কলেজ জীবন শেষ করে।সবেমাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।অবশ্য আমার আবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবার কোন ইচ্ছায় ছিলো না।দেশের শিক্ষত বেকারত্ব যে ভাবে বাড়ছে।তাতে এসব পড়ালেখা করে কিছু হবে না।
আমার এমন মনমানসিকতা থাকলে ও পড়ালেখা ছেড়ে দেবার কোন উপাই ছিলো না।পারিবারিক ভাবে শিক্ষার প্রভাব টা একটু বেশি।কিন্তু এসব আমার ভালো লাগে না।আমার ভালো লাগে প্রকৃতির আলো বাতাস এগুলো।কিন্তু এগুলো দিয়ে তো আর জীবন চলে না।তাই অনিচ্ছা থাকলে ও পড়ালেখা করতে হত।কিন্তু আমার তো প্রকৃতি টানে। তাইতো শহর থেকে দূরে কোলাহল মুক্ত একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম।
প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার জন্য।ভার্সিটির সামনের রেল লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দিন দূরে চলে যেতাম।এবং সেখানে গিয়ে আকাশের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমার মত অনেকে শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে।প্রকৃতিকে ভালোবাসতে এখানে চলে আসতো এর ভেতর আবার অনেকেই তাদের কাছের মানুষকে নিয়ে আসতো চুটিয়ে প্রেম করার জন্য।
আমার আবার ঐ রকম কোন কাছের কোন মেয়ে বন্ধু বা প্রেমিকা ছিলো না।আমি সব সময় একা একাই যেতাম।মাঝে মাঝে আমার কয়েকটা ছেলে বন্ধু যেত কিন্তু তারা বেশি একটা সময় থাকে না।এভাবে চলতে থাকে। প্রতিদিন সেই বিকালে গিয়ে সন্ধা পর্যন্ত থেকে চলে আসতাম।
তবে দুই একজন এর দিকে মাঝে মাঝে চোখ পড়লে ও সেটা ক্ষন স্থায়ী।এভাবে চলতে থাকে।কোন একদিন ক্লাস শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি চলে গেলাম।আমার গন্তব্য স্থানে। আজ আবার আমার সঙ্গি আছে আমার কয়েকটা বন্ধু।কথা বলতে বলতে পৌছে গেলাম আমার গন্তব্যে। শীতের দিনের বিকালের রৌদ্র গায়ে মাখাতে ভালোই লাগছে। হটাৎ আমার চোখ গিয়ে স্থির হয়ে গেলো।অসম্ভব এক সুন্দরী একাকি একটি স্থানে বসে আনমনে কি জানো ভাবছে অন্য কোন দিকে তার কোন খেয়াল নাই।
এরই ভেতর আমার বন্ধুদের গলার শব্দে আমি আমার চোখটি ঘুরায় ফেল্লাম।আগের মতই ওরা আর আমার সাথে বেশি ক্ষন রইলো না।ওরা চলে যাবার পর কেন জানি আমি আবার ঐ রূপসী এর দিকে তাকায় রইলাম। এমনটি আমার কখনো হয়নি।নিজে থেকে চোখ দুটি দিয়ে দেখতে না চাইলে ও মনটি চোখ দুটিকে দেখতে বাদ্ধ করছে।এমনি ভাবে কখন যে বিকাল পেরিয়ে সন্ধা নেমে গেছে খেয়াল করিনি আমি দূর থেকে আযান এর আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম।
আমার মত সে ও নড়েচড়ে বসলো।এবং সে হয়তো তার বাসার উদ্দশ্যে রওনা হল।আমি তাকিয়ে রইলাম যত দূর পর্যন্ত তাকে দেখা যায়। আমিও বাড়ির পথে রওনা দিলাম।বাসায় আসার পর কেন জানি ঐ রুপসী কে মন থেকে আড়াল করতে পারছি না।মনে মনে ভাবতে লাগলাম কেন এমন হচ্ছে। এমনটি তো আগে কখনো হয় নি। একটি সময় ভাবলাম কাল যদি দেখা হয়।
তাহলে অবশ্যই কথা বলবো বা বলার চেষ্টা করবো।এমনি ভাবে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ছি জানি না। এরপর দিন সম্পূর্ণ ক্লাস না করেই চলে গেলাম আমার প্রিয় জায়গায় চলে গেলাম।আর গিয়ে দেখি সেই মেয়েটি আজও একই স্থানে বসে আছে।কপালটি ভালো নাকি খারাপ কিছুই বুঝতে পারলাম না।এমন ভাবতে ভাবতে চলেই গেলাম।মেয়েটির পাশে গিয়ে একটু গলায় আওয়াজ দিয়ে বল্লাম শুনুন।
মেয়েটি আমার দিকে বিস্ময় চোখে আমার দিকে তাকায় এবং বলে আমাকে বলছেন।আমি হ্যা সূচক জবাব দিয়ে বল্লাম বসতে পারি।মেয়েটির সহজতর উত্তর বসেন।আমি আর দেরি করলাম না।এতক্ষণে বুঝলাম কপালটি খারাপ ছিলো না ভালোই ছিলো। তারপর কথা বলে বুঝতে পারলাম মেয়েটি অনেক বন্ধুসুলভ।
এরপর জানতে পারলাম মেয়েটির নাম অধরা। এভাবে অনেক ক্ষন কথা বলার পর।আমরা বন্ধুর মত হয়ে গেলাম।সেদিন মত অনিচ্ছা সত্যে ও শেষ করতে হল।কারন সন্ধা হয়ে গেছিলো।দুজনে বাড়ির পথে রওনা হলাম।এভাবে অনেকদিন চলতে থাকলো।আমি কেন জানি নিজে নিজেই অনুভব করি।অধরা এর প্রতি আমি দূর্বল হয়ে পড়েছি। সেদিন ভালোভাবে বুঝতে পারলাম।যেদিন অধরা এর আসতে দেরি হয়ে গেছিলো।ঐ দিন মনে হচ্ছিলো আমি মনে হয় মারাই যাবো ওর দেখা না পেলে।
আমি বুঝতে দিতাম না তার প্রতি আমার ভালবাসার অনুভূতি। কিন্তু আমি ও বুঝতে পারতাম অধরা আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু সে আমার থেকে এই বিষয়টি বুঝতে দিত না। এতদিনে আমি একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনের কথা আমি অধরা কে জানাই দিবো। যেই ভাবা সেই কাজ।অধরা কে ফোন দিয়ে বল্লাম তুমি আজ একটু শাড়ি পড়ে আসতে পারবা।অধরা বল্ল কেন।আমি বল্লাম অনেক দিন তোমায় লাল শাড়িতে দেখি না।
অধরা বল্ল পাগল একটা।তারপর বিকালে চলে গেলাম আমাদের সেই প্রথম দেখার স্থানে।আজ আমি অধার এর আগে গেছি।ওহ হ্যা একটি আংটি ও দুটি গোলাপ ফুল নিয়েছি। যথাযথ সময়ে অধরা চলে আসলো।অধরা কে লাল শাড়িতে কেমন যে লাগে বুঝাতে পারবো না। অধরা আসলো বল্ল।এই যে মিস্টার কেমন লাগছে বল্লে না তো।আমি বল্লাম বলতে পারি তোমার আঁখি দুটি বন্ধ কর। অধরা তার আঁখি দুটি বন্ধ করলো।
আমি সাথে সাথে তার সামনে হাঁটু গেরে বসে। গোলাপ ফুল দুটি সামনে ধরে বল্লাম।অধরা, এই গোলাপ এর রঙ্গের মত আমার জীবনকে তুমি রাঙ্গিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারবে। আমি কথা গুলো চোখ বন্ধ করেই বলছিলাম।চোখ খুলে দেখি অধরা আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। এমন কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।
শুধু চোখ দিয়ে অঝোর এ পানি বের হতে থাকলো। বাসায় আসলাম কোন ভাবে।রাতের বেলায় বাসার ছাদে গিয়ে আকাশের তারা গুলোর ভেতর অধরা কে খুঁজতে লাগলাম। সারারাত আকাশের দিকে তাকিয়ে অধরা কে দেখতে থাকি।সকালে ফোন দিলাম এটা বলার জন্য। অধরা তুৃমি আগের মতই শুধু বন্ধু হয়ে পাশে থাকো। সকালে ফোন দিয়ে দেখি অধার এর নাম্বার বন্ধ।আমি অধার এর জন্য কেমন অসুস্থ হয়ে গেছি।
এভাবে চলতে থাকে।আমি প্রতিদিন সেই জায়গায় গিয়ে অপেক্ষা করি আর ভাবি অধরা এই আসলো বলে।কিন্তু অধরা আর আসে না। কিছুদিন পর একটা অচেনা মেয়ের নাম্বার থেকে একটি ফোন আসলো।ওপার থেকে একটি মেয়ের কন্ঠ।সে বল্ল আমি অধরা এর বন্ধু আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আমি তো হতবাক।আমি বল্লাম কোথায় আসতে হবে।সে বল্ল আপনার সেই প্রিয় জায়গায়।আমিও কথা মত চলে গেলাম।
আমিতো অস্থির হয়ে যাচ্ছি। একটি মেয়ে এসে পেছন থেকে ডাকলো।আমি ঘুরে হাজার টি প্রশ্ন। অধরা কই,ও কেমন আছে।সে কিছু না বলে।একটি চিঠি আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। চিঠিটি খুলে আমি আমারআমার নিজেকে হারিয়ে ফেল্লাম। চিঠিতে লেখা।আমি তোমার জীবনকে রাঙ্গিয়ে দিতে পারলাম না।
কারন আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। আমি জানতাম আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না। তাই তোমার জীবন আমি নষ্ট করতে চাইনি।পারলে ক্ষমা করে দিয়।আর হ্যা আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। চিঠিটি বুকের সাথে ধরে বল্লাম। অধরা আমি তোমাকে ভালবাসি।