ভালোবাসা

ভালোবাসা
– এই জলদি ভিডিও কল কর, দরকার আছে।
– এখন কি করে হবে? আমি অফিস যাচ্ছি বাসে আছি প্লিজ এখন না
– না না আমি ওসব কিছু জানিনা, দরকার আছে বললাম ব্যাস! আমি করছি রিসিভ কর।
– এই না অহনা শোন, এমন ছেলেমানুষী করিসনা, বাস ভর্তি লোক বসার সিট ও পাইনি দাঁড়িয়ে আছি, কি করে করবো বল?
– ও আমার দরকার টা দরকার নয়, শুধু তুই নিজের দিকটাই দেখিস? বিহান তুই এত স্বার্থপর কেন? আমার যখন রাতে ঘুম পেয়ে যায় তবু ফোনে কথা বলবি বলে জাগিয়ে রাখিস তখন কিছু বলেছি?
– এই এই দেখ অহনা, কোনটার সাথে কিসব কম্পেয়ার করছিস বলতো? প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যা সিচুয়েশন…
– প্লিজ বিহান, তোকে করতে হবেনা রাখছি আমি।
– এটুকু ছোট বিষয়ে রাগ করার কি আছে? কি হয়েছে সেটা ফোনে বললেও তো হয়, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে কি করতাম না আমি?
– ঠিক আছে অফিস যা, আমি কথা বাড়াতে চাইনা রাখলাম।
– এই দাঁড়া, হ্যালো! হ্যালো!
ততক্ষণে ফোন রেখে দিয়েছে অহনা। আসলে কখনও নতুন ড্রেস পড়লে‌ই আগে ভিডিও কলে বিহান কে দেখায় ও, শপিং করার সময়‌ও কোন ড্রেস টা কিনবে তার জন্য ট্রায়াল রুমে ছবি তুলে পাঠায় ওকে পছন্দ করার জন্য আর আজ অহনা মায়ের শাড়ি পড়ে সিন্দুর পড়ে একদম ব‌উয়ের মতো সেজেছিল ও আর সেটা একমাত্র বিহানকে দেখাবে বলেই। দু ঘন্টা ধরে মেকআপ করে অনেক আশা নিয়ে ফোন করেছিল ও বিহানকে কিন্তু এমন হবে ভাবতে পারেনি তাই কষ্ট হয়েছে ওর। এখন দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, খুব স্বাভাবিক খারাপ লাগাটা কিন্তু এটা কাউকে বলার‌‌ও নয়, তাই শেয়ার করতে পারছেনা অহনা। অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে বার দুয়েক মেসেজ করে সরি চেয়েছে বিহান কিন্তু কোনো রেসপন্স পায়নি। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরিয়েই অহনাকে ফোন করে ও,
– হ্যালো! তুই কি এখনও রেগে আছিস?
– নাহ্! একদমই না। রাগব টাই বা কেন? মায়ের শাড়ি পড়ে ব‌উ সেজেছিলাম তোকে দেখাবো বলে আর সেটা তুই দেখিসনি বলে রাগ করে থাকবো? এত ছোট বিষয়ে রাগ আমি করিনা কখনও বিহান বুঝতে পেরেছে এটা ছোট বিষয় মোটেই ছিল না, ওর অভিমান করার কারনটা বুঝতে পারছে কিন্তু দোষ যে ওর‌ও ছিল না সেটা বোঝাতে পারছেনা।
– দেখ অহনা আমি বুঝতে পারছি তোর খারাপ লেগেছে কিন্তু বিশ্বাস কর আমার কিছু করার ছিলনা, বাসে ওভাবে ভিডিও কল করা সম্ভব ছিল না। একটু বোঝার চেষ্টা কর, আর ছবি নিশ্চয়ই তুলেছিস ওটা পাঠিয়ে দিতে পারতিস..? আচ্ছা এখন পাঠিয়ে দে আমি দেখে নিচ্ছি আর তোকে খারাপ তো কখনও লাগেনা আমার তাই কমপ্লিমেন্ট আগে থেকেই দিয়ে দিতে পারি আমি.. প্লিজ রেগে থাকিস না সরি অহনার রাগ এতক্ষণে গিয়ে থেমেছে, আসলে ওর নিজের‌ই খারাপ লাগছে এখন। ওর বোঝা উচিৎ ছিল, শুধু শুধু জোর করেছিল, ও বিহানকে বুঝবেনা তো কে বুঝবে? তবে খারাপ তো একটু লেগেছিল‌ই, অনেক আশা করে সেজেছিল ও।
– আচ্ছা ঠিক আছে ক্ষমা করলাম এবারের মতো তবে এর শাস্তি আছে…
– থ্যাঙ্কু, জো হুকুম…
– শাস্তি হলো এই যে আমি যা বলবো সেটা করতে হবে নাহলে আমি ছবি পাঠাবো না।
– এই না, এগুলো ঠিক না। তুই এক্ষুনি উল্টোপাল্টা বলবি করতে আমি তোকে চিনি। তার চেয়ে আগে ছবি পাঠা পরে যা বলবি করবো।
– না আগে করতে হবে, তারপর ছবি।
– এই একমিনিট ধর, বাস আসছে উঠি…
– উঠলি?
– হ্যাঁ বল…
– সিট পেয়েছিস?
– আরে এখান থেকে সিট পাওয়া যায়না, প্রচুর লোক থাকে…
– তাহলে পারফেক্ট।
– মানে? কি পারফেক্ট? আমি এই বস্তাপচা গরমে বাসে সিদ্ধ হচ্ছি আর তোর মজা হচ্ছে?
– তোকে এখন বাসে এই লোকগুলোর সামনে আমায় ফোনে আই লাভ ইউ বলতে হবে, তবেই ছবি পাবি নাহলে দেবোনা।
– আমি জানতাম তোর মাথায় এরকমই কিছু শয়তানি বুদ্ধি থাকবে। প্লিজ অহনা… এরকম হয় নাকি? কি ভাববে? প্লিজ প্লিজ… এরকম হয়না…
– ভেবে দেখ, ছবি দেখবি নাকি ডিলিট করে দেব?
– তোর কি ক্ষতি করেছি আমি? কোন জন্মের শত্রুতা… এগুলো ঠিক না…
– বল বল জলদি বল.. নাহলে ডিলিট করছি…
– ওকে ওয়েট… আই লাভ ইউ (ফোনটা মুখের কাছে এনে মৃদু ভাবে বিহান বললো)
– নাহ্! এভাবে নয়, কিছুই শোনা যাচ্ছে না, জোরে বলতে হবে…
– এগুলো ঠিক করেছিস না অহনা, খুব খারাপ হচ্ছে…
– না বললে আর‌ও খারাপ হবে… ভেবে দেখ।
– ওকে আইই লাভভ ইউউউ! শান্তি? হয়েছে? আর একবার বলবো? আইই লাভভ ইউউউউ…
বাসে বিহানের এমন কান্ড দেখে দেখে সকলে হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে, যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে, যেন কি না কি ভুল করে ফেলেছে ও।
– এই তুই সত্যি বলে দিলি? আমি তো মজা করছিলাম, রাগাচ্ছিলাম। ভাবিনি তুই বলে দিবি.. কি ভালো রে তুই… আই লাভ ইউ টু বিহান।
– আর তেল লাগাতে হবেনা ফোন রাখছি বাড়ি ফিরে কথা হবে আর এক্ষুনি ছবিটা হোয়াটসঅ্যাপ কর।
– তুই বলার আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, আমি ভাবিনি সবার সামনে বলার সাহস আছে তোর…
– মানে? কি শয়তান রে তুই তোর হচ্ছে দাঁড়া।
– আচ্ছা, বাড়ি ফিরে যা করার করিস, রাখ টাটা।
– টাটা বাজে মেয়ে।
ওদের সম্পর্ক নিখাদ নির্ভেজাল ভালোবাসার। রাগ, অভিমান, দুষ্টুমি, ছেলেমানুষী, ঝগড়া এগুলো চলতেই থাকে, তবে সবচেয়ে বড়ো কথা ওরা দুজন দুজনকে বোঝে, দিনশেষে একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা ওরা। ওদের মতো সম্পর্ক প্রত্যেকের হ‌ওয়া উচিত, স্বার্থ, ঘৃনা, অবহেলা, ইগো এসব কখনও গ্রাস করেনি ওদের সম্পর্কে, ওরা এগুলোকে আসতে দেয়নি, একটা জিনিসকেই গুরুত্ব দিয়েছে ওরা বরাবর, আর সেটা হলো ভালোবাসা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত