বউয়ের সাথে প্রথম ঈদ

বউয়ের সাথে প্রথম ঈদ
আয়েশার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে গেল বছরের ডিসেম্বরে।এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরতে হয়েছিল আপন কর্মস্থলে। কিন্তু তাকে রেখে যাই গ্রামের বাড়িতেই।শাহ্ সিমেন্ট, নারায়নগঞ্জ শাখার জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে আছি বেশ কিছুদিন হয়।এর মধ্যে বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।মার্চের শেষ দিকে বেশ ক’দিনের ছুটি ছিল কিন্তু ২৭শে মার্চ থেকে লকডাউনের জন্য বাড়িতে মুভ করার আর সুযোগ হয়ে উঠেনি।তবে তার সাথে কথা হতো প্রতিদিনই।
কি করছে, না করছে,বাড়ির মানুষজন তাকে কেমন সোহাগ করছে ফোন ধরতেই মেলে ধরতো তার সব গল্পের ডালপালা।না শোনে আর ফুরসত নেই।পরিচয়তো আর বেশি দিনের নয় তবুও যেন তার সব ভাবনার আকাশ জুড়ে আমি আর আমি।সে চায় আমার অবসরটা যেন শুধু তার জন্যই হয়।বলতে চায় না বলা কথাগুলো।তন্ময় হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি তার কথাগুলো। এদিকে কভিড-১৯ এর ভয়াবহতা বেড়েই যাচ্ছিল।তখন সবচেয়ে রিস্কি জোন হলো নারায়ণগঞ্জ। ইতিমধ্যে আমার কোম্পানির বস,কলিগ, কর্মচারিসহ করোনা পজিটিভ অনেকেই।বাড়ির সবাই চিন্তায় বিভোর কি হয় না হয়! আয়শা যখন যেখানে যেটা শোনছে সাথে সাথে আমাকে ফোন করে বলছে।গরম পানির গড়গড়া করবেন,লেবু পানি, আদা পানি খাবেন, জামাতে না গিয়ে ঘরে নামায পড়বেন,,তার রাজ্যের সব উপদেশ আমার জন্য ছিল। হ্যা একবার থানকুনি খেতেও বলছিল। সর্বোপরি সার্বক্ষণিক তার টেলি-কেয়ারিংয়ের মধ্যেই ছিলাম।
দুই বার টেষ্ট করেছি।আলহামদুলিল্লাহ দুই বারেই নেগেটিভ আসছে।যেহেতু আমি সুস্হ তাই সে বাইনা ধরেছে তাকে ছাড়া ঈদ করলে সে কোন ভাবেই মেনে নিবে না।অফিসের বসকে অনেক কষ্ট করে রাজি করিয়ে চাঁদ রাতে বাড়ির দিকে রওয়ানা করলাম।মধ্য রাতে বাড়ির দরজায় কড়া নারলাম কাঁধে ব্যাগ,হাতে ফল-ফ্রুডস,মিষ্টি, চোখে চশমা আর একরাশ ক্লান্তি নিয়ে। আয়শা এসে হনহন করে দরজা খুলে দেয়।আমাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পরে।শাড়ির আঁচল টেনে মুচে ফেলে চোখের কোনায় জমে থাকা জলরাশি। আস্তে করে বলে, “লেবুর শরবত করে দেই” ?আরও কত কি!!
যেহেতু আমি অনেক পথ জার্নি করে এসেছি।বাসে অসংখ্য মানুষের ভীর টপকে উঠতে নামতে হয়েছে।না জানি কত রোগীর স্পর্শ পেয়েছি।তাই আমি মুচকি হাসি দিয়ে বাবা মা সবার সাথে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করেই বাসার একটা রুমে নিজেকে আইসোলেটেড করে ফেললাম।যেটা তাদের ধারণার উর্ধে ছিল।রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দেই।সারাদিন চলে যায় সারা রাতের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতেই।এদিকে বারবার ফোন আসছে আয়শার রুমে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি একদমই প্রস্তুত নই।মাকে বলেছি রুমের সামনে খাবার দিয়ে যাওয়ার জন্য।আয়শার বেশি পীড়াপীড়ির জন্য বাড়িতে এসেছি তবে কয়দিন আইসোলেটেড থাকব।উপসর্গ দেখা না গেলে তবেই বের হব।
তবে আমার রুম আর আয়েশার রুমের মাঝে একটা জানলা ছিল।জানলায় নীল রঙ্গের দুটি পর্দা ঝুলানো।ঈদের দিন সন্ধা নামতেই হঠাৎ দেখি জানলার ও পাশ থেকে পর্দা সরিয়ে আয়শা বিরবির করে আমায় ডাকছে।আলতো করে হাত বুলাচ্ছে স্বচ্চ থাইগ্লাসটির উপর।আমিও এগিয়ে গেলাম।এত দিন তাকে কাছে না পাওয়ায় বুকের বা-পাশে জমে থাকা মেঘ আমার চোখ গড়িয়ে বৃষ্টি হয়ে পড়ছে।বুকটা ছটফট করছে,তবুও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি। ওপাশ থেকে তার শ্যাম্পুকরা ভেজা চুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম।পরক্ষনে স্মৃতির করিডরে ধেয়ে আসছিল হাজারো স্মৃতি।
প্রথম যেদিন আমার ঘরে শাড়ি পরেছিল বেচারির কত কষ্টই না হয়েছিল!আমি নিজহাতে তার শাড়ির কুচি করে দিয়েছিলাম।কাজল দিয়ে চোখ লেপটে ফেলেছিল।ধোঁয়ে মুছে আমি আবার তার চোখে কাজল এঁটে দিলাম।উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম তার কোমল ঠোঁটের স্পর্শ। আমার অমন মায়াবী চাহনি দেখে আয়শা জানলার কাঁচটা খুলতে চেষ্টা করছে।তবে নিজেকে শক্ত করে নেওয়াতে সে আর সাহস করে উঠতে পারে নি। যদিও আমার বাহির বলে দূরে থাকুক ভিতর বলে আসুকনা। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য দূরত্বটা আজ আর ডিঙ্গানো হলো না!!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত