—আচ্ছা আপনি কত ডিগ্রী?
—মানে?
—আসলে জানতে চাচ্ছিলাম আপনার কোন কত ডিগ্রী?
—কিসব আবোল তাবোল বলছেন?
—আবোল তাবোল বলবো কেন? আপনিই তো প্রোফাইল নেইমে দিয়ে রেখেছেন অ্যাংগেল ডি মারিয়া।
—কে? অ্যাংগেল ডি মারিয়া।
—আরে ডি মারিয়া কে চিনেন না? আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার। মেসির পরেই তো দলে ডি মারিয়ার অবস্থান?
—দেখেন আমি এসব ডি মারিয়া টি মারিয়া কাউকে চিনি না।
—তাহলে প্রোফাইলে যে লেখা অ্যাংগেল ডি মারিয়া?
—ভালো করে দেখেন ঐটা অ্যাংগেল ডি মারিয়া না। ঐটা অ্যাঞ্জেল ফারিয়া।
—ঐ হলো। অ্যাঞ্জেল ফারিয়া আর অ্যাংগেল ডি মারিয়া একই।
—ঐ মিয়া ফাইজলামি করেন? ফাজিল কোথাকার?
—আরে ঐটা ফাজিল না ব্রাজিল হবে ব্রাজিল।
—মেয়ে মানুষ চ্যাটে দেখলেই চুলকায় না?
—না আমার চুলকায় না। আমার এলার্জি নাই।
—ঐ মিয়া জানেন আমি কে?
—জানি তো, অ্যাংগেল ডি মারিয়া।
—আমার চাচা পুলিশে চাকরী করে। বড় ভাই এলাকার নেতা। আর সব থেকে বড় কথা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড একজন সেই মাপের হ্যাকার। কলেজের ফার্স্ট বয়, সেইরাম ব্রিলিয়ান্ট। আমি বললে আপনার আইডি মুহুর্তের মধ্যে খাইয়া দিবে। তখন বুঝবেন আমি কি জানিস।
—বুঝজলাম আপনি দামী জিনিস? কিন্তু আপনি কি জানেন আমি কে?
—আপনি প্রধানমন্ত্রীর নাতি হোন তাতে আমার কি?
—না আমি প্রধান মন্ত্রীর নাতি না। আমি ময়মনসিংহ পলিটেকনিকের, কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের সপ্তম পর্বের ফার্স্ট বয়।
—মানে কি?
—মানে কিছুই না। মানে আমি ইয়াসিন।
একটা ছবি পাঠালো ইয়াসিন।
—আরে ইয়াসিন তুই? এই আইডি কই পাইলি?
—ক্যান? মনে নাই? তুই আমারে বলেছিলি একটা আইডি খালি তোরে ট্যাগ মারে। আর উল্টাপাল্টা পোস্ট করে।
—ও হ্যা, মনে পড়ছে।
—হ্যা। ঐ আইডিটাই অনেক চেষ্টার পরে হ্যাক করতে পারছি। তাই নাম চেঞ্জ কইরা একটু মজা লইলাম। ব্যাটারে হ্যাক করতে অনেক কষ্ট হইছে।
—থেংকু দোস্ত। আমার জন্য এতটা কষ্ট করার জন্য।
—আরে আমার বেস্টু কইছে হ্যাক না কইরা কি পারি?
—উম্মাহহ!! দোস্ত লাপিউ সো মাচ ♥♥…..
,
শেষ মেসেজটা দেখেই আর কোন রিপ্লে দিতে পারেনি ইয়াসিন। আনন্দে থ্রীকোয়াটার পড়েই লুঙ্গি ড্যান্স দিতে লাগলো। ডিংগাচিকা ডিংগাচিকা……
ওর ডিংগাচিকা নাচ দেখে রুমমেট কাউসার জিজ্ঞেস করলো……
—কি হইছেরে পাগলা?
—অনেক কিছু মামু। আনন্দে আমার নাচতে ইচ্ছা করতাছে ডিংগাচিকা ডিংগাচিকা…
—ধ্যাত্তেরি ডিংগাচিকার বাচ্চা। ডিংগাচিকা বাদ দিয়া শার্ট প্যান্ট সব খুইলা বল কি হইছে।
—অর্পিতা আমারে আই লাভ ইউ কইছে।
—সত্যি!!! বলিস কি?
—হ্যা সত্যি। খালি আই লাভ ইউই কয় নাই। সাথে ফ্লায়িং কিসও দিছে।
—কস কি? কেমনে? তুই তো এইখানেই বসে ছিলি এতক্ষন।
—হুম। মেসেঞ্জারে দিলো। এই দেখ।
—কই দেখি?
কাউসারের দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিলো ইয়াসিন। কাউসার দেখে আশাহত হলো। ও মনে করেছিলো সত্যিই বুঝি ইয়াসিনের এত দিনের একমুখী প্রেম বাস্তবে রুপ নিলো। ছেলেটা সেই প্রথম দিন থেকে পছন্দ করে অর্পিতাকে। ইয়াসিনকেও অপছন্দ করার কিছু নেই। ক্লাসের ফার্স্ট বয়, ব্রিলিয়ান্ট। দেখতে শুনতেও খারাপ না। কিন্তু এই সাড়ে তিন বছরে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোন সম্পর্কই গড়তে পারেনি মেয়েটার সাথে। তবে ওরা খুব ভালো বন্ধু। একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড দাবী করে। কিন্তু ইয়াসিন আজ পর্যন্ত অর্পিতাকে কিছুই বলতে পারেনি। ফলে ইয়াসিনের সব বন্ধুদের বিষয়টা জানা থাকলেও অর্পিতা কিছুই জানে না। ইয়াসিনই না করে দিয়েছে সবাইকে। ওর ইচ্ছে নিজের মুখেই ভালোবাসার কথাটা জানাবে সে।
—আরে শালা এটাতো লাপিউ।
—হ্যা লাপিউই তো লাভ ইউ। মানে আই লাভ ইউ।
—ধুর শালা! এরকমটা তো আমরা সবাই বলি।
—তোরা সবাই আর অর্পিতার মধ্যে পার্থক্য আছে। ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে বস।
কাউসার আর কোন কথা বাড়ালো না। শুধু মনে মনে এটাই ভাবলো যে একটা মেয়েকে কতটা ভালোবাসলে, এরকম একটা ছেলেমানুষি ব্যাপার নিয়ে এমনটা করা যায়। সে আবার নিজের পড়াতে মন দিলো। কিন্তু ইয়াসিন নিজেই পুরো মেসে ছড়িয়ে দিলো খবরটা। তাই মেসের সবাই ধরেছে মিষ্টি খাওয়াতে হবে সবাইকে। “ঠিক আছে”। বলে বেড়িয়ে গেলো ইয়াসিন।
কিছুক্ষন পর সত্যি সত্যিই মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো। সবাইকে বন্টন করে দিলো। আর এটাও ঘোষনা করলো যে কালকে ক্লাসেও সবাইকে মিষ্টিমুখ করাবে। তবে অর্পিতার কাছে বিষয়টা গোপন রাখতে হবে। মিষ্টির লোভে সবাই রাজি হলো।
,
ক্লাস শুরু হবার এখনো কিছুক্ষন বাকি। ইয়াসিন সবাইকে মিষ্টিমুখ করালো। কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া বাকী সবার কাছে কারনটা গোপন রাখা হলো। কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিলো। ইয়াসিন বললো আজকে নাকি তার গার্লফ্রেন্ড রাজি হইছে। সেই উপলক্ষে মিষ্টি। যদিও ইয়াসিনের কাছে বিষয়টা সত্য।
কিন্তু যার জন্য এত তুলকালাম কান্ড। সেই অর্পিতাই এখনো এলো না। এই তো ও এসে পড়েছে। সবাই যখন মিষ্টি খাওয়ায় ব্যাস্ত। ইয়সিন তখন নিজেই ওর কাছে এগিয়ে গেলো। ইয়াসিন জানে মিষ্টি ওর খুব পছন্দ। তাই একটু রাগাতে হবে ওকে।
—নে মিষ্টি খা।
—কিসের মিষ্টি?
—আই অ্যাম ইন লাভ।
—সত্যি!! কার সাথে।
—আরে আগে তো মিষ্টি খা।
—মিষ্টি কই? এটাতো কাচা মরিচ।
—হ্যা। কাচা মরিচই তো।
—বারে, সবাই মিষ্টি খাচ্ছে আর আমি কাচা মরিচ খাবো ক্যান?
—আরে আমি জানি তোর আব্বা আম্মা দুজনেরই ডায়াবেটিস আছে।
—তো?
—আরে ডায়াবেটিস তো বংশগত রোগ। তাই তোরও হতে পারে। আর আমরা সবাই জানি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মিষ্টি কতটা বিপদজনক। তাই তোর স্বাস্থের কথা ভেবেই আমি কাচা মরিচ আনলাম।
—তার মানে? আমার মিষ্টি কই বল?
সবার সামনে ইয়াসিনের কলার চেপে ধরে অর্পিতা। ক্লাসের সবার কাছে এটা নৈমিত্তিক ব্যাপার। ইয়াসিন আর অর্পিতার এই নাটক দেখে অভ্যস্ত সবাই। তাই কারো কোন পরিবর্তন হলো না। কিন্তু অর্পিতা ৮৪০ ভোল্টের লুক নিয়ে, ঘুষির ভঙ্গিতে হাত এখনো ইয়াসিনের দিকে তাক করে আছে। বেচারা জান বাচানোর জন্য ডাকতে লাগলো…
—আকাশ, কাউসার, মামুন কই তোরা। এই দজ্জালনি আমাকে মেরে ফেললো। তোরা এই অবুঝ শিশুটারে বাচা।
—ওরা বাচাবে তোকে? বল শালা আমার মিষ্টি কই?
—আসলে ইয়ে মানে।
—কিসের ইয়ে মানে? আমার মিষ্টি দে।
—আসলে সবাইকে দিতে দিতে সব মিষ্টি ষেষ হয়ে গেছে। আর মিষ্টি নাই।
—মিষ্টি নাই মানে? শালা আমাকে রেখে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবি আর আমি পাবো না?
—আমি কি করবো? তুই দেড়ি করে এলি ক্যান? তাছাড়া আমার কাছে আর টাকাও নেই যে আবার মিষ্টি কিনে আনবো।
—টাকা নাই মানে? আমি এখন তোর চোখ দুইটা তুলবো। তারপর বিক্রী করে মিষ্টি কিনে খাবো। মিষ্টি দে শালা।
—ওরে বাবারে আমি গেলামরে……
বলেই এক ঝটকাতে অর্পিতার হাত থেকে নিজেকে ছুটিয়ে ইয়াসিন দিলো দৌড়। অর্পিতাও পিছে পিছে দৌওড়াচ্ছে। পেছনে সবাই। কি হয় সেটা দেখার জন্য।
দৌড়াতে দৌড়াতে ইয়াসিন ছাদে পৌছায়। অর্পিতা তবুও থামে না। পেছনে একবার তাকিয়ে আবার দৌড়ায় ইয়াসিন। ছাদের একেবারে শেষ মাথায় এসে, পড়ে যেতে যেতে কোন মতে নিজেকে সামলে নেয় ও। আর দৌড়ানোর রাস্তা নেই দেখে এবার অর্পিতার দিকেই এগুতে থাকে। কিন্তু অর্পিতা বিন্দুমাত্রও থামছে না।
ইয়াসিন চিৎকার করছে “থাম! থাম!” কিন্তু থামছেই না। আজ যেন ওকে গিলেই ফেলবে। হঠাত করেই একেবারে ইয়াসিনের কাছে চলে আসে অর্পিতা। ইয়সিন গোল্লাচোট খেলার মতো নিচু হয়ে বাচিয়ে নেয় নিজেকে।
কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো সে বিশাল ভুল করে ফেলেছে। ছাদে কোন রেলিং নেই। আর অর্পিতা থামছেই না। ও তো পড়ে যাবে। পড়েই যাচ্ছিলো। খপ করে ওর হাতটা ধরে হ্যাচকা টান দেয় ইয়াসিন। অর্পিতা নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু সামলাতে পারেনি ইয়াসিন। জড়তার কারনে সামনের দিকে ছিটকে পড়ে সে। একেবারে ছাদের বাইরে।
,
তারপর? ইয়াসিন পড়েনি? অর্পিতা ওর হাতটা আবার ধরে ফেলে। তারপর বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো প্রানপনে টেনে তুলে আনে ওকে। আরে মশাই এটা সিনেমায় হয় বাস্তবে না।
ইয়াসিন ঠিকই ছিটকে পড়ে গেলো দুতলার ছাদ থেকে। অর্পিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই পড়ে গেছে ইয়াসিন। নিচে পড়ে একবার শুধু উপড়ের দিকে হাত বাড়িয়েছিলো। কিন্তু পরক্ষনেই মাথার নিচ থেকে বেড়িয়ে আসে গাঢ় লাল রঙের তরল পদার্থ। নিথর হাতটা পড়ে যায়। অর্পিতা বুঝতে পারে ইয়াসিনের মাথা ফেটে গেছে। অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ও। অর্পিতা তখনই লাফ দিতে চাচ্ছিলো। কিন্তু এতক্ষনে পুরো ক্লাস চলে এসেছে ওদের পেছনে। অবন্তিকা ওকে টেনে আটাকায়।
তারপর সিড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসে সবাই। সবার আগে পৌছায় অর্পিতা। ভবনের পেছনের দিকে টিউবয়েলের যে ঢালাই করা অংশটা আছে সেখানে চিত হয়ে পড়ে আছে ইয়াসিন।
ইয়াসিনের মাথাটা কোলে নিয়ে গগন বিদারী শব্দে কান্না জুড়ে দেয় অর্পিতা। বাকী সবাই নীরব। স্তব্ধ হয়ে যায় সবকিছু। শুধু কেদে যাচ্ছে অর্পিতা। বাকী সবাই যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে।
গভীর একটা চাহনীতে ইয়াসিনের নিথর মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে অর্পিতা। ইয়াসিনের লম্বা চুলগুলো রক্তে লেপ্টে গেছে। চশমাটার একটা গ্লাস নেই। সেটা এখনো চোখেই আছে।
—এই ইয়াসিন ওঠ। ওঠ না। মিষ্টি খাওয়াবি না আমায়। আমি আর মিষ্টি চাইবো না। এই ইয়াসিন ওঠ না। আকাশ, মামুন, অমর্ত্য বল না ওকে উঠতে। এই ইয়াসিন ওঠ না।
পাগলের মতো চিৎকার করছে অর্পিতা।
,
ইয়াসিনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বসে আছে সবাই। অর্পিতা ওর মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। কতক্ষন পর পর হাতটা এনে দেখছে রক্ত ঝড়ছে কিনা। মাঝে মধ্যেই ডুকরে কেদে উঠছে।
হঠাতই কাউসার বলে উঠলো……
—জানিস অর্পিতা? ইয়াসিন যে গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছে সেটা আর কেউ নয় তুইই।
—আমি?
—হ্যা। তুই সেই মেয়ে। যাকে ইয়াসিন কলেজের প্রথম দিন থেকে পছন্দ করতো।(মামুন)
—হ্যারে। আমাকেও বলেছিলো। বলেছিলো কোন এক সোনালী সকালে তোকে ওর মনের কথা খুলে বলবে। কিন্তু দেখ তার আগেই……(অমর্ত্য)
—আমিও কিছুটা শুনেছিলাম।(অবন্তিকা)
—বাহ! তোরা সবাই জানতিস। অথচ এক দিনও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি। আমাকে বাচানোর জন্য আজ ওর এই অবস্থা। এর জন্য তোরা সবাই দায়ী। আমাকে আবার তোরা বান্ধবী ভাবিস।
—হ্যা বান্ধবী। তার আগে ইয়াসিন আমাদের বন্ধু। তাছাড়া ইয়াসিনই না করেছিলো তোকে বলতে।(কাউসার)
—ও নিজের মুখে জানাতে চেয়েছিলো।(মোশারফ)
এভাবে কথায় কথায় ইয়াসিনের সব কথা জেনে গেলো অর্পিতা। সেই ক্লাসের প্রথম দিন থেকে গতকাল রাতের মিষ্টি খাওয়ার কাহিনী সব। সবটা শোনার পর অর্পিতা আর কোন কথা বলতে পারেনি। সবগুলো কথাই ওর বুকে বিষ মাখানো তীরের মতো বিধছে। পাথর গেছে ও।
অনেক্ষন নীরব থেকে আবারো ঠোট ফুলিয়ে কেদে উঠে অর্পিতা।
—এই ইয়াসিন ওঠ। কিরে ওঠবি না? আমাকে তোর মনের কথা বলবি না? আমিও যে ভালোবাসি তোকে। অনেক ভালো বাসি। তোর মতো আমিও যে বলতে পারিনি। এই ইয়াসিন ওঠ। এই শালা ওঠ…
বলে ইয়াসিনের রক্তাক্ত মুখটাতেই দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আবার মাথাটা জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো। কেউ ওকে আটকানোর চেষ্টাও করছে না।
,
রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা। হাসপাতালে পৌছাতে এক ঘন্টার মতো লাগলেও। এটা ওটা করতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে কেউ টের পায় নি। ঔষধ আনা ডাক্তার ডাকা সব কাজ বন্ধুরাই করেছে। অর্পিতা পুরোটা সময় ওর মাথার পাশেই বসে ছিলো। এমনকি অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার সময়ও ভেতরে যেতে চাচ্ছিলো। অনেক কষ্টে আটকে রাখা হয়েছে।
ইয়াসিনের জ্ঞান ফিরে নি এখনো। ডাক্তার ওকে কেবিনে দিয়ে গেছে। বন্ধুরা সব একটু আগে চলে গেছে। ইয়াসিনের বাড়িতেও খবর দেয়া হয়েছে তারা রওনা দিয়েছে। পৌছাতে পৌছাতে সকাল হবে। অর্পিতা হোস্টেলেই থাকে তাই সমস্যা হবে না।
—কিরে তুই কাদছিস কেন অপু(ইয়াসিন মাঝে মাঝে অর্পিতাকে অপু বলে ডাকে)।
ইয়াসিনের জ্ঞান ফিরেছে। ওর জ্ঞান ফিরতে দু গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় দিলো অর্পিতা।
—আউচ!! এটা কি হলো? ব্যাথা পাই তো।
—ব্যাথা পাই তো। মরে যা তুই। শালা নায়ক সাজতে গেছিলি?
—না মানে।
বিষয়টা মনে করতে পেরে আমতা আমতা করছে ইয়াসিন।
—শালা, খচ্চর, বান্দর, বিলাই, হাবলু।
—খচ্চর, বান্দর, বিলাই তো আগেও ছিলাম। কিন্তু হাবলু হলাম কবে?
—যখন থেকে হবু স্বামী হলি।
—হবু স্বামী!! কে? কার?
—চুপ শালা হাবলু। আর ন্যাকামো করতে হবে না। কাউসার, মামুনেরা আমাকে সব বলে দিয়েছে?
—মানে কি?
—কোন মানে নাই। ভালোবাসিস আমায়?
—ইয়ে মানে।
—চুপ শালা। একটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারো, তাকে বাচাতে গিয়ে নিজে মরতে পারো, কিন্তু মেয়েটাকে বলতে পারো না।
—আসলে ভাবছিলাম তোকে বলবো। কিন্তু সময় সুযোগ করতে পারিনি।
—থাক সময় সুযোগ আর পেতেও হবে না। আজ তোর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো?
—কি আর হতো? কিছুই হতো না। একটা বান্দর মরেছে ভেবে কয়েকদিন কষ্ট পেতি। তারপর ভুলে যেতি।
—একদম না। তুই আমার তেমন বন্ধু না যে ভুলে যাবো। তাছাড়া…
—তাছাড়া কি?
—তাছাড়া ইদানীং আমিও তোকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম। সেটা যে ভালোবাসা আজ বুঝতে পেরেছি।
—তার মানে তুইও?
—হ্যা একটু একটু…
—ওরে বাবারে আবার লজ্জা পায়।
—লজ্জা পাবো না তো কি করবো। আমি কি আরো প্রেম করেছি নাকি?
—আমি চারটা করছি।
—মানে
—আরে কিছু না। মজা করলাম।
—মজা করেও যদি আরেকবার একথা বলিস তাহলে আবার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।
—ওরে বাবারে থাক বলবো না।
—এই তো আমার গুলু গুলু।
—মানে?
—না মানে ভদ্র ছেলে।
ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় বাম দিয়ে অর্পিতার মুখটা নিজের দিকে টেনে নাকে নাক ঘষে ইয়াসিন বললো……
—হুম। তুইও আমার ভদ্র বউ। না মানে হবু ভদ্র বউ।
ওরা দুজন আরো ঘনিষ্ট হচ্ছে।
—এহেম এহেম! হাসপাতালে এসব নিষিদ্ধ।
—আকাশ তুই?(অর্পিতা)
—হ্যা। আমি।
—এখানে কি করছিলি?
—না মানে ডাক্তার রিপোর্টগুলো নিতে বলেছে তো তাই। সেগুলো খুজছিলাম।(মিথ্যে কথা)স
—ও। পেয়েছিস?
—হুম। আর শোন যা করার আমি রুম থেকে যাবার পর করিস। আমি কেবিনের দরজাটা আটকে দিচ্ছি।
—আরে তোর হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।(ইয়াসিন)
—আরে ব্যাপার না। তোকে ট্রলী থেকে নামাবার সময় হালকা ছড়ে গেছে। আমি যাই।
মনে মনে বললাম শুধু হাতের ক্ষতটাই দেখলি বন্ধু, মনের ক্ষতটা দেখলি না। সেটা আর কেউ কোনদিন দেখবেও না। কেউ জানবে না ইয়াসিনের মতো আরো একটা ছেলে অর্পিতাকে পছন্দ করতো। ভালো বাসতো ওকে। ইয়াসিনের থেকে কম না বেশি সে সিদ্ধান্তে যেতে চাই না। কারন আমার মতে ভালোবাসা কম বেশির পরিমানে মাপা যায় না। তাছাড়া অর্পিতা তো ইয়াসিনকেই ভালোবাসে আমাকে নয়।
আমার ভালোবাসার মানুষটা নাহয় তার ভালোবাসার মানুষটার কাছেই থাক। তবুও যত্নে থা সুখে থাক। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা নোনা জল। হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। সবাই চলে গেছে। আমাকে একাই মেসে ফিরতে হবে।
—কিরে কাদছিস?(অবন্তিকা)
—আরে না কাদবো কেন? দেখলি না ইয়াসিন আর অর্পিতা কেমন মিলে গেলো। আজ তো আনন্দের দিন থুক্কু আনন্দের রাত। আমি কাদবো কেন?
কেন জানি মনে হলো অবন্তিকা আমার কথা বিশ্বাস করলো না। কাছে এসে কাধটা ধরে একটা ঝাকি দিয়ে বললো……
—অর্পিতাকে তুইও ভালো বাসতি তাই না?
কেন জানি মিথ্যে বলার ইচ্ছে হলো না।
—আরে তাতে কি আসে যায়। ও ওর ভালোবাসার মানুষের কাছে আছে। থাক না সুখে থাক। আমি তো বাংলা সিনেমার পার্শ্বচরিত্রের মতো।
—পার্শ্ব নায়কেরও কিন্তু একটা নায়িকা থাকে।
—মানে?
—কিছু না। চল ফুচকা খাই। হয়তো এতে তোর দুঃখটা কমবে না কিন্তু আমার ভালো লাগবে।
—কিন্তু সবাই তো চলে গেছে তুই যাস নি কেন?
—ভাবলাম তুইও তো যাসনি। তোর সাথেই যাই। তুই নাহয় আমাকে হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দিবি।
—আমার জন্য?
—আরে কিছু না। চল ফুচকা খাই।
—কিন্তু এত রাতে ফুচকা পাওয়া যাবে?
—আরে চলতো।
আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলেছে অবন্তিকা। অজানার পথে। এখন ওর কথার মানেটা বুঝতে পারছি। পার্শ্ব চরিত্রের নায়কটারও একটা নায়িকা থাকে। সবসময় নিজে তাকে খুজে লাভ নেই, মাঝে মধ্যে তাকেও নিজেকে খোজার সুযোগ দিতে হয়।
,
……………………………………অতঃপর শুরু………………………………..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা