তুমি আছো তাই

তুমি আছো তাই

হুট করেই নিশির শাড়ির আচঁল টেনে খোলে নিলো নিলয়।। নিশি বিস্মিত চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াতে এসেছে নিশি।। একটু ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই এই পরিস্থতির স্বীকার হলো সে।। নিলয় যে এমন কাজ করতে পারে তা নিশির ধারনার বাইরে ছিলো।।

নিলয় চৌধুরী নিশির বান্ধবী নিরার একমাত্র ভাই।। ভদ্র,, মার্জিত,,অসম্ভব সুন্দর একটি ছেলে।। বলতে গেলে রূপে গুণে অনন্য।। মেয়ের সাথে মেয়ের বাপের মন জয় করার মতো প্রতিপত্তি।। নিশি নিলয়কে সবসময় শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছে কিন্তু আজ??? নিশি যথেষ্ট শান্ত একটা মেয়ে কিন্তু নিলয়ের এমন কাজের পর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না সে।।।

চোখে রাগের আগুন জ্বেলে নিলয়ের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।। নিশি যে এমন কিছু করতে পারে তা নিলয়ের জানা ছিলো না।। বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিস আরিফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে নিলয়,,,কেউ যেখানে ওর দিকে চোখ তোলে তাকানোর সাহস পায় না।। নিশি সেখানে,,,,,আগে থেকেই রেগে ছিলো নিলয়,,,এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।।। দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো নিশিকে।। নিজেকে ছাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে,,,এবার চেচাঁতে লাগলো নিশি,,,সাথে গড়িয়ে পড়ছে চোখের জল,,,

ছাড়ুন,,,ছাড়ুন আমায়।।।। এটা কোন ধরনের অভদ্রতা (চেঁচিয়ে টলটলে চোখে)
ওহহ্ এখন অভদ্রতা??নিজে যখন ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করো,, তখন ওইটাকে বুঝি খুবই ভদ্রতা বলে?(আরো জোড়ে চেপে ধরে)

মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার নিলয় চৌধুরী।।। আমি কিছু বলছি না তারমানে এই নয় যে আপনি আমাকে যা তা বলবেন(রাগী চোখে)

ও রিয়েলি??যা তা??এখন আমি যা তা হয়ে গেলাম?আমি না হয়,যা তা,,, কিন্তু যাদের সাথে ঘষাঘষি করছিলে তারা নিশ্চয় যা,তা নয়??তো কোথায় কোথায় টাচ করেছে শুনি??খুব ভালো লেগেছে বুঝি???(দাঁতে দাতঁ চেপে)

নিলয়ের ভাষা শুনে নিশি হতবাক।। এই মানুষটার মধ্যে এমন একটা পার্সোনালিটিও থাকতে পারে তা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি।।।এবার নিশি আর চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে পারলো না,,ডানহাতটা হেচঁকা টানে ছাড়িয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিলয়ের গালে চড় বসালো।।। রাগের মাথায় কাজটা করলেও নীলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো,,,রক্তলাল চোখগুলোতে নিশি যেনো তার ধ্বংসই দেখতে পাচ্ছে।।কিছু বুঝে উঠার আগেই নিশির ঠোঁটগুলি নিজের আয়াত্তে নিয়ে নিলো নিলয়।নিজের রাগগুলোকে নিশির ঠোঁটের উপর ঝাড়তে ব্যস্ত সে।।নিদারুণ যন্ত্রনায় নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চোখ খিঁচে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে নিশি।।।নিলয় কেনো এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছে না নিশি।।নিলয় তো এমন ছিলো না,,,,তাহলে আজ কেনো???নিলয়ের কামড়গুলো এখন ভালোবাসার পরশে পরিনত হয়েছে,,,নিশির ঠোঁটে পাগলের মতো কিস করে চলেছে সে,,,আর হাত দিয়ে কোমরে ধীরে ধীরে স্লাইড করছে।।।নিলয় যেনো নিশিতে ডুব দিতে চাইছে,,,গভীর রূপ নিচ্ছে তার ভালোবাসার পরশগুলো।।।নিশির শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।।এবার আর সহ্য করতে না পেড়ে নিজের সর্ব্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো নীলয়কে,,,,,ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেড়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো সে।। ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে,, দুই হাতে মুখ চেপে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদঁতে শুরু করলো নিশি,,,,,,,,#তুমি আছো তাই❤

নিশির কান্নায় নিলয়ের ঘোর কাটলো।।।ও যে কতোটা জঘন্য কাজ করেছে তা মুহূর্তেই বুঝতে পারলো।।নিজেকেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে তার।।।হাউ কোড হি??আর কিছু না ভেবে ব্যস্ত হয়ে নিশির কাছে ছুটে গেলো নিলয়,,,

নিশু,,,নিশু স,,সরি।।আমি এমন কিছু করতে চাই নি বিশ্বাস করো।।প্লিজ কেঁদো না।।মাফ করে দাও প্লিজ,,,!!!(করুন দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে)

নিলয়কে কাছে আসতে দেখে আরো কুঁকড়ে গেলো নিশি,,,গুটি-শুটি হয়ে বসে আছে।।নিলয়ের কোনো কথা তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে,,,যেকোনো মেয়ের জন্যই এটা একটা বড় ধাক্কা,,,

নিশির কোনো রেসপন্স না পেয়ে,, হালকা হাতে নিশির হাতটি ধরার সাথে সাথেই ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় নিশি,,,নিলয় কি করবে বুঝতে না পেরে নিজেও ছুট লাগায়,,,কিন্তু ততোক্ষণে নিশি ধরা ছোঁয়ার বাইরে।।।আনমনে হাটঁছে নিশি,,,মাথাটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।।নিলয়ের বিহেভিয়ার কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না নিশি,,,তাইতো বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েটা মাঝপথে ফেলেই ছোটে চলে এসেছে ।। উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটঁছে নিশি,,,নিলয়ের জন্য তিল তিল করে গড়া অনুভূতিগুলো আজ ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো যেনো।।।বুকের ভেতর কোথায় যেনো বড্ড কষ্ট হচ্ছে,,,খুবব কষ্ট।।।বাসাই ফিরে বাবার সাথে কোনো কথা বলে নি নিশি,,,এসেই দরজা দিয়ে বসে আছে।।হাসি-খুশি মেয়েটাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরতে দেখে অবাক হয়েছেন তারিকুল রহমান(নিশির বাবা)কিন্তু বিস্ময়টা এই মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় রূপ নিয়েছে,,,,মেয়ের এমন ব্যবহার নিতে পারছেন না তিনি ।।।মা মরা মেয়েটাকে একাই সামলেছেন ।।।মায়ের ভালোবাসাটুকুও দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন ,,কিন্তু আজ??আজ মনে হচ্ছে,,,নিশির মায়ের খুব প্রয়োজন,,,নিজের সবটা দিয়েও হয়তো ভরতে পারেনি মেয়ের ভালোবাসার ঝুলি,,কোথাও একটা ফাঁকা রয়ে গেছে,,,,মেয়েটার বিধ্বস্ত চেহারা যেনো তাই বলছে।।।

নিলয় কি করবে বুঝতে পারছে না,,,নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।।।বাড়ি ভরা মেহমান না থাকলে চৌধুরী ম্যানশনের সব জিনিস ভেঙে চুরমার করে ফেলতো সে,,,,নিজেকে শুধু একটা প্রশ্নই করে যাচ্ছে বারবার,,,কি করে পারলো সে এমনটা করতে???কি করে??নিশি তাকে কখনো ক্ষমা করবে না কখনো না,,,ভাবতেই নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে নেমে এলো বৃষ্টির ধারা। নিলয় চৌধুরী আজ কাদঁছে,,,বিষয়টা বড্ড বেমানান,,,কিন্তু কাউকে হারিয়ে ফেলার প্রচন্ড ভয় যে নিলয়ের মতো কঠিন হৃদয়কেও ছোঁয়ে যাচ্ছে বারবার,,আর সাথে বাড়িয়ে যাচ্ছে হাহাকার।।।চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠছে ভয়ার্ত একটি মুখের ছবি,,,অজস্র মায়ায় জড়ানো সে ছবি,,,যে মায়ায় আটকে পড়েছিলো নিলয়,,,,,

১ বছর আগে,,,,
ভার্সিটিতে নবীনবরন অনুষ্ঠানের ধুম পড়েছে।।ভার্সিটি ক্লাবের সদস্যরাই প্রতিবছর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।।এবারও তার ব্যতীক্রম নয়,,,,চারদিকে জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে,,,,অবাক বিস্ময়ে চারদিকে তাকাচ্ছে নিশি।।ভার্সিটি লাইফের প্রথম ফাংশন এটা,,,আসার কোনো ইচ্ছা যদিও ছিলো না,, কিন্তু নীরার জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।।।।নীরার সাথে দেখা হয় এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে।।পাশের সীটে বসেছিলো,,, সেখান থেকেই বন্ধুত্ব আর দুজনে একই ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ায় তা আরো গভীর হয়েছে।।।যায়হোক,,নিশি আজ হাফ সিল্ক নীল শাড়ি পড়েছে,,হাতে নীল চুরি,,,কানে ছোট টপ,,,লম্বাচুলগুলো খোলা,,চোখে ভারি করে কাজলের রেখা টেনেছে,,ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক,,,,যদিও সবটাই নীরার জোরাজোরিতে,,,,শাড়ি সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে নিশিকে,,,মনে হচ্ছে এখনি খুলে পড়ে যাবে।।অন্যদিকে নীরা একটার পর একটা সেলফি তোলেই যাচ্ছে,,তার মধ্যে অস্বস্তির “অ” পর্যন্ত নেই।।নিশির ব্যাপক রাগ লাগছে,,,এদিকে নিশি ঠিক মতো হাটতেই পারছে না আর ওদিকে নিরার পাত্তাই নেই হুহ,,,,নেহাত,, প্রথমবার শাড়ি পড়েছে নয়তো সেও দেখিয়ে দিতো।।।নিশির ভাবনার প্রহর কাটলো,,,কিছু মানুষের ছুটাছুটির আওয়াজে।।।একি,,,এরা এভাবে দৌড়াচ্ছে কেনো??নিরাও একরাশ বিস্ময় আর কৌতূহল নিয়ে পাশে এসে দাড়ালো,,,

নীরাঃ দোস্ত??এখানে কি ম্যারাথন চলছে??সবাই দৌড়াচ্ছে কেন?

নিশিঃ আল্লাহর ওয়াস্তে একটু চুপ থাকবি??(বিরক্তি নিয়ে)

নীরাঃ ওকে ওকে,,,

অপরিচিতঃ আরে তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন??ক্যাম্পাসে মারামারি শুরু হয়ে গেছে,,,, একপাশ,হয়ে দাঁড়াও নয়তো রক্ষে নেই।।।(বলেই ছেলেটা দৌড় দিলো)
ভয়ে নিশির হাত পা রীতিমতো কাপঁছে,,,নড়ার শক্তি পর্যন্ত পাচ্ছে না ,,নীরারও সেই একই অবস্থা।।দৌড়ানোর কথাটা তাদের মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছে যেনো।।।কিছুক্ষণের মধ্যেই একদল ছেলে স্টিক হাতে দৌড়ে এলো,,,কিছু ছেলেদের ধরে বেদম পেটাচ্ছে তারা।।।নিশির মনে হচ্ছে এবার সে পড়েই যাবে,,, দাঁড়িয়ে থাকার ন্যূনতম শক্তি খোঁজে পাচ্ছে না সে।।।হঠাৎই একটা ছেলে নিশি আর নীরার দিকে এগিয়ে এলো,,,নীরা তো রীতিমতো কাঁদছে।।ছেলেটা কাছাকাছি আসতেই চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো নিশি,,,,মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।।।কিছুক্ষণ পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখটা হালকা খুললো নিশি,,,,,,

চোখদুটো হালকা খুললো নিশি।।ওর দিকে এগিয়ে আসা স্টিকটা কেউ একজন চেপে ধরে আছে শক্ত করে।।নিশি একটা ঢোক গিলে পাশে তাকালো,,,,সাদা শার্ট,,কালো জিন্স,,,পরিহিত একটা ছেলে একহাত পকেটে রেখে অন্যহাতে স্টিকটা চেপে ধরে আছে অনেকটা স্টাইল নিয়ে।।নিশি তাকাতেই ছেলেটাও আড়চোখে তাকালো কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো।।কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ছেলেটির পাশে,,,আর চোখের ইশারা পেয়েই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বেদড়াম পেটাতে লাগলো।।।কিন্তু সেদিকে নিশির কোনো খেয়ালই নেই,,,সে তো অবাক চোখে ছেলেটিকে দেখছে।।।ছেলেরাও যে এতো সুন্দর হতে পারে নিশির তা জানা ছিলো না।।সৃষ্টিকর্তা যেনো পৃথিবীর সব ইনোসেন্স এই ছেলেটির গায়ে ঢেলে দিয়েছেন।।গায়ের রং টাও কি ভয়ংকর সুন্দর।।ছেলেটির গায়ের রংটা নিশির গায়ের রঙের চেয়েও উজ্জল দেখাচ্ছে।।।বিষয়টি নিশির কাছে মোটেও ভালো লাগছে না।।ছেলেদের এতো সৌন্দর্য প্রকৃতিও মেনে নিতে নারাজ।।সৌন্দর্যে শুধুমাত্র মেয়েদের আদিপত্য,, সেখানে ছেলেদের উপস্থিতি গ্রহনযোগ্য নয় ।। নিশির ঘোর কাটলো নিরার চিৎকারে,,,,লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিরার দিকে তাকালো,,,

নিরাঃ ভাইয়া????(বলেই দৌড়ে গেলো ছেলেটির দিকে)

নিশি কিছুই বুঝতে পারছে না,,,ছেলেটা নিরার ভাইয়া??কই ওদের বাসায় তো কখনো দেখে নি,,,,ভ্রু কুচঁকে ওদের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে নিশু।।

ভাইয়া??তোর হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে,,,নিশ্চয় মারামারি করছিলি??দাড়া আমি বাসায় গিয়েই মাকে বলবো যে তুই ভার্সিটি গিয়ে গোন্ডামী করিস।।

এহহহহ,,,আসছে,,,মাকে বলবো(মুখ ভেঙচিয়ে) আমি না থাকলে তো মাথাটাই দুভাগ হয়ে যেতো,,আবার বড় বড় কথা।।আর গাধার মতো এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন তাও আবার এতো গন্ডগোলের মাঝে ??(মাথায় চাটি মেরে)

হুহ ভাইয়া,,,বোনকে রক্ষা করা তো ভাইয়ের রেসপন্সিবিলিটি।।। আর তুই তো তোর রেসপন্সিবিলিটি পালন করার সুযোগই পাস না উল্টো আমি তোকে মার বকা থেকে বাঁচাই,,তাই ভাবলাম তোকে একটা সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে,,,কি বলিস নিশু??(নিশির দিকে তাকিয়ে)

এএ,,হ,,হ্যা।।

অনেক হয়েছে পাকামো,, এখন আল্লাহর ওয়াস্তে অফ যা,,,,, আর এইযে আপনি?(নিশিকে উদ্দেশ্য করে)ওর না হয় মাথায় ছিট আছে,,কিন্তু আপনি কি দেখতে এভাবে দাড়িয়ে ছিলেন?? যদি কিছু হয়ে যেতে??

না,,মা,,মানে,,আসলে,,,,,(মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নিরা বলে উঠলো)

ভাইয়া???তুই আমাকে তাড় ছিঁড়া বলছিস??(মুখ গোমরা করে)

কই বললাম??তুই তো আমার বলার আগেই স্বীকার করে নিচ্ছিস।।।(দাঁত কেলিয়ে)।।

নিশি সেদিন খিলখিল করে হেসে উঠেছিলো।।হাসির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়েছিলো নিলয়ের মনটাকেও।।নিশিকে বুঝতে না দিলেও সেদিনই নিলয় খুন হয়েছিলো সেই নীল পরিটাতে।।।

বর্তমানে,,,,,
তিন ঘন্টা হতে চললো, নিশির ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিলয়।। উদ্দেশ্য নিশিকে এক নজর দেখা আর কালকের জন্য ক্ষমা চাওয়া।।নিলয় জানে নিশি তাকে দেখলে রেগে যাবে,,,,কিন্তু তাতে তার কোনো যায় আসছে না,,রাগুক,, মারুক,, যা ইচ্ছা করুক,,তবুও নিলয় ধমে যাওয়ার পাত্র নয়।।তার যে নিশিকে চায়ই চায়।।কাল রাতে এক মিনিটের জন্যও চোখের পাতা বুজে নি সে।।শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছটফট করেছে।।।নিশির ঘৃনা নিয়ে বেঁচে থাকা নিলয়ের পক্ষে সম্ভব নয়।।।তাইতো সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েছে ভার্সিটির উদ্দ্যেশে।।কিছুক্ষণ আগেই নিশি ভার্সিটিতে ঢুকেছে,,,নিলয়ের উপস্থিতি বুঝতে পেড়েও একবারও তাকায়নি তার দিকে,,,নিশি থেকে পাওয়া প্রথম অবহেলা মেনে নিতে পারছে না নিলয়,,ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে।।আরো প্রায় চার ঘন্টা পর নিশি ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি গেটে এসে পৌছাঁলো,,,পার্কিং এ চোখ যেতেই থমকে গেলো নিশি।।নিলয় এখনো দাঁড়িয়ে আছে,,এলোমেলো চুল,, পরনে রাতের টি-শার্ট আর টাউজার,, হাতে জ্বলন্ত সিগারেট,,,লাল হয়ে থাকা চোখ দুটো,,,অনেক কিছুই সাক্ষ্য দিচ্ছে,, প্রকাশ করছে অনেক আকুতি কিন্তু নিশি অপারগ।।নিলয়কে এই অবস্থায় দেখে অবাক হলেও নিজের রাগ ভুলেনি সে।।।তাইতো অবলিলায় নিলয়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,,,,

নিশু,,,,,,

নিলয়ের এই গভীর মায়ায় মাখা ডাকে থমকে দাঁড়ায় নিশি।।এই ডাককে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যে তার নেই।।।কিন্তু না,,আজকে আর দাঁড়াবে না সে,,,কিছুতেই না।।নিশি আবার পা বাড়াতেই হাত চেপে ধরলো কেউ।।নিশি ঝটকা দিয়ে পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,

ছাড়ুন আমায়,,,হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি???

নিশু,,নিশু প্লিজ শান্ত হও,,,

আমি কি বলছি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না??আই ছে লিভ মি,,,(চেঁচিয়ে)
,,,ওকে,,,ওকে।।এই দেখো ছেড়ে দিয়েছি,, প্লিজ এবার তো শান্ত হও,,আমার কথাটা একটু শুনো,,প্লিজজ(করুন চোখে)

কি শুনবো??কি শুনাতে চান আপনি??আপনি কি বুঝতে পারছেন না,,,আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিবোধে বাধে,,,

নিশু,,,(অবাক চোখে)

কি? নিশু কি বলুন??সত্যিটা শুনতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি??বাট আই কান্ট হেল্প,, ইউ হেভ টু একসেপ্ট ইট,,,
বলেই হাঁটা দিলো সামনের দিকে,,, পিছন থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়েও ফিরে তাকায় নি নিশি,,,,নিজেকে কোনোভাবেই দুর্বল করতে চায় না সে ,,,নিলয়কে বলা প্রতিটি কথা নিজের বুকেও আঘাত করেছে তীক্ষ্ণভাবে কিন্তু তবু নিশি নিলয়কে ক্ষমা করবে না,,কিছুতেই না।।।

রক্ত মাখা হাত নিয়ে টলমলে চোখে নিশির যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে নিলয়।।বুকে ভয়,, তার একটা ভুলে নিশিকে হারিয়ে ফেলতে হবে না তো???না কিছুতেই না,,,এত সহজে তোমাকে আমি হারাতে দিবো না নিশু ,,তুমি চাইলেও না।।।তোমাকে যে বড্ড প্রয়োজন,,,তুমি ঠিকই বলেছো,,একসেপ্ট তো করতে হবেই,,,কিন্তু আমাকে না তোমাকে,,,ইউ হেভ টু একসেপ্ট মাই এপোলজি এন্ড লাভ,,,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত