বন্ধুত্বের ভালবাসা

বন্ধুত্বের ভালবাসা
-শান্ত, তুই এখানে বসে আছিস। আর আমি তোকে পুরো ক্যাম্পাসে খুজে হয়রান! কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরের দিকটায় ছোট পুকুরের পাড়ে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম তখনই রুহি ডাকলো।
-তুই সিগারেট খাচ্ছিস? anything wrong.?
-হু।৬ষ্ঠ ছ্যাকা খাইলাম।
-তাই বুঝি! কনগ্রাচুলেশন… ব্যাপার নাহ, ৬ষ্ঠ গেছে এবার ৭ম শুরু করবি।
-তুই মজা নিচ্ছিস??
-আরে নাহ।
-হু।আরে হ্যা, তুই আমাকে খুজছিলিস কিজন্য? খুজতে খুজতে হাপিয়ে গেছিস দেখছি।
-হু। আমাকে তোর হেল্প করতে হবে।
-বল কি হেল্প?
-আরে একটা ছেলে আমাকে প্রপোজ করছে আর আমি তাকে বলছি যে,আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।আর তোকে দেখিয়ে দিছি।
-অ্যা…
-অ্যা নয় হ্যা। এখন তোকে আমার বয়ফ্রেন্ডের অভিনয় করতে হবে। আপাতত অন্যকোনো মেয়ের দিকে তাকানো যাবেনা। বুঝলি বুদ্ধু?
-হু… গভীরভাবে ফাসিয়েছিস আমাকে।
-হু। এবার আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেন জনাব।
-হু।যদি কিছু হয়না তোকে ছাড়বনা বলে দিচ্ছি।
-ছাড়তে বলছেকে ধরে থাকতেইতো বল্লাম।
-কি?
-আমার হাত।
-হু।
-এবার তাহলে উঠ ক্লাসে যাব।
-হু।চল
রুহির হাত ধরে একসাথে ক্লাসে ঢুকলাম। রুহি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।ক্লাস শুরু হওয়ার অনেকদিন পর আমি কলেজে যাই। ততদিনে অনেকগুলো লেকচার মিস করে ফেলেছি।লেকচার গুলো মিছ করার কারনে ক্লাসেস্যার কি বলতো কিচ্ছু বুঝতামনা। স্যার প্রশ্ন করলে ঠিকমতো উত্তরও দিতে পারতামনা। এমনই একদিন স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বলে স্যার ক্লাস থেকে বের করে দেয়। সেদিন খুব অপমানিত হয়েছিলাম। ক্লাস থেকে বেরিয়ে ছোট পুকুরটার পাড়ে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম এখন যদি আগের নোটসগুলো পেতাম। তখনি
-এই নাও নোটসগুলো! (রুহি) আমি অবাক হয়ে শুধু দেখলাম। এতো রুহি আমার ডিপার্টমেন্টের
-তুমি??? তুমি সিগারেট খাও।পচা ছেলে কোথাকার।(রুহি)
-না মানে,এটা আমার নেশা না। মাঝে মাঝে টেনশন উঠলে খাই আরকি। (আমি)
-ওই হলো। কিন্তু, কিসের এতো টেনশন তোমার?
-নাহ,,এমনি।
– এই তুমি কি খুব কম কথা বলো?
– কই নাতো? আসলে তোমার সাথে এর আগে কখন কথা বলিনি তো তাই কেমন সংকোচতা কাজ করছে।
– আরে কি যে বলো,,
আমরা তো ক্লাস মেট আমাদের মাঝে সংকোচতার কি আছে? সম্পর্কে তো আমরা ফ্রেন্ডস তাই না? আজ থেকে না হয় আমরা বেষ্ট ফ্রেন্ড হলাম। এভাবেই শুরু হয় আমাদের বন্ধুত্ব। তারপর থেকে শুরু হয় দুজনের পথচলা। অনার্সের প্রথম বর্ষে কথা বলা শুরু। তারপর একই সাথে থাকা। সবাই যখন ব্যস্ত থাকতো পড়াতে তখন আমরা দুজন একে অপরের চিমটি কাটতে ব্যস্ত। ক্যামপাসের চত্তরে যখন পড়া নিয়ে আলাপ হত। তখন আমরা দুজন বাদাম এর খোসা চালাচালিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম।আমরা একে অপরের অনেক ক্লোজ হতে লাগলাম।রুহি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল।ও অনেক ভালো একটা মেয়ে আমার অনেক খেয়াল রাখত।আমি রুহিকে শুধু মাত্র আমার একজন ভালো বন্ধুই ভাবতাম।যেহেতু আমি প্লেবয় সেহেতু ওর সাহায্যে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়েছিল।
আমার যখনি কোনো মেয়েকে ভালো লাগত আমি রুহিকে বলতাম।রুহি আমার হয়ে ঘটকালি করত।ও আমার প্রত্যেকিটা রিলেশনের ব্যাপারে জানতো।এখন আমার কোনো রিলেশন নাই।আর এখন রুহি বলতেছে ওকে হেল্প করতে,ওর সাথে ভালবাসার অভিনয় করতে।আমিও রাজি হলাম।আমাদের সম্পর্কটাও তেমনি বাইরে থেকে বোঝাও যায়না যে আমার বন্ধু।সবাই ভাবে আমরা bf &gf।যাইহোক তবুও অভিনয়টা করতেই হবে। এখন আমাদের মাঝের শেয়ারিং কেয়ারিংটা অনেকটটাই বেড়ে গেছে।অভিনয় করতে করতে ৬মাস হয়ে গেল।এতদিনে বুঝতে পারছি কখন যে আমি রুহিকে সত্যি ভালবেসে ফেলেছি ।।কিন্তু আমি এমনটা কেন করব রুহিতো আমার খুব ভালো বন্ধু ওকে নিয়ে এসব ভাবাও পাপ।ওর মনেতো আমাকে নিয়ে এরকম কোনো ফিলিংস নাই।আমি অনেক বার ওকে আমার মনের কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নাই।কথা গুলো শোনার পর যদি ও আমাকে ভুলবুঝে,,যদি আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়ে আর বলা হয়নি আমার মনের কথা।। একদিন ক্যাম্পাসে,,,,,
-শান্ত,চল কোথাও একটু হাওওয়া খেয়ে আসি।
-কোথায়??
-নদীর ধারে।
-চল অনেকদিন ওইদিকটায় যাওয়া হয়নি।।
-হুম চল।
তারপর রুহিকে নিয়ে সোজা চলে গেলাম কপোতাক্ষ নদীর ধারে।গ্রীষ্মের শেষের দিকে নদীতে সামান্য পানি জমেছে কিছুটা স্রোত যাচ্ছে। দেখতে ভালই লাগছে।আর সাথে দখিনা বাতাস মিলে পুরো একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।সেই পরিবেশে আমি আর রুহি গিয়ে পাশাপাশি বসে পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম।। কিছুক্ষণ পর,,
-শান্ত,একটু ওঠ প্লিজ।
-কেন??
-আরে একটু উঠে দাড়া না।
-ওকে। আমি উঠে দারাতেই রুহি হাটু গেরে বসে ব্যাগ থেকে একটা ফুল বের করে আমাকে প্রপোজ করল।আমিতো পুরাই অবাক এ দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
-তোর দ্বারাতো কিচ্ছু হবেনা তাই আমাকেই প্রপোজ করতে হলো বুদ্ধু একটা। খুব ক্ষিদা লাগছে চল আজকে তুই খাওয়াবি আমায়।(রুহি)
-ওকে।চল।(আমি)
এভাবেই শুরু হয় শান্ত আর রুহির নতুন জিবনের পথচলা।আর এদের ভালোবাসার সম্পর্কটা বুঝতে পারা কঠিন মনে হয় তারা সেই আগের বন্ধুটিই রয়ে গেছে।আর এটাকেইতো বলে “বন্ধুত্বের ভালোবাসা”।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত