আজ প্রায় দুইমাস ধরে মেয়ে টাকে মেট্রো তে দেখছি দেখছি, দেখছি বললে ভুল হবে চোখ দিয়ে গিলছি … তার মানে এই নই যে প্রতিদিন দেখি, রবিবার দেখতে পাইনা, আবার কোনো কোনো দিন আমি যে কামারাই উঠি সেটাই সে উঠে না সে দিন একটু অসস্তি হই। কেন যে এমন হই জানি না। আমার তো কোনো দিন মেয়েদের প্রতি দূর্বলতা ছিলো না। একদিন রাতে যদি তারে না দেখি তাহলে ঘুম হয় না।
সে কোন মেট্রো স্টেশনে থেকে উঠে জানি না কারন আমি যখন উঠি সে আগে থেকেই বসে থাকে আমি শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশন এ উঠি কিন্তু দুইজনেই পার্ক স্ট্রীট মেট্রো স্টেশন নামি। সে নেমে কোন দিকে যায় দেখতে পাইনা। কোনো দিন চেষ্টাও করি না। কারন কোনো এক মহাপুরুষ বলে গেছেন, “চলে যাওয়া নারী আর গাড়ি এর দিকে কক্ষনো তাকিয়ে থাকতে নাই “।
মেয়েটাকে আগেও মেট্রো তে দেখেছি কেমন যেন একটু… এই এতো বড় শহরে কেও কারোর পরিচিত না হলেও… খেলা কিংবা রাজনিতী নিয়ে সবাই কথা বলে এমনকি মেয়ে রাও নিজেদের মধ্যে কথা বলে কিন্তু সে যেন সবার চেয়ে আলাদা… সবসময় মোবাইল এ কি যেন দেখে…মনে হই কিছু দেখে কান্নার চেষ্ট করছে কিন্তু পারছে না এতো লোক থাকার কারনে। যাই হোক এই কারনে যে তাকে ফলো করি তা নই, তাকে মেট্রো তে দেখছি তাকে প্রায় ১বছর ধরে কিন্তু লক্ষ করছি ২মাস ধরে।
এবার আমি আমার পরিচয় দিয়, আমি নবাব আলি খান, বয়স ২৩, আজ দুই বছর হলো বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কারন আমি অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রাজনিতী তে জড়িয়ে পড়েছিলাম। আমার বাড়ি এই কলকাতা শহরে না…. আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলাই। বাপ সিমেন্ট ব্যবসায়ী, মা…. তার কথা নাই বললাম। আর পাঁচ টা মায়ের মতই মমতাময়ী মা যার তুলনা কারওর সাথে চলে না। বাড়ি থেকে অবশ্যই এই মা ই আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। কারন আমার দাদুও রাজনীতী করতো আর একসময় বিরোধী দের হাতে খুন হতে হই সেই ভয়ে আমাকে এইসব থেকে দূরে রেখেছিলো। এমন কি বাড়ি থেকে যখন কলকাতাই পড়তে আসি তখন বার বার সাবধান করে দেই কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, বছর খানেকের মধ্যেই এর সাথে জড়িয়ে পড়ি…. যা আমার রক্তে বয়ছে তা কি কেও আলাদা করতে পারে। আর তাছাড়া বড়ো শহরের ছেলেরা সহজে রাজনিতী তে নিজেকে জড়ায় না, কিন্তু আমরা ছোটো শরের ছেলেরা কিছু নানা ভেবেই নেমে পড়ি রাজনিতী তে। আমাকে তারা লিডার বানিয়ে ফেললো।
বাড়িতে আরো আছে দাদি মা, ছোটো দুইটা ভাই বোন, ভায়ের বয়স ২০ বোন ১৬ আরো একজন আছে সে হলো আমার জুড়ুয়া এক বোন আমার চেয়ে ৪ মিনিটের ছোটো। সে ডাক্তার। তাছাড়া চাচা চাচি কাজিন রা তো আছেই ।
বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর নিজের শোচনীয় অবস্থা হয়েছিলো… তখন এক বন্ধু বাবার সাহায্যে একটা শিশু পার্ক এ একটা জব হয়। এখনো সেটাই করি… এই দুই বছরে পদের অনেক উন্নতি হয়েছে… কারন আমি গ্রাজুয়েট পাশ ছিলাম, মাসে প্রায় ২০ হাজার মত এখন মাইনা। আর সংগে রাজনিতী তো আছেই, সেটা পুরো পুরি ছাড়তে পারিনি। তবে আগের মত অতটা সক্রিয় নই আমি। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে কিন্তু এই কয়েক মাস মেয়েটার ভাবনাই সব ভুলে গেছি।
এই ভাবেই ভালো যাচ্ছে….। মেট্রো তে ভীড় ভালোই থাকে এই কারনে বেশি ক্ষন বসে থাকতে পাইনা।সেই ভাবেই তাকে অপলক দৃষ্টি তে দেখি।
মেয়েটার বর্ণনা দিয় এবার…. একদমই সাধারন চেহারা…. আর পাঁচ টা মেয়ের মত তাকে কখনই মেক আপ করতে দেখিনি… এমন কি হাতে নেল পলিশ ও থাকে না । উচ্ছতা ৫.৫” হবে। চুল কোনো কালেই দেখতে পাইনি, হিজাবে ঢাকা থাকতো।
প্রথম প্রথম এইসব কিছুই লক্ষ করি নি, কিন্তু এক টা ঘটনার পর থেকে লক্ষ করছি। সেদিন মেয়েটা দরজার একদম পাশের সিটে বসেছিলো…. স্টেশনে ট্রেন থামলে একটা ১৮/১৯ বছরের ছেলে লাফিয়ে ঢুকলো আর সাথে সাথে ছেলেটার হাটুর সাথে মেয়েটার মোবাইলের ধাক্কা খেয়ে মোবাইল টা পড়ে গেলো। সংগে সংগে ছেলেটাকে এক চড় বসিয়ে দিলো… সামান্য একটা কারনে চড় খেয়ে ছেলেটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে…শুধু সেই না বাকি যাত্রী রাও…. এমন কি সে নিজেও। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরি বলল
ছেলেটা -ইটস অকে।
সেই দিন থেকে তাকে লক্ষ করছি। ভাবছি মোবাইলে কি এমন আছে যার জন্য সে এমন করলো।
এভাবেই চলছিলো। একদিন মেট্রো তে চাপার পর মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না…. ভাবলাম অন্য কামরাই চেপে আছে। দুঃখ হোলো আজ আর দেখতে পাবো না। কারন আজ বাড়ি যাচ্ছি না যে নামার সময়েও দেখা হবে।
আজ এক বান্ধবির ছেলের অন্নপ্রাশন তাই আগেই নেমে যাবো। সেখানে গিয়ে আমি অবাক…. মেয়ে টা আমার আগেই সেখানে উপস্থিত। অবাক ই হলাম কারন মেয়েটা এমন ভাবে আমার বান্ধবির সাথে কথা বলছে মনে হচ্ছে খুব পরিচিত, আমার মনে পড়লো না একে আগে কক্ষনো কলেজে দেখেছি কিনা, না সে আমাদের কলেজে পড়তো না। তাহলে কি অর সাথে টউশনি তে পড়তো… না আমি আর আমার বন্ধু দুইজনেই একি টিউশনি তে পড়তাম। দেখে তো আমাদের চেয়ে ছোটো মনে হয়। এইসব ভাবছি আর তখনি শিপ্রা(বান্ধবি)
– কি রে পচ্ছন্দ হয়েছে নাকি??
চমকে গিয়ে
– আরে না না কি যে বলিস????
– আর ন্যাকামো করতে হবে না, আই পরিচয় করিয়ে দিই…..
বাকি টা জানতে সঙ্গে থাকুন……