দোকানিকে শাড়ির ৩০০০ টাকা দিতে দিতে মনে মনে ছোট্ট একটা যোগ-বিয়োগ করে ফেললাম।আম্মু আর মায়ের জন্য একই রঙের দুটো শাড়ি নিলাম। তারপর বাবা আর আব্বুর পাঞ্জাবি দুটো কিনতে যেয়েও আবারো অংক কষলাম।আব্বু আবার পোশাকের ক্ষেত্রে খুবই রুচিশীল মানুষ। তাই বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আর আব্বুর রুচির কথা মাথায় রেখে আব্বু আর বাবার জন্যও একই পাঞ্জাবি কিনলাম।
নিজের আব্বু- আম্মু আর ফারহানের বাবা- মাকে আলাদা করে ভাবি না তাই তাদের জন্য একই পোশাক কিনলাম।
বিয়ের আগে ফারহানের একটাই চাওয়া ছিলো আমার কাছে, -যদি সৎ মানুষকে ভালোবাসতে পারি তাহলে বিয়ের পরে কম উপার্জন যেনো ভালোবাসার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় ! আমি যেমন ওর সততা দেখে তাকে ভালোবেসেছি ঠিক তেমনি ভালোবাসা যেন বিয়ের পরেও থাকে। আর ওর মা- বাবা আর আমার মা- বাবার মধ্যে কখনো যেনো পার্থক্য না করি। বিয়ের ছয় মাসে অন্তত এতোটুকু বুঝতে পেরেছি যে, অল্পের মধ্যেও কিভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায়।বাবা- মাও কখনো বুঝতে দেয়নি যে আমি ঘরের বউ।নিজের মেয়ের মতোই সব সময় আদর-স্নেহে কোনো কমতি রাখে না। ফারিয়া আমার একমাত্র ননদ।তবে আমাদের মধ্যে ননদ ভাবির সম্পর্কের চেয়ে বান্ধবীর সম্পর্কটাই বেশি।
কেনাকাটা বা কোথাও ঘুরতে গেলে একসাথেই যাই কিন্তু জ্বরের কারনে আজ আমার সাথে শপিংয়ে আসতে পারে নি।তাই বাজেটের সাথে কেনাকাটা করতে একটু অসুবিধেই হচ্ছে আমার।আর ফারহান তো তার চাকরি নিয়েই খুব ব্যস্ত! তাই আমাকে পনেরো হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে সবার জন্য শপিং করতে বললো।সাথে এটাও বলে দিলো যেন ওর জন্য কিছু না কিনি।বিয়ের পাঞ্জাবি পরেই ঈদের নামাজ পরবে নাকি সে ! ফারিয়ার দুইটা ড্রেস, জুতা, কিছু কসমেটিক কিনে ছোটো ভাইয়ের প্যান্ট-টি শার্ট কিনলাম।ওদের জন্য কেনাকাটা শেষে দেখলাম হাতে ফারহানের দেয়া ৯০০ টাকা আর আমার দুই মাসের টিউশানির ৩০০০ টাকা আছে।তা দিয়েই ফারহানের জন্য একটা পাঞ্জাবি আর ওর পছন্দের কালো রঙের একটা শার্ট কিনলাম। জানি ফারহান বলবে কেনো কিনলে আমার জন্য। তারপর আমার হাত দুটো ধরে আমাকে শান্ত ধীর গলায় বুঝাবে, অন্তি তুমি তো জানো আমি অল্পতেই খুশি, তারপরেও কেনো? আমি তখন ফারহানের বুকে মুখ লুকিয়ে বলবো ভালোবাসি তোমাকে তাই ।
কেনাকাটা শেষে একটু ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসেছি। বিয়ের আগে প্রায়ই সেখানে যাওয়া হতো ফারহান আর আমার।নিয়ম করে দশ টাকার বাদামই ছিলো আমাদের জন্য ধরাবাধা।আর মাঝে মাঝে তুলি নামের মেয়েটির কাছ থেকে কাঠগোলাপের মালা কিনে আমার চুলে পরিয়ে দেয়া ছিলো ফারহানের অভ্যাস।আজও তুলিকে দেখতে পেলাম।আমাকে দেখেই ছোট্ট মেয়েটি দৌড়ে এসে কাঠগোলাপের একটা মালা এগিয়ে দিলো।আমিও মালাটা হাতে নিয়ে ওর গালে চুমু দিয়ে পাঁচশ টাকা দিলাম।পিচ্চিটা টাকাটা নিতে না চাইলেও জোর করে দিলাম ঈদের সেলামি হিসাবে। তুলির ছোট্ট মুখের হাসির রেখায় যেনো আমার ঈদ তখনই পূর্ন হয়ে গেলো। বাসায় এসে বাবা-মা,ফারিয়াকে সবার ওদের জন্য কেনা পোশাক দেখালাম।সবার পছন্দ হয়েছে দেখে আমারও যেনো খুশিতে আর ধরে না! তবে ফারহানের পোশাকগুলো লুকিয়ে রাখলাম ঈদের দিন ওকে চমকে দিবো বলে।আর আব্বু-আম্মু, ছোটো ভাইয়ের পোশাক রেখে দিলাম পরেরদিন বাসায় যেয়ে আমি আর ফারহান দিয়ে আসবো বলে।
ফারহান বাসায় এসে সবারটা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার ড্রেস কোথায়?আমি মুচকি হেসে বললাম বিয়ের সময় তো অনেক ড্রেস উপহার পেয়েছি যেগুলোর ভাজও খোলা হয়নি কখনো।ফারহান আর কিছু বললো না শুধু আমার হাতদুটো ধরে বললো, আমার ছোট্ট লক্ষী বউটা দেখি সংসারের হাল ভালো করেই ধরেছে,,,, ঈদের সকালে ফারহান গোসলে ঢুকলে নতুন পাঞ্জাবিটা খাটের উপর রেখে একটা চিরকুটে তিনবার লিখলাম,
ভালোবাসি তোমাকে ফারহান থুর থুরে বুড়ী হয়েও যেনো পাশে পাই তোমাকে। ফারহান বের হবার আগেই চলে গেলাম রান্নাঘরে। সেমাই খেয়ে বাবা আর ফারহান চলে গেলো নামাজে।আমি মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছি আর ফারিয়া ঘর গুছাতে ব্যস্ত।আমার কাজ শেষ হলে গোসলে ঢুকলাম তাড়াতাড়ি।
গোসল শেষে বের হয়েই দেখি বিছানার উপরে একটা প্যাকেট, পাশে একটা চিরকুট।সেখানে লিখা, ভালোবাসি তোমাকে অন্তি থুর থুরে বুড়ো হয়েও যেনো পাশে থাকতে পারি তোমার। শাড়িটা আমার ছোট্ট বউয়ের জন্য,ঘিয়ে রঙয়ের সোনালি পাড়ের শাড়িতে তোমাকে বড্ড মানাবে অন্তি ! আনন্দে চোখ বেয়ে পানি পরছে। ঘাড়ের উপর কারো নিঃশ্বাস টের পাচ্ছি! ঘুরে দাঁড়াতেই ফারহানের আলতো ছোঁয়া কপালে পরলো।মনে হলো যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী আমি। মধ্যবিত্তের ঘরেও যেনো ভালোবাসা আকাশের এক ফালি চাঁদ!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা