মায়াবী হাসি

মায়াবী হাসি
নিরুর সাথে ফেসবুকে পরিচয়। ২০১৯ সালে ফেসবুক চালায়না এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফেসবুকের অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে সহজ যে সুবিধা সেটা হচ্ছে বিনা পয়সাতেও অনেকের সংবাদ জানা যায়। ফেসবুক যখনই চালাই ফ্রি মোডে চালাই। ফ্রি মোডে চালানোর সুবিধা হচ্ছে অশ্লীল আর নোংরা ছবিগুলো দেখা যায়না। ফেসবুকে তো আবার যার স্টোরিতে যত নোংরামো থাকে সে ততই সেলেব্রেটি। আমার প্রফাইলে তেমন কোনো ইনফরমেশন দেয়া নেই। শুধুমাত্র প্রফাইল পিকচার আর কভার পিকচার দেয়া আছে। আর না আছে কোনো পোষ্ট, না আছে নিজের কোনো ছবি।
স্টার লাইন ফুড প্রডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেডে এ নুডলস সেকশনে সুপারভাইজারের চাকরি করি। মাস শেষে বেতন যা পাই তাতে বেশ চলে যায় আমার। আমার আপন বলতে এতিম খানার মালিক নিত্যানন্দ ঘোষ আর এতিম খানার কয়েকজন বোর্ডার। এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। নিত্যানন্দ দাদা আমাকে অবশ্য বলেছিলেন অসম্ভব সুন্দরী এক মহিলা আমাকে এতিম খানায় রেখে গিয়েছিলেন। আজ শুক্রবার। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাবো। শুক্রবার এলেই নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়া যায়। তাছাড়া সপ্তাহের বাকি দিন গুলোতে সারাটি দিন সময় কাটে ব্যস্ততায়। “শুক্রবার তুমি ফিরে এসো প্রতিদিন” এক লাইনের ছোট্ট একটা পোষ্ট করলাম প্রথমবারের মতো। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ৭টা হাহা রিয়েক্ট আর একটা মন্তব্যের নোটিফিকেশন এলো।
“একজন অতৃপ্ত আত্মা” নামক আইডি থেকে মন্তব্য এসেছে।
‘অলসদের জন্য প্রতিটা দিনই শুক্রবার’ মন্তব্য দেখে আইডি চেক করে দেখি সেটা ফিমেইল আইডি। মেয়েটার মন্তব্যের জবাব দেয়ার দরকার।
‘একজন অলস সবাইকে অলস ভাবে’ মেয়েটার মন্তব্যের জবাব দিয়ে আমি ফেসবুক থেকে বের হয়ে এলাম। ক্ষুধা লেগেছে প্রচন্ড। কোম্পানির কেন্টিনে সকালের খাবার খেয়ে নিজের কোয়ার্টারে চলে আসি। ফেসবুকে ঢুকে দেখতে পেলাম মেয়েটা মেসেজ দিয়েছে।
‘নিজেকে কি ভাবেন শুনি? আমি কিন্তু অলস না। মেয়েটার মেসেজ দেখে ঝগড়া করার ইচ্ছা জাগলো।
‘আমি কী আপনাকে অলস বলেছি?
‘আলবত বলেছেন।
‘আপনি এখন কি করতে বলেন?
‘আমাকে সরি বলুন।
‘হা হা। আপনি কী আমার বৌ নাকি যে সরি বলবো? আজব ক্যারেক্টার।
‘আমি আপনার বৌ হতে যাবো কোন দুঃখে?
‘তাহলে আমি সরি বলতে যাবো কোন দুঃখে!
‘আচ্ছা বেশ। সরি বলতে হবেনা।
‘ঠিক আছে। কাইন্ডলি আমাকে এবার অফলাইনে যেতে দিন। ঘুমাতে হবে।
‘রাজকার্য রেখে এসেছেন নাকি? হা হা।
‘রাজকার্যই বলা চলে। বিশ জনকে সামাল দেয়া কম কঠিন কাজ নয়।
‘কি কাজ করেন?
‘জানা টা জরুরি?
‘হয়তো না। আচ্ছা আপনার নাম কি?
‘আইডিতে তো দেয়াই আছে নিলয় মাহমুদ।
‘আমি নিরু।
‘নাইস নেম।
‘চাকরি করেন কোথায়?
‘একদিনে সব কিছু জানতে নেই। পরে কথা হবে।
নিরুর সাথে কথা বলতে ভালো সময় কেটে যাচ্ছে। সকাল আট টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ডিউটি করি।যদিওবা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অফিস টাইম থাকে। কিন্তু ওভার ডিউটি না করলে কী চলে! সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নিরুর সাথে রাত ১১ টা পর্যন্ত কথা হয়। এমন সময় নিত্যানন্দ দাদার নাম্বার থেকে ফোন আসে।
‘হ্যা দাদা, বলো।
‘নিলয়, তোর খোঁজে একজন এসেছে রে!
‘কে সে?
‘তোর মা।
‘আমি আমার মাকে দেখতে চাইনা। তুমি আমার কোনো ছবি দেখিয়েছো?
‘না।
‘আমার মা বলতে কেউ নেই নিত্য দাদা। আমার সব কিছুই তুমি। তুমি আমাকে খাইয়েছো,পড়িয়েছো, বড় করেছো। আমাকে একজন ভালো মানুষ করতে পেরেছো। মা,বাবা,দাদা,দাদী বলতে সবই তুমি। বুঝলে?
‘তোর কথা শুনলে চোখে পানি এসে যায়। তুই এত ভালো কেন রে?
‘এই দেখো তুমি আবার আমার মন খারাপ করে দিচ্ছো। এমন করলে তো চাকরি ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে যেতে হবে।
‘আরে না না। কি করছিস এখন?
‘একটা মেয়ের সাথে কথা বলতেছি ফেসবুকে।
‘মেয়েটা দেখতে কেমন?
‘জানিনা দাদা।
‘আরে পাগলা, জেনে নে তাড়াতাড়ি। ফেসবুক তো আবার লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মতো। কখন কোনদিকে যায় তার কোনো খবর আছে?
‘সেটা অবশ্য ঠিক বলেছো।
‘একদিন মেয়েটাকে নিয়ে আসিস তো!
‘দাদা, এতিম খানার ছেলেদের উপর মেয়েদের করুনা হয়। প্রেম হয়না। সো, দেখার কোনো চাঞ্চ নেই।
‘তুই তো প্রেমে পড়েছিস নাকি?
‘সেটা অবশ্য ঠিক।
‘তোর মনের কথা মেয়েটাকে বলে দে। তার রিয়েকশন দেখা তো খারাপ না।
‘আচ্ছা, আমি বলবো সময় করে। নিত্য দাদা ফোন কেটে দেয়ার পর আমি আবারও অনলাইনে চলে আসি। নিরুর আইডি থেকে মেসেজ এসেছে।
‘কি করছো?
‘এতিম খানার মালিকের সাথে কথা হলো।
‘কি কি কথা হলো?
‘তেমন কিছু না।
‘শুনি একটু।
‘তোমার ব্যপারে কথা হলো।
‘আমার ব্যপারে!
‘হ্যা। দাদাকে বললাম যে আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তোমাকে নিয়ে স্বপ্নের নীড় গড়তে চাই। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিরু মেসেজ সিন করার পর আর রিপ্লাই দিলোনা। পুরো রাত কেটে যায় নিরুর মেসেজ আসেনা। বুঝতে পারলাম নিরু ফেসবুকের এই সামান্য ভালো লাগা,ভালোবাসাকে বিশ্বাস করেনা হয়তো। ভোর বেলা চোখ লেগে গিয়েছিলো সম্ভবত। ঘুম ভাঙতেই দেখি সকাল আট টা। তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে গোসল করে নিলাম। কেন্টিনে গিয়ে সকালের খাবার খেয়ে চলে আসি সেকশনে। আমার আন্ডারে যে বিশ জন কাজ করে তারা এসেছে। আমি চেয়ারে বসে আছি। এমন সময় দারোয়ান রিয়াদ ভাই এলেন।
‘নিলয় ভাই, এইজ্ঞা আফা আন্নের লিগে দেহা হরতে আসছে।
‘রিয়াদ ভাই, আমার সাথে নোয়াখাইল্লা ভাষায় কথা বলবেন না প্লিজ। মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা। আপনি তো উত্তর বঙ্গের মানুষ।
‘সরি নিলয় ভাই। আসলে আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসছে।
‘আমার সাথে?
‘হ্যা। আপনার কথা বললো।
‘কোথায় সে?
‘আমার রুমে বসিয়ে রেখেছি।
‘আচ্ছা, চলুন তাহলে।
রিয়াদ ভাইয়ের সাথে তার রুমে এসে দেখি কালো রঙের একটা মেয়ে বসে আছে। এমন কালো মেয়েও হয় বাংলাদেশে! ক্যারিবিয়ানদের মতো গায়ের রং। কিন্তু মুখের মধ্যে বাঙালী ভাব আছে। ক্যারিবিয়ানদের ঠোট মোটা হয়। এই মেয়েটার ঠোট পাতলা। মেয়েটা কালো হলেও ফেসটা আসলেই সুন্দর।
‘আপনি আমার কাছে এসেছেন?
‘হ্যা।
‘আপনি কি আমাকে চিনেন?
‘হ্যা, চিনি।
‘কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনিনা।
‘আমরা কি এখানে কথা বলবো? নাকি কোথাও বেড়াতে যেতে পারি।
‘চলুন রাস্তায় যাই। তারপর ঠিক করা যাবে কোথায় যাবো।
‘আপনাকে কেউ কিছু বলবেনা?
‘আমার বেশ কয়েকটা ছুটি পাওনা আছে।
আজ নাহয় তারই একটা দিন যাবে। গেট দিয়ে বের হতেই রিয়াদ ভাই হাতে চায়ের ফ্লাস্ক আর বিষ্কুটের প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ‘নিলয় ভাই, এগুলো নিয়ে যান। পকেট খরচ কিছু লাগবে? ‘এগুলো হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো কিভাবে? রিয়াদ একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো। স্কুল ব্যাগ। ব্যাগের ভিতর চায়ের ফ্লাস্ক আর বিস্কুটের প্যাকেট ভরিয়ে নিয়ে গেইট দিয়ে বের হলাম। ‘আপনি বেশ হ্যান্ডসাম। মেয়েটার কথা শুনে মুচকি হাসি।
‘আপনি এখনো নিজের নাম বলেন নি।
‘নিরু।
‘নিরু! আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা।
‘আমি কালো বলে কি বিশ্বাস হচ্ছেনা?
‘না। আমি আসলে বুঝতে পারছিনা কেউ একজন ফরিদপুর থেকে ফেনিতে আসবে আমার সাথে দেখা করতে।
‘দুই আড়াই ঘন্টার রাস্তা। চলেই এলাম।
‘তোমার ফেইস টা অনেক কিউট নিরু।
‘চাপা মারছো!
‘উহু।
তোমাকে না দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। আমার সাথে থাকবে? হয়তো ভালো রাখতে পারবোনা। কিন্তু ভালোবাসার অভাব হবেনা। ‘আমার ভয় হয় নিলয়। পুরুষ সত্ত্বাগুলোকে আমার বেশ ভয়ঙ্কর মনে হয়।আমার অতীত যদি তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়?
‘অতীত কে ভুলে যেতে হয় নিরু। শারিরীক কষ্টের চেয়ে মানুষিক কষ্টের যন্ত্রণা অনেক বেশী। আমার মা নিজের হাতে আমাকে এতিম খানায় রেখে গিয়েছিলেন। আমাকে দেখো, আমি সেগুলো ভুলতে পেরেছি। মায়ের জন্য আমার মন খারাপ হয়না। বুঝলে? ‘বুঝলাম। ‘আমাকে বিয়ে করবে নিরু? দেখলাম নিরু কাঁদছে। গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ইচ্ছা করছে নিরুর গালের পানি মুছিয়ে দিতে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে একের পর এক সিএনজি চলে যাচ্ছে ভুস করে। নিরু চোখের পানি মুছে আমার বাম হাতে ওর ডান হাত রাখলো। এত মোলায়েম কারো হাত হতে পারে! নিরুদের বাড়িটা দোতলা। আমি বসে আছি নিচ তলায়। আমার সামনে অপরূপ সুন্দরী একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন।
‘তোমার নাম কি?
‘জ্বি, নিলয় মাহমুদ।
‘বেতন কত পাও?
‘আপনার কি সেটা জানা জরুরী?
‘অবশ্যই। আমার ভাতিজিকে পেতে হলে তো দুই পাঁচ টাকা বেতনের ছাইপাশ চাকরি করলে চলবেনা।
‘ওহ আচ্ছা।
‘তোমার বাবা কি করেন?
‘জানিনা।
‘তোমার মা?
‘সেটাও জানিনা।
‘তোমার বাবা মায়ের খবর জানোনা?
‘জানিনা।
‘বড় হয়েছো কোথায়?
‘এতিম খানায়।
‘এতিম খানায়! তুমি ভাবলে কি করে এতিম খানায় বড় হওয়া জন্ম পরিচয়হীন একজনের সাথে আমাদের নিরুর বিয়ে দিবো?
‘আপনার কথা শুনে হাসি পাচ্ছে। কত শান্ত ভাবেই না অপমান করার কৌশল শিখেছেন। পৃথিবীতে কারো জন্ম অবৈধভাবে হয়না। বেয়াদব গুলো অবৈধ কাজ করে। তাদের কাজের বলিদান হয় আমার মতো নিলয়েরা।
আমার মা সম্ভবত আপনার চেয়েও সুন্দরী ছিলেন।তিনি নিজ হাতে আমাকে এতিম খানায় রেখে এসেছিলেন। তবুও তার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। হয়তো আমাকে তার পছন্দ হয়নি। কি আর করা! নিরুকে তো পাওয়ার আর চাঞ্চ নেই। আপনাদের ডিসিশন তো জানা হয়ে গেলো। নিরু জোর গলায় বলতো ওর একজন ফুফু আছেন যিনি নিজেই নিরুর বাবার সাথে আমাদের ব্যপারে কনভিস করবেন। কিরকম কনভিস করবেন সেটা তো দেখতেই পেলাম। এবার চলি তাহলে। আমি সোফা থেকে উঠতেই নিরু চলে এলো নাস্তার ট্রে নিয়ে। ‘নিরু, পারলে আমাকে ভুলে যেও। তাহলে আর বিরহের অনলে পুড়তে হবেনা তোমাকে। এই জীবনে আমাকে তোমার পাওয়া হবেনা। চলি। ‘নিলয়, আমাকেও নিয়ে যাও সাথে। প্লিজ ‘তা হয়না নিরু। তোমার পরিবার আছে। বাবা মায়ের ভালোবাসা তুমি পেয়েছো। তাদের কে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। নিরুকে রেখে আমি চলে আসি ঢাকায়। নিত্য দাদা বিছানায় শুয়ে আছেন। আমি নিত্য দাদার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
‘নিলয়!
‘হ্যা দাদা।
‘তোর প্রেমিকার কি হলো?
‘ওদের বাড়িতে না করে দিয়েছে।
‘কেন?
‘জানিনা দাদা। এতিম খানায় বড় হওয়া সম্ভবত পাপ।
‘তোর মা এসেছিলো গতকাল।
‘আবার সেই মহিলা কেন এসেছে?
‘তোকে নিয়ে যেতে চায়। তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিতে চায়।
‘তোমাকে তো হাজার বার বলেছি আমার মা বলতে কেউ নেই।
‘সত্যকে অস্বীকার করার চাঞ্চ নেই রে ভাই। তোর মায়ের দোষ নেই।
‘হা হা।
‘আগে তো শোন, তোর মা আর তোর বাবার বিয়ে হয়েছিলো প্রেমের বিয়ে। তোর মায়ের বাড়িতে কেউ জানতেও পারেনি। তুই যখন তোর মায়ের গর্ভে তখন তোর বাবা একটা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো। তোর মা একটা ছোটো খাটো চাকরি করতো বিধায় তাদের বাড়িতে তেমন বাঁধা বিপত্তি ছিলোনা। তোর মা যখন পাঁচ মাসের গর্ভবতী তখন তিনি বেশ ভয় পেয়ে যান। বাড়িতে বলেন যে তার ট্রান্সফার অর্ডার হয়েছে। এই সুযোগে নিজের এতদিনের আয় করা সব গুলো টাকা নিয়ে বের হয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। শুধুমাত্র তোকে রক্ষা করার জন্য তিনি হোটেলে রুম বুক করেন। আরো চার মাস কেটে যাওয়ার পর তুই যেদিন পৃথিবীতে এলি সেদিন তোকে নিয়েই তিনি বাঁচার আশা করতেন। তোকে আমার কাছে রেখে যান। তুই এমন মায়ের উপর রাগ করিস না ভাই। তোর মা তোকে একবার দেখার জন্য উৎলা হয়ে আছেন। নিত্য দাদার কথা শুনে বুঝতে পারলাম চোখের কোনে পানি জমেছে।
‘আমাকে আগে বলোনি কেন?
‘তোর মা নিষেধ করেছিলো।
‘আমার মা কোথায় থাকে?
‘আগামীকাল তিনি আসবেন। তুই কত দিনের ছুটি পেয়েছিস?
‘পুরো সপ্তাহ টাই ছুটিতে আছি।
‘এবার নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়। আমি বিছানায় শুয়ে মোবাইল বের করে ফেসবুকে আসি। নিরুকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে।
‘নিরু, আমার মায়ের সন্ধান পেয়েছি।
‘সত্যি?
‘হ্যা।
‘তোমার মা কে দেখোনি?
‘এখনো দেখিনি। তবে তিনি কাল আমার সাথে দেখা করতে আসবেন।
‘ইশ, আমিও যদি এই দৃশ্য টা দেখতে পারতাম!
‘আমাদের এতিম খানার ঠিকানা জানো! সেখানে চলে এসো।
‘আচ্ছা দেখি।
বেলা ১১ টার দিকে একটা সিএনজি এসে থামে এতিম খানার গেইটের বাইরে। আমি নিরুর ফুফুকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠি। আমার জন্য আরো চমক ছিলো। ভদ্রমহিলার সাথে নিরু নামে সিএনজি থেকে। আমি হিসাব মেলাতে পারছিনা। ভদ্রমহিলা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার পাশে নিত্য দাদা। ‘ইনি তোর মা। নিত্য দাদা ফিসফিস করে বলতেই আমি আবারও চমকে উঠি। ভদ্রমহিলা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে থাকেন। এক সময় হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। আমি দেখতে পেলাম নিরু অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘দেখ নিরু, এই নিলয় হচ্ছে আমার ছেলে। নিরু চমকে ওঠে। ‘কিন্তু ফুফু, তুমি তো বিয়ে করোনি! ‘তোকে সব কিছুই খুলে বলবো।
সব কিছু শোনার পর নিরুর দুই গাল বেয়ে পানি পড়তে থাকে। নিরু একবার আমার দিকে আরেকবার ওর ফুফুর দিকে তাকায়। ‘নিরু, তুই আমার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবি না মা? আমার ছেলেটা সারাজীবন ভালোবাসা পায়নি। তুই পারবিনা ওর সব কষ্ট দূর করে দিতে? মায়ের কথা শুনে নিরু মুচকি হাসে। আমি তাকিয়ে থাকি সেই মায়াবী হাসির দিকে। নিষ্পাপ হাসিটা সারাজীবন দেখতে চাই।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত