আমাদের দুষ্টমিষ্টি খুনসুটি

আমাদের দুষ্টমিষ্টি খুনসুটি
বউ রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। কম্বলের বেশিরভাগ অংশই তার দিকে। আমি কিছু বলতেই পারছিনা। বউ আগেই ওয়ার্নিং দিছে আমি যেন নড়াচড়া না করি। নড়লেই সে হাতের কুনুই দিয়ে পিঠে গুতো দিচ্ছে। আমি একটু পা সোজা করতেই কম্বল নড়েচড়ে উঠলো। সাথেসাথে বউ কুনুই দিয়ে দিলো গুতা৷ মেরুদণ্ডে গুতো খেয়ে পিঠ বাকা করে ফেলছি। সে গুতো দিয়েই বলেছে….
–একটা কথা বললবানা। চুপচাপ থাকবে, ডোন্ট টক টু মি।
-আচ্ছা বলবনা।
–ঠুসসস (আবার দিছে), বললাম না কোন কথায় নয়৷
-ইসসস এত জোড়ে কেউ মারে?
–ঠুসস ঠুসসস (দুটো মেরেছে), একদম চুপ।
আমি কোন শব্দ করলাম না। পিঠ বাকা করে শুয়ে রইলাম। এদিকে ঠাণ্ডাও লেগেছে। কি এক মুসিবত। কম্বল সব তার দিকে। টান দিতেও পারছিনা। আসলে বউয়ের রাগের পিছনেও একটা কারণ আছে। আর এর জন্য আমিই দায়ী। কাহিনী হলঃ- “বহুদিন পর আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিলো৷ সে স্বামীর সাথে কানাডায় থাকে। বউ জিজ্ঞেস করলো….
-কে?
–শ্রুতি ফোন দিয়েছিলো।
-তা কি বলল ওরা? দেশে আসবে কবে?
–আসবেনা, ওখানে ঈদ করবে এবার।
-ওহ আচ্ছা। শ্রুতি ভার্সিটি লাইফে আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিল। সুন্দরীও ছিল খুব। আমিই মাতব্বরি করে জান্নাতকে বললাম….
–শ্রুতি আমার জন্য একসময় কত পাগল ছিল। আহারে বেচারি আজ কতদূরে।
জান্নাত আমার কথা শুনে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো৷ আমি নিজের দাম বাড়ানোর জন্য বললাম….
-হ্যাঁ সত্যিই, আমাকে প্রপোজও করেছিল রাজি হয়নি আমি।
–মানে? শ্রুতি আপুর সাথে তোমার রিলেশন হয়েছিল?
-ঐরকমি হওয়া হওয়া ভাব। আমি ঘুরিয়েছি বুঝলে পাত্তা দেইনি।
–কি বললে তুমি?
-আরে হ্যাঁ আমি হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কাউকে পাত্তা দিতে পারি বলো? নিজের একটা প্রেস্টিজ আছে না?
–আগেতো কখনো বলনি এই কাহিনী আমায়।
-আজকে হুট করে মনে হলো। জান্নাত আর কিছু বলেনি। রান্না করা চামচ দিয়ে তৎক্ষনাৎ বারি মেরে বলল…
–আজকের পর কথা বলবেনা আমার সাথে।
-মানে কি?
–চুপ…!
বলেই সে এক দৌঁড়ানি দিছে। আর কাহিনি তখন থেকেই শুরু। কে জানতো আমার মিথ্যা গল্প সে সত্যি সত্যি বিশ্বাস করবে। শ্রুতিতো জীবনেও আমায় প্রপোজই করেনি। নিজের দাম বাড়ানোর জন্য মিথ্যা বলে এখন নিজেই মাইনকা চিপায় পরেছি৷” এই হলো কাহিনী। যারফলে বউ আর কথা বলছেনা। আর আমিও এখন বিছানায় অসহায় অবস্থায় আছি। খোদা রহম করো আমার উপর৷ এ কেমন বউ‌! টু শব্দ করলেই ঠুসস করে গুতো মারে। ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলাম। রিয়েল আইডি দিয়ে মেসেজ দেওয়া যাবেনা আবার পরে বিছানা থেকে নামিয়ে দিবে৷ একটা ফেইক আইডি আছে ওটা দিয়ে মেসেজ দিলাম….
-ভাবি কেমন আছেন?
–ভালো, আপনি?
–এইতো ভালো ভাবি। রুবেল ভাই কেমন আছে?
-জানিনা।
–এ আবার কেমন কথা! ভাইয়ের উপর রাগ করেছেন বুঝি।
-কথা বলতে চাচ্ছিনা।
–আরে শুনুন, স্বামীর উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে নেই, অমঙ্গল হয়। আর সংসারে একটু আধটু ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি হবেই। এতে রাগ করলে চলে?
-আপনি এতসব বলছেন কি করে?
–না মানে মনে হলো আরকি। যাইহোক ভাইকে একটু ক্ষমা করুন।
এই মেসেজ দেওয়ার পর রিপ্লে আসলনা। আমি তাকিয়ে রইলাম। সিন বাট নো রিপ্লে। ঘুমাইলো নাকি। নাহ দেখা যাবেনা, নড়লে আবার গুতো মারবে। এসব ভাবতেই জান্নাত ছো মেরে মোবাইল নিলো৷ আমি ভীতু চোখে তাকালাম। ও বলল….
–আমি এটাই সন্দেহ করেছিলাম।
-সরি…!
–তুমি ফেকাইডি দিয়ে আমায় ভাবি বলো?
-আরে ধূর, একটু বোঝানোর চেষ্টা করলাম। জান্নাত রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ভ্যাবলা কান্তের মতন হয়ে গেলাম। জান্নাত বলল….
–এখনি বালিশ নিয়ে সোফায় ঘুমোও, কোন এক্সকিউজ চলবেনা। কিছু বললেই…যাও বলছি। নাকি আরো কিছু বলবে, আমি তার আগেই বালিশ নিয়ে সোফায় গেলাম। সোফায় ঘুম আসলনা। বউকে ছাড়া কি আর ভাল্লাগে? এত বছর সিঙ্গেল থাকার পর বিয়ে করেছি কি সোফায় ঘুমোনোর জন্য। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। আমি ঘুমোবো তখনই জান্নাত হাজির…আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সে বলল….
–চলো বিছানায়।
-উহু থাক, এখানে থাকি।
–আসতে বলেছি।
আমি সুবোধ বালকের ন্যায় বিছানায় গেলাম। আগের মতন একটু দূরে গিয়ে শুলাম। কাছে গেলে যদি কুনুই দিয়ে ঠুস করে গুতো মারে। জান্নাতও শুয়ে পরলো বিছানায়। আমায় বলল কম্বল টান দিতে। আমি কম্বল টান দিয়ে নিলাম। যাক আরামে ঘুমোতে পারব। জান্নাত আবার বলল…
–দূরে কেন কাছে আসো…!
-আবার কুনুই দিয়ে ঠুসস করে মারবেনাতো?
–না আসলে নাক ফাঁটাবো তোমার।
আমি জান্নাতের গা ঘেঁসে শুয়ে পরলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে জান্নাত মুচকি মুচকি হাসছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে সেই হাসি দেখতে। সাহস করে বলেই ফেললাম….
–একটু ঘুরবে?
-কথা বলতে নিষেধ করেছি। (এবার ঠুস করে মারেনি)
–আচ্ছা। কিছুক্ষণ নীরবতা ! আমি জানি জান্নাত নিজ থেকেই ঘুরবে। অবশেষে জান্নাত বলল….
–এই?
-হ্যাঁ বলো।
–জড়িয়ে ধরো।
-আমি?
–না ভুতে..!
-হা হা আচ্ছা।
–ঠাণ্ডা লাগছে শক্ত করে ধরো।
আমি জান্নাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আহা এই সুখ কি আর সিঙ্গেলরা বুঝবে। জান্নাত হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল…
–তুমি এত পাগল কেনগো? এত পাগলামো করলে যে আমি তোমার প্রেমে পাগল হয়ে যাই। এত পাগল করা ঠিক না বুঝলে। আমি হাসলাম, তবে নৈশব্দে। আমি যে ইচ্ছে করে হারি৷ ভালোবাসায় হারার মাঝেও একটা সুখ আছে। এই সুখের অনুভূতি আমায় বড্ড টানে। আমি সারাজীবন হারতে রাজি। আমি জান্নাতকে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম…’ভালোবাসি বউ।’
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত