মহিন নামের একাউন্ট থেকে ফেসবুকে রিকুয়েস্ট আসলো,আইডি চেক করে দেখলাম ছেলে খারাপ না।বিশাল বিশাল পোস্ট দেওয়া মেয়েদের পিরিয়ড, গর্ভকালীন সময় নিয়ে, এছাড়াও আছে নারী অধিকার নিয়ে,মাঝেমধ্যে প্রেম নিয়েও আছে,প্রাক্তনকে সম্মান করুন টাইপ কথাবার্তা,সিগারেট খাওয়া দূরে থাক বানানও ঠিক করে পারেনা,গালিগালাজ দেওয়া লোক একদম পছন্দ করেনা,এমনকি নিজেও দেয়না,নিজে যেমন স্বাধীনচেতা তেমনি অন্যের স্বাধীনতার ব্যাপারেও যথেষ্ট সচেতন।একের ভেতর সব,মেয়েরা যেমন ছেলে পছন্দ করে ঠিক তেমন।
অন্যদিকে তার “সব পুরুষ খারাপ” টাইপ পোস্ট দেখে আমি বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম,মহিন কি আসলেই ছেলে?নাকি মেয়ে হয়ে ছেলের একাউন্ট চালাচ্ছে।নারীদের ইস্যু নিয়ে ছেলেরাও সাপোর্ট দিতে দেখেছি কিন্তু এমন সাপোর্টার আমার জন্মের এতবছরেও দেখিনি।ফেসবুকে এই প্রথম কোনো ছেলেকে আমার মনে ধরলো,যে কিনা একদম আমার মনের মত।কিন্তু মূল হিসেব মিলিয়ে নিতে পারছিনা।সব ছেলে খারাপ হলে মহিনও তো খারাপ।আমার সন্দেহ দূর করার জন্য আইডির জেন্ডার অপশনে গিয়ে দেখে আসলাম, না ঠিক আছে, সে ছেলেই।কিন্তু ছেলে হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে এতবড় কথা!!
সে যাইহোক, আমার তো পছন্দ হইছে, এটাই এখন মুখ্য বিষয়।এত ভাবতে ভাবতে মহিনের রিকুয়েস্ট রিমুভ হয়ে গেল।আমি এ কি করলাম!রিমুভ করে দিলাম।রিমুভ হয়ে যাওয়ার পর আমিই আবার রিকুয়েস্ট দিলাম।মহিন সাথে সাথে একসেপ্ট করেই এসএমএস দিলো,কি ব্যাপার আপনি দেখি রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে নিজেই রিকুয়েস্ট দিলেন। আমি পড়ছি মুসিবতে,বললাম হাতের চাপে ডিলিট হয়ে গেছে,আপনার প্রোফাইল পছন্দ হওয়াতে রিকুয়েস্ট দিলাম।
মহিন- আহা ধন্যবাদ। ছেলেটার সাথে কথা বাড়াতে চাইলেও পারলাম না।
অনেকদিন পরই কথাবার্তা এগোতেই হয়ে গেল মহিনের সাথে প্রেম।এত সুন্দর প্রেম নিবেদন হয়তো বিশ্বপ্রেমিকেরাও পারবেনা,সম্রাট আকবরকেও হার মানাবে,তাই প্রেম না হয়েও পারলো না।প্রেমের কয়দিন পরই গোয়ান্দার মত তার ফেসবুক এক্টিভিটি চেক করা শুরু করলাম,চেক করতে করতে তার বন্ধুর আইডিতে গেলাম,গিয়ে দেখি এক মেয়েকে গালাগাল দিচ্ছে।কারণ মেয়ে নাকি র্যাগ ডে’র টি-শার্টে অশ্লীল লেখা লিখছে।ওমা এই কি সেই মহিন?প্রচন্ড অন্ধবিশ্বাস নিয়ে মনেমনে বললাম,না হতেই পারেনা,হয়তো তখন আইডি হ্যাক হয়েছিল।
একদিন মহিন বলল,চলো অনি দেখা করি।আমাদের তো অনেকদিনের প্রেম,দেখা করার দিন তার কাছ থেকে সিগারেটের দুর্গন্ধ বের হচ্ছে বিধায় অতিদ্রুত বাসায় যাওয়ার উছিলা দিয়ে বিদায় হয়েছিলাম।এ কি সে মহিন?যে কিনা ফেসবুকে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট দেয়।সিগারেট খায় না তাহলে সিগারেটের গন্ধ আসবে কিভাবে? নিশ্চয়ই ড্রাইভারের কাছ থেকে।সব ড্রাইভার সিগারেটখোর বলে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলাম।
কিছুদিন পর তার দেওয়া “নারী পুরুষ সমান অধিকার” এই পোস্ট আমার নিউজফিডে আসছে অথচ ইনবক্সে বলছে “তোমার পাসওয়ার্ড দাও” ওমা এ কি দুই রূপ! দ্বিতীয় দিন পোস্ট দেখলাম “যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা টিকেনা” অথচ ইনবক্সে বলছে “নাঈম তোমার পোস্টে কমেন্ট করছে কেন?ওর সাথে তোমার কি চলে?পাসওয়ার্ডও দিচ্ছ না আমাকে।” এটা দেখে আমাদের ব্রেকাপের পাড়ে এসেও ব্রেকাপ হলো না,রক্ষা পেল প্রেম।”আলহামদুলিল্লাহ” লিখে পোস্ট দিলো ফেসবুকে। একটা মেয়ে কমেন্ট করলো “ভাইয়া প্রেম-টেম হয়ে গেল নাকি ?”
-আরে ধুর এসব আমার দ্বারা হবেনা,আপনি জানেনই তো আমি সিঙ্গেল।এসব দেখে রাগ হলো,তবুও চুপ করে রইলাম,ভালোবাসার মানুষকে এতটুকু ছাড় দেওয়াই যায়। হঠাৎ করে একদিন বলল,তুমি আমার মত করে চলবা।
আমি-কেন?
মহিন- কারণ আমি তোমার প্রেমিক।
আমি- তাহলে নারী অধিকারের পোস্ট কিসের জন্য?
মহিন- পোস্ট আর বাস্তবতা এক না।
তার কথাবার্তা একদমই অপছন্দ দেখে কথাবার্তা বন্ধ করে দিলাম। দুইদিন পর,তাকে কল দিয়েও ফোনে পেলাম না।তখনও তাকে নিয়ে সন্দেহ হতো, ভাবছিলাম গার্লস গ্রুপে পোস্ট দিয়ে তার আসল চেহারা বের করে আনবো।কিন্তু না, যতই হোক সে আমার প্রেমিক, তাকে ছোট করার মানেই হয়না।আমি নেগেটিভ মাইন্ডের, আমার নেতিবাচক চিন্তার জন্য তো আর সে খারাপ হয়ে যেতে পারেনা। এসব ভেবে হতাশ হয়ে টিভি দেখতে বসলাম।একটা ক্রাইম রিপোর্ট দেখাচ্ছে, “সেখানে অপরাধী যিনি বর্তমানে ৪নং স্ত্রীকে নিয়ে এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকে,পেশায় সিএনজি চালক,এছাড়াও তাকে মাদকদ্রব্য পাচারের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে,ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর লেখা দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
এভাবেই নাকি তার সংসার চলে।নারী নির্যাতনের কেসে ফেঁসে গেছে এই লোক।নাম মহিন,আমি আগ্রহ সহকারে তার ছবি দেখলাম,যখনই ছবি সামনে এলো দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।জ্ঞান ফেরার পর আম্মু যত্ন না নিয়ে উল্টো ঝাড়ি দিয়ে বলল,ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া না করলে এমনই হবে।আজ থেকে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া না করলে তোর ফোন চালানো বন্ধ।অথচ সেদিকে আমার কোনো খেয়ালই নেই,এতদিনে বুঝলাম কেন মহিনের ফোন বন্ধ ছিল?
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা