বিয়ের আগে আমি আমার স্ত্রীর কাছে মাহরাম মারফত জানতে চাইলাম যে বিয়েতে তিনি কতো টাকা মোহরানা চান।] তার জবাবটা ছিলো এমন,
– ‘মোহরানা হিশেবে আপনি আমার হিফযের দায়িত্বটা নিন।
এর বাইরে আমার কিছুই চাওয়ার নেই’। বিয়ের জন্য প্রথম যখন উনার সিভিটা রিসিভ করি, তখন সেখানে উল্লেখ ছিলো যে তিনি ইউনিভার্সিটির পড়াশুনার পাশাপাশি কোন এক মহিলা মাদ্রাসায় হিফয করছেন। ব্যাপারটা দেখেই অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো। লাভ অ্যাট ফার্স্ট গ্ল্যানস।
আমি বললাম, ‘হিফযের দায়িত্ব তো অবশ্যই নেবো ইনশা আল্লাহ। তবে, এটাকে মোহরানার মধ্যে ফেলার দরকার নেই। ওই দায়িত্ব আমার স্বামী সুলভ দায়িত্ব হোক’। তিনি মানবেন না। তার ইচ্ছা এই দায়িত্বটাই মোহরানা হিশেবে থাকুক। এমন অদ্ভুত দায়িত্ব কখনো মোহরানা হয় কিনা সেটা আমি অবশ্য জানিনা। যাহোক, শেষ পর্যন্ত ওই দায়িত্ব মোহরানা হিশেবে আমি নিইনি। মোহরানা বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকার স্বর্ণ দিয়েছিলাম অবশ্য। তিনি বিয়ের পরে হিফযের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ। যে কয়েকটা বিশাল নিয়ামত দান করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আমাকে অনুগ্রহ করেছেন তার মধ্যে আমার স্ত্রী অন্যতম।
তাকে বিয়ে করে আমি সত্যিকার অর্থেই উপলব্ধি করতে পেরেছি কুরআনে কেন স্ত্রীদেরকে চক্ষু শীতলকারী, হৃদয় প্রশান্তকারী বলা হয়েছে৷ আমার স্ত্রীর যে বিশেষ গুণটা আমার সবচাইতে বেশি ভালো লাগে সেটা হলো তার নির্লিপ্ততা। দুনিয়ার ঝাঁকঝমক, বিলাসিতা, আরাম-আয়েশের প্রতি তার অসম্ভবরকম নির্লিপ্ততা আমাকে মুগ্ধ করে রাখে। আমাদের বিয়ের একবছর পূর্ণ হতে চললো, অথচ বিয়ের পর থেকে আজ অবধি আমি তাকে একটা মাত্র কাপড় কিনে দিতে পেরেছি। তাও সেটা নিয়েছেন অনেকটা আমার শ্বশুরের জোরাজুরিতে। তাকে যখনই আমি কোনোকিছু নেওয়ার কথা বলেছি, তিনি অপারগতা জানিয়েছেন। তার একটাই উত্তর,
– ‘আমার এখন যা আছে সেগুলো যখন পরার একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে, তখন নতুন কাপড় নেওয়া যাবে।
শুধু শুধু অপচয় করে লাভ কি?’
আমার পরিবারের প্রতি তার রয়েছে অসম্ভবরকম ভালোবাসা, যত্ন আর খেয়াল। আমার ফ্যামিলিতে কার কি লাগছে, কার কি দরকার-সেসব তার নখদপর্ণে। তিনি চান এই প্রয়োজনগুলো যেন সবসময় আমি-ই পূরণ করি। আমার বাবা-মা, আমার বোনেরা, আমার ভাইয়া-ভাবি, এমনকি, আমার ফুফু, চাচাদের যেকোন দরকার যদি তিনি জানতে পারেন, সাথে সাথেই আমার কাছে বলে বসেন-অমুকের ওটা লাগবে। টাকা দিয়ে দেন, নয়তো কিনে দেন’।
জীবনসঙ্গীনি হিশেবে আল্লাহর কাছে যেরকম চেয়েছি, তার চেয়ে কয়েক শত গুণ বেশি তিনি আমাকে প্রদান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি স্বগর্বে স্বীকার করি-আমার স্ত্রী ঈমানে, আমলে, তাকওয়ায়, পরহেযগারিতায় আমার চাইতে যোজন যোজন এগিয়ে। আমি প্রতিদিন তাকে দেখে শিখি। নতুন নতুন জ্ঞান লাভ করি। কিভাবে একটা সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যেও অসাধারণভাবে বেঁচে থাকা যায়, কিভাবে মানুষের জন্য ভাবতে হয়, কিভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হয় ভাইয়েরা, বিয়েটা এমন একটা পর্যায় যেখানে বাকি জীবনের সুখ-দুঃখ নির্ধারণ হয়।
তাই, জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি নিজের সংশোধনের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহর কাছে উত্তম, চক্ষু শীতলকারী স্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন। আপনার ঘর যেন জান্নাতের একটুকরো বাগান হয়ে যায়, সেই দোয়া করবেন। বিশ্বাস করুন, আল্লাহকে সত্যিকার ভালোবাসে, ভয় করে, মেনে চলে এমন কাউকে যদি নিজের জীবনে পেয়ে যান, তাহলে দুনিয়াটাকেই একটুকরো জান্নাত মনে হবে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা