের স্বার্থ নিয়ে! জীবন যৌবন উৎসর্গ করে যাদের তুমি এতোটা বড় করলে, পেলে তাদের থেকে ভালোবাসার কোনো যথোপযুক্ত প্রতিদান? পেলে না তো! শুভ্র চুপ করে পুরোটা মেসেজ পড়ে নিলো। সুবর্ণা আবারও মেসেজ পাঠালো, শুভ্র, তোমার ভাইয়াও মেয়েটাকে ভীষণ পছন্দ করে। তাই মেয়েটাকে হাতেনাতে ধরা সত্ত্বেও সেও কিছুই বলছেনা। সেও চায় তুমি সুখে থাকো। তোমার ঘরভরা বাচ্চাকাচ্চা থাকুক, তোমার নিজের একটা সংসার হোক। টাকার পেছনে তো অনেক দৌড়ালে, করে ফেলো না এবার বিয়েটা!
সশব্দ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুভ্র। ভাবী, সদ্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া মেয়ে সে। বয়স আর কতোই বা হবে? উর্ধ্বে আঠারো। আঠারো বছরের একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আমার মতো বয়স্ক একটা ছেলেকে বিয়ে কেনো করবে? কেনো নষ্ট করবে তার জীবন? তাছাড়া আমার এসব সংসার টংসার ভাল্লাগে না। একলা আমি দিব্যি আছি। এখন আমার বিয়ে না করার জন্য আপনাদের যদি অসুবিধে হয়, বদনাম হয় কোনো তাহলে সেটাও জানিয়ে দিতে পারেন! কিচ্ছু মনে করবো না আমি। চুপচাপ চলে যাবো। অন্য কোথাও বাসা নিয়ে থাকবো।
সেদিন সুবর্ণা ভাবী শুভ্রকে বাড়ি ছাড়ার কথা না বললেও রাতারাতি শুভ্র একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল সেদিন। বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল সে। তারপর থেকেই গোপনে গোপনে বাসা খুঁজতে শুরু করে। এবং একটা সময় পেয়েও যায় কাঙ্খিত সে বাসা। পছন্দমতো বাসা পেয়ে একদিন শুভ্র কাউকে কিছু না জানিয়েই জিনিসপত্র গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। সেদিন কেউ দেখেনি শুভ্রকে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়। শুধু লাবণ্য তার রুমের জানালা দিয়ে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ছিলো অনেকক্ষণ শুভ্র যে রাস্তা দিয়ে চলে গেছে সে রাস্তার দিকে।
একসপ্তাহ পর শুভ্র ফিরে আসে। রুমে ফেলে যাওয়া ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক শুভ্র পুরনো ঠিকানায় ফিরতে বাধ্য হয়। সেদিন শুভ্রর চলে যাওয়ার পর লাবণ্য নিঃশব্দে কেঁদেছিল শুধু। তারপর ভার্সিটি, প্রাইভেট সব, সব কাজ লাবণ্য বন্ধ করে দিয়ে রুমে আশ্রয় নেয়। বাকিরা যখন ভার্সিটি আর প্রাইভেট পড়া আর পড়ানোর পেছনে দৌড়াতো, লাবণ্য তখন একদৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর এরই ফলশ্রুতিতে পড়ন্ত এক দুপুরে শুভ্রর দেখা সে পায়। দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে লাবণ্য। দ্রুত গেইট খুলে দিয়ে দাঁড়ালো বাহিরে গেইটের সামনেই। রিকশা থেকে নেমে লাবণ্যকে দেখেও না দেখার ভান করে শুভ্র পাশ কাটিয়ে চলে গেলো গেইটের ভেতর দিয়ে সোজা উপরে।
কিছুক্ষণ গেইটের সামনে পায়চারী করার পর, গেইটের তালা লাগিয়ে, উপরে শুভ্রর রুমের দিকে ধীর পায়ে এগোতে থাকে লাবণ্য। রুমের সামনে গিয়ে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই নিয়ে যখন সে ভীষণ দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছিল অমনি পেছন থেকে ভেসে আসে পরিচিত পুরুষ কন্ঠের স্বর, আপনি? প্রচন্ড ভয়ে লাফিয়ে উঠে লাবণ্য। পেছনের দিকে তাকিয়ে শুভ্রকে দেখে রীতিমতো ভূত দেখার ন্যায় চমকে উঠে সে। সেদিনের সে রাতের মতোই শুভ্রর কথার কোনো জবাব সে দিতে পারেনি। ঢোক গিললো লাবণ্য। অতঃপর নীচের দিকে তাকিয়ে কাঁপতে শুরু করলো। শুভ্র লাবণ্যকে কিচ্ছুটি বললো না। শুধু পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো লাবণ্যের মুখের উপর। কিছুক্ষণ চুপচাপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বুকের ভেতর এক সমুদ্র কষ্ট নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে গেলো লাবণ্য।
এত্তগুলা বই আর সাথে ল্যাপটপ! শুভ্রর হাঁটতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। তথাপি সিঁড়িটা বেয়ে নীচে নামলো। সিঁড়ির শেষ ধাপ অতিক্রম করার সময় অসাবধানে শুভ্রর হাত থেকে বইগুলো পড়ে গেলো নীচে। ‘ধ্যাত’ বলে নীচে পড়ে থাকা বইগুলো কুড়িয়ে জড়ো করছিল শুভ্র। কোথা থেকে যেনো ছুটে আসলো লাবণ্য। আমাকে দিন, আমাকে দিন বলে বইগুলো শুভ্রর হাত থেকে একরকম ছিনিয়ে নিলো সে। একহাতে বইগুলো বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আরেক হাতে গেইট খুললো লাবণ্য। গেইটের বাইরে বেরিয়ে শুভ্র ল্যাপটপসহ ব্যাগটা নীচে পায়ের কাছে রাখলো। এগিয়ে নিলো হাত লাবণ্যের দিকে। দিন, আমার বইগুলো আমার কাছে দিন। আপনার আর কষ্ট করতে হবেনা। এমনিতে অনেক করেছেন। লাবণ্য কেমন যেনো বোকার মতো হাসলো! কষ্ট কোথায়? আমি খালার বাসায় যাব। এখানে তো গাড়ি পাবেন না, আমি বরং এগিয়ে দিই বাসস্ট্যান্ডে অবধি! কেনো যেনো শুভ্র বেশি কিছু আর বলতে পারলো না। শুধু সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে পেছনে তাকালো শুভ্র। লাবণ্য ততক্ষণে তার কাছে পৌঁছে গেছে। শুভ্র লক্ষ্য করে দেখলো, লাবণ্য তখনও বইগুলো তার বুকের সাথে পরম যত্নে জড়িয়ে রেখেছে। এই প্রথম শুভ্র লাবণ্যের চোখের দিকে তাকালো। সত্যিই, চোখদুটো তার ভীষণ মায়াবী! যেনো অন্ততকাল এই চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যাবে! কিন্তু শুভ্র চায় না এ চোখের মায়ায় আটকা পড়তে। আর চায় না বলেই দ্রুত সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে গেছি। দিন, এবার অন্তত আমার বইগুলো আমায় ফিরিয়ে দিন। লাবণ্য কিছু না বলে একবার শুধু বোবা দৃষ্টি মেলে শুভ্রর মুখের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো, আসুক না, গাড়ি আসুক। গাড়ি আসলে নাহয় দিয়ে দেবো; রিকশা পাওয়া গেলে দরদাম মিটিয়ে লাবণ্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো শুভ্র। এবার তাহলে দিন। লাবণ্য কাঁপা হাতে শুভ্রর দিকে বইগুলো এগিয়ে দিলো।
বই হাতে রিকশার দিকে এগিয়ে গেলো শুভ্র। একটা ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করলো না। রিকশায় চড়ে বসে পেছনে ফিরে তাকালো শুভ্র। চিৎকার করে বললো, ওই তো শূন্য রিকশা, সিএনজি আর বাস দাঁড়িয়ে আছে! আপনার খালার বাসায় না যাবেন? উঠে পড়ুন। নতুবা সমস্যা নাহলে আমার সাথে এক রিকশায় যেতে পারেন! শুভ্রর শেষ কথাটা বলতে দেরী হলো, অথচ লাবণ্যের দৌড়ে গিয়ে রিকশায় উঠতে দেরী হলো না! রিকশায় উঠে বোকার ন্যায় হাসতে শুরু করলো লাবণ্য। অনর্গল কথা বলতে শুরু করলো। আপনি এখানে না থাকলে, আমায় না ডাকলে আমি চলে যেতাম। এই রিকশা চোখের আড়াল হতেই আমি ফিরে যেতাম বাসায়। আমার মোটেই একা ভাল্লাগে না। আর জার্নির সময় তো কোনো কথায় নেই! কেউ না কেউ সাথে থাকতেই হয়। অথচ এই শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই! পুড়ামনের অভিমান বুঝার মতো আমার কোনো ভালোবাসার মানুষ নেই।
মাঝে মাঝে তো মনে হয় এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে আসলো! এই বুঝি দম আটকে মারা গেলাম আমি! শেষ কথাটা শেষ করতে পারেনি লাবণ্য। তার আগেই শুভ্র লাবণ্যের কোলের মধ্যে থাকা একটা হাত মুঠোয় বন্দী করে নিলো। লাবণ্যর সারা শরীরে শিহরণ দিয়ে ওঠলো। কেঁপে ওঠলো লাবণ্য। ভীরু চোখে তাকালো পাশে বসা মানুষটার দিকে। নিশ্চুপ শুভ্র অথচ লাবণ্যের কাছে কেবলই মনে হচ্ছে চোখদুটো যেনো তাকে কিছু একটা বলছে! যেনো তাকে বুকের কাছে জড়িয়ে নিয়ে ভীষণ আদুরে গলায় বলছে, কিচ্ছু হবেনা, পাগলী। কিচ্ছুটি হবেনা। এইতো আমি এসে গেছি!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা